ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট ও তার স্বরুপ

ইফতেখার আহমেদ খান

(১ বছর আগে) ২৭ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ৮:৩৮ অপরাহ্ন

mzamin

তত্ত্বীয় প্রেক্ষপটে অভিবাসনকে প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ অবিভাসন ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন- এ দু’টি ভাগে দেখা হয়। দেশের সীমানা পরিবর্তন না করে একই দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানের মধ্যে যখন স্থানান্তর ঘটে তখন তাকে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বলে। অন্যদিকে, একটি দেশের জনগণ নিজ দেশের সীমানা পার হয়ে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশে গেলে তাকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন বলে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম পিটার্সন (Willium Peterson) অভিবাসনের বেশ কয়েকটি প্রকরণ উল্লেখ করেন। এগুলোর মধ্যে আদিম অভিবাসন- প্রাচীনকালে মানুষ  বেঁচে থাকা ও বসবাসের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতো এবং নানা কারণে বসবাসের স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হতো; বলপূর্বক অভিবাসন- ২০১৭ সালে মায়ানমার হতে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী; অবাধ অভিবাসন- অভিবাসন নিজের ইচ্ছায় হলে তাকে বলে অবাধ অভিবাসন যেমন, দরিদ্র দেশ থেকে বিত্তশালী দেশে যাওয়ার প্রবণতা। ডিভি-১ ভিসায় বাংলাদশ থেকে প্রচুর মানুষ আমেরিকায় চলে যায়;  উপনিবেশ- ভারতভর্ষে বৃটিশ-ডাচ-ফরাসি জাতি উপনিবেশ স্থাপন করেছিল; গণঅভিবাসন- ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভারতে অভিভাসন করেছিল।

উদ্দিষ্ট আলোচনার বিষয় হচ্ছে বলপূর্বক অভিবাসন (Forced Migration)। ২০১৭ সালে মায়ানমার হতে ১০ লাখেরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বলপ্রয়োগে বাংলাদেশে অভিবাসন করে। এটি একটি অতি বিস্তৃত ঘটনা। এই অভিবাসনটি এ উপমহাদেশের আঞ্চলিক রাজনীতিতে বিস্তর প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ সরকার জাতীয়-আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও আগত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকবারই সরকার উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। বলা প্রয়োজন বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় সংহতির প্রতি এক বিরাট ঝুঁকির উদ্ভব ঘটিয়েছে। উল্লেখ জরুরি, একবিংশ শতাব্দীর একটি বড় আন্তর্জাতিক ঘটনা বা বিষয় হলো অভিবাসন সমস্যা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ববাসী এরূপ ঘটনা আর প্রত্যক্ষ করেনি। গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বে শরণার্থী সমস্যা বেড়েই চলেছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমার হতে বলপ্রয়াগে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা সমস্যাটি সামসময়িককালে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে বড় ঘটনা। বলা হয়, সমগ্র দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলটি বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার অঞ্চল (Lucian W. Pze)।  দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে মায়ানমারের মানুষের জীবনধারার মধ্যে বিস্তর তফাৎ ও আঞ্চলিক ভিন্নতা দেশটির একটি বড় বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া দীর্ঘ সামরিকশাসন দেশটিতে চরমমাত্রায় রাজনৈতিক গোলমালের উদ্ভব ঘটিয়েছে। 

ধর্ম ও জাতিসত্ত্বাগত ভিন্নতাও একে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মায়ানমারের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক সংস্কতি। রোহিঙ্গাদের বলপূর্বক দেশত্যাগ শতাব্দীপূর্র্ব ঘটনা। বিশ্বরাজনীতিতে কোনো বড় শক্তির উত্থান ও পতন ভূ-রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থাকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে। ঠাণ্ডাযুদ্ধের পরবর্তীকালে চীনসহ অন্যান্য দেশের উত্থান বিশ্বক্ষমতা কাঠামোকে নতুন আঙ্গিকে বিন্যাসিত করেছে। ঠাণ্ডাযুদ্ধ চলাকালীন দ্বি-মেরু বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সারা বিশ্ব দু’টি অংশে বিভক্ত ছিল। 

সেই নিরিখে দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতায় ভারত রাশিয়ার, পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন ছিল। ভারত যেহেতু রাশিয়ার প্রভাবাধীন ছিল, সেই কারণে রাশিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়, কেননা ভারত বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। ঠাণ্ডাযুদ্ধ পরবর্তীকালে এ ধারাটি এ অঞ্চলে আর তেমন নেই, কারণ পরাশক্তি হিসেবে এ অঞ্চলে চীন স্থান অধিকার করে নিয়েছে। চলমান সঙ্কটটির একটি ফলদায়ক সমাধান এই কারণে চীনের ওপরই নির্ভর করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়া কারও পক্ষেই চীনের অস্তিত্ব ভুলে এ সঙ্কট সমাধানে এগিয়ে আসা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের অভিবাসনে চীন সরাসরি সম্পর্কযুক্ত বিধায় সঙ্কটটি অতি জটিল রুপ ধারণ করে ঘনীভূত হয়ে আছে। 

