ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

কালাছড়ায় অন্য দৃশ্য

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবারmzamin

কালাছড়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের সীমান্তবর্তী এই গ্রামের দুর্নাম চোরাচালানিদের দাপটের কারণে। যাতে গ্রামের শিশু-কিশোররা জড়িয়ে পড়ে সহজে। গ্রামের এই অন্ধকার ঢেকে দিতে দুই যুগের বেশি সময় ধরে লড়াই করছেন মুসা মিয়া।  খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিপথে যাওয়া থেকে তাদের ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন অনেকটাই। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে  রোজ বিকালে শিশু-কিশোরদের ফুটবলের প্রশিক্ষণ চলে। তারপর দু’দলে ভাগ হয়ে খেলায় মাতোয়ারা হয় এরা। শীতকালে সকাল বেলাতেও হয় প্রশিক্ষণ। এ দৃশ্য গ্রামের চালচিত্রের ব্যতিক্রম। মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে গ্রামের মানুষ উপভোগ করেন শিশুদের খেলা আর ক্রীড়া কৌশল রপ্ত করার দৃশ্য।

বিজ্ঞাপন
অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মুসা মিয়া তার খেলোয়াড়ি জীবনের শিক্ষা কাজে লাগাচ্ছেন গ্রামের যুব সমাজকে ক্রীড়ায় সমৃদ্ধ করতে। এলাকায় বিভিন্ন টুর্র্নামেন্টে তার তৈরি খেলোয়াড়দের সাফল্যও আছে। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে  সেভাবে এগুতে পারছেন না তারা। ১৯৯৫ সালে নবজাগরণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে গ্রামে আলো ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন মুসা মিয়া। প্রথমে এই ক্লাবের উদ্যোগে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। যাতে সাড়া পড়ে। এরপর  থেকে নিয়মিত চলছে ভলিবল, ফুটবল খেলা। ১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক পদ থেকে অবসরে এসে গ্রামের শিশু-কিশোরদের নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়েন মুসা মিয়া। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো রোজ বিকালে শিশু-কিশোরদের নিয়ে হাজির হন খেলার মাঠে। দেন প্রশিক্ষণ। মুসা মিয়া বলেন, আমি দেখলাম গ্রাম অবৈধ পথে চলছে। তখন আমি এলাকাবাসীকে একত্রিত করে কয়েকটি মিটিং করি। এলাকার ছেলেরাতো ব্ল্যাক করে না। ব্ল্যাক করে বাইরের লোক। এলাকার ছেলেদের বহন করার জন্যে ব্যবহার করা হয়। যাতে এটি না করতে পারে সেজন্যে আমি প্রথমে একটা ক্লাব করি। এই ক্লাবের মাধ্যমে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করি। গ্রামের সব পোলাপান এখন আমার মুখী হয়ে গেছে। খুঁজে দেখেন আমার গ্রামের মধ্যে কোনো একটা স্মাগলার  নেই। যারা আসে, তারা দূরের। অচিন পাখি হয়ে আসে, অচিন পাখি হয়ে চলে যায়। আমার গ্রামের কোনো  লোক এসবে নাই। সিনিয়র, জুনিয়র এবং মাঝ বয়সীদের নিয়ে আমি খেলার টিম করেছি। ইদানীং দেখা গেছে আমার শরীরটা বেশি ভালো না। চিন্তা করছি এরা আমার নাম রাখে না রাখে, সেজন্যে আমি আরেকটা টিম তৈরি করি। যারা আমার এই কাজটা চালিয়ে নেয় বা মনে রাখে। ইদানীং একটা টুর্নামেন্ট হয়েছে। তাতে আমরা সেমিফাইনালে জয়ী হই। চাকরিতে থাকাকালেই গ্রামে এসে খেলাধুলায় ছেলেপেলেদের উৎসাহ দিতাম। তার প্রশিক্ষণে অনেকে ভালো করছে জানিয়ে বলেন- তবে অর্থের অভাবে এগুতে পারে না। অনেকে বিদেশ চলে যায়। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় শুরু হয় প্রশিক্ষণ। শীতকালে সকাল এবং বিকাল দু’বেলা প্রশিক্ষণ দেন। বলেন- এরমধ্যে লেখাপড়ার চিন্তাও করতে হয়। গরমে বাচ্চাদের সমস্যা হয় কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। মাঠে খেলতে আসা কয়েকজন শিশু জানায়- বাড়িতে আগে বসে বসে মোবাইল টিপতাম। এখন খেলাধুলা করি। তারপর পড়াশুনা। গ্রামের মানুষ বলেন, শিশু-কিশোরদের মোবাইল-মাদক থেকে তিনি দূরে রাখতে পেরেছেন- এটাই বড় সাফল্য। সবসময় তাদের খেলার মধ্যে রাখেন। জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম জানান, খোঁজখবর নিয়ে বিষ্ণুপুরের খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status