ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক

কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের নির্বাচন

শহীদুল্লাহ ফরায়জী
৩ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবারmzamin

ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্নে অগণিত অপকৌশলের প্রয়োগ করবে। তারা কোনোক্রমেই বিএনপি-সহ বিরোধী দলের রাজনীতি কম্বোডিয়ার মতো নিষিদ্ধ করবে না; পুরোপুরি নির্মূলও করবে না। নির্বাচন বর্জন বা প্রতিহত করার ঘোষণাকেও আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করবে না। সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করবে না। সকাল-বিকাল পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ডিক্লারেশন বাতিল করবে না। বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বামজোট এবং ইসলামী দলসমূহের নির্বাচন বর্জনের সুবাদে প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচনে সরকারের জালিয়াতি করার প্রয়োজন পড়বে না। তারা প্রমাণ হিসেবে হাজির করবে- দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। গণতন্ত্র যে মৃত্যুবরণ করে নাই তার জন্য সরকারি দল বড় বিজয় মিছিলের আয়োজন করবে


কিংডম অফ কম্বোডিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, আর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন। দুই দেশের নির্বাচন প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা।
সম্প্রতি কম্বোডিয়ার সাধারণ নির্বাচনে একতরফা ভাবে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের দল আবারো ভূমিধস বিজয় লাভ করেছে। শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া, প্রতিযোগিতা ছাড়া, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নির্বাচনটি সারা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রীর দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) নির্বাচনী দৌড়ে একাই লড়েছে, একাই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। বিগত তিন দশক ধরে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করে, প্রতিপক্ষকে নিপীড়ন-নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত বিরোধী দলকে প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে হয়নি। কম্বোডিয়ার এবারের সাধারণ নির্বাচনে মেরুদণ্ডহীন, গণবিচ্ছিন্ন ১৭টি দল অংশগ্রহণ করে। যারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের দল জনগণের সম্মতি ও প্রতিযোগিতাবিহীন ভূমিধস বিজয়ের হাস্যকর সামর্থ্য অর্জন করে।

হুন সেন ক্ষমতায় রয়েছেন ৩৮ বছর ধরে। প্রায় সারা বিশ্বই এই দীর্ঘদিনের ক্ষমতাকে ধোঁকাবাজির মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে। দুই মাস আগে প্রধান বিরোধী দল ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে নিবন্ধন সংক্রান্ত কাগজপত্রের ঘাটতি দেখিয়ে, আইনের কৌশলে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য করে তোলে। অর্থাৎ ক্যান্ডেল লাইট পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।

গত বছর স্থানীয় নির্বাচনে যারা সরকারের প্রচণ্ড ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট জালিয়াতি, হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করেও ২২% ভোট পায়। তাদেরকেই নিষিদ্ধ ও অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণীয় হতে পারে না। 

এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ‘গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসক’ হুন সেন ১৯৮৫ সাল থেকে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ফ্যাসিবাদ-নাৎসিবাদকে যেভাবে চিহ্নিত করা যায় এটাকেও ‘নির্বাচিত স্বৈরাচার’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ক্ষমতা ধরে রাখার এসব অগণতান্ত্রিক কৌশল কেবলই গণতন্ত্রের ধ্বংস ডেকে আনে। বিরোধী দলের উপর জেল, জুলুম, মামলা, কারণে-অকারণে গ্রেপ্তার ও কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ, সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ রাষ্ট্রের প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় রেখে হুন সেন অপকীর্তির উপর নির্ভর করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করছেন। এমনকি দেশের আদালতকেও ব্যবহার করছেন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। এর ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনেও কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি ১২৫ আসনের পার্লামেন্টে জিতেছে ১২০ আসনে আর সরকারের পাতানো বিরোধী দল ফানসিনপেক পার্টি পেয়েছে পাঁচটি আসন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি টানা ৩৮ বছর নিয়ন্ত্রণ করছেন জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন নির্বাচনী মডেলের স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বয়স এখন ৭০ বছর। তাই তিনি ২০২১ সালেই ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে সর্বসম্মতভাবে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বড় ছেলে বর্তমান সেনাপ্রধান হুন মানেট-কে মনোনীত করেছেন। এতে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নির্বাচনে জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে। ভাবী প্রধানমন্ত্রী হুন মানেটের বয়স এখন ৪৫ বছর। কর্তৃত্ববাদী শাসনের আদর্শই হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পদ্ধতিগতভাবে শাসকদের ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।

