মত-মতান্তর
বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কিছু প্রস্তাবনা
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
(১ মাস আগে) ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
আজ বিশ্ব বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিপ্লব ও বিজয় প্রত্যক্ষ করছে৷ বাংলাদেশ ক্ষমার অযোগ্য ও অবিস্মরণীয় স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে যাকে চব্বিশের প্রকৃত স্বাধীনতা হিসেবে নামকরণ করা যেতে পারে। উৎখাত হওয়া স্বৈরাচার দেশ ও জাতিকে বহুমুখী বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে। বিপর্যয়গুলো কেবল রাজনীতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাতেই সীমিত নয়, বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস (আগস্ট ১৬, ২০২৪) বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ প্রথমবারের মতো একশ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, বর্তমানে যার পরিমাণ ১০০.৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ও টেকসই অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ তৈরি করার লক্ষ্যে এবং উৎপাদনশীল, স্বনির্ভর ও স্মার্ট সামাজিক- অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল জাতিগুলোর মধ্যে স্থান অর্জনের উদ্দেশ্যে, বিদেশি বিনিয়োগ সহযোগিতার মাধ্যমে "শিল্পায়নের" হাইব্রিড মডেল প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের শিল্পায়নের কার্যকরী মিশন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ৭ থেকে ১০ বছরের সময়কাল প্ৰয়োজন হতে পারে। তাই, বাংলাদেশে কার্যকরী অর্জনসহ শিল্পায়ন মডেল বাস্তবায়ন করতে দশ বছর মেয়াদি স্মার্ট ও কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা নিম্নে পেশ করা হচ্ছে।
কোভিড-পরবর্তী পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক নীতিমালা নতুন করে পর্যালোচনা করছে। প্রভাব রাখতে সক্ষম এমন টেকসই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে নতুন করে অর্থনৈতিক কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেসব কৌশলের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, কীভাবে সমন্বিত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ সহযোগিতা কেন্দ্রিক শিল্পায়ন তত্ত্বের মাধ্যমে জিডিপিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সমন্বিত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ সহযোগিতা কেন্দ্রিক শিল্পায়নের কৌশলগত এই মডেল দীর্ঘমেয়াদিভাবে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সক্ষম৷ সমকালীন বৈশ্বিক ধারার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ তার বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে শিল্পায়নের মডেল বাংলাদেশের গতিশীল ও টেকসই অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে গণ্য হতে পারে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ সহযোগিতা কেন্দ্রিক শিল্পায়ন মডেলের দশ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি, এতে করে দেশটি উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশকে স্মার্ট ও টেকসই পরিবেশবান্ধব জাতিতে পরিণত করতে বিদেশি বিনিয়োগ সহযোগিতা কেন্দ্রিক শিল্পায়ন মডেল গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যা শিল্পায়নের নিরিখে, আলোচিত মডেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে বর্ণিত হলো:
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি ফিজিবিলিটি টেস্ট/নিরীক্ষা চালাতে হবে এবং দশ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যেটি যথাযথ নিয়মে সর্বোচ্চ অথরিটি তথা প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক অনুমোদিত হবে। মূল খাতগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী, শিল্পপতি, প্রযুক্তি সহযোগী, সাপ্লায়ার ও অপারেটরদের তথ্য সংরক্ষণ করতে একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে এবং যে-সব শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হবে, সেগুলো হবে বহুজাতিক। দেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে শিল্পকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, কৌশলগত কর্মপন্থাসহ বিভিন্ন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশগুলো আন্তর্জাতিক