ঢাকা, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

একটি দফায় আটকে গেছে হেফাজত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবারmzamin

২০১০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মোহতামিম আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তবে ২০১৩ সালে ইসলাম অবমাননাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের আইন, ভাস্কর্য স্থাপন নিষিদ্ধ, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিলসহ মোট ১৩ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা  আলোচনায় আসে। তবে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে ন্যুব্জ এক সময়ের প্রতাপশালী সংগঠনটি এখন ১৩ দফার মধ্যে সর্বশেষ দফায় আটকে গেছে। অর্থাৎ কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তি ও দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের আহ্বানের  মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে তাদের দাবি-দাওয়া। 

২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরের ঘটনার জেরে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যায় হেফাজত। মামলা মোকদ্দমার ভয়ে নেতাকর্মীদের অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। এরপর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘাতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে সংগঠনটি। মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের অনেকেই  এখন অসহায়। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠাতা  আল্লামা শফি ও পরবর্তী আমীর আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর অনেকটা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে সংগঠনটি। এরমধ্যে মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী,  হারুন ইজহার, সাখাওয়াত হোসেন রাজীসহ প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা চলে যান কারাগারে। সবমিলিয়ে অনেকটা লেজেগোবরে অবস্থায় পতিত হয় এক সময়ের আলোচিত এই সংগঠনটি।

এদিকে  জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে হেফাজতে ইসলাম।

বিজ্ঞাপন
এরমধ্যে বিভিন্ন মামলায় আটক নেতাকর্মীদের অধিকাংশই মুক্তি পাওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন তারা। গঠন করা হয়েছে ২১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। তবে নতুন এই নেতৃত্ব এই সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন কারাগারে থাকা মামুনুল হক, মনির হোসাইন কাশেমীসহ ৫ নেতার মুক্তি এবং দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিই আপাতত তারা সরকারের কাছে করবে। সরকারের আসন্ন নির্বাচনী  দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা এই দুইটি দাবি আদায় করতে চাচ্ছে।
এই বিষয়ে হেফাজতের সদ্যঘোষিত কমিটির সহকারী মহাসচিব ও কারামুক্ত নেতা মাওলানা  জাকারিয়া নোমান

ফয়েজী মানবজমিনকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের প্রায় অধিকাংশই মুক্তি পেয়েছেন। তবে  মাওলানা মামুনুল হক, মনির হোসাইন কাশেমী, মুফতি ফখরুল ইসলামসহ ৫ জন আলেম এখনো কারাগারে আছেন। তারা নিদারুণ কষ্টে আছেন। আর যারা জামিনে আছেন তারাও আদালতে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সারা দেশে আমাদের বিরুদ্ধে শত শত  মামলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও ১৬টি মামলা আছে। যেগুলোর নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। এখন আমাদের আপাতত দুইটি দাবি।  সেগুলো হচ্ছে  আটক বাকি আলেমদের মুক্তি ও সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। এই দুইটি বিষয়ের ফয়সালা আমরা শিগগিরই করতে চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ঈমান- আমল রক্ষার ১৩ দফা দাবিতে আমরা সংগ্রাম করেছি। শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় আলেম ওলামারা রক্ত ঝরিয়েছেন। আর আজকে আমাদেরকে কেবল নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। যেখানে  ওই ১৩ দফার সর্বশেষটা হচ্ছে নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি।
হেফাজতের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হেফাজতের ৫ নেতা  কারাবন্দি রয়েছেন। তারা হলেন- মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মনির হোসেন কাসেমী, মাওলানা নুর হোসাইন নূরানী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি ফখরুল ইসলাম। আর ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা ও ২০২১ সালে  নরেন্দ্র মোদির আগমন বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৫২টি মামলা  হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি মামলার চার্জশিট দেয়ার পর বিচারকাজ চলমান রয়েছে। এখন এই নেতাদের মুক্তি এবং  মামলা প্রত্যাহারকেই  সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠনটি। যে কারণে অন্য কোনো বিষয় সামনে এনে আর ঝামেলায় পড়তে চাচ্ছেন না  তারা। ইতিমধ্যে এই দুইটি দাবি আদায়ের জন্য শানে রেসালাত সম্মেলন, ওলামা  মাশায়েখ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারকে চাপে রাখতে মহানগর থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়েও কমিটি  করার  সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
জানা যায়, গত ২১শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের  ফটিকছড়িস্থ হেফাজত আমীর আল্লামা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর পরিচালিত বাবুনগর মাদ্রাসায়  সংগঠনটির নতুন কমিটির   মজলিসে  আমেলার  বৈঠক হয়। বৈঠকে নতুন কমিটির প্রায় সব নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কারাবন্দি আলেমদের মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ২৮শে অক্টোবর জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের ঘোষণা দেন মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজেদুর রহমান। একইসঙ্গে  দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করে প্রত্যেক জেলায় শানে রেসালত সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে আল্লামা মহিব্বুল্লাহ হেফাজতের  কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। এদিকে হেফাজতের ১৩ দফা ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী মানবজমিনকে বলেন, এই ১৩ দফা আমাদের ঈমানী দাবি। তবে মামলা মোকদ্দমাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন হয়রানির কারণে আলেম ওলামারা এখন ক্লান্ত। তাই আপাতত কারাগারে থাকা বাকি আলেমদের মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারই আমাদের এখন প্রধান দাবি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই  আমাদের  এই  দুইটি দাবি  আদায় করতে চাই। আশাকরি সরকার এই বিষয়ে মনোযোগ দেবেন।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status