মত-মতান্তর
পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে জনসাধারণের সুরক্ষায় প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন
ইলিয়াস কাঞ্চন
(২ মাস আগে) ১৮ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:১৯ অপরাহ্ন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ধূমপান অন্যতম। বাংলাদেশে ৩৫.৩% প্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বছর বা ততোধিক) মানুষ (প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করে (১৮% ধূমপান করে এবং ২০.৬% ধোঁয়াবিহিন তামাক ব্যবহার করে)। বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও তামাক ব্যবহারের হার আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছর) ৫৯% পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ সরাসরি ধূমপান না করে শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন।
তামাক এমন একটি পণ্য যাতে আসক্ত হলে মানব শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রোগাক্রান্ত হতে পারে। আজকের বিশ্বে সংক্রামক রোগের তুলনায় অসংক্রামক ও প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রকোপ অনেক বেশি এবং মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে সংক্রামক রোগসমূহ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে এলেও অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসরোগ, ক্যান্সার, কিডনীরোগ এবং আঘাতজনিত রোগ ক্রমেই বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই ঘটছে অসংক্রামক রোগের জন্য। অসংক্রামক রোগসমূহের অন্যতম প্রধান কারণ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে, পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে তামাকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য কার্যকর করারোপ করার মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা করা দরকার, যাতে এই ক্ষতিকর পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এই কৌশল অবলম্বন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের ধূমপায়ীর সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। তাই আমাদেরও এটি অনুসরণ করা প্রয়োজন। একই সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করাও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার আশু বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
ইতিমধ্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত)” যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো-সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য মোড়কবিহীন ও খোলা অবস্থায় বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্ট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
আমার বিশ্বাস, উল্লিখিত সংশোধনীগুলো বিদ্যমান আইনে আনা হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব। কারণ সুস্থ্য-সবল জনশক্তিসম্পন্ন জাতি গঠনে এবং স্মার্ট বাংলাদেশে বির্নিমাণে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া অপরিহার্য। আশার কথা হচ্ছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে সেটি মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এখন দ্রুত আইনটির সংশোধনী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে অনুমোদন হলে পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনগুলোকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা যাবে। এর ফলে নারী ও শিশুসহ সর্বসাধারণকে পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে এবং অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনী অনুমোদনের দাবি জানাই।
লেখক: অভিনেতা এবং প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)
মন্তব্য করুন
মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন
মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]