বিশ্বজমিন
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
গাজায় খাবার বিতরণকেন্দ্রে প্রতিদিন ব্যাপক হত্যা, চিকিৎসকরা বিপর্যস্ত
মানবজমিন ডেস্ক
(১০ ঘন্টা আগে) ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

গাজায় স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও মানবিক সহায়তা দানকারীরা বলছেন, প্রতিদিন প্রায় ‘মাস ক্যাজুয়ালটি ইনসিডেন্ট’ বা গণহারে হতাহত হওয়ার ঘটনার মুখে তারা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে কাজ করছেন। বেশির ভাগ আহত ব্যক্তি দাবি করছেন, খাবার সংগ্রহের চেষ্টার সময় তারা ইসরাইলি গুলিতে আহত হয়েছেন। অনলাইন গার্ডিয়ানে এ নিয়ে জেরুজালেম থেকে প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক জেসন বার্ক। তিনি লিখেছেন- চিকিৎসকরা বলছেন, যারা আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, তারা জানাচ্ছেন যে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের এক গোপন মার্কিন ও ইসরাইল-সমর্থিত সংস্থা পরিচালিত খাদ্য বিতরণকেন্দ্রে যাওয়ার সময় তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের নার্সিং পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সাকর বলেন, প্রতিদিন শত শত গুলিবিদ্ধ রোগীর শরীর নিয়ে আমরা বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। দৃশ্যগুলো সত্যিই ভয়াবহ- যেন কিয়ামতের দিনের মতো। অর্ধঘণ্টার মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ জন গুরুতর আহত বা মৃত অবস্থায় আসেন হাসপাতালে। শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগই আসেন কথিত ‘খাবার বিতরণ কেন্দ্র’ থেকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২৭ মে থেকে ২রা জুলাইয়ের মধ্যে ৬৪০ জন নিহত ও ৪,৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন শুধু খাদ্য সংগ্রহের সময়ে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজায় খাবার বিতরণ কেন্দ্র কেন্দ্রিক আহত রোগীর সংখ্যা গত বছরের সব ‘মাস ক্যাজুয়ালটির’ চেয়েও বেশি। রাফার ৬০ বেডের আইসিআরসি ফিল্ড হাসপাতাল ইতিমধ্যে ২২০০ জন রোগীর চিকিৎসা করেছে এবং ২০০ জনেরও বেশি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।
রেডক্রস জানায়, আহতদের মধ্যে রয়েছে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, মা। তবে তার মধ্যে বেশির ভাগই প্রধানত তরুণ ও কিশোর ছেলেরা। তাদের অনেকেই বলেছে, তারা শুধুই পরিবারে খাবার আনতে গিয়েছিল। ইউকে-মেড পরিচালিত দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি ফিল্ড হাসপাতালে কর্মরত বৃটিশ চিকিৎসক ডা. ক্লেয়ার জেফ্রিজ বলেন, আমি যেদিন থেকে এসেছি, সেদিন থেকেই প্রতিদিন গুলিবিদ্ধ রোগী আসছে। তাদের অনেকেই বলেছেন- তারা খাবার আনতে গিয়ে গুলিতে আহত হয়েছেন।
জিএইচএফ দাবি করেছে, তাদের পরিচালিত চারটি বিতরণ কেন্দ্রে ‘অপারেটিং আওয়ার’-এ কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তারা বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত ৬.২ কোটি খাবার বিতরণ করেছে এবং নিরাপদে বিঘ্ন ছাড়াই গাজাবাসীর মধ্যে খাদ্য বিতরণে কাজ করে যাচ্ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে না এবং সবসময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলে। তবে হারেৎজের এক প্রতিবেদনে ইসরাইলি সেনারা জানিয়েছে, তাদেরকে খাদ্য সংগ্রহকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে তাদের অভিযান মূল্যায়ন করছে।
ডা. জেফ্রিজ আরও বলেন, আমরা ওষুধ ও যন্ত্রপাতির তীব্র সংকটে আছি। অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক, অ্যানেস্থেশিয়া- সবই শেষ হয়ে আসছে। অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহারের জন্য কিছু জিনিস একেবারেই নেই।
পাঠকের মতামত
অসভ্য ইজ্রায়েলির ধ্বংস অনিবার্য ।