নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
তাহলে নির্বাচনী কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেল
শামীমুল হক
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার
দুই দলের এমন মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপর হবে তফসিল ঘোষণা। মনোনয়নপত্র দাখিল। প্রত্যাহার। মার্কা বরাদ্দ। নির্বাচনী প্রচারণা। আসবে ভোটের দিন। সারাদিন শেষে সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে ফলাফল ঘোষণা। এভাবেই দ্বাদশ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সরকার তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকবে।
বিরোধী দল মাঠে- ময়দানে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাবে। তাদের এই প্রতিবাদে কেউ কান দেবে না। সরকার তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাববে। উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেবে। সাধারণ মানুষও এই উন্নয়ন দেখে বাহবা দেবে। এভাবেই বাংলাদেশ একদিন পৌঁছে যাবে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে। বুক ফুলিয়ে আমরা বলবো আমরা উন্নত রাষ্ট্রের বাসিন্দা।বিজ্ঞাপন
কোনো সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচন হচ্ছে। অবস্থা দেখে আপাতত তাই মনে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রথম ধাপ হিসেবে গতকাল শনিবার আগামী নির্বাচনে ভোটে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে কমিশন। নির্বাচন নিয়ে কমিশনের এ কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত ভোটে গিয়ে ঠেকবে। ভোটের দিন যেমন ভোটই হোক না কেন রেজাল্ট হবে। বিজয়ীরা হাসবে বিজয়ের হাসি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করবে। বিগত দুটি নির্বাচনে এমনটাই দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশনেরই বা কী করার আছে। সাংবিধানিক সংকট এড়াতে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এমনিতেই তারা বলে দিয়েছে আমাদের কাজ নির্বাচন করা। আর আমরা সেটা করবো। রাজনৈতিক বিষয়টি আমাদের দেখার কিছু নেই। এটা রাজনীতিবিদরাই দেখবেন। বর্তমান সংকট রাজনীতিবিদরাই সমাধান করতে পারেন।
তবে, গতকাল দ্বাদশ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিনে নির্বাচন যে জটিল হয়ে উঠেছে তা প্রকাশ্যেই বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেছেন-আমরা যখন চাকরিতে ঢুকেছি তখন নির্বাচন নিয়ে কোনোরকম প্রশিক্ষণই হতো না। কিন্তু নির্বাচন তো ঠিকই করতাম। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কোনোরকম কথাবার্তা হতো না। দিন যাচ্ছে যত, ততই সবকিছু জটিল হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচনও জটিল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তার কথা- এই জটিল হওয়ার কারণে এত আইনকানুন ও এত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। আমাদের নির্বাচন আইন আছে, সেগুলো আপনারা দেখে বা পড়ে নিবেন। আপনাদের কাছে বেশি কথা না বলাই ভালো। নিজে পড়লেই জানা যায় সবকিছু। এ বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের কণ্ঠে এক ধরনের হতাশার সুর ভেসে আসে। তিনি তা প্রকাশ না করলেও তার কথায় বিষয়টি ফুটে উঠেছে। শুধু মো. আলমগীরই নন, এ প্রশিক্ষণে বক্তব্য রেখেছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানও। তাদের বক্তব্যেও সুর ছিল না। তারা প্রত্যেকেই বলার চেয়ে আইনকানুনগুলো পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের। বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, আপনারা আইনকানুনগুলো ভালো করে দেখে নিবেন। পড়ে নিবেন। নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা হবে বলে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে জানান।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান অবশ্য বলেছেন, কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার জন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। যত সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ হবে, ততই একটা সুন্দর নির্বাচন হবে। আমরা দায়িত্ব নিয়ে এক হাজার নির্বাচন সুন্দর ও অবাধভাবে করেছি। কোনো কথা উঠে নাই, সেসব নির্বাচন নিয়ে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভূমিকা অনেক। একটা সুন্দর, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনে তারা ভূমিকা রাখেন।
ওদিকে একদিন আগে শুক্রবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীতে সমাবেশ করেছে। দুটি সমাবেশ থেকেই তারা তাদের নিজস্ব মতামত জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। দুই দলই রয়েছে অনড় অবস্থানে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ সমাবেশের আয়োজন করে। এ সমাবেশে সারা দেশ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অংশ নেন। কয়েক লাখ লোকের সমাগম হয় এখানে। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সমাবেশ থেকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সমাবেশে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানোর শপথ নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
ওদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরকার পতনের একদফা দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার শপথ নিয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। বক্তারা বলেছেন, বিএনপি’র লক্ষ্য একদফা আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। গণআন্দোলনের মধ্যদিয়েই সরকারকে উৎখাত করা হবে। আমরা শপথ নিচ্ছি, গুলি খাবো, জেলে যাবো, এই সরকারকে উৎখাত করেই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।