ধারা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এই কর্ম-পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপভিত্তিক বিদেশি বিনিয়োগ সহযোগিতাকেন্দ্রিক শিল্পায়ন মডেলের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ ও গতিশীল টেকসই অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ তৈরির উদ্যোগকেই প্রজ্ঞাপূর্ণ পদক্ষেপ বলে গণ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সমকালীন অর্থনৈতিক বাস্তবতার ব্যতিক্রম কিছু নয় - প্রেসিডেন্ট / প্রধানমন্ত্রী / প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে পরিচালিত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার গতিশীল অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে, পরিবেশ বান্ধব টেকসই ভবিষ্যতের পরিকল্পনার পাশাপাশি দেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বর্তমানে যে - সব রাষ্ট্র আংশিক বা পরিপূর্ণভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ সহযোগিতার মাধ্যমে শিল্পায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, তুরস্ক, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। কাজেই, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বিদেশি বিনিয়োগ এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে শিল্পায়নের মডেল সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
যারা প্রধান অংশীজন হিসেবে এই শিল্পায়ন-পরিকল্পনায় অংশ নেবে, বাংলাদেশ সরকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী, শিল্পপতি, প্রযুক্তি সহযোগী, সাপ্লাইয়ার ও অপারেটরবর্গ। বাংলাদেশের শিল্পায়ন কর্ম-পরিকল্পনার সাথে যুক্ত সকল গোষ্ঠী পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে একটি যৌথ স্ট্যান্ডার্ড পার্টনারশিপ চুক্তিতে আবদ্ধ হবেন, যারা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আইন, পলিসি ও উৎপাদিত পণ্যের মান রক্ষার দিকটি বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করবে। বাংলাদেশ-শিল্পায়ন কর্ম-পরিকল্পনার বিষয়টি যথাযথ নিয়মে সর্বোচ্চ অথরিটি তথা প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
এ মডেলের মূল উদ্দেশ্য, দেশকে টেকসই অর্থনৈতিক সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনাসহ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা। ৬৪টি জেলায় ৬৪টি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে সফল শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করে পণ্য-সেবাখাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকা রাখা।
বিশেষ করে, বৈদেশিক বিনিয়োগ সহযোগিতার ভিত্তিতে দেশের প্রতিটা জেলায় অন্তত একটি বহুজাতিক শিল্প চালুর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সুযোগ- সম্ভাবনা তৈরি করে দেশের মানবসম্পদের জন্য অসংখ্য শ্রেণির চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ভিত্তিতে পাবলিক সেক্টরের উন্নতির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে সম্পর্ক-সমন্বয় বৃদ্ধি করা। শিল্পায়নের ভিত্তিতে দেশকে সন্তোষজনক আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যক্ষ ক্ষেত্র তৈরি করে ‘বাংলাদেশে কীভাবে দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন' বাস্তবায়ন সম্ভব, এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামত-অংশগ্রহণের সুব্যবস্থা করে সমন্বয় করতে হবে যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে পাবলিক সেক্টর, রাজনীতিবিদগণ, প্রাইভেট সেক্টর, ব্যবসায়িক সমাজ, চাকরিজীবী গোষ্ঠী, মিডিয়া, এনজিও, ও যুবসমাজের সম্মিলন।
অবস্থান-অগ্রগতির পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রেখে টেকসই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে শিল্পায়নের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত আইন-নীতিমালা-নির্দেশনা প্রণয়ন ও চালু করে বিভিন্ন খাতের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হতে হবে যাতে করে উল্লেখিত খাতগুলোতে সহজে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় করা যায়। এছাড়া টেকসই আকর্ষণীয় লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে বিশ্বের আকর্ষণীয় পর্যটন-রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দেশকে স্মার্ট ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করা যাতে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে নিয়ে যাওয়া যায়। তাছাড়া শিল্পভিত্তিক রপ্তানিতে তুলনামূলক সুবিধার দিক থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা তৈরি করে সমন্বিত আঞ্চলিকভাবে শক্তিশালী করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে দেশের ভিত্তি মজবুত হবে।
