নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
জাতীয় পার্টি, ভুয়া খবর এবং নিজের ঢোল নিজে পেটানো
শামীমুল হক
২৩ আগস্ট ২০২৩, বুধবার
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান হওয়ার সংবাদ প্রকাশের পরপরই পাল্টা এক ভিডিও বার্তা দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসলে এটা একটা ফেক নিউজ। প্রথমত হলো- এ ধরনের নিউজটা যারা দিয়েছেন কয়েকজন কো-চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেন নাই বা এ ধরনের সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করেন নাই। সাইন দেন নাই। দেয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়ত হলো- জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছা করলেই চেয়ারম্যান হতে পারবে না। ইচ্ছা করলেই যে কাউকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না। এটার একটা নিয়ম আছে
আসুন নিজের ঢোল নিজে পিটাই।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দলীয় প্যাডে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেকে নিজেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-‘আমি বেগম রওশন এরশাদ এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো- চেয়ারম্যান এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’ কিন্তু স্বাক্ষরের পর রওশান এরশাদ তার পরিচয় দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান হিসেবেই। যেখানে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দায়িত্ব গ্রহণ করলাম বলেছেন, সেহেতু তিনি স্বাক্ষর করবেন চেয়ারম্যান হিসেবেই। এটাই নিয়ম। সে যাই হোক এর আগে রওশদ এরশাদের সম্মতিক্রমেই জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এ জন্য অবশ্য রওশনকে সংসদীয় দলের প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে মানতে হয়েছে। অর্থাৎ দুই জনের পক্ষ থেকেই ছাড় দেয়া হয়েছে। দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারতেন। তারপক্ষে বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যরা। তারপরও জিএম কাদের দলের স্বার্থে তা মেনে নিয়েছেন। ওদিকে স্বামীর গড়া দল হিসেবে রওশন এরশাদ স্বামীর অবর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার দাবিদার। তিনিও সে হিসেবে দেবরকে ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু এখন এমন কী হলো যে, রওশন এরশাদকে জাপা’র চেয়ারম্যান হতে হবে। আর এ ঘোষণা তাকে নিজেই দলীয় প্যাডে দিতে হবে। এর জন্য কী রওশন এরশাদের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নেতাও নেই। যিনি বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারতেন।

এ ছাড়া কোনো ধরনের মিটিং বা কাউন্সিল ছাড়া এ ঘোষণা আসা কতোটুকু গ্রহণযোগ্য নেতাদের কাছে? অবশ্য তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। সে যাই হোক-এটা তাদের দেবর-ভাবীর ব্যাপার। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলে এমন হবে কেন? কার স্বার্থে নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন? এরপর কি হবে? একটি দলে তো দুই জন চেয়ারম্যান থাকতে পারেন না। একজনই থাকবেন। দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কে পাবেন? আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যেহেতু এসব হচ্ছে সেহেতু প্রতীক মূল বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আবারো কি লাঙ্গল কাঠগড়ায় দাঁড়াবে? তাহলেও তো লাঙ্গল একজনই পাবেন। যিনি লাঙ্গল পাবেন তিনিই আসল জাতীয় পার্টি। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে- এত কিছু কেন ভাবছি? দেবর-ভাবীর এ মান-অভিমান আবার যেকোনো সময় মিইয়ে যাবে। এতদূর হয়তো যাওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না। তবে এমন এক সময় রওশন এরশাদ ঘোষণাটি দিলেন যখন জিএম কাদের ভারত সফরে রয়েছেন। এ ঘোষণার পরপরই এরশাদপত্নীর এই দাবিকে ‘ভুয়া খবর’ বলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দলের অন্য শীর্ষ নেতারাও বলছেন, তারা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে সম্মতি দেননি।
