বাংলারজমিন
গরিবের ঘরে চেয়ারম্যান, রগরগে সিন, মিললো বিয়ের খবর
জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৫ জুন ২০২২, শনিবার
ছোট্ট টিনের ঘর। সেখানে সতর্ক পদচারণা অতি পরিচিত এক পুরুষ মুখের। দৃশ্যপটে আসেন বয়স্ক এক নারী। পরের দৃশ্য রগরগে। কয়েক মিনিটের এমন ভিডিও ভাইরালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এখন সরব। ঘটনার নায়ক-নায়িকা স্বামী-স্ত্রী। এই তথ্য হাজির হয়েছে এখন সামনে। স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ সময়ের ভিডিও ভাইরালে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলাও হয়েছে থানায়। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে দু’জনকে। নানা ঘটনা প্রবাহে বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। গতকাল উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করেছেন নারীরা। ৬ দিন আগে কয়েক মিনিটের ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক বছর আগের ঘটনা এটি। ভিডিও ধারণ করা হয়েছে সে সময়ে। চেয়ারম্যান কোথায় গিয়ে এই কাজ করেছেন সেটি তিনিই বলতে পারবেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান পুত্র সাইফুল ইসলাম ঠাকুর রাব্বীর দেয়া মামলার এজাহারে ভাইরাল ভিডিওতে চেয়ারম্যানকে অন্তরঙ্গ সঙ্গদানকারী নারীর পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবেই তার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের চুন্টা গ্রামের সৈয়দ আলীর মেয়ে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে রফিক উদ্দিন ঠাকুরের বিয়ের নিকাহনামাও দেয়া হয়েছে মামলার সঙ্গে। মামলার এজাহারে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত মেলামেশার সময় গোপনে তার পিতার ভিডিও ধারণ করার এবং তা প্রচার করার অভিযোগ করেন রাব্বী। মামলা এবং দ্বিতীয় বউ: ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক ঠাকুর সাংবাদিকদের জানান, ভিডিওতে এডিট করে তার মাথা বসানো হয়েছে। তিনি এর কিছুই জানেন না। এটা তার শত্রুদের কাজ। আর গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এটা সম্পূর্ণই তার পারিবারিক বিষয়। ২০১৭ সালে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। এটি পরিবারের সবাই জানে। ভিডিও ভাইরালের ৩ দিন পর দেয়া মামলায় ওই নারী তার স্ত্রী বলে জানানো হয়। আশুগঞ্জের আড়াইসিধায় তাদের বিয়ে হয় ২০১৭ সালের ২রা মার্চ। এদিকে ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় প্রথমে ২২শে জুন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপরই পুলিশ কুট্টাপাড়া গ্রামের ঘাডের বাড়ির সুলতান মাহমুদের ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম আপেল (৩০) ও পশ্চিম কুট্টাপাড়ার শেখ আবুল কালামের ছেলে শেখ আরিফ (১৯)কে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে ২৩শে জুন এ দু’জনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়- রফিক উদ্দিন ঠাকুর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকায় তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তার কিছু প্রতিপক্ষ সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পাঁয়তারা করছে। মামলার বাদী চেয়ারম্যান পুত্র রাব্বী এজাহারে বলেন, তার বাবা ২০১৭ সালের ২রা মার্চ জনৈক মরিয়ম বেগমকে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ২য় বিয়ে করেন। মাঝেমধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। তার বাবার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২য় স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত মুহূর্তে মেলামেশার গোপন দৃশ্য অতি গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখে এবং ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও ম্যাসেঞ্জারে পোস্ট করে। এদিকে গতকাল সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক ঠাকুরের নৈতিক স্খলনের অভিযোগে চেয়ারম্যান পদ থেকে তার অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করেছেন কুট্টাপাড়া গ্রামের নারীরা। ঝাড়ু মিছিলে নেতৃত্ব দেন সরাইল উপজেলা শ্রমিক লীগ নেতা শেখ আবুল কালাম। মিছিলটি গ্রামের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে গ্রেপ্তার দুই যুবকের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন। এ সময় মিছিলকারীরা নৈতিক স্খলনের অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে রফিক উদ্দিন ঠাকুরের অপসারণ এবং তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এছাড়া অবিলম্বে গ্রেপ্তার দুই যুবকের মুক্তি দাবি করেন। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ আসলাম হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ডকুমেন্টারি প্রমাণের ভিত্তিতে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মোবাইল থেকে তারা সেটি প্রচার করেছে। এ নিয়ে কারও বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলার যাতে অবিনতি না হয় সেটি আমরা শক্তভাবে দেখছি।