নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, নানা প্রশ্ন
শামীমুল হক
২৭ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার
কী হতে যাচ্ছে? দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বিএনপি’র মহাসমাবেশ আর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে পরিবেশ। একই দিনে দুই দলের নেতাকর্মীরাই মাঠে থাকবেন। নিজ নিজ দলের পক্ষের অবস্থানকে সমর্থন দেবেন তারা। এ নিয়ে যদি সংঘাত, সংঘর্ষ হয় তাহলে এর দায় কার? অপরদিকে রয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকাল থেকে বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড়। অন্যদিকে রয়েছে কড়া পুলিশ প্রহরা। বলতে গেলে টানটান উত্তেজনা সেখানে। এরই মধ্যে ডিএমপি থেকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি গোলাপবাগে মহাসমাবেশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
রাতে বিএনপি মহাসচিব এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ সমাবেশ ডেকেছে পুরানা পল্টনেবিজ্ঞাপন
তাহলে কি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা আসছে? গতকাল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বক্তব্যের পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সর্বত্র। অথচ ডিএমপি কমিশনার সহজ ভাষায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভবিষ্যতে যেন ছুটির দিনে তাদের কর্মসূচি দেয়া হয়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি সব রাজনৈতিক দলকে বলবো আপনারা সমাবেশ করেন। কিন্তু জনগণকে কষ্ট না দিয়ে। হয়তো ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেলে আমাদের বাধ্য হয়ে এসব কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হতে পারে। ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্য নিয়েই দেশজুড়ে এখন আলোচনা। শুধু তাই নয়, বিএনপি’র মহাসমাবেশ ঘিরে নানা জল্পনা চারদিকে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ মহাসমাবেশের দিন হাজির হবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ঢাকার পাশের ৫ জেলার নেতাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বিশেষ বার্তা দিয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ডাকা শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে বলা হয়েছে। খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ওয়ার্কিং ডেতে বিশাল বিশাল জনসভা করে লাখ লাখ লোককে রাস্তায় আটকে রাখার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে, দলগুলো যেন ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডে’তে না দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করবেন যেকোনো মানুষ। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। তারা যদি মানুষের ভোগান্তির কারণ হন তাহলে এ রাজনীতি কার জন্য? প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এ নিবন্ধ লেখার সময় গত রাত ৯টায় খবর আসে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজকের সমাবেশ তারা পরদিন শুক্রবার করবেন এবং সেটা নয়াপল্টনে। এটা সত্য দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে বিএনপি ও সমমনা দল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো। জাতীয় পার্টি রয়েছে মধ্যখানে। তারা এখনো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলের সঙ্গেই নেই। তারা নিজেরা একটি ধারায় চলার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার কথা বলছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার দলকে এগিয়ে নিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে নির্বাচন চান নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে। দুইদিন আগেই বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কেমন নির্বাচন হবে তা ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনই বলে দিয়েছে। তাই জিএম কাদের দলীয় সরকারের বাইরে এমন একটি সরকার চান যারা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারবেন। আর নির্বাচন পদ্ধতি বদলের দাবি নিয়েই বিএনপি’র মহাসমাবেশ। এখন প্রশ্ন বিএনপি’র মহাসমাবেশ থেকে কী ঘোষণা আসছে?

আর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিনে সতর্ক অবস্থানে থাকতে ঢাকার পাশের ৫ জেলার নেতাদের বিশেষ বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ঢাকার নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে বলা হয়েছে। মহাসমাবেশে বিএনপি ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করার চেষ্টা করবে- এমন ধারণা থেকে ঢাকার পাশের জেলার নেতাকর্মীদের বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নেতাদের ঢাকায় ডেকে ওই দিনের করণীয় নিয়ে ব্রিফ দেয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার নেতাদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে শান্তি সমাবেশে লোক আনার পাশাপাশি নিজ নিজ জেলায়ও কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে।
দুই: হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি দেয়ায় ১৩ দেশের দূতকে ডেকে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয়া পশ্চিমা দেশগুলোর দূতদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পরে এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকার যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল তাদের দূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯শে জুলাই দূতদের বিবৃতি দেয়ার অনেক আগেই অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরেও এই দূতরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়। যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়। শাহরিয়ার আলম বলেন, যৌথ বিবৃতিটি ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে যথাসময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। প্রশ্ন হলো-সরকারের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদল ও ইইউ প্রতিনিধিদলকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার কথা বলা হয়েছে। ১৩ দেশের কূটনীতিকরাও একই কথা বলেছেন। তাহলে গলদটা কোথায়?
