শেষের পাতা
বরাদ্দ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা
সিলেট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬ লাখ মানুষ
সিরাজুস সালেকিন
২৩ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট জেলায় পানিবন্দি হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ১৫৯টি পরিবার। এতে আনুমানিক প্রায় ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৮৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ, জনপ্রতি বরাদ্দের পরিমাণ গড়ে ১৪ টাকা। এ ছাড়া চাল বরাদ্দ হয়েছে ৭৯২ টন। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য গড়ে আড়াই কেজি চাল বরাদ্দ হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দৈনিক দুর্যোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ১টি সিটি করপোরেশনের আংশিক, ৯৫টি ইউনিয়নের ৩ লাখ ৯ হাজার ১৫৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আনুমানিক ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৮৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্লাবিত লোকজনকে আশ্রয় দেয়ার জন্য জেলায় মোট ২৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৩ জন লোক এবং ১৬,১২৬টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বোতলজাত পানি সংগ্রহ করে বন্যাদুর্গতদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। ৪টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের মাধ্যমে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের চেষ্টা চলছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলার অনুকূলে ১৮০০ টন জিআর চাল, ১ কোটি ৬০ লাখ জিআর টাকা এবং ২৫,০০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেয়া বরাদ্দ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৭৯২ টন জিআর চাল, ১৩ হাজার ২৯৮ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১ কোটি ৬৩ লাখ জিআর টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ৬৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
এ ছাড়া ২ লাখ টাকার চিড়া, মুড়ি, গুড়, মোমবাতি, ম্যাচ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরস্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বন্যা প্লাবিত আরও বেশ কয়েকটি জেলার ত্রাণ বিতরণের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ১০০% এলাকা এবং শান্তিগঞ্জ, শাল্লা, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, বিশ্বমপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর উপজেলাসমূহের ৯০% এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলায় মোট ৪৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, শান্তিনগর ও জগন্নাথপুর এলাকার আনুমানিক দুই থেকে তিন হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সুনামগঞ্জ জেলার অনুকূলে গত বৃহস্পতিবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ১২০ টন চাল, ১ কোটি ৪৮ লাখ নগদ টাকা এবং ২৭ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৪৫০ টন জিআর চাল, ৪০ লাখ জিআর টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজার লোককে প্রতিদিন রান্না করা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, মৌলভীবাজার জেলায় বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় মোট ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে ১৩ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার গবাদিপশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও অসহায় পরিবারকে সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মৌলভীবাজার জেলার অনুকূলে গত বৃহস্পতিবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১০০ টন চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে এই জেলার বিতরণের তথ্য পাওয়া যায়নি।