আর ছাত্রলীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার একটাই লক্ষ্য, এ বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করবো। কবির ভাষায়- এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। আমার কোনো ভয় নেই। তোমাদের বলবো, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি। ছাত্রলীগের মিছিল এবং সমাবেশে স্লোগান ছিল একটাই- ওয়ানস অ্যাগেইন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সমাবেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ওয়ান ইলেভেন আমরা ভুলি নাই। আবারো অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই অস্বাভাবিক সরকার বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেবো না। সমাবেশে নেতাকর্মীদের শপথ পড়ান ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এ সময় তারা বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাশীল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানোর শপথ নেন। শপথে বলা হয়, ‘আমরা বাঙালির মহান স্বাধীনতা ও পূর্ব পুরুষের পবিত্র রক্তে ভেজা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের নব রূপায়ণের রূপকার বাঙালির নির্ভরতার শেষ ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে দৃঢ়চিত্তে শপথ করছি যে, তারুণ্যের স্বপ্নের স্বদেশ, পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা এবং কন্যার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপসহীন, অক্লান্ত, আমৃত্যু সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, বঙ্গমাতার সাধনা, দেশরত্নের সাহসকে নিজের জীবন গঠনে ও সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়তে মূলনীতি মানবো। তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে, তারুণ্য দেশবিরোধী সব অপশক্তিকে পিতার তর্জনীর দাপটে ধ্বংস করবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাশীল করতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াবে। জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশ ও নয়াপল্টনে বিএনপি’র শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে বিপরীতমুখী বক্তব্যই উচ্চারিত হয়। একই দিনে দুটি বৃহৎ দলের কর্মসূচি রাজধানীবাসীকে ভুগিয়েছে বেশ। বিএনপি’র সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। তারা এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও দেখতে চায় না। তাই প্রস্তুতি নিন। রাজপথেই ফয়সালা হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য একদফা আন্দোলন। একদফা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় নিতে হবে-এটাই আমাদের একদফা আন্দোলন।
দুই দলের এমন মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপর হবে তফসিল ঘোষণা। মনোনয়নপত্র দাখিল। প্রত্যাহার। মার্কা বরাদ্দ। নির্বাচনী প্রচারণা। আসবে ভোটের দিন। সারাদিন শেষে সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে ফলাফল ঘোষণা। এভাবেই দ্বাদশ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সরকার তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকবে। বিরোধী দল মাঠে- ময়দানে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাবে। তাদের এই প্রতিবাদে কেউ কান দেবে না। সরকার তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাববে। উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেবে। সাধারণ মানুষও এই উন্নয়ন দেখে বাহবা দেবে। এভাবেই বাংলাদেশ একদিন পৌঁছে যাবে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে। বুক ফুলিয়ে আমরা বলবো আমরা উন্নত রাষ্ট্রের বাসিন্দা।
তবে, যত সহজে বলা যায় তত সহজে নির্বাচন হবে বলে মনে করেন না বিরোধী মতের অনেকেই। তারা নয়াপল্টনে গলা ফাটিয়ে বললেই যেন সব চুরমার হয়ে যাবে। বিদেশিদের চাপকে প্লাস পয়েন্ট ধরে এগুচ্ছে তারা। বিরোধী দল কি জানে না নিজেদের দাবি নিজেরা আদায় করতে হয়। বিদেশিরা এখানে কিছুই করতে পারবে না। বিদেশিরা অসময়ে নানা কথা বলেন। কিন্তু সময়ে থাকেন নীরব।
যাক সেসব কথা। মূল কথা হলো-একক সিদ্ধান্তে কোনো কিছুই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সকলকে নিয়ে কিছু করলে সেটার মর্যাদা আলাদা। সেটার দামও অনেক। সবার সঙ্গে কথা বলে সামনের নির্বাচনটা করলে রাজনীতিরই জয় হবে। একইসঙ্গে জয় হবে দেশের মানুষের। আনন্দে উল্লাস করবে গোটা দেশ। এমন পরিবেশ দেখতে চায় অনেকেই। আর সেটা দেখার অপেক্ষায় এখন তারা।
পাঠকের মতামত
প্রিয় লেখেক কে অসংখ্য ধন্যবাদ দেশের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য তুলে ধরার জন্য।।
আমরা এতোটাই পারটিজান হয়ে গেছি যে আমার সুবিধামত লেখা না হলে সেটা যত ভালোই হোক, তা এই দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ।
অসাধারণ একটা লিখা। যে মন্তব্যে বেরিয়ে এসেছে নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মতামত। সে সাথে জনগনের অন্তর্নিহিত আশা প্রত্যাশার কথা। যেখানে লেখক অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিজের পারঙ্গমতা দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন যেভাবে হওয়া উচিত। জনাব শামীমূল হক, ধন্যবাদ আপনাকে।