ঢাকা, ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন তদন্ত ন্যায়বিচারের চাবিকাঠি

ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ

(১ দিন আগে) ১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:২৬ অপরাহ্ন

mzamin

অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় প্রধান উপাদান বা অঙ্গ হচ্ছে তিনটি: তদন্তকারী সংস্থা, প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রকে যারা রিপ্রেজেন্ট করেন) ও বিচারক। বাংলাদেশে তদন্তের কাজটি করে মূলতঃ পুলিশ বিভাগ। গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা ও হয়রানিমূলক মামলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতীতে সরকারের পক্ষে পুলিশের হাস্যকর ও একপেশে ভূমিকা মোটামুটি সবার জানা। এ নিয়ে বহু লেখালেখি ও কথাবার্তা হয়েছে দেশব্যাপী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ তদন্তের ভিত্তিতে বিচারকাজ শুরু হয় বলে ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা প্রথমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু বিচারের যখন রায় আসে তখন সকল আলোচনা ও সমালোচনা হয় মূলত: আদালত ও বিচারককে কেন্দ্র করে। এখানে আদালতের বা বিচারকের কিই-বা করার আছে। তারা তো তাদের সামনে উপস্থাপিত তদন্ত রিপোর্ট এবং এর আলোকে দেয়া সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেন।

বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রধানত: দুটি সিস্টেম কার্যকর আছে। একটি হচ্ছে Adversarial System (প্রতিপক্ষ ব্যবস্থা) আর অপরটি হচ্ছে Inquisitorial System (অনুসন্ধান ব্যবস্থা)। বাংলাদেশ কমন ল’ জুরিসডিকশনের আওতায় Adversarial System অনুসরণ করে। আর এ সিস্টেমে বিচারকের ভূমিকা হয় প্রসিকিউশন ও ডিফেন্সের মধ্যে একেবারে নিস্ক্রিয় (passive) ও নিরপেক্ষ (impartial)। অনেকটা ফুটবল খেলার নিরপেক্ষ রেফারির মতো। পুলিশের তদন্তে বের হওয়া সাক্ষ‍্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রসিকিউশন আসামি বা অভিযুক্তকে প্রসিকিউট করবে আর ডিফেন্স তথা বিবাদীর আইনজীবী তার মক্কেলকে যথাসাধ্য ডিফেন্স করবে। উভয়ের উপস্থাপিত তথ‍্য, সাক্ষ‍্য, প্রমাণ ও সাবমিশনের ভিত্তিতে বিচারক রায় দেবেন। বিচারকদের নিজস্ব উদ্যোগে ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান করার কোনো এখতিয়ার এই সিস্টেমে নেই।

সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভ প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর সঠিক বিচারের সোপান হলো  নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত। পক্ষপাতহীন তদন্ত ছাড়া সন্দেহাতীতভাবে ন্যায়বিচার করা আদালতের পক্ষে অসম্ভব। তদন্ত হলো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ও প্রাথমিক ধাপ। তদন্তের মাধ্যমেই প্রাথমিকভাবে অপরাধ, অপরাধের গতি ও অপরাধীর স্বরূপ উন্মোচিত হয়। তবে তদন্ত মানেই অপরাধ প্রমাণ হয়ে যাওয়া নয়, নয় কারও দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাওয়া। তদন্ত হলো বিচারকের জন্য বিচার্য বিষয় নির্ধারণে অপরাধের উপাদান মাত্র। তদন্তের ভিত্তিতেই একজন বিচারক বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। তদন্ত বিচারের গতিপথ নির্ধারণ করে। সুতরাং তদন্ত কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও আইন এবং বিধিবিধানের যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ, পক্ষপাত ও অস্বচ্ছ তদন্ত বিচারক ও বিচার প্রক্রিয়াকে অন্ধকার জঙ্গলের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। দুর্বল, খামখেয়ালী ও প্রশ্নবিদ্ধ তদন্তের কারণে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রকৃত অপরাধী দূর্বল তদন্তের ফলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়। জঘন্য অপরাধের তদন্ত করে এমন মামুলি ধারায় মামলা দেবে আসামি সহজে জামিন পেয়ে নির্বিঘ্নে ঘোরাবে, বিচারপ্রার্থীকে দেবে হুমকি। আলামতগুলো নষ্ট করে অথবা আলামত যথাযথভাবে হেফাজত না করে তদন্তের রিপোর্ট ও চার্জশিট দিলে আসামিরা যেমন সহজে জামিন পাবে তেমনি বিচারকদের জন্য ফাইনাল শুনানির পর সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করাও কঠিন হবে। ফলে নির্দোষ ব্যক্তি বিচারের সম্মুখীন হয়ে বরং চরমভাবে নিগৃহীত ও নিষ্পেষিত হয়। কখনো বা একজনের পরিবর্তে অন্যজন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দিজীবন কাটায় শুধুমাত্র তদন্তের ত্রুটির কারণে।

