নির্বাচিত কলাম
সময়-অসময়
ডিম আলু পিয়াজ কেউ শুনছে না কারও কথা!
রেজানুর রহমান
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার
আচ্ছা ধরে নিলাম সাধারণ মানুষের ইলিশ খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। ইলিশ এখন উচ্চবিত্তের খাবার। কিন্তু ডিমও কি সাধারণ মানুষের খাবারের পাত থেকে উঠে যাবে? একটা ডিমের ভাজি কোনো কোনো পরিবারে ৪/৫ জন সদস্য ভাগ করে খায়। এটাই তাদের তৃপ্তিদায়ক খাবার। সেই ডিমও এখন বলতে গেলে সোনার হরিণ। তাহলে সাধারণ মানুষ খাবে কি? গরুর মাংস সাধারণের পাত থেকে উঠে গেছে। দেশি মুরগি সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগে। চাষের পাঙ্গাশকে বলা হয় গরিবের মাছ। সেই পাঙ্গাশও এখন চড়া মূল্যের কাতারে দাঁড়িয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ খাবে কি? কীভাবে পুষ্টির চাহিদা মেটাবে?
সরকার বড় নাকি সিন্ডিকেট বড়? এই কথা ভেবে মাঝে মধ্যেই আমি দ্বিধাগ্রস্ত হই।
সিন্ডিকেট শব্দের এই অবজ্ঞার হাসি আর আধিপত্য বিস্তারের প্রভাবের বিরুদ্ধে দেশের প্রচার মাধ্যম, সাধারণ মানুষ বেশ সোচ্চার। তবুও সিন্ডিকেট এগিয়ে যাচ্ছে বিপুল বিক্রমে, দুর্বার গতিতে। রাষ্ট্রের আদেশ-নির্দেশ মানতে নারাজ। বরং সিন্ডিকেটই মাঝে-মধ্যে আদেশ-নির্দেশ দিয়ে চলেছে এবং সেটা মানতে বাধ্য হচ্ছে দেশের অসহায় মানুষ। সরকারের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্তের কথাই যদি বলি তাহলেই বিষয়টি বেশ পরিষ্কার হবে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, পিয়াজ ও ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেয়া দামেই আলু, পিয়াজ ও ডিম বিক্রি করতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সরকারের এই সিদ্ধান্ত মোটেই কার্যকর হয়নি। বরং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য ৩টি প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতিবাদ তুলেছেন সাধারণ ক্রেতা। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং বিক্রেতাদের অনেকে সরকারের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ফিক্সড রেট বুঝি না। আমি যা বলবো তাই ফিক্সড রেট। নিলে নেন, না নিলে আজাইড়্যা ঝামেলা কইরেন না।

ডিম আলু আর পিয়াজ নির্ধারণ করে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না এই মর্মে প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশ নির্বিকার। ভাবটা এমন- আমার বলার কথা আমি বলেছি। কেউ আমার কথা মানলো কি মানলো না তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। তার মানে বলা উল্ল্যা বলবে। শোনা উল্ল্যা শুনবে না- এটাই কি নিয়তি? ডিম আলু আর পিয়াজ নিয়ে দেশের অধিকাংশ দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনাম বেশ উদ্বেগজনক। প্রথম আলো শিরোনাম করেছে- সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না তিন পণ্য। সমকাল শিরোনাম করেছেÑ সরকারি নির্দেশনার দর মানছে না বাজার। ইত্তেফাক শিরোনাম করেছে, বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম পিয়াজ ও আলু। আমাদের সময় শিরোনাম করেছে, নির্ধারিত দামে বাঁধা যাচ্ছে না বাজার। মানবজমিন শিরোনাম করেছে- বাজারে কার্যকর হয়নি বেঁধে দেয়া দাম। কালবেলা শিরোনাম করেছেÑ ডিম আলু ও পিয়াজ মিলছে না নির্ধারিত দামে।
এখন প্রশ্ন হলো সরকার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন এই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে না? এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থার কথা শোনা যায়নি। আর তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকার একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা দেখাও তো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি ভেবে নিয়েছিলেন তথাকথিত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্ত ‘জি হুজুর, জি হুজুর’Ñ টাইপের বিনয় দেখিয়ে সহজেই মেনে নিবেন? কিন্তু সেটাতো হলো না। বরং বিনয় দেখানোর চেয়ে বোধকরি সীমাহীন ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করলেন তথাকথিত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের চ্যালেঞ্জও বলা যায়। আমি সিদ্ধান্ত মানবো না দেখি কে আমার কি করে? এই যে ঔদ্ধত্য প্রকাশের নজির শুরু হয়েছে তা দেশের জন্য মোটেই সুখকর সংবাদ নয়।
প্রচার মাধ্যমের খবর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডিম, আলু, পিয়াজ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়েনি। বরং তথাকথিত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতায় বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ডিম, পিয়াজ, আলুর মতো ডাবের ক্ষেত্রেও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারাই ডাবের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে। সাধারণ মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশের অনেক স্থানে এখন ফার্মেসিতেও ডাব বিক্রি হচ্ছে চড়াদামে। স্যালাইন নিয়েও শুরু হয়েছে সিন্ডিকেটের নানান কারসাজি। মাছের রাজা ইলিশও এখন সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েছে। নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু ইলিশের দাম বেশ চড়া। নিম্নমধ্যবিত্ত তো দূরের কথা মধ্যবিত্তের পাতেও এখন আর ইলিশ ঠাঁই পাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে বাজারে গিয়েছিলাম ইলিশ কিনতে। কেজি প্রতি ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৩শ’, ১৪শ’ টাকা। একটি ইলিশ কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে নিদেনপক্ষে ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা। সাধারণ মানুষের পক্ষে কীভাবে সম্ভব ইলিশ কেনা?
আচ্ছা ধরে নিলাম সাধারণ মানুষের ইলিশ খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। ইলিশ এখন উচ্চবিত্তের খাবার। কিন্তু ডিমও কি সাধারণ মানুষের খাবারের পাত থেকে উঠে যাবে? একটা ডিমের ভাজি কোনো কোনো পরিবারে ৪/৫ জন সদস্য ভাগ করে খায়। এটাই তাদের তৃপ্তিদায়ক খাবার। সেই ডিমও এখন বলতে গেলে সোনার হরিণ। তাহলে সাধারণ মানুষ খাবে কি? গরুর মাংস সাধারণের পাত থেকে উঠে গেছে। দেশি মুরগি সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগে। চাষের পাঙ্গাশকে বলা হয় গরিবের মাছ। সেই পাঙ্গাশও এখন চড়া মূল্যের কাতারে দাঁড়িয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ খাবে কি? কীভাবে পুষ্টির চাহিদা মেটাবে? সরকার ৩টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় তবু একটা স্বস্তির পরিবেশ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশ তো মানছে না ব্যবসায়ীরা। পরিত্রাণের এবার উপায় কী?
পাঠকের মতামত
Mr Rahman, apnader problem nay. Ei somosto likhe gorib der niya moja korben.