তিন: নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। এমন অবস্থায় দেশে কি হবে? কোনদিকে মোড় নিবে রাজনীতি? সংঘাত কি তাহলে অনিবার্য? এমন নানা প্রশ্ন মানুষের মনে। এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তাদের। সাধারণ মানুষ চায় তারা শান্তিতে বসবাস করতে। তারা তাদের ভোটটি নিজ হাতে দিতে চায়। আর এমন নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক সে দলকেই সাধুবাদ জানাবে আমজনতা। তারা শুধু চায়Ñ তাদের ভোট দেয়ার অধিকারটুকু। স্বাধীনতার পর থেকে এ অধিকার নিয়ে বার বার রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়েছে। রাজপথে ঝরেছে রক্ত। তারপরও সে অধিকার পায়নি সাধারণ মানুষ। মাঠের বক্তৃতায় দুই দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব একে অপরকে নানা প্রশ্ন করেন। একে অন্যকে কড়া ভাষায় মন্তব্য ছুড়ে দেন। একজন দক্ষিণে গেলে অন্যজন যান উত্তরে। এমন তিক্ত হয়েছে তাদের সম্পর্ক। এ তিক্ত সম্পর্ক থাকলে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। অথচ দেশের ক্রান্তিলগ্নে এ দু’জনের সম্পর্ক হওয়া উচিত ভালোবাসার। ভালোলাগার। যা দিয়ে সকল সমস্যা সমাধান করে তারা একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে যাবেন সামনে। দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবেন হাতে হাত ধরেই। ক্ষমতার মোহে নয়, দেশকে ভালোবেসে তারা সকল সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। একে অপরকে হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। রাজনীতি এমন পর্যায়ে যাওয়ার পেছনে কারণ কি?
চার: কী হতে যাচ্ছে? দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বিএনপি’র মহাসমাবেশ আর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে পরিবেশ। একই দিনে দুই দলের নেতাকর্মীরাই মাঠে থাকবেন। নিজ নিজ দলের পক্ষের অবস্থানকে সমর্থন দেবেন তারা। এ নিয়ে যদি সংঘাত, সংঘর্ষ হয় তাহলে এর দায় কার? অপরদিকে রয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকাল থেকে বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড়। অন্যদিকে রয়েছে কড়া পুলিশ প্রহরা। বলতে গেলে টানটান উত্তেজনা সেখানে। এরই মধ্যে ডিএমপি থেকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি গোলাপবাগে মহাসমাবেশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। রাতে বিএনপি মহাসচিব এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ সমাবেশ ডেকেছে পুরানা পল্টনে। পাশাপাশি বিএনপি’র সমমনা দলগুলো তো যার যার অবস্থান থেকে সমাবেশ করবেই। সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবেশ থাকবে অন্যরকম। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সমাবেশ করলে সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত, মার্কেটসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ায় পোহাতে হবে ভোগান্তি। এ ভোগান্তি লাঘবে ছুটির দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে মানুষ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। যেমনটি বলছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
পাঠকের মতামত
নিয়মতান্ত্রিক,গনতান্ত্রিক,সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ দল -------------------------------------------------------------------- পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে হয় স্বাধীন দেশে তা দু:খজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। এট স্বাধীনতা চেতনার সাথে যায়না। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথেও খাপখায়না। গতকাল দিনভর বিএনপির আজকের মহাসমাবেশ নিয়ে নাটকীয়তা দেখা গেছে। অতীতকাল থেকেই ছুটির দিন বলে কথা নেই, নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে অসংখ্য সমাবেশ হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও ছুটির দিন ছাড়া বহু সমাবেশ করেছে সরকারি দল ও বিরোধী দল সমানতালে। নির্বাচন সামনে রেখে এখনকার সমাবেশের গুরুত্ব অন্যরকম। এগুলো নির্বাচনী সমাবেশ বলা যায়। তাই নির্বাচনী সমাবেশ অর্থাৎ প্রচার প্রচারণায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা প্রকারান্তরে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়ার সামিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা "ফখরুল বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আয়োজিত যেকোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃত পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হিসেবেই দেখবে এবং এমন অপচেষ্টা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য হবে।" (প্রথম আলো, ২৭ জুলাই ২০২৩) রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার চর্চায় বাধা প্রদান করলে বাধা প্রদানকারী/ কারীদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা রেস্ট্রিকশন বিবেচিত হতে পারে। অন্তত: যে চারটি বিষয়ে ভিসা রেস্ট্রিকশন প্রয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট যে চারটি বিষয় ভিসা নীতির আওতায় বিবেচনা করা হয়, কালের কন্ঠ লিখেছে, "যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য তার ভিসানীতির আওতায় নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্তত চারটি বিষয় বিবেচনা করবে। এগুলো হলো—ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিকসমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচারে বাধা দিতে পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।" (কালের কণ্ঠ, ২৬ জুলাই ২০২৩) লক্ষ্যণীয়, 'শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া', 'মতামত প্রচারে বাধা দিতে পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।' ১০ বছর জামায়াতে ইসলামীকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। জামায়াতের সাথে অন্যান্য দলের কিছু মৌলিক পার্থক্য জানা যায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি। ঘুরে ফিরে এই চারটি দল এককভাবে, কখনো জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় ছিলো। গত পনের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে দলের মূল নেতৃত্ব বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকারসূত্রে। দলীয় প্রধানের নির্দেশে দল চলে এবং তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মনে করা হয়। দলীয় প্রধানের সাথে প্রকাশ্যে মতবিরোধ করার বা তাঁর সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার স্বীকৃত নয়। দলীয় প্রধান ইচ্ছে করলে কাউকে দলে রাখতে পারেন, পদোন্নতি দিতে পারেন এবং দরকার মনে হলে বহিষ্কার করতে পারেন। সর্বময় ক্ষমতা দলের প্রধানের হাতে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম জামায়াতে ইসলামী। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের আমীরকে দলের সদস্যরা বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখেন। আমীরের সাথে দ্বিমত পোষণ করার বা তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার অধিকার দলীয় ফোরামে নিয়মতান্ত্রীকভাবে স্বীকৃত। দলের আমীরের মনোরঞ্জন করে পাদ পদবি পাওয়ার কোনো সুযোগই জামায়াতে ইসলামীতে চলেনা। বংশপরম্পরায় নেতৃত্ব লাভের সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, "তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত।" (হুজুরাত-১৩) জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব আল্লাহ ভীরুর উপর নির্ভরশীল। যিনি সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করেন এবং যিনি ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর আল্লাহ ও রাসূলের সা. আদেশ পালনকে অগ্রাধিকার দিতে প্রস্তুত থাকেন বলে সদস্যদের কাছ প্রতীয়মান হয় সদস্যরা তাঁকে গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করেন। যিনি নেতা হবার আকাঙ্খা পোষণ করেন বা ব্যক্ত করেন তিনি জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অযোগ্য বিবেচিত হয়। গ্রুপিং করলে সংগঠন থাকে বহিষ্কৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জামায়াত ব্যতিত অন্যান্য দলে গনতন্ত্রের চর্চা নেই, শীর্ষ নেতার হুকুমে উপর থেকে নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীতে নেতা নির্বাচনে গনতান্ত্রিক রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়। তৃণমূলের নেতৃত্বও কর্মীদের সাথে পরামর্শক্রমে বা গোপন ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয়, মহানগরীর, পৌরসভার, থানার ও ইউনিয়নের আমীর সরাসরি সদস্যদের গোপন ব্যালটের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। মজলিসে সূরা ও কর্মপরিষদের নির্বাচনও সদস্যদের গোপন ভোটে হয়ে থাকে। মোটকথা, গনতন্ত্রের বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি জামায়াতে ইসলামীতে বরদাস্ত করা হয়না। কারণ, জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সেকারণেই জামায়াতের সংগঠনের অভ্যন্তরে গনতন্ত্র, ন্যায় ও ইনসাফের চর্চা করা হয়। জামায়াতে ইসলামী মুখে যা বলে কাজেও তা প্রকাশ করে। তাঁদের বিশ্বাসে ও কর্মে মুনাফেকির নামগন্ধও নেই। জামায়াতে ইসলামীর এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে আছে কিনা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়। এসকল দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বা নেতা হবার জন্য রীতিমতো