বাংলাদেশে তদন্তের সহজ পন্থা হলো আসামিকে দিয়ে দোষ স্বীকার করানো। হ্যাঁ, আইনের বিধান আছে, শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতেই আসামিকে দণ্ড দেয়া যায়। এমনকি অন্য কোনো প্রকার সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকলেও। তবে শর্ত হলো, স্বীকারোক্তিটি সত্য ও স্বেচ্ছাকৃত মর্মে হয়েছে এটা প্রমাণিত হতে হবে। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার অনেক সময় প্রধান লক্ষ্য থাকে আসামিকে রিমান্ডে নেয়া এবং স্বীকারোক্তি আদায় করা। এতটুকু হলে ঠিক ছিল। কিন্তু রিমান্ড বেশ কয়েক বছর ধরে পাইকারি হারে সহজলভ্য বিষয় বানানো হয়েছে। হাস্যকর, ঠুনকো ও মামুলি মামলায় রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে, নেয়া হচ্ছে, দেয়া হচ্ছে। ২০/২৫ বছর আগেও তো রিমান্ডকে এভাবে পাইকারি হারে ব্যবহার করা হতো না। রিমান্ডে অত্যাচার ও নির্মম নির্যাতন করা হয়- এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এমনটি কোনো আইনই অনুমোদন করে না, অথচ এটি হয়ে আসছে দেশে বেশ ক’বছর ধরে।

স্বীকারোক্তি আদায়ের উদ্দেশ্যে রিমান্ডে নিয়ে অন্যায় ও নৃশংস পথ বেছে নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রিমান্ডে বর্বরোচিত বিভিন্ন পদ্ধতিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় মর্মে ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব পদ্ধতির নাকি ভয়ংকর অনেক নামও আছে! এমনকি ‘ক্রসফায়ারের’ নিশ্চিৎ ভয় দেখানোর মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগও অনেক সময় শোনা যায়। এমতাবস্থায় নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ভয়ে অনেকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হোন। এতে অনেক মামলাতেই মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। অযথা নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি পায়। পরিণামে ন্যায়বিচার ব্যর্থ হয়ে অবিচার (miscarriage of justice) করা হয়। ফলে জনমনে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় দানা বাঁধে যা ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার উপর জনগণের মারাত্মক আস্থার সংকট তৈরি করে।

তদন্তের স্বার্থে আইনগতভাবে আসামিকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ও ৩৪৪ ধারায় এ সংক্রান্ত বিধান আছে। রিমান্ডে নেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ। ম্যাজিস্ট্রেট এ সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে মর্মে সন্তুষ্ট হলে রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন। রিমান্ড বিষয়ে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে - রিমান্ডের আদেশ দেয়ার সময় আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, রিমান্ড মঞ্জুরের সময় ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামির শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হয়, আঠারো বছরের কম বয়স্ক শিশুকে কোনোক্রমেই রিমান্ডে দেয়ার সুযোগ নেই ইত্যাদি। আইন রিমান্ডের অনুমোদন দিলেও নির্যাতনকে বৈধতা দেয়নি। বাংলাদেশ বা কোনো সভ্য দেশেই রিমান্ডকালীন নির্যাতন আইনসিদ্ধ নয়। ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল হত্যাকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ‘ব্লাস্ট এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ’ মামলার রায়ে ২০১৬ সালে আপিল বিভাগ ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার ও রিমান্ড সংক্রান্ত ওই নির্দেশনাগুলো মেনে চলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বাধ্যতামূলক। পরিতাপের বিষয় হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে না।

 ১৯৪৮ সালের ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে’র (UDHR) অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, “No one shall be subjected to torture or to cruel, inhuman or degrading treatment or punishment” (অর্থাৎ “কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর বা অমানুষিক বা অপমানজনক আচরণ অথবা শাস্তির শিকার করা যাবে না”)। আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বিচার ও দণ্ড সম্পর্কিত মৌলিক অধিকারের উল্লেখ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদটির ৫ উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না বা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না।

