ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

গণতন্ত্রের পথে ঐতিহাসিক অগ্রগতি: প্রফেসর ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত

ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার

(১ সপ্তাহ আগে) ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৪৫ অপরাহ্ন

mzamin

২০২৫ সালের ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী বৈঠক। এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন জাতি এক অস্থির অধ্যায় অতিক্রম করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় দিন গুনছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅসন্তোষ ও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তাঁর পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। আর এই উত্তরণকে সংহত করতে এখন কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তারেক রহমান—একজন এমন নেতা যিনি শুধু তাঁর রাজনৈতিক অভিভাবকদের উত্তরসূরি নন, বরং নিজ গুণে আজ জাতীয় স্থিতিশীলতার প্রতীক ও আধুনিক বাংলাদেশের প্রধান রূপকার হিসেবে স্বীকৃত।

নির্বাচনের নির্ধারিত সময়সূচি: একটি স্বস্তির বার্তা
বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো—দুজন নেতাই একমত হয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে, যাতে তা রমজান ও বর্ষা মৌসুমের আগেই সম্পন্ন করা যায়। এই ঘোষণা জাতিকে স্বস্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তা দিয়েছে। বারবার নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে গুজব, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে এই বৈঠক একটি স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য পথনকশা উপস্থাপন করেছে।
এই নির্ধারিত সময়সীমা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বহু আন্তর্জাতিক অংশীদার বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছিল। সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

তারেক রহমান: নেতৃত্বে নতুন গঠনমূলক অধ্যায়
তারেক রহমান এখন কেবল একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নন—তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের এক কেন্দ্রবিন্দু। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার বহন করলেও, তার রাজনৈতিক পরিচিতি এখন স্বতন্ত্র। দীর্ঘ নির্বাসন, দমন-পীড়ন এবং চক্রান্তের মধ্য দিয়ে তিনি যে ধৈর্য, সংযম ও নীতি-ভিত্তিক নেতৃত্ব দেখিয়েছেন, তা তাঁকে একটি প্রাজ্ঞ, ভবিষ্যতদ্রষ্টা নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তিনি জাতির সামনে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন—একটি আধুনিক, বিকেন্দ্রীকৃত, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা যা নির্মিত হবে বিএনপির ৩১ দফা ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে। এই রূপরেখায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, প্রশাসনের দলনিরপেক্ষীকরণ, মানবাধিকার সুরক্ষা, এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও ঐক্যবদ্ধতা
বৈঠকটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে—অন্তর্বর্তী সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী ও বিভ্রান্তি ছড়ানো চক্রের অপচেষ্টা এখন ভেস্তে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অধ্যাপক ইউনূসকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইউনূস-তারেক সরাসরি আলোচনা এই ষড়যন্ত্রের সুযোগকে কমিয়ে দিয়েছে। উভয় নেতার মধ্যে যে স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করবে।

ভবিষ্যতের রূপরেখা: প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও জনগণের অংশগ্রহণ
বৈঠকে আলোচনা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের সংস্কার, এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে। পাশাপাশি দুই নেতা একমত হন যে, সামাজিক সুরক্ষা, যুবকর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা, এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটানো জরুরি।
এই অগ্রগতির নেতৃত্বে থাকবেন এমন একজন ব্যক্তি যার লক্ষ্য স্পষ্ট—আধুনিক, দায়িত্বশীল এবং উন্নয়নভিত্তিক একটি বাংলাদেশ। সেই নেতা হলেন তারেক রহমান।

উপসংহার: গণতন্ত্রের নতুন সকাল
লন্ডনে ইউনূস–তারেক বৈঠক কেবল রাজনৈতিক সমঝোতা নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সূচনার পূর্বাভাস। একটি নির্ধারিত নির্বাচনী সময়সূচি, একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি এবং একটি সংস্কারপন্থী রাষ্ট্র গঠনের ঐকমত্য বাংলাদেশের জন্য আশার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।
এই বৈঠক প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ আবারো সম্ভাবনার পথে হাঁটতে প্রস্তুত। এবং এই পথের পুরোভাগে রয়েছেন তারেক রহমান—একজন নেতা, যিনি অতীতের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের দৃষ্টি নিয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।

 

লেখক - বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা 

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status