তদবির, গ্রুপিং ও প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর মধ্যে মারামারি, হানাহানি ও খুনখারাবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। জামায়াতে ইসলামী একটি অতি উচ্চমানের নৈতিক সংগঠন। নৈতিকতার ন্যূনতম বিসর্জন দিয়েও জামায়াতে ইসলামীতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়না এবং কোনো কর্মসূচি পালন ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়না। এটা জামায়াতে ইসলামীর আরেকটি অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য। জাতীয় জীবন থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত কোথাও জামায়াতের অতি সাধারণ একজন কর্মীর বিরুদ্ধেও আজ অবধি কেউ অনৈতিক ও অপকর্মের একটি অভিযোগও উত্থাপন করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে র্যাগিংয়ের মহামারি চলছে, একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর র্যাগিংয়ের নামে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে, কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে, সেখানে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে কেউ এধরনের একটি অভিযোগও তুলতে পারেনি। ইভটিজিং ও ধর্ষণের মতো ঘটনাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে থাকে। কিন্তু শিবিরের বিরুদ্ধে এমন ন্যাক্কারজনক কোনো অভিযোগ নেই। যেখানে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের নামে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজি, রিলিফের মালামাল আত্মসাৎ, মারামারি, খুনোখুনি ও ধর্ষণের মতো অভিযোগও পাওয়া যায়। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আল্লাহ তা'য়ালা হেফাজত করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। সুসংগঠিত দল হিসেবে এবং সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে জামায়াতের খ্যাতি রয়েছে। শান্তি, শৃঙ্খলা, নিয়মতান্ত্রিকতা, সহিষ্ণুতা, গনতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখা জামায়াতে ইসলামীর স্থায়ী নীতি।জামায়াতের কর্মসূচিতে না একটি চেয়ার ভাঙে, না কাউকে আঘাত করা হয়, আর না কেউ জখম হয়। অথচ অন্যান্য দলের কর্মসূচি পালনের সময় দেখা যায় চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি, হাতাহাতি, মারামারি এবং রক্তারক্তিও হয়। এমন শান্তিপূর্ণ একটি দলের কর্মসূচি পালনে বাধা সৃষ্টি করা সত্যি দু:খজনক এবং হতাশার। আর কয়েকমাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুষ্ঠু ভোটের প্রতিটি সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধি ছিলো। ভোট চাওয়ার ও সমাবেশ করার অধিকার সকল রাজনৈতিক দলেরই আছে। জামায়াতে ইসলামী গণমুখী নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনমুখী দল। সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়ে ইচ্ছার প্রতিফলন হয়ে সরকার গঠনে জামায়াত বিশ্বাসী। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সভাসমাবেশ নির্বিঘ্নে করতে চায় জামায়াত। এটা জামায়াতের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব। জামায়াতে ইসলামীর সাথে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার দূরতর কোনো সম্পর্ক না থাকা স্বত্বেও ন্যুনতম স্পেস জামায়াতকে না দেয়ার অর্থ- শিষ্ট্যের দমন ও দুষ্টের লালন। জামায়াতের আমীর সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারাগারে বন্দী করে রাখা দু:খজনক এবং অমানবিকও বটে। জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার একটি মজলুম দল। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন মজলুমের বদদোয়া এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকেনা। অর্থাৎ মজলুমের বদদোয়া সরাসরি আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায় বিনা বাধায়। নানা বিষয়ে মানুষের মধ্যে মতভেদ থাকলেও একটি ব্যপারে দুনিয়ার সকল মানুষ একমত। তাহলো সবাইকে মৃত্যু বরণ করতে হবে। মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে নাস্তিকদের অবিশ্বাস থাকতে পারে। কিন্তু তারও কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। শুধুই অনুমানের ওপর নির্ভর করে অনন্তকালের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিছুতেই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারেনা। আমাদের মৃত্যুর পরে মজলুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই জুলুমের হাত সংযত করা উচিত। মজলুমের বদদোয়া সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসিব করুন, ক্ষমা করুন এবং পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা করুন। আমাদের সকল প্রচেষ্টা হোক আল্লাহর বান্দাদের কল্যানে।