সাধারণভাবে শিল্পায়নের সাথে উন্নত গড় আয় ও জীবনযাপন মানের বিষয়টি গভীরভাবে সংযুক্ত। বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শিল্পায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে, শিল্পায়নের কর্ম-পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-পর্যটন-অর্থনৈতিক চেতনা সম্পন্ন জাতিতে রুপান্তর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শিল্পায়নের প্রক্রিয়ায় দেশকে ব্যাবসায়ী-উদ্যোক্তাভিত্তিক জাতিতে পরিণত করবে যদি স্বতন্ত্রতা এ শিল্পায়ন মডেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
এই মডেল প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম এমন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখবে যা পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। পণ্যের স্বল্প ও সাশ্রয়ী দাম নিশ্চিত এবং জাতীয় শ্রমবাজারে বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করবে। সর্বস্তরের চাকরিজীবীদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখাসহ দক্ষ উপৎপাদনশীল মানব সম্পদকে শহর থেকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে এবং প্রত্যেকের জীবনযাপন-মান উন্নতসহ একপর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য হরে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।
ইসলামি অর্থায়ন ও বিনিয়োগে আমাদের দেশে অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সক্ষমতা রাখে। তার মধ্যে পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করবে, বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে। তাছাড়া ইসলামি অর্থায়ন সম্পদ-ভিত্তিক ও ঝুঁকি ভাগাভাগির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, কাজেই এর মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি ব্যবসার পাশাপাশি পাবলিক অবকাঠামোতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ঝুঁকি ভাগাভাগি, সুদ ও স্পেকুলেশন নিষিদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে ইসলামি বিনিয়োগ ও অর্থায়নে প্রচলিত ধারার চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এলএসইজি) কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামি অর্থনীতি ২০২২ সালে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিং ৭২ শতাংশ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়াও ২০২৭ সালে এটি ৬.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এদিকে ২০২২সালের হিসেবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ইসলামি অর্থনীতির ২২ ভাগ শেয়ার তথা ৮২৯ বিলিয়ন ডলার নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইসলামিক অর্থনীতিতে সুকুক, ঋণ সিকিউরিটিজ ও তাকাফুলের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শেষ ৪ দশক ধরে বাংলাদেশে ইসলামিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, আর্থিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষমও হয়েছে। শরিয়া ভিত্তিক অর্থায়ন ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে। বিস্তারিতভাবে বললে, রেমিটেন্সে ৩৯%, শিল্প-অর্থায়নে ২৭%, আমানতে ২৬%, আমদানিতে ২৬%, রপ্তানিতে ২৪%, কৃষিতে ১৭%, কুটির-ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি ব্যবসায় ৩৮%৷ ধরে রেখে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ বৈশ্বিক বাজারে সমানভাবে অবস্থান অর্জন করছে৷ বিশেষ করে, বাংলাদেশে ইসলামি আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বহুমুখী কৌশলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সহায়তা করেছে, আকর্ষণীয় পণ্য ও সেবার মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছে৷ বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ইসলামি অর্থনীতি ও বিনিয়োগ দেশের বাজারে উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে এমনকি কর্মসংস্থান, রিজার্ভ ও জিডিপিতেও ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও, বাংলাদেশের