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক শক্তিশালী কারণ রয়েছে। সবধরণের কারণের সমন্বিত প্রভাবেই রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ থেকে বল প্রয়োগে বিতাড়িত হয়েছে। তাদের জাতিসত্তা, ধর্ম, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি, আঞ্চলিক বড় শক্তি ভারত এবং চীন বাংলাদেশে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য দায়ী এবং সঙ্কটটি অনাগত ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান রয়েছে। এটি ধর্ম ও জাতিসত্ত্বাগত দ্বন্দ্ব বলে মায়ানমার সরকার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করে এবং বিশ^ প্রচারমাধ্যসমূহ বিষয়টিকে একটি মানবিক সঙ্কট, অভিবাসী সঙ্কট, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা সহায়তা যেমন- ত্রাণ, স্বাস্থ্য, খাদ্য ইত্যাদি ঘরানায় আবদ্ধ রেখেছে। মূল বিষয়টিকে এভাবে বললে খুব একটা ভুল হবে না- এই জটিল ককটেল প্রকৃতির ভূ-রাজনৈকি খেলায় মায়ানমার এবং এ অঞ্চলের বড় শক্তি বাংলাদেশকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে। এখানে একটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার, সেটি হলো- বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার জাতীয় স্বার্থকে নিয়ে যাওয়ার বৈদেশিক নীতির তৎপরতাটি যখন গতি লাভ করছে তখনই এই সঙ্কটটির উদ্ভব ঘটে। রোহিঙ্গাদের অভিবাসী হয়ে যাওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ বা এক্ষেত্রে উপাদান হলো- চীন-ভারতের ভূ-রাজনীতির অভিপ্রয়াস, রাখাইন অঞ্চলভিত্তিক বাণিজ্যপথ, জাতীয় নিরাপত্তা, গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন ইত্যাদি যদিও মায়নমারের সামরিক সরকার বিষয়টিকে ধর্মীয় উগ্রবাদ দমন নামে অভিহিত করে। বস্তুতপক্ষে, অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করছে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা নিধন কর্মসূচির মাধ্যমে। পুরো শতাব্দী ধরেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রাষ্ট্র কর্তৃক ভয়াবহ অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সামরিক অভিযান তাদের ঘরবাড়ি-বসতভিটা, ফসলের মাঠ সব জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে দেশান্তরী করে ছেড়েছে। 

 মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা খেদাও কর্মসূচিটি তখনই শুরু করে যখন চীনের সঙ্গে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন চুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। চীন কর্তৃক রাখাইন অঞ্চলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে অর্থনৈতিক সুবিধা সঙ্গে চীন পাবে এ অঞ্চলের আধিপত্যবাদ। সন্দেহাতীতভাবে এরূপ ব্যাপকভিত্তিক উন্নয়ন কর্মপ্রবাহ রাখাইনদের অধিকাংশ অঞ্চলে গড়ে ওঠবে বন্দর-শিল্প এলাকা। বাস্তবিকভাবে অর্থনৈতিক বিষয়ের আড়ালে এটি সম্পূর্ণরূপে একটি ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা আঞ্চলিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিপ্রায়ে। ধর্মীয় উগ্রবাদ ওজাতিসত্তাগত বিষয়টি আসলে এর একটি খোলস মাত্র। মিয়ানমারে চীনা বিনিয়োগের প্রাথমিক উপাদানগুলো হলো প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ আহরণ। সেখানে চীনের অন্যান্য অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলো হলো খনি, বাঁধ নির্মাণ, ও কাঠ সম্পদ। চীনা বিনিযোগের ৩৩শতাংশ সেখানের বনাঞ্চলে যেখান থেকে সহজে কাঠ ও কাঠজাত দ্রব্য সংগ্রহ করা যায়। দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সুফল নিশ্চিত করতে চীন ২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিনডলার ব্যয় করেছে রাখাইন থেকে চীনের ইউনান প্রদেশে পাইপলাইন সংযোগের জন্য। রাখাইনে সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে চীন সহজেই ভারত মহাসাগরে ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশের সুযোগ লাভ করবে। এতে তার জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার হবে। মায়ানমারে চীনের বিনিয়োগের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো রাখাইন অঞ্চলে একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা ও আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করা। 
বর্তমান বিশ্বের দেশে দেশে খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ, পানি ও কৃষিসেচের জলপ্রবাহের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা গত দুই দশকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মায়ানমার অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে থেকে ভূমি রাষ্ট্রীয়করণের হার বৃদ্ধি করেছে ১৭০ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মায়ানমারও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে পানি অর্থনীতির (Blue Economy) উপর জোর দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রীক ভারত-মায়ানমার-বাংলাদেশের ত্রিপাক্ষিক জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধির জন্য ২০১০ সালের ঘটনাটির উল্লেখ এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হবে। বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন প্রতিবেশি দেশসমূহের সঙ্গে সমুদ্র সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বয়ে আনা। ২০০৮ সালে মায়ানমার যখন সীমান্ত অতিক্রম করে তেল শোধানাগারের কাজ শুরু করে তখন থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ বিষয়টির আইনি সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সমুদ্র আদালতে (United nation Convention on the law of sea) তুলে ধরে। সেখানে বাংলাদেশের এই সাহসী উদ্যোগ সফলতা পায়। মায়ানমার এবং ভারত বাংলাদেশকে সমুদ্রে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে বাধ্য হয়। চীন তার পণ্য দিয়ে বিশ^বাজার ধরতে চায়। বিশ^বাণিজ্যে বহু নতুন উদীয়মান দেশ চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রয়েছে। এই অবস্থা মোকাবেলার অগ্রিমউদ্যোগ হিসেবে চীন ‘এক সড়ক এক অঞ্চল’ এই পদ্ধতিতে সহজে ও সাশ্রয়ে কাঁচামাল উৎপন্নপণ্য পরিবহন করতে চায়। 

