ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

তাহিরপুর সীমান্ত এলাকা পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় লণ্ডভণ্ড

এম. এ রাজ্জাক, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে
২৫ জুন ২০২২, শনিবার

 তাহিরপুর সীমান্ত এলাকা পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ওপার থেকে ঢলের সঙ্গে বালি এসে বাড়িঘর এখন যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। সীমান্ত এলাকার শতাধিক পুকুর ডুবে গেছে। চলে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। পাহাড়ি ছড়া পাড়ের লোকজন বাড়িঘর ও পুকুর হারিয়ে এখন নিঃস্ব। উপজেলাজুড়ে চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পানি কিছুটা কমায় আশার আলো দেখা দিয়েছে। আকাশে রোদের দেখা মিলেছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কেউ কেউ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় বসতঘর থেকে পানি নিচে নামলেও বাড়ির উঠানে এখনো হাঁটু পানি। আশ্রয়কেন্দগুলোতে কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের লোকজন তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরজমিন দেখা যায়, তাহিরপুর সীমান্তের বীরেন্দ্রনগর থেকে লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ী, কলাগাঁও, চারাগাঁও, বাঁশতলা, লালঘাট, ট্যাকেরঘাট, বড়ছড়া, রজনী লাইন, চাঁনপুরসহ লাউড়ের গড় পর্যন্ত প্রায় ১৭টি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে। ওপারে মেঘালয় পাহাড়। বৃষ্টি হলেই এসব পাহাড়ি ছড়া দিয়ে প্রবল বেগে পানি এসে সীমান্তের বাড়িঘরে তাণ্ডব শুরু করে থাকে। বাড়িঘর রক্ষায় সীমান্তের লোকজন এখন লড়াই করছেন। ঢলের সঙ্গে ছড়া দিয়ে বালি এসে ফসলী জমি, পুকুর ও বাড়িঘর ভরে গেছে। সীমান্তের রাস্তাঘাট ক্ষণে ক্ষণে ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে।
লালঘাট গ্রামের সরাফত আলী জানায়, পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। যেখানে কোনোদিন পানি ওঠেনি এবারের বন্যায় সেখানেও পানি উঠেছে। শত শত পুকুর ভেঙে ও ডুবে মাছ হাওরে চলে গেছে। পানি একটু কমলেও দুর্ভোগ কমছে না। সীমান্ত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি, ও সিলিন্ডার গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে একশ্রেণির অসাধু ব্যাসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। 
চাড়াগাঁও গ্রামের সাবেক মেম্বার হাসান মিয়া জানান, একদিকে ভয়াবহ বন্যা, অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের লোকজনকে শেষ করে দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী কিছু বিতরণ করা হলেও বন্যায় আক্রান্ত সীমান্তের লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন। 
লাকমা গ্রামের সাফিল মেম্বার জানান, তাহিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকার বাড়িঘর পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পুকুর ডুবে মাছ চলে গেছে এবং পুকুরগুলো বালিতে ভরে গেছে। ট্যাকেরঘাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ বন্যাকবলিত, লাকমা, দুধের আউটা, পুটিয়া, জামালপুর, ভোলাঘাট, মদনপুরসহ বেশ কয়েকটি বন্যা কবলিত গ্রামের ৭-৮শ’ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা এক কাপড়ে কোনোরকম এখানে এসে জীবন বাঁচিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমেছে। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি সমতল ৭.৯২ মিটার, যা বিপদ সীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। 
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রসহ উপজেলা জুড়ে ৫টি টিম খাবার বিতরণ করছে। সরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে আসতে শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে সীমান্ত এলাকাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী দেয়া হবে। তিনি এই দুর্যোগ মুহূর্তে দেশ বিদেশের সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status