বিশ্বজমিন
ভূমিকম্পে ভয়াবহ মানবিক সংকটে আফগানিস্তান, আন্তর্জাতিক সাহায্য চাইলো তালেবান
মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) ২৩ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:১২ অপরাহ্ন

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের একাংশ। প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। আহত আরও ১৫০০। ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছেন আরও বহু জন। চরম অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত দেশটি কীভাবে এই ভয়াবহ সংকট সামলাবে তা কেউ ধারনাও করতে পারছে না। জাতিসংঘ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্রয় এবং খাদ্য নিশ্চিত করতে। তবে উদ্ধার অভিযান শুরুর সময় সেখানে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। ফলে উদ্ধার কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে। নেই আধুনিক সরঞ্জামও। সব মিলিয়ে ভূমিকম্পের পর অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আফগানিস্তানে। নিজেদের অক্ষমতা স্বীকার করে তালেবান এখন আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে।
যারা বেঁচে আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানিয়েছে, সেখানে কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার কিছুই নেই আর। মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের। এখনও যারা চাপা পড়ে আছেন, তাদের উদ্ধারে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। এটি গত দুই দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সবথেকে ভয়াবহ ভূমিকম্প। এটি তালেবান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি কাবুল দখল করে তালেবান। বিদেশি সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার সুযোগ নেয় তারা। কিন্তু দেশ চালাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনও অর্থনীতি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পাড়ছে না দেশটির। এরমধ্যে এই ভয়াবহ ভূমিকম্প তালেবানের জন্য নতুন সংকট নিয়ে আসলো। দেশটিতে আগে থেকেই চলছে মানবিক এবং অর্থনৈতিক সংকট। বিষয়টি স্বীকার করে তালেবান কর্মকর্তা আব্দুল কাহার বালখি জানান, যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের সাহায্য করার সক্ষমতা তালেবানের নেই। তাই তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছেন। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, প্রতিবেশি দেশ এবং বিশ্ব শক্তিগুলোকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি।
জাতিসংঘ যদিও এরইমধ্যে সেখানে কাজ শুরু করে দিয়েছে। চিকিৎসক, ওষুধ, খাবার এবং আশ্রয় ব্যবস্থা সবই পাঠাচ্ছে জাতিসংঘ। সবথেকে বেশি হতাহত হয়েছে পাকতিকার গায়ান এবং বারমাল জেলায়। সেখানে সম্পূর্ণ একটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। বেঁচে যাওয়া শাবির নামের একজন বিবিসিকে বলেন, চারদিকে শুধু কাঁপছিল এবং আমার খাটও কাঁপতে শুরু করে। এরপরই উপর থেকে ছাদ ধসে পড়ে। আমি ভেতরে আটকা পড়ে যাই। তবে আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম। পাথরে চাপা পড়লেও কোনো রকমে আমি বের হতে পারি। আমার পরিবারের বাকি সদস্যরা ওখানেই মারা গেছে।
সেখানকার স্থানীয় এক চিকিৎসক বলেন, আগে থেকেই আমাদের যথেষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্র এবং চিকিৎসক ছিল না। ভূমিকম্পের পর আগে যা ছিল তাও আর নেই। আমার কতজন সহকর্মী বেঁচে আছেন তাও জানি না আমি। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরায় যোগাযোগ করাও অসম্ভব হয়ে এগছে। এখনও যে মৃতের সংখ্যা জানা গেছে তা প্রাথমিক তথ্য। আস্তে আস্তে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। অনেক মানুষই তার আত্মীয় স্বজনের অবস্থা জানতে পাড়ছে না।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প আঘাত হানে। গত এক দশকেই দেশটিতে ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পে। প্রতি বছর গড়ে ৫৬০ ভূমিকম্পে মারা যায় সেখানে। গত জানুয়ারি মাসেও দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিকম্পে কয়েকশ’ বাড়ি ধ্বংস হয় এবং ২০ জনের বেশি মারা যান।