ইসলামি অর্থনীতি ও বিনিয়োগের বাজারের অংশীদারিত্ব মোট শিল্পের সাড়ে ২৮ শতাংশে উন্নিত রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য মার্কেট শেয়ার বাংলাদেশে ইসলামি আর্থিক ও বিনিয়োগ পণ্যের প্রতি বাড়তে থাকা আগ্রহকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে। এটি ইসলামি শরিয়া সমর্থিত প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থার প্রতি নির্দেশ করে, যা কেবল ইসলামি বিধিবিশ্বাসের সাথে শুধু সাযুজ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যই নয়, বরং এটি একইভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নৈতিক বিনিয়োগের সুযোগও প্রদান করে। অতীত সফলতার পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আসলেই নিজেকে আঞ্চলিক ইসলামিক আর্থিক ও বিনিয়োগ কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সত্যিকারের সক্ষমতা রাখে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ইসলামি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও বিনিয়োগের প্রতি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান দ্বিগুন শক্তিশালী হবে ইনশাআল্লাহ।
এছাড়া, হালাল খাবার ও পরিষেবাগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে স্বাস্থ্যকর ও উপকারী হিসেবে প্রমাণিত। এটি ধর্ম ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকলেই স্বীকার করে; মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হালাল খাবারের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কারণ, হালাল খাবার ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য উপাদান থেকে মুক্ত এবং মানবদেহের জন্য সহায়ক। ২০২২ সালে, বিশ্বব্যাপী হালাল খাবারের বাজারের আকার ছিল ২.২২ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২৮ সালের মধ্যে বাজারটি ৪.১৭ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে। ইসলামিক অর্থনীতির ডাটাগুলো বলছে, মালয়েশিয়া হালাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মুসলিম দেশ। ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, মালয়েশিয়ার হালাল রপ্তানি ৪৪.১৭ বিলিয়নে রিঙ্গিতে পৌঁছেছে। এর পরেই আছে তুরস্ক যার বিশ্বব্যাপী রপ্তানির ৩.৩%। ইন্দোনেশিয়া, মিশর, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশ তথা বিশ্বব্যাপী অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোই হালাল পণ্য ও পরিসেবা রপ্তানির শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। এর মধ্যে রয়েছে: ব্রাজিল ১০.৭%, ভারত ৯%, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪.৯%, চীন ৪.৬%, থাইল্যান্ড ৪.৪%, অস্ট্রেলিয়া ৪.৪%, ফ্রান্স ৪.২%, রাশিয়া ৩.৯% এবং ইউক্রেন ৩.৩%।
মুসলিম-অমুসলিম মহলে প্রশংসার পাশাপাশি বাজারে উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্বের প্রেক্ষিতে হালাল পণ্য ও পরিষেবা দ্রুতগতিতে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করার সক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশে বিদ্যমান সম্পদের মধ্যে এমন বেশকিছু পণ্য রয়েছে যা দেশটিকে আঞ্চলিক হালাল-কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করতে পারে। এই সম্পদের মধ্যে রয়েছে: বিভিন্ন ধরনের মাংস, মাছ, ফল, সবজি, দুগ্ধজাত পণ্য, এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য৷ আরও রয়েছে রান্নার তেল, মসলা, ঔষধি পণ্য, প্রসাধনী এবং হস্তশিল্পা। দুঃখজনকভাবে স্বীকার করতে হচ্ছে যে, বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলারের এই সুযোগ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ লাভবান হতে পারছে না। কারণ যথাযথ মান, কৌশল এবং প্রযুক্তিনীতি প্রণয়ন না করা এবং রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান না করা। এ সমস্যাগুলোর সমাধান করে বাংলাদেশ যদি বৈশ্বিক হালাল বাজারের ৩%-৫% শেয়ার দখল করতে পারে, তাহলে তা দেশের অর্থনীতিকে টেকসইভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক হালাল হাব বানাতে যে-সব বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সমর্থন অর্জনের উদ্দেশ্যে হালাল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানসম্পন্ন হালাল সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থাগ্রহণ। হালাল সার্টিফিকেশনের দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতি। হালাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলার দায়বদ্ধতা। হালাল রিসোর্সের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। প্রক্রিয়াজাত করার প্রযুক্তি নিশ্চিত করা সহ সার্টিফিকেশন কর্তৃপক্ষ, আইন, নীতিমালা, নির্দেশনা, স্ট্যান্ডার্ডস, শরিয়া উপদেষ্টা বোর্ড, হালাল নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষ, দক্ষ মানবসম্পদ, দেশের সক্ষমতা, অবকাঠামো এবং শিল্পায়ন দেশকে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জিডিপি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