বিনিয়োগ নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে চীন সম্পর্ক জোরদার করে। বিশ^ায়নব্যবস্থা ও চীনের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক, বহুপাক্ষিক ইত্যাদি নানা ধরনের সহযোগিতামূলক চুক্তি ও বিনিয়োগের কারণে উন্নয়নশীল দেশসমূহ যেমন, বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের আধিপত্যবাদী অবস্থান কাটাতে সক্ষম হয় না। এরই জ¦লন্ত উদাহরণ- এই অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকটের স্বরুপে বাংলাদেশ-মায়নমার সম্পর্ক। মায়ানমার-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চীনের বাণিজ্যিক স্বার্থের আঙ্গিকে মূল্যায়ন করা যায়। স্বভাবতই মায়ানমার চীন দ্বারা প্রভাবিত, স্বভাবতই দেশটি চীনের সঙ্গে গাণিতিক ও মনস্তাত্বিক বোঝাপড়া ব্যতীত রোহিঙ্গা সমাধানে এগিয়ে আসবে না। বলা প্রয়োজন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বহুবিধ কূটনীতিক-কৌশলগত-ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক যে কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাকে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ফোরামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসাবে তুলতে পারে না।

বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জীবন বিপন্ন হয় তখন যখন তাদের নিজ দেশ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হয়। কলোনীশাসন পরবর্তীকাল হতেই মায়ানমারের সরকার রাখইন অঞ্চলের মুসলমানদের প্রতি বেরী মনোভাবের। শরণার্থী সুরক্ষা ও অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবক্ষেত্রে তার পুরোমাত্রা নিয়ে ভূমিকা পালন করতে পারে না বিভিন্ন দেশে বড় কিংবা পরাশক্তিসমূহের অদৃশ্য অথচ বাস্তব প্রভাবের কারণে। বিশ^-ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থাটি সবসময়ই পরাশক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বড় শক্তিসমূহ তার প্রতিবেশি দেশসমূহের সঙ্গে  সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নির্মাণ করে থাকে। সম্পর্কের ধরণটি বাহ্যত সহযোগিতামূলক অতলে ভীষণ আগ্রাসীমূলক। মায়ানমার অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ও নামে মূলত চীনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিজি ভূ-খন্ডের একাংশের প্রতি চরম বৈরীভাবাপন্ন। এরই পরিণাম রোহিঙ্গাদের গণ দেশত্যাগ। সমস্যাটি এখনও অমীমাসিংত। আঞ্চলিক পরাশক্তির কারণে সংকটটি কেবল বেড়েই চলছে। আঞ্চলিক পরাশক্তি বিষয়টিকে তখনই গুরুত্ব দেয় যখন তাদের জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজন মেটাতে হয়। পরাশক্তির জাতীয় স্বার্থ ছোট দেশের জাতীয় স্বার্থের অভিপ্সাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। যেমনটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি। যেভাবেই হউক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া ও নৈপুণ্যকে কাজে লাগিয়ে দ্বি-পাক্ষিক, বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক সংহতি ও মনোভাব নিয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা ব্যতীত বাংলাদেশের হাতে আর কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বি-পাক্ষিক, বহুপাক্ষিক বুঝাপড়া- সমঝোতার জন্য রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানকল্পে একটি সামগ্রিক পদ্ধতি (Comprehensive Approach) গ্রহণ করা জরুরি।

লেখক: উন্নয়নকর্মী, লেখক 
[email protected]

 

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status