 বাংলাদেশে তদন্তের পর্যায়ের আরেক সমালোচিত ও ন্যাক্কারজনক অধ্যায় হলো গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন। সভ্য দুনিয়ায় এমনটি হয় না। বেশ কয়েক বছর ধরে এমন আজগুবি সংস্কৃতি চালু হয়ে আসছে। কোনো ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তার সঙ্গে ফটোসেশন করা হয়। জব্দকৃত মালামাল টেবিলে সাজিয়ে রেখে ‘নেতিবাচকভাবে’ প্রদর্শন করা হয়। প্রেস ব্রিফিং করে অভিযুক্ত ও সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতকে রীতিমতো সরাসরি অপরাধী বলে আখ্যা দেয়া হয়। অথচ গ্রেপ্তারকৃত ঐ ব্যক্তির কিছু বলার বা ডিফেন্ড করার কোনো সুযোগও থাকে না। কখনো কখনো আসামির বুকের সঙ্গে ‘মাদক ব্যবসায়ী’, ‘ডাকাত’, ‘খুনি’, ‘জঙ্গি’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ডও ঝুলিয়ে রাখা হয়! অবস্থা এমন মনে হয় যে, অপরাধ প্রমাণিত এবং ওই ব্যক্তিই নি:সন্দেহে দোষী। সংগঠিত ঘটনা বা গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি যদি ‘সাড়া জাগানো‘ বা ‘আলোচিত’ হয়, তাহলে গণমাধ্যমও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সংবাদ মাধ্যমগুলো স্ব-স্ব কাটতি বাড়াতে  চাঞ্চল্যকর ঘটনার মুখরোচক বর্ণনায় মুখর হয়ে ওঠে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে তার মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই আইন সমর্থন করে না।

 আইনের কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও প্রায়শই এমন অযাচিত ব্যাপার ঘটে চলেছে। একটি সভ্য দেশের বিচারব্যবস্থায় এটি অগ্রহণযোগ্য। গণতন্ত্রের সুতিকাগার বৃটেনে এমনটির চিন্তাই করা যায় না। ফৌজদারি আইনের শাশ্বত মূলনীতি হলো সন্দেহাতীতভাবে যথাযথ কোর্টে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি ‘নির্দোষ’ - “Everyone is innocent until proven guilty in a competent court of law”। আইনের পরিভাষায় যাকে ‘নির্দোষিতার অনুমান’ (presumption of innocence) বলা হয়। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, Everyone charged with a penal offence has the right to be presumed innocent until proved guilty according to law in a public trial ….” (অর্থাৎ “দণ্ডনীয় অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেকেরই প্রকাশ্য বিচারে আইন অনুসারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে ধরে নেয়ার অধিকার রয়েছে”)।

 আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে জঘন্য ফৌজদারি অপরাধের (যেমন হত্যা, ধর্ষণের মতো গুরুতর) অভিযোগ আসলে পুলিশ দ্বারা গঠিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দিয়ে তদন্ত করানো হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সহকর্মীদের দ্বারা সহকর্মীদের বিরুদ্ধে আনিত গুরুতর অভিযোগের তদন্ত কতটুকু সুষ্ঠু, সঠিক, পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষ হবে? বাংলাদেশের পারিপার্শিক অবস্থা ও পরিস্থিতিতে পুলিশ কর্তৃক পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত অনেকটা অসম্ভব। সুতরাং ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে হবে।

 অনেক সময় নিরপরাধ মানুষও অযথা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। কেউ ঘটনা ও পরিস্থিতির শিকার হোন। কেউবা ষড়যন্ত্রেরও শিকার হোন। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অনেককে হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। সবার ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। এটা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। সবার আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। আদালতের বিচারকরা ন্যায় বিচার করতে পারবেন না যদি না অপরাধের সঠিক, পক্ষপাতহীন ও স্বচ্ছ তদন্ত হয়। যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পুলিশই অপরাধের তদন্ত করে, সেহেতু পুলিশ বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। যেভাবে আমাদের পুলিশ বিভাগ আছে সেভাবে রেখে সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্তের আশা করা হবে তিতা নীম গাছ থেকে সুস্বাদু আম আশা করা!

পুলিশ বাহিনীকে একটি দক্ষ, মানবিক ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত করতে হবে। তাদেরকে intensive ও extensive প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে কোনো মূল্যে তাদেরকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে রাখতে হবে। পলিসিগত সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক সরকার। কিন্তু পুলিশের অপারেশনগত ব‍্যাপারে পুলিশ সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে। তাদের কমান্ড স্ট্রাকচার (একেবারে আইজি থেকে সাধারণ এসআই পর্যন্ত) হবে কেবলমাত্র সংবিধান ও বিধিবদ্ধ আইনের আওতায় - রাজনীতিবিদরা কোনো ধরনের নাক গলাতে পারবে না যেমনটি বৃটেনে বিদ্যমান। এমনটি আছে বলেই তো সাধারণ একজন পুলিশ অফিসার সিটিং প্রধানমন্ত্রীকে তার অফিসে গিয়ে জরিমানা করে আসতে পারে! এমন দক্ষ ও পেশাদার পুলিশ বাহিনী গড়তে পারলে যেকোনো অপরাধের সঠিক ও ত্রুটিহীন তদন্ত হবে। আর এমনটি হলে বিচারকরা সঠিক বিচার তথা ন্যায়বিচার করতে পারবেন। নতুবা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে সুদূরপরাহত।

 

নাজির আহমদ: বিশিষ্ট আইনজীবী, রাষ্ট্রচিন্তক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার।

 Email: [email protected]

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status