এছাড়া দেশকে সম্ভাব্য বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে বহুমাত্রিক পণ্য ও সেবা উৎপাদনে সহায়তা করবে। দেশের টেকসই আর্থসামাজিক প্রভাব নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে—সবার জন্য মানসম্পন্ন জীবনযাত্রা-স্বাস্থ্যকর পরিবেশ- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা- সুষম জীবন সৃষ্টি করবে। জাতিকে আত্মমর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতা, স্মার্টনেস, পরিপক্কতা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সাথে গড়ে তুলতে দেশে দীর্ঘমেয়াদিভাবে ভূমিকা রাখার সাথে সাথে নতুন ভোক্তাগোষ্ঠী সৃষ্টি, সময়ের সাথে সাথে, কারিগর এবং দোকানদারদের মাধ্যমে গঠিত একটি বৃহত্তর মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব ঘটবে৷ একটি বৃহৎ শ্রমিক শ্রেণিরও উদ্ভব ঘটবে৷ যারা আগে আরও খারাপ অবস্থায় ছিল, নতুন প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশে সফল শিল্পায়নের প্রচেষ্টাটি ১০ বছর মেয়াদি একটি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে করতে হবে। বাংলাদেশে রয়েছে ৬৪টি জেলা৷ শিল্পায়নের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলায় অন্তত একটি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে৷ অতএব, মূল পরিকল্পনা হলো ৬৪টি জেলার মধ্যে অন্তত ৬৪টি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে, যাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি সফল “শিল্পোন্নত দেশ” হিসেবে গড়ে উঠতে পারে-যার কার্যক্রম শুরু হতে পারে ২০২৪ সাল থেকেই।
এগুলো শুরু করার পাশাপাশি, একটি সফল শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট জনশক্তির পাশাপাশি স্মার্ট কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা, যা স্মার্ট শিল্পায়ন তত্ত্বকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করবে। সফল শিল্পায়নের জন্য স্মার্ট কৌশলের মৌলিক উপাদানগুলো এমন হলেই হবে।
সরাসরি প্রেসিডেন্ট / প্রধানমন্ত্রী /প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে নেতৃত্বের কাজ সমন্বয় ৷ প্ৰযুক্তিগত জ্ঞান৷ স্মার্ট টুলস। স্মার্ট নেটওয়ার্কিং ও যোগাযোগ৷
স্মার্ট সহযোগিতা-সমন্বয়৷ সুযোগ বৃদ্ধি এবং সমস্যা হ্রাস। মডেল এবং তার বাস্তবায়নকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করে ডিজিটালাইজ করা, পর্যায়ক্রমিকভাবে৷ ধারাবাহিক পর্যালোচনা কার্যক্রম (নীতিমালা, পরিকল্পনা, কৌশল, টুলস, প্রক্রিয়া এবং কর্মকাণ্ড) বাস্তবায়ন করা।
একটি পাইলট প্রকল্প দিয়ে শুরু করা এবং স্মার্ট কৌশল দিয়ে ধাপে ধাপে অগ্রগতি সাধন করে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো নির্ধারণ করা যেতে পারে। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে উৎপাদন ও পরিষেবার জন্য স্মার্ট ম্যানুয়াল/সারগ্রহন্তের একটি স্মার্ট মিশন এবং ভিশন প্রণয়ন করা। যা বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সংগতিপূর্ণ মানসম্পন্ন গাইডলাইন, ডাটা বিশ্লেষণ এবং বৈশ্বিক কর্পোরেট নেটওয়ার্কিংয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জনযোগ্য সফলতাসহ একটি ইকোসিস্টেম/বাস্তুতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে ধারাবাহিক স্মার্ট গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের শিল্পায়ন পরিকল্পনা সাধারণ শিল্পায়ন তত্ত্বের তুলনায় বেশ ব্যতিক্রমী করে মূলত বহুমাত্রিক বিদেশি বিনিয়োগকারী, উৎপাদক, ব্যবসায়ী এবং সরবরাহকারীদের সহযোগিতার মাধ্যমে টার্গেট অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আর এর পরিকল্পনায় প্রধান ফোকাস থাকবে বিদেশি ব্যবসায়িক এবং কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলোর উপর, পাশাপাশি নির্বাচিত সরকারের সাথেও কাজ করা যেতে পারে। এ পরিকল্পনায় সফল লক্ষ্য অর্জনের জন্য টেকসই লক্ষ্যমাত্রাসহ বিদেশি বিনিয়োগ, ব্যবসায়িক এবং কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলোতে ফোকাস করা কার্যকরী পন্থা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে৷ কারণ, বিদেশি কর্পোরেট গ্রুপগুলোর সাথে ব্যবস্থাপনা এবং আলোচনা সম্পন্ন করতে কেবল বন্ধুপ্রতিম আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয়, যা কম পরিশ্রমের মাধ্যমে শিল্পায়নের পথে প্রকৃত সফলতা আনতে পারে।
