নির্বাচিত কলাম
সময় অসময়
খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের চতুর্থ অধ্যায় এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা
রেজানুর রহমান
২ আগস্ট ২০২৩, বুধবার
বানরের পিঠা ভাগ করার পরিণতি সম্পর্কে আমরা বোধকরি সকলেই কম বেশি জানি। জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে আমরা কি বানরকেই পিঠা ভাগ করতে দিতে আগ্রহী? সেটা দেশের জন্য কতোটা মঙ্গলের হবে তা ভেবে দেখা জরুরি। এবার খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের মাজেজাটা বলি। দু’টি পক্ষ খরগোশ ও কচ্ছপ। দৌড়ের লড়াইয়ে একজন অন্যজনকে ঘায়েল করার প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। শেষে দেখা যায় দু’পক্ষই একে অপরকে সহযোগিতা করে স্বস্তি, শান্তির বন্দরে পা ফেলে। এই গল্পটা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে একটা প্রেরণা হতে পারে। শুভ কামনা সকলের জন্য।
খরগোশ আর কচ্ছপের সেই গল্পটি প্রায় সকলেরই জানা। দৌড় প্রতিযোগিতায় কার জেতার কথা? খরগোশেরই তো নাকি? কিন্তু খরগোশ হেরে যায়।
তবে এই গল্পের আরও কয়েকটি পর্ব আছে সে কথা বোধকরি অনেকেই জানেন না। এই গল্পের আরও অন্তত ৩টি পর্ব আছে।
দ্বিতীয় পর্বটা এমন। চতুর খরগোশ দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে যাবার পর কাউকেই মুখ দেখাতে সাহস পায় না। তাকে যেই দেখে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলে। কি মিয়া তুমি হইল্যা দৌড়ের রাজা। আর তুমি কিনা সামান্য এক কচ্ছপের সঙ্গেই পারল্যা না। ছি: ছি: কি লজ্জার কথা।
খরগোশ আবার কচ্ছপের সঙ্গেই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখালো। যথারীতি দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলো। বলা বাহুল্য খরগোশ আগের ভুলটা আর করলো না। এক দৌড়ে প্রতিযোগিতার নির্ধারিত স্থানে গিয়ে উপস্থিত হলো। কচ্ছপ তখনো অনেক পেছনে পড়ে আছে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় হেরে যাবার পরও থামেনি। সে ধীরগতিতে হেঁটেই চলেছে। কিন্তু সবাই খরগোশকে নিয়ে ব্যস্ত। খরগোশের পক্ষেই স্লোগান দিচ্ছে সবাই।
কিছুদিন পর আবার খরগোশ ও কচ্ছপের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। তবে প্রতিযোগিতায় দৌড়ের পথ আলাদা করা হলো। এবার দৌড় হবে ভিন্ন পথে। প্রতিযোগিতা শুরু হলো। খরগোশ তার ক্ষীপ্রগতিতে দৌড় শুরু করলো। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে দেখলো নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে একটা বড় খাল পার হতে হবে। খালে অনেক পানি। খরগোশ তো খাল পার হতে পারবে না। কি করা যায়। কি করা যায়... খালের পাড়ে বসে ভাবতে লাগলো খরগোশ। ততক্ষণে কচ্ছপ খালের পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একটু জিরিয়ে নিয়ে খালের পানি সাঁতরে ওপারে চলে গেল খরগোশ। বলা বাহুল্য আবারো জিতে গেল খরগোশ। এবার গল্পের চতুর্থ পর্বটা বলি। দেশে মহাদুর্যোগ দেখা দিয়েছে। একটা খাল পার হয়ে ওপারে যেতে না পারলে মহাদুর্যোগ ঠেকানো যাবে না।
কচ্ছপ সহজেই খাল পার হতে পারবে। খরগোশের কী হবে? দুর্যোগ এমনই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে দ্রুত খাল পার হতে না পারলে খরগোশ এবং কচ্ছপ দু’জনই মারা যাবে। জীবন বাঁচাতে কচ্ছপকে পিঠের উপর নিয়ে এক দৌড়ে বিরাট খালের তীরে এসে দাঁড়ালো খরগোশ। এবার দেখা দিলো নতুন সংকট। কচ্ছপ পানিতে সাঁতরাতে পারে। খরগোশের এবার কী হবে? কীভাবে খাল পার হবে সে। কচ্ছপ খরগোশকে বললো- ভাই চিন্তার কোনো কারণ নাই। তুমি আমার পিঠে চড়ে বস। আমি তোমাকে খালের ওপারে নিয়ে যাবো। কচ্ছপের পিঠে চড়েই খরগোশ খাল পার হলো। ততক্ষণে দুর্যোগ কেটে গেছে। আহা! কী শান্তি আর শান্তি...।

অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন হঠাৎ কচ্ছপ আর খরগোশের সেই পরিচিত গল্প কেন বললাম। তবে এই গল্পের যে একটা মাজেজা আছে আমার ধারণা সকলেই ইতিমধ্যে তা বুঝতে পেরেছেন। দেশে ক্ষমতা অর্থাৎ চেয়ার দখলের লড়াই চলছে। সেজন্য শুরু হয়েছে ব্যাপক রাজনৈতিক কর্মসূচি। সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে যুদ্ধং দেহী মনোভাব অতীতের সেই রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহ স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। উভয় দলই বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে দেশের ১৭ কোটি মানুষের কথা বলছেন। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে কৌতুকও ছড়াচ্ছেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে চাকরিদাতা চাকরি প্রার্থীকে প্রশ্ন করলেন- বলো তো আমাদের দেশের লোকসংখ্যা কতো? চাকরি প্রার্থী উত্তর দিলেন- ৩৪ কোটি। উত্তর শুনে চাকরিদাতা অবাক। চাকরি প্রার্থীকে মৃদু ভর্ৎসনা করে বললেন- আপনি তো দেখি বিদ্যার জাহাজ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৩৪ কোটি এই তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন? চাকরি প্রার্থী এতটুকু বিচলিত হলেন না। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে চাকরিদাতাকে বললেন- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বিদ্যার জাহাজ হতে হবে না। আমাদের রাজনৈতিক দলসমূহের জনসভায় উপস্থিত থাকলেই জনসংখ্যার সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন। এবার ৩৪ কোটির সূত্রটা বলি। সরকারি দল এবং বিরোধী দল উভয়ই দাবি করছে ১৭ কোটি মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। সরকারি দল যারা করে তারা নিশ্চয়ই বিরোধী দলের সঙ্গে নাই। আবার যারা বিরোধী দল করে তারা নিশ্চয়ই সরকারি দলের সঙ্গে নাই। অথচ দুই দলেরই দাবি ১৭ কোটি মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। সতের+সতের= চৌত্রিশ কোটি। অঙ্ক পরিষ্কার?
এটা হলো তর্কের অঙ্ক। আসল উত্তর ৩৪ কোটি নয়, ১৭ কোটি। আরও কয়েক মাস পর জাতীয় নির্বাচন। দেশের মানুষ যেকোনো নির্বাচনকে উৎসব মনে করে। জাতীয় নির্বাচন মানেই তো দেশের অনেক বড় উৎসব। ভোট উৎসব। আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবো। যদিও আমি এই স্লোগানটার পক্ষে নই। আমি মনে করি স্লোগানটা হওয়া উচিত ‘আমার ভোট আমি দিবো যোগ্য যিনি তাকেই দিবো। কিন্তু পরিস্থিতি কি বলে? দেশ আমার, আমাদের। জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নির্ধারণের অধিকার তো আমাদেরই থাকার কথা। অথচ সেই অধিকার কি আছে? সমস্যা সংকট মোকাবিলায় প্রতিবেশীর পরামর্শ লাগে। তাই বলে কথায় কথায় যখন তখন প্রতিবেশীর কাছে অভিযোগ করা কি যুক্তিসঙ্গত? বানরের পিঠা ভাগ করার পরিণতি সম্পর্কে আমরা বোধকরি সকলেই কম বেশি জানি। জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে আমরা কি বানরকেই পিঠা ভাগ করতে দিতে আগ্রহী? সেটা দেশের জন্য কতোটা মঙ্গলের হবে তা ভেবে দেখা জরুরি।
এবার খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের মাজেজাটা বলি। দু’টি পক্ষ খরগোশ ও কচ্ছপ। দৌড়ের লড়াইয়ে একজন অন্যজনকে ঘায়েল করার প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। শেষে দেখা যায় দু’পক্ষই একে অপরকে সহযোগিতা করে স্বস্তি, শান্তির বন্দরে পা ফেলে। এই গল্পটা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে একটা প্রেরণা হতে পারে। শুভ কামনা সকলের জন্য।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো
পাঠকের মতামত
এখন ইনিয়ে বিনিয়ে আপনারা বিএনপি জামায়াত সহ বিরোধী জোটের সম অধিকার এর কথা বলছেন, কিন্তু বিএনপি জামায়াত জোট তো এর আগেও ক্ষমতায় ছিল। তখন কি বিএনপির নেতাকর্মীরা আপনার এই কথাগুলি মনে রেখেছিল, বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে মনে রাখবে। আসলে রাজনীতির খেলা অনেকটা পিলো পাসিং এর মত। ক্ষমতায় গেলে আমি সিংহ, আর ক্ষমতার বাইরে গেলে আহত সিংহ।
It's easy for the politician make fool of us. Being Bangali we are driven by emotion, we follow our hearts not the brains. So it's very easy to manipulate us and we fall for it. That's the nature of our people. We need to educate our people so they would know their rights and make the correct decisions. Until than we could not achive anything. Look where we are after 50 years of freedom. The news papers use false head lines io attract readers and so where could you go to get the truth. Thanks ( from CA USA)
লেখকের গল্প ভূয়া।
সবই বুঝলাম! কিন্তু তালগাছ যে আমার চা-ই চাই, জনগণ এখানে ঠুঁটো জগন্নাথ।
শান্তিপুর্ন নির্বাচনের ব্যবস্থাতো ছিল।কারা সেটা বাতিল করে সঙ্গাতের সৃষ্টি করলো সে ব্যাপারে কিছু বলেন
দল গুলো যোগ্য প্রার্থী না দিলে কাকে দিবেন? এ দেশে ভোট হয় প্রতীকে,ব্যক্তি নয়।আর দেশে যে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে এটা থেকে কি বের হয়ে আসা সম্ভব? সবার তাদের নেত্রীকে খুশি করার বক্তব্য দেয়।জনস্বার্থে নয়?
আমার ভোট আমি দেব, যাকে যুগ্য তাকে দিব. কিন্তু প্রশ্ন হলো এই যুগ্যতা কে নির্ধারণ করবে? আপনি, আমি নাকি ভোটার? দিন শেষে ভোটারের হাতে এটা ছেড়ে দেয়া উচিত. আলগা মোমেনের ভাষায় ভোটররা অনেক সেয়ানা. সুজোগ পেলে ওনারা যার যার পাওনা করায় গণ্ডায় মিটায়ে দিবে.