অতীতের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পথ অনুসরণ করে হুন সেন ক্ষমতার ব্যক্তিগতকরণ সম্পন্ন করেছেন। গত ৩৮ বছর ধরে পরিবার ও আত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ দান, নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, নিজস্ব বলয়ে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় একচেটিয়া কর্তৃত্ব- কম্বোডিয়ায় সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তার দল ১৯৭৯ সাল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি শাসন করছে। জনপ্রিয় বিরোধী দল- যারা সরকারের পতন ঘটাতে পারে তাদেরকে কাল্পনিক অভিযোগে নিষিদ্ধ করা, বলপ্রয়োগে বিক্ষোভ দমন করা, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার খর্বকরণ, সুশীল সমাজকে সীমিতকরণ এবং গণমাধ্যমকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পথ প্রশস্ত করাই আছে। হুন সেন ২৭শে জুলাই বুধবার, জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ করেছেন ছেলের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য।
কিংডম অফ কম্বোডিয়ার সংবিধানের preambleবলা হয়েছে: 
Having known a grand civilization of a prosperous, powerful, and glorious nation whose prestige radiates like a diamond, Having endured sufferings and destructions and having experienced a tragic decline in the course of the two decades, Having awakened, stood up with a resolute determination to strengthen the national unity, to preserve and defend Cambodia’s territory and its precious sovereignty and the prestige of Angkor civilization, and to restore Cambodia into an “Island of Peace” based on a multi-party liberal democratic regime guaranteeing human rights and the respect of law, and responsible for the destiny of the nation always evolving toward progress, development, prosperity, and glory. 
‘অর্থাৎ একটি মহান সভ্যতার উত্তরাধিকার- সমৃদ্ধ, শক্তিশালী এবং গৌরবময় জাতির যার প্রতিপত্তি বিকিরণ করে একটি হীরার ন্যায়। দুর্ভোগ এবং ধ্বংস সহ্য করে এবং দুই দশক সময় ধরে মর্মান্তিক অবনতির পর কম্বোডিয়া জেগে ওঠে এবং জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। কম্বোডিয়ার ভূখণ্ড রক্ষা এবং সংরক্ষণ, এর মূল্যবান সার্বভৌমত্ব এবং আঙ্কর সভ্যতার মর্যাদা রক্ষা করা ও বহুদলীয় উদার গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কম্বোডিয়াকে একটি ‘শান্তির দ্বীপে’ পুনরুদ্ধার করা। মানবাধিকার, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, জাতির ভাগ্যের দায়িত্ব এবং উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও গৌরবের অগ্রযাত্রায় শামিল থাকা’।

কিন্তু কম্বোডিয়া আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী আদর্শের এক মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সর্বশেষ প্রহসনমূলক ও জালিয়াতিপূর্ণ একটি সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন। ক্ষমতার এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নির্বাচনের প্রশ্নে সিরিয়ার হাফিজ আল আসাদ, কঙ্গোর লরেন্ট কাবিলা এবং উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মতো কম্বোডিয়ার হুন সেন একই পথ বেছে নিয়েছেন। এই রুদ্ধদ্বার গণতন্ত্র বা নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র অব্যাহত থাকায় বিশ্ব রাজনীতির চাপের মুখে পড়েছে দেশটি। জবাবদিহিহীন শাসন ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠনে কম্বোডিয়ার সংকটের গভীরতা ও ব্যাপ্তি এ পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
কম্বোডিয়ার নিরিখে গণতন্ত্রের সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি চালচিত্র বিশ্লেষণ করা যায়।

আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের প্রকৃতি এবং মাত্রা বহুমুখী। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত নির্বাচন আছে কিন্তু ভোটারদের ভোট দেয়ার অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে, অধিকার সীমিত করা হয়েছে এবং সাংবিধানিকভাবে জবাবদিহি ব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়েছে। 

বর্তমান সরকারের পক্ষে প্রকৃত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হবে না। কারণ সরকার তার ধ্যান-ধারণা, চেতনা থেকে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘নির্বাচন’ বা ‘ভোটাধিকার’কে গুটিয়ে ফেলেছে। একতরফা নির্বাচন বা নামমাত্র নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সাংবিধানিক চেতনা অপসারণ করে  যেকোনো উপায়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখা ‘সরকারের নৈতিকতায়’ অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে। সুতরাং জনগণের অভিপ্রায়, রাস্তায় আন্দোলন, রক্তপাত, ভিসা নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কোনোটাই সরকারকে গণতান্ত্রিক হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাতে পারবে না।
ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ‘জনগণ’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয়-  নির্বাহী বিভাগকেই সরকার ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে সরকারের আন্তরিকতা এবং প্রতিশ্রুতির কোনো অভাব থাকবে না। অক্টোবরের ২৯ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা। নির্বাহী বিভাগের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন নভেম্বরেই নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করবে। ডিসেম্বরে মনোনয়ন দাখিল, প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসবই নির্ধারিত।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের হাতে অনেক খেলা। বিরোধী দল বিএনপি’র জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে আগুন সন্ত্রাসসহ পুরনো বা নতুন গায়েবি মামলা চালু করার একটি পদক্ষেপ নিলেই বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। নির্বাচনকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি সরকার খারিজ করে দিলেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সকল পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে ২০১৪ এবং ২০১৮-এর মতো ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত এবং স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যায়িত করে নির্বাচনকে জয়লাভের উপায় হিসেবে সরকার ব্যবহার করবে। বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশে আরেকটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাতে কম্বোডিয়ার মতো ‘নামমাত্র’ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি সরকার সম্পন্ন করে রেখেছে।
এতে সমাজের বিভাজন আরও গভীর ও প্রসারিত হবে এবং স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করবে, এগুলো সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নয়।

ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্নে অগণিত অপকৌশলের প্রয়োগ করবে। তারা কোনোক্রমেই বিএনপি-সহ বিরোধী দলের রাজনীতি কম্বোডিয়ার মতো নিষিদ্ধ করবে না; পুরোপুরি নির্মূলও করবে না। নির্বাচন বর্জন বা প্রতিহত করার ঘোষণাকেও আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করবে না। সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করবে না। সকাল-বিকাল পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ডিক্লারেশন বাতিল করবে না। বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বামজোট এবং ইসলামী দলসমূহের নির্বাচন বর্জনের সুবাদে প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচনে সরকারের জালিয়াতি করার প্রয়োজন পড়বে না। তারা প্রমাণ হিসেবে হাজির করবে- দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। গণতন্ত্র যে মৃত্যুবরণ করে নাই তার জন্য সরকারি দল বড় বিজয় মিছিলের আয়োজন করবে। নির্বাহী বিভাগ সাংবিধানিক নির্দেশ মোতাবেক নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল সংস্থা বা ব্যক্তিকে সংবিধানের রক্ষক ও সমর্থক হিসেবে ‘রাষ্ট্রীয় সম্মাননা’ দেবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক জটিলতার সহজ সমাধান করে ফেলার জন্য সরকার পরম তৃপ্তির সঙ্গে আত্মতুষ্টি প্রকাশ করবে এবং গণতন্ত্র হত্যা করে বিরোধী দলকে ‘গণতন্ত্রের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করবে।

নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে কম্বোডিয়াকে গণতন্ত্র হত্যার বৈধতা না দেয়ার বৈশ্বিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে বাংলাদেশকেও সে সংকট মোকাবিলা করতে হবে। সরকার দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের গভীর খাদে নিয়ে যাবে অথচ নিজেকে সংকটের বিকল্পহীন ‘পরিত্রাতা; হিসেবে হাজির করবে।
দ্বাদশ সংসদের ‘নামমাত্র’ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বড় বড় শক্তির আকাক্সক্ষার সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে-অভ্যন্তরীণ এবং ভূ-রাজনীতিতে দেশ চরম সংকটে পড়বে। অনেক কিছুই নির্ভর করছে চলমান আন্দোলন, সংগ্রাম ও ভূরাজনীতির গতি-প্রকৃতির উপর।

লেখক: গীতিকবি
[email protected]

 

পাঠকের মতামত

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সময়ের ব‍্যাপার । একের পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঘটনের বিবৃতি জাতী সংঘের উদ্যোগ আমেরিকার একের পর ষ্টেইড় ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি এবং দেশের রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতির আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ক্ষেত্র দ্বারপ্রান্তে। দেশের নির্বাহী প্রধান সহ সকল রাজনৈতিক নেতারা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আমেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদমুখর। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মি এমনকি আওয়ামীলীগ পক্ষের মানুষেরা দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেননি এটি নির্মম সত্য। আওয়ামীলীগ একেবারেই আইন শৃংখলা বাহিনীর উপরই নির্ভরশীল হয়ে গেছে। অনিবার্য সংঘাতময় পরিস্থিতি চুড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ। বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদ সরকার প্রধান কুট কৌশলে অত্যন্ত পারদর্শি। তাদের প্রায়োরিটি হল, ক্ষমতা, ব্যাক্তি, দল এবং সবার শেষে দেশ। ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কোনকিছু নাই যা তাদের দারা করা সম্ভব নয়। বাসে আগুন দেয়ার সময় পুলিশ বাসের দুই দিকেই অবস্থান করছিল। পুলিশের সহায়তায় বাসে আগুন। আগুন সন্ত্রাসীরা আবারো মাঠে। বাস পোড়ানোর সরকারি নাটক আবার শুরু হয়েছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরির জন্য এই জগন্য কাজ যে ভোটচোরের সন্ত্রাসী বাহিনী করেছে সেটা প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসের ডাইভারের বর্ণনায় প্রমান হয়েছে। আর জনগন ও এদের এইসব পুরাতন নাটক দেখতে দেখতে এদেরকে হাড়ে হাড়ে চিনে গেছে। এইসব পুরাতন খেলা দিয়ে এইবার আর শেষ রক্ষা হবে না। আওয়ামী পুলিশ এদের দেখে তো মনে হচ্ছে এরা রাষ্ট্রের পুলিশ না, এরা ছাত্রলীগ যুবলীগ পুলিশের ইউনিফর্ম পড়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ন্যাক্করজনক হামলা করছে। পুলিশের সকল স্তরেই তো গুন্ডা লীগের সম্প্রীক্ততা যাচাই করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পুলিশ জনগনের করের টাকায় বেতন নিয়ে জনগনের বিরুদ্ধেই লাঠি গুলি চালায়। গণতান্ত্রিক দেশে সবার কথা বলার অধিকার আছে।আর তাছাড়া বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে পুলিশ-ই বেশী বিশৃঙ্খলা করছে। বিরোধী দল তারা তো শুধু অবস্থান নিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে, তারা তো কোন বিশৃঙ্খলা করছে না।

Tulip
২ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ১০:৪১ অপরাহ্ন

পৃথিবীর সকল কতৃত্ববাদী সরকার সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সার্বভৌমত্বের ক্ষতিই বেশী হয়েছে, জনগণের অধিকার ভুলুন্ঠিত হওয়ার পর বন্ঞ্চিত জনগণ পরাশক্তি গুলোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর দেখে গেছে মুক্তি দেওয়ার অজুহাতে সামরিক শক্তিও প্রয়োগ হয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে সেসব দেশ গৃহযুদ্ধের অতল গহ্বরে তলিয়ে আছে, আমরা আশা করবো শাসক শ্রেনী সেটা অনুধাবন করবে এবং সমোঝোতার পথ বের করবেন।

Nizam Uddin Pramanik
২ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ১০:৪১ অপরাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status