পক্ষান্তরে, শিল্পায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিদেশি সরকারের ওপর নির্ভর করলে অনেক বেশি পরিশ্রম এবং আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হতে পারে, যা অপ্রত্যাশিত বিপত্তি এবং বাধার সৃষ্টি করলেও নিন্মলিখিত এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে সফলতা আসতে বাধ্য।
সরকারের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বি-টু-জি সমন্বয়, নির্বাচিত বিদেশি কর্পোরেট গ্রুপগুলোর সাথে বাংলাদেশ সরকারের একটি স্মার্ট সহযোগিতা-সমন্বয় কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, যা সরাসরি প্রেসিডেন্ট / প্রধানমন্ত্রী / প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পরিচালিত হবে। আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় ( বিটুবি) নির্বাচিত বিদেশি কর্পোরেট গ্রুপগুলোর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর একটি স্মার্ট সহযোগিতা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হবে, যা সরাসরি প্রেসিডেন্ট / প্রধানমন্ত্রী / প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পরিচালিত হবে৷
এছাড়া নির্বাচিত বিদেশি সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে বাংলাদেশ সরকারের একটি স্মার্ট সহযোগিতা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হবে, যা সরাসরি প্রেসিডেন্ট / প্ৰধানমন্ত্রী / প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পরিচালিত হবে। নির্বাচিত বিদেশি সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর একটি স্মার্ট সহযোগিতা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হবে, যা সরাসরি প্রেসিডেন্ট / প্রধানমন্ত্রী / প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পরিচালিত হবে৷। নির্বাচিত বিদেশি কর্পোরেট গ্রুপগুলোর সাথে (যাদের বিদেশি সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব আছে) বাংলাদেশের ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর (যাদের বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব আছে) একটি স্মার্ট সহযোগিতা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হবে, যা সরাসরি প্রেসিডেন্ট / প্রধানমন্ত্রী / প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পরিচালিত হবে। এবং বাংলাদেশে টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম শিল্পায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট পদ্ধতি ও কৌশল গ্রহণ করা জরুরি৷ যথাযথভাবে পদ্ধতি ও কৌশল গ্রহণ করে শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক মানের সমপর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখতে হবে।
এছাড়া সরকারি সেবাখাতগুলোকে মানসম্মত করে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে একটি মাল্টি-ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরি করা যা রপ্তানি সংস্কৃতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার ইত্যাদি) উপার্জন করে ধাপে ধাপে দেশের ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী কর কর্পোরেট বিশ্বে ব্যবসায়িক সুযোগ ও সুনামকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে বৈশ্বিক শিল্প ও কর্পোরেট নেতাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে তাদেরকে দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় অংশগ্রহণে আগ্রহী করে তুলে বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি, প্রস্তুতকারক, ব্যবসায়ী, প্রমোটার, কর্পোরেট ও পেশাজীবীদের জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করাই হবে সফলতা।
লেখক: সিনিয়র অধ্যাপক, অর্থনীতি ও বিনিয়োগ
কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
প্রাক্তন পরিচালক, আইসিসিআই, এসিআইজি, সৌদি আরব
[email protected]