বরাবরই জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আলোচনার শীর্ষে চলে আসে জাতীয় পার্টি। প্রায় সময়ই খবরের শিরোনাম হয় এই দলটি। এর আগে ২০১৯ সালের এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কয়েকদফা টানাটানি হয় দেবর-ভাবীর মধ্যে। দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। বেশির ভাগ নেতা জিএম কাদেরকে সমর্থন করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। এতদিন জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদ কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এটাও ঠিক চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান হওয়ার সংবাদ প্রকাশের পরপরই পাল্টা এক ভিডিও বার্তা দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসলে এটা একটা ফেক নিউজ। প্রথমত হলো- এ ধরনের নিউজটা যারা দিয়েছেন কয়েকজন কো-চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেন নাই বা এ ধরনের সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করেন নাই। সাইন দেন নাই। দেয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়ত হলো- জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছা করলেই চেয়ারম্যান হতে পারবে না। ইচ্ছা করলেই যে কাউকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না। এটার একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়মের মধ্যে পড়তে হবে। জাতীয় পার্টি গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। আমার মনে হয়, কিছু ব্যক্তি যারা দল থেকে বহিষ্কৃত তারা ম্যাডামের নামটা ব্যবহার করে এরকম একটা ফেক নিউজ দিয়েছে। আমি সারা দেশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অনুরোধ করবো-এ ধরনের কোনো ঘটনা জাতীয় পার্টিতে ঘটেনি। বা ঘটার সুযোগ নাই। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যে নতুন করে খেলা শুরু হবে তা আগেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল। যার শুরুটা মঙ্গলবার হলো। এরপর কী হয় সেটাই এখন দেখার পালা।
দুই: রওশন এরশাদ যেমন নিজেকে নিজেই চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন, তেমনি কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিজেরাই একটি আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছেন। বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা চেয়ে আইনের এমন খসড়া অনুমোদন বিরল। আইনটি পাস হলে নির্বাচন কমিশনাররা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের মতো পেনশন, ভ্রমণ-ভাতা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর সিইসি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সমপর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর এ আইনটি হলো- ‘পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার আইন-২০২৩’।
পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী আইনের যে খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে সেখানে বিচারপতিদের বেতন, সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত তিনটি পৃথক আইনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ভ্রমণ-ভাতা) আইন, ২০২১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩। অনুমোদন পাওয়া খসড়া আইনের ধারা-৪ এর (ক) ও (খ) উপ-ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আপাতত বলবৎ প্রযোজ্য আইনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ যেসব চিকিৎসা সুবিধা, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, অনুরূপ চিকিৎসা সুবিধা, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারগণও পাবেন। এ ছাড়া খসড়া আইনের ধারা-৫ এর উপধারা (১)-এ উল্লেখ করা হয়েছে, আপিল বিভাগের একজন বিচারক কর্মের সহায়ক শর্তাবলীসহ অন্যান্য পারিতোষিক, ভাতা, প্রাধিকার ও সুবিধাদি যেই হারে বা ক্ষেত্রমত, শর্তে প্রাপ্য হন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহা সেই হারে বা ক্ষেত্রমত শর্তে প্রাপ্য হইবেন। অন্যদিকে উপধারা (২)-এ উল্লেখ করা হয়েছে ‘হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক কর্মের সহায়ক শর্তাবলীসহ অন্যান্য পারিতোষিক, ভাতা, প্রাধিকার ও সুবিধাদি যেই হারে বা ক্ষেত্রমত, শর্তে প্রাপ্য হন, নির্বাচন কমিশনারগণ তাহা সেই হারে বা ক্ষেত্রমত শর্তে প্রাপ্য হইবেন।’ এখন ইসি সচিবালয় তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখানে ভেটিংয়ের পর মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়ে সংসদে যাবে। সংসদে আইনটি পাস হলেই তারা এ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো-সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করা কেউ কি পেনশন পেতে পারেন? আর যারা সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করেন তারা প্রত্যেকেই অবসরপ্রাপ্ত আমলা কিংবা অন্য কোনো ক্যাডারের। যারা তাদের আগের সরকারি চাকরির পেনশন এমনিতেই পাচ্ছেন। একজন লোক সরকার থেকে কয়বার পেনশন নেবেন?
পাঠকের মতামত
সবার আগে কি ভাবে পরবর্তী নির্বাচনে আম-লীগকে ক্ষমতায় আনা যায় সেই চেষ্টা করেন। এই সমস্ত টাকা পয়সা, সু-স্বাস্থ্যএর ব্যবস্থা পরেও করা যাবে। এই সমস্ত টুকটাক টাকা পয়সার ব্যবস্থা করা আম-লীগের লাইগা কুনু বেফারোই না। আফনেগো মুনে চাইলে বেগমফারাতো আফনেগো থাহনের ব্যবস্থা কইরাল্বো।