নির্বাচিত কলাম
আন্তর্জাতিক
কোন পথে মালয়েশিয়া পাকিস্তান, মালদ্বীপ
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১৬ আগস্ট ২০২৩, বুধবার
এই নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের ওপর থেকে চাপ কমিয়েছে। এতে তার সরকারের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। উল্লেখ্য, ৭৬ বছর বয়সী আনোয়ার ইব্রাহিম ঐকমত্যের সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নভেম্বরে। তার আগে অপ্রত্যাশিতভাবে জাতীয় নির্বাচনের ফল ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে ঠেলে দেয় দেশটিকে। তাতে সবচেয়ে বেশি আসনে বিজয়ী হয় আনোয়ারের পিএইচ পার্টি। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন তিনি তা পাননি। রাজার উৎসাহে পিএইচ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো একত্রিত হয়ে নতুন সরকার গঠন করে। এর সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতিতে জড়িত ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (উমনো)।
মালয়েশিয়ায় হয়ে গেল আঞ্চলিক নির্বাচন। তাতে বড় কোনো জয় পায়নি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমতাসীন জোট। একে তার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা।
তিনি নওয়াজ শরীফকে দেশে ফেরানোর প্রত্যয়ও ঘোষণা করেছেন। এখানে স্পষ্টত, তাদের ওপর আছে দেশটির ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ। তারা যা চাইবে- তাই সেখানে সম্ভব। কারণ, ১৯৪৭ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় অর্ধেক সময় শাসন করেছে সেনাবাহিনী। এখনো ক্ষমতায় তাদের ছায়া স্পষ্ট। অন্যদিকে ইমরান খানের পক্ষে দৃশ্যত আছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। এই যে সংঘাতময় পরিস্থিতি এর মধ্যে ইমরান খানের আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে তাকে ৫ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে। রাজনীতির খেলায় পিছিয়ে পড়েছেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। তাকেও নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না আবদুল্লাহ ইয়ামিন (৬৪)। তাকে নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ফৌজদারি অপরাধে আদালত তাকে অভিযুক্ত করে ১১ বছরের জেল দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে তাকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে এই সাজা দেয়া হয়। তিনি বিরোধী দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপের (পিপিএম) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাজা দেয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় তার দল। ১লা আগস্ট তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা প্রত্যাখ্যান করে। তারা জানিয়ে দেয়, সাজার কারণে তিনি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আর বৈধ নন। এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানায় পিপিএম। এর জবাবে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় সংবিধানের দুটি ধারার অধীনে ফৌজদারি অপরাধে দ-িত কোনো ব্যক্তি সরকারি পদের যোগ্য নন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আবদুল্লাহ ইয়ামিন নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান নিজ দল পিপিএমের প্রতি। তার এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে দল। নিজের দল পিপিএমের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট এবং তার সঙ্গে জোটের শরিক পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বর্জনের ডাক প্রত্যাখ্যান করে। এ বছরের শুরুর দিকে দেশটিতে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট সোলিহ’র দল মালদ্বীভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি)তে ভাঙন দেখা দেয়। পার্লামেন্টের স্পিকার ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের প্রতি অনুগতরা আলাদা হয়ে যান। তারা নতুন একটি দল গঠন করেন। তার নাম দেয়া হয় ‘দ্য ডেমোক্রেটস’। অবশেষে এ বছর জুনে এমডিপি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন নাশিদ। এশিয়ার দেশে দেশে রাজনীতিতে এমনি সব নোংরা খেলা চলছে। একপক্ষ অন্যপক্ষকে দমিয়ে রাখতে ব্যবহার করছে আদালত, প্রশাসন, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের। বিশেষ করে যারা সরকারে- এক্ষেত্রে তারা সুবিধা নিচ্ছে বেশি।

এমন অবস্থায় আঞ্চলিক নির্বাচনে তিনটি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমতাসীন জোট। তবে অফিসিয়াল ফলাফলে দেখা যাচ্ছে মালয় দ্বীপাঞ্চলে সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিরোধী দল। শনিবার দেশটির ৬টি রাজ্যে নির্বাচন হয়। এতে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ৯ মাস বয়সী তার জোট সরকারের জন্য একে দেখা হচ্ছে একটি গণভোট হিসেবে। নির্বাচন কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত যে ফল পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে আনোয়ার ইব্রাহিমের বহুজাতিভিত্তিক পাকাতান হারাপান (পিএইচ) নির্বাচনের আগে তাদের দখলে থাকা তিনটি রাজ্যে বিজয় অর্জন করছে। এগুলো হলো- সেলাঙ্গর, পেনাং এবং নেগেরি সেমবিলাম। এর মধ্যে প্রথম দুটি রাজ্য মালয়েশিয়ার সবচেয়ে ধনী। অন্যদিকে বিরোধী দল পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন) দেশটির হার্টল্যান্ড রাজ্য হিসেবে পরিচিত কেদাহ, কেলানতান এবং উত্তরের তেরেঙ্গাগানুতে বিজয় পেতে যাচ্ছে। পিএন জোটে আছে ধর্মীয় রক্ষণশীল প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টিও (পিএএস)। শনিবার গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের এই ফল জনগণের সিদ্ধান্ত। তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হবে। এই নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় সরকার আরও শক্তিশালী হবে। আমরা মালয়েশিয়াকে আরও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলবো।
অন্যদিকে নির্বাচনের এই ফলকে ক্ষমতাসীন জোটের জন্য পরাজয় বলে অভিহিত করেছে বিরোধীরা। পিএনের নেতৃত্বে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন। সেলাঙ্গরে তাদের আসন ছিল এর আগের নির্বাচনে মাত্র ৫টি। তা এবার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ হয়েছে। এর ফলে সেখানে ক্ষমতাসীন জোট দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে। অন্যদিকে পেনাংয়ে বিরোধী ব্লক বিজয়ী হয়েছে ১১ আসনে। আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার তারা সেখানে একটি আসন বেশি পেয়েছে। আগের নির্বাচনে নেগেরি সেমবিলানে বিরোধীদের আসন সংখ্যা ছিল শূন্য। সেখানে তারা এবার চমক দেখিয়েছে। জিতেছে ৫টি আসনে। এই ফলকে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। তিনি বলেছেন, পাকাতান হারাপান নেতৃত্বাধীন সরকারকে এই গণভোটের মাধ্যমে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আরও কড়া বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, এই পরাজয়ের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা উচিত আনোয়ার ইব্রাহিম ও তার ডেপুটি জাহিদ হামিদির।
তবে বিশ্লেষকরা বলেন, এই নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের ওপর থেকে চাপ কমিয়েছে। এতে তার সরকারের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। উল্লেখ্য, ৭৬ বছর বয়সী আনোয়ার ইব্রাহিম ঐকমত্যের সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নভেম্বরে। তার আগে অপ্রত্যাশিতভাবে জাতীয় নির্বাচনের ফল ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে ঠেলে দেয় দেশটিকে। তাতে সবচেয়ে বেশি আসনে বিজয়ী হয় আনোয়ারের পিএইচ পার্টি। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন তিনি তা পাননি। রাজার উৎসাহে পিএইচ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো একত্রিত হয়ে নতুন সরকার গঠন করে। এর সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতিতে জড়িত ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (উমনো)। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে যে জোট সরকার গঠন করা হয়েছে তা অস্থিতিশীল। তাদেরকে টেকসই হতে হলে মালয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেতে হবে।
প্যাসিফিক রিসার্স সেন্টার অব মালয়েশিয়া নামের থিংকট্যাংকের বিশ্লেষক ওহ আই সান বলেছেন, আনোয়ার ইব্রাহিম শক্তিশালী ইসলামিক দল পিএএসের চ্যালেঞ্জকে উড়িয়ে দেয়ার পর শনিবারের নির্বাচনে যে ফল এসেছে তা আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য মুখে আঙ্গুল দিয়ে নক কাটার মতো অবস্থা। এ অবস্থায় আনোয়ারকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত তার দল যে টিকে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সোলারিস স্ট্র্যাটেজিস সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুস্তাফা ইজ্জুদ্দিন মনে করেন, স্থিতাবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে এমন কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখোমুখি না হওয়া আনোয়ারের জন্য স্বস্তির, এই নির্বাচন সেটাই মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু হতাশার বিষয় আছে। তা হলো তার জোট বড় কোনো অর্জন করতে পারেনি এই নির্বাচনে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৭ সালে। তার আগে যথেষ্ট সময় পাবেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ার জটিল রাজনীতিতে দর কষাকষি করে সমর্থন বাড়াতে পারেন।
পাঠকের মতামত
নাস্তিক সেকুলার এবং ইয়াহুদী খৃষ্টান হিন্দু বৌদ্ধদের অসন্তোষের মুখে কোন ইসলাম পন্থী বা ইসলামের প্রতি সহানুভুতিশীল মুসলিম নেতার ক্ষমতায় থাকার শক্তি আপাততঃ নাই।