ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক

তামিমের সামনে ভিন্ন তিন চ্যালেঞ্জ

সামন হোসেন
৯ জুলাই ২০২৩, রবিবারmzamin

গুঞ্জন আছে ক্রিকেট বোর্ডের একটি পক্ষ চাচ্ছিল না তামিম ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে থাকুক। তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তের পর অন্তত তাই মনে হয়েছে। পাপনের আক্রমণাত্মক সমালোচনায় ক্ষুব্ধ, আবেগতাড়িত হয়ে প্রথম ওয়ানডের পরদিন সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলেন তামিম, বিসিবি’র কোনো কর্মকর্তা কি পারতেন না তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনতে। কিন্তু বিসিবি সেটা করেনি। পাপন জানিয়েছেন তিনি তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের পরেও নাকি তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ভাই নাফিস ইকবালের মাধ্যমে তামিমের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। যে বার্তায় তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিসিবি বস। তার এই আহ্বানে আর যাই হোই আন্তরিকতা ছিল না- সেটা স্পষ্ট।
ফোনে যোগাযোগ করা না গেলেও চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতেই ছিলেন তামিম। যে বাড়িতে যাতায়াত আছে বিসিবি’র অনেক কর্তকর্তার।

বিজ্ঞাপন
পাপন কি পারতেন না বিসিবি’র কোনো কর্মকর্তাকে তামিমের বাড়িতে পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত বদলানোর অনুরোধ জানাতে। কিংবা তামিমের আপন চাচা বিসিবি’র পরিচালক আকরাম খানকে দায়িত্ব দিতে। এর কোনোটাই করেননি পাপন।


আগের দিন সারা দেশকে আলোড়িত করে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। পরদিনই তামিমের সিদ্ধান্ত বদলে যাওয়ার কারণ তো এখন সকলের জানা। মাশরাফির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ডেকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরে তামিম যা বলেছেন, সেটা খুবই সত্যি। প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু বললে তা না মেনে তো উপায় থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে মাঠে ফেরার কথা বলেছেন তামিম। হয়তো আসন্ন এশিয়া কাপ থেকেই বাইশ গজে দেখা যাবে তাকে। তবে তামিমের এই মাঠে ফেরায় রয়েছে তিন চ্যালেঞ্জ। 

দীর্ঘদিন ধরেই ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করছেন তামিম। সেই ইনজুরির কারণেই আাফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে ‘আনফিট’- ঘোষণা করে বসেন অধিনায়ক। ম্যাচ খেলে ফিটনেস পরীক্ষার উচ্চাভিলাষী চিন্তার কথা বলেন তিনি। যা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। বিসিবি সভাপতি পারতেন বিষয়টি এড়িয়ে যেতে। অথবা প্রয়োজনে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে তামিমের কাছেই ব্যাখ্যা চাইতে পারতেন, কেন সিরিজ শুরুর আগের দিন এমন কথা বললেন তামিম। হয়তো এই কারণেই তামিম সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা বললেন। এখন তামিমের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এই ইনজুরি থেকে পরিপূর্ণ ফিট হয়ে মাঠে ফেরা। যাতে করে তাকে নিয়ে এই ধরনের বির্তক সৃষ্টি করতে না পারেন কোচ কিংবা ক্রিকেট বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা।

গুঞ্জন আছে ক্রিকেট বোর্ডের একটি পক্ষ চাচ্ছিল না তামিম ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে থাকুক। তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তের পর অন্তত তাই মনে হয়েছে। পাপনের আক্রমণাত্মক সমালোচনায় ক্ষুব্ধ, আবেগতাড়িত হয়ে প্রথম ওয়ানডের পরদিন সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলেন তামিম, বিসিবি’র কোনো কর্মকর্তা কি পারতেন না তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আনতে। কিন্তু বিসিবি সেটা করেনি। পাপন জানিয়েছেন তিনি তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের পরেও নাকি তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ভাই নাফিস ইকবালের মাধ্যমে তামিমের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। যে বার্তায় তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিসিবি বস। তার এই আহ্বানে আর যাই হোই আন্তরিকতা ছিল না- সেটা স্পষ্ট। ফোনে যোগাযোগ করা না গেলেও চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতেই ছিলেন তামিম। যে বাড়িতে যাতায়াত আছে বিসিবি’র অনেক কর্তকর্তার। 

পাপন কি পারতেন না বিসিবি’র কোনো কর্মকর্তাকে তামিমের বাড়িতে পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত বদলানোর অনুরোধ জানাতে। কিংবা তামিমের আপন চাচা বিসিবি’র পরিচালক আকরাম খানকে দায়িত্ব দিতে। এর কোনোটাই করেননি পাপন। বরং তামিম ইস্যুতে দুইঘণ্টার ম্যারাথন মিটিং করে নাফিস ইকবালকে পাঠানো খুদে বার্তার জবাবের অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, পুরো ঘটনাপ্রবাহে বিসিবি’র দায় থাকলেও তারা সময়ক্ষেপণ করেছেন। কী এক অজানা কারণে তারা সেটি না করে ইচ্ছাকৃত ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’- তৈরি করলেন তা আসলেই সকলের অজানা। তাতে বিষয়টা এমন এক জায়গায় চলে যায় যে, প্রধানমন্ত্রীকে বিচার বসাতে হয়। বিচারে যা হলো, তা কিন্তু সংলাপই, যেটা এর আগে নিজেরা করে নিলেই তামিমের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এই বিতর্কিত অধ্যায় যোগ হতো না। এখন তামিমের সামনে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে সুন্দরভাবে আন্তজার্তিক ক্যারিয়ারের ইতি টানা।

তামিমই কিন্তু একমাত্র ক্রীড়াবিদ না, যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মাঠে ফিরেছেন। এমন ভুরিভুরি উদাহরণ আছে। সরকার প্রধানের অনুরোধে তামিমের মতো ক্রিকেটে ফিরেছিলেন পাকিস্তানের ইমরান খান। ১৯৮৭ সালে অবসর নেয়ার পর ফিরেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হকের অনুরোধে, জিতেছেন বিশ্বকাপও। যদিও তামিমের মতো কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ করে অবসরের ঘোষণা দেননি ইমরান খান। ভেবেচিন্তে ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৬ বছর কাটিয়ে ফেলার পর ইমরানের মনে হয়েছিল, অনেক হয়েছে, এবার একটু অন্যদিকে মন দেয়া যাক। যে কারণে ঘোষণা করেন, ১৯৮৭ বিশ্বকাপই হবে শেষ বিশ্বকাপ