শেষের পাতা
বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় সরকার
স্টাফ রিপোর্টার
৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবারআইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিনা চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার হত্যা করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, এরা আসলে কাপুরুষ। এরা ভীতু। এরা জানে যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, যদি আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন তাহলে দেশনেত্রীর ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তাদের তখতে তাউস ধ্বংস হয়ে যাবে। সোমবার বিকালে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সরকার পতনের একদফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা ১২টার পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে কৃষক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। তারা দলীয় ও জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখরিত করে তুলেন। অনেক নেতাকর্মী কৃষকের সাজে সাজেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর খালেদা জিয়াকে দুটি শিশু সন্তানসহ পাক বাহিনী আটক রাখে। আমি বলবো তিনি ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। অবশ্য এ কথা বললে আওয়ামী লীগের গা জ্বলবে। তারা তো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, পাকিস্তানের ভাতা খেয়েছেন।
খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। তিনি ক্ষমতায় এসেই কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করেছেন। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করেছেন। আর এখন ঋণের কারণে কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা লুটেরা সরকার। এরা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করছেন। অথচ, আজকে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব জায়গায় সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করছে যে, সব টাকা আজ ওদের পকেটে। আজ কৃষক ভাইদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার কৃষকদের যে ধান কিনে সেখানেও কমিশন। বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার ওপরও ওরা ভাগ বসায়। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। আওয়ামী ব্যবসায়ীরা আজ ব্যবসা করছে। সাধারণ মানুষ চাকরি পায় না। বিশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্কে নিয়ে এখন তাদের খুব লেগেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে সমস্ত কূটনৈতিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে যা তা কথাবার্তা বলছে। যে দেশটাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট পণ্য যায়, সেই দেশটার সঙ্গে আজকে তারা সমস্যা তৈরি করেছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সামনে আর বিকল্প পথ নাই। তাই সরাসরি সরকারকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন ইসি গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সংকট যদি দূর করতে চান। যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে হয়। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা জেগে উঠুন, আসুন, আমরা আগামীর দিনগুলোতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সকল অন্যায় ও অবিচার দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেবো।
সমাবেশে এই সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষ ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ কৃষকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে নেতাকর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করান কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন।
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।