ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

বেহুদা প্যাঁচাল

রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, নানা প্রশ্ন

শামীমুল হক
২৭ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

কী হতে যাচ্ছে? দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বিএনপি’র মহাসমাবেশ আর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে পরিবেশ। একই দিনে দুই দলের নেতাকর্মীরাই মাঠে থাকবেন। নিজ নিজ দলের পক্ষের অবস্থানকে সমর্থন দেবেন তারা। এ নিয়ে যদি সংঘাত, সংঘর্ষ হয় তাহলে এর দায় কার? অপরদিকে রয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকাল থেকে বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড়। অন্যদিকে রয়েছে কড়া পুলিশ প্রহরা। বলতে গেলে টানটান উত্তেজনা সেখানে। এরই মধ্যে ডিএমপি থেকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি গোলাপবাগে মহাসমাবেশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। রাতে বিএনপি মহাসচিব এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ সমাবেশ ডেকেছে পুরানা পল্টনে

তাহলে কি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা আসছে? গতকাল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বক্তব্যের পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সর্বত্র। অথচ ডিএমপি কমিশনার সহজ ভাষায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভবিষ্যতে যেন ছুটির দিনে তাদের কর্মসূচি দেয়া হয়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি সব রাজনৈতিক দলকে বলবো আপনারা সমাবেশ করেন। কিন্তু জনগণকে কষ্ট না দিয়ে। হয়তো ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেলে আমাদের বাধ্য হয়ে এসব কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হতে পারে। ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্য নিয়েই দেশজুড়ে এখন আলোচনা। শুধু তাই নয়, বিএনপি’র মহাসমাবেশ ঘিরে নানা জল্পনা চারদিকে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ মহাসমাবেশের দিন হাজির হবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ  ঢাকার পাশের ৫ জেলার নেতাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বিশেষ বার্তা দিয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ডাকা শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে বলা হয়েছে। খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ওয়ার্কিং ডেতে বিশাল বিশাল জনসভা করে লাখ লাখ লোককে রাস্তায় আটকে রাখার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে, দলগুলো যেন ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডে’তে না দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করবেন যেকোনো মানুষ। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। তারা যদি মানুষের ভোগান্তির কারণ হন তাহলে এ রাজনীতি কার জন্য? প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এ নিবন্ধ লেখার সময় গত রাত ৯টায় খবর আসে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজকের সমাবেশ তারা পরদিন শুক্রবার করবেন এবং সেটা নয়াপল্টনে। এটা সত্য দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে বিএনপি ও সমমনা দল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো। জাতীয় পার্টি রয়েছে মধ্যখানে। তারা এখনো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলের সঙ্গেই নেই। তারা নিজেরা একটি ধারায় চলার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার কথা বলছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার দলকে এগিয়ে নিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে নির্বাচন চান নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে। দুইদিন আগেই বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কেমন নির্বাচন হবে তা ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনই বলে দিয়েছে। তাই জিএম কাদের দলীয় সরকারের বাইরে এমন একটি সরকার চান যারা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারবেন। আর নির্বাচন পদ্ধতি বদলের দাবি নিয়েই বিএনপি’র মহাসমাবেশ। এখন প্রশ্ন বিএনপি’র মহাসমাবেশ থেকে কী ঘোষণা আসছে? 

আর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিনে সতর্ক অবস্থানে  থাকতে ঢাকার পাশের ৫ জেলার নেতাদের বিশেষ বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ঢাকার নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে বলা হয়েছে। মহাসমাবেশে বিএনপি ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করার চেষ্টা করবে- এমন ধারণা থেকে ঢাকার পাশের জেলার নেতাকর্মীদের বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নেতাদের ঢাকায় ডেকে ওই দিনের করণীয় নিয়ে ব্রিফ দেয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার নেতাদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে শান্তি সমাবেশে লোক আনার পাশাপাশি নিজ নিজ জেলায়ও কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। 

দুই: হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি দেয়ায় ১৩ দেশের দূতকে ডেকে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয়া পশ্চিমা দেশগুলোর দূতদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পরে এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকার যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল তাদের দূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯শে জুলাই দূতদের বিবৃতি দেয়ার অনেক আগেই অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরেও এই দূতরা  আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়। যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়। শাহরিয়ার আলম বলেন, যৌথ বিবৃতিটি ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে যথাসময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। প্রশ্ন হলো-সরকারের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদল ও ইইউ প্রতিনিধিদলকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার কথা বলা হয়েছে। ১৩ দেশের কূটনীতিকরাও একই কথা বলেছেন। তাহলে গলদটা কোথায়? 

তিন: নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। এমন অবস্থায় দেশে কি হবে? কোনদিকে মোড় নিবে রাজনীতি? সংঘাত কি তাহলে অনিবার্য? এমন নানা প্রশ্ন মানুষের মনে। এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তাদের। সাধারণ মানুষ চায় তারা শান্তিতে বসবাস করতে। তারা তাদের ভোটটি নিজ হাতে দিতে চায়। আর এমন নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক সে দলকেই সাধুবাদ জানাবে আমজনতা। তারা শুধু চায়Ñ তাদের ভোট দেয়ার অধিকারটুকু। স্বাধীনতার পর থেকে এ অধিকার নিয়ে বার বার রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়েছে। রাজপথে ঝরেছে রক্ত। তারপরও সে অধিকার পায়নি সাধারণ মানুষ। মাঠের বক্তৃতায় দুই দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব একে অপরকে নানা প্রশ্ন করেন। একে অন্যকে কড়া ভাষায় মন্তব্য ছুড়ে দেন। একজন দক্ষিণে গেলে অন্যজন যান উত্তরে। এমন তিক্ত হয়েছে তাদের সম্পর্ক। এ তিক্ত সম্পর্ক থাকলে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। অথচ দেশের ক্রান্তিলগ্নে এ দু’জনের সম্পর্ক হওয়া উচিত ভালোবাসার। ভালোলাগার। যা দিয়ে সকল সমস্যা সমাধান করে তারা একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে যাবেন সামনে। দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবেন হাতে হাত ধরেই। ক্ষমতার মোহে নয়, দেশকে ভালোবেসে তারা সকল সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। একে অপরকে হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। রাজনীতি এমন পর্যায়ে যাওয়ার পেছনে কারণ কি? 

চার: কী হতে যাচ্ছে? দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বিএনপি’র মহাসমাবেশ আর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে পরিবেশ। একই দিনে দুই দলের নেতাকর্মীরাই মাঠে থাকবেন। নিজ নিজ দলের পক্ষের অবস্থানকে সমর্থন দেবেন তারা। এ নিয়ে যদি সংঘাত, সংঘর্ষ হয় তাহলে এর দায় কার? অপরদিকে রয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকাল থেকে বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড়। অন্যদিকে রয়েছে কড়া পুলিশ প্রহরা। বলতে গেলে টানটান উত্তেজনা সেখানে। এরই মধ্যে ডিএমপি থেকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি গোলাপবাগে মহাসমাবেশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। রাতে বিএনপি মহাসচিব এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ সমাবেশ ডেকেছে পুরানা পল্টনে। পাশাপাশি বিএনপি’র সমমনা দলগুলো তো যার যার অবস্থান থেকে সমাবেশ করবেই। সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবেশ থাকবে অন্যরকম। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সমাবেশ করলে সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত, মার্কেটসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ায় পোহাতে হবে ভোগান্তি। এ ভোগান্তি লাঘবে ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে মানুষ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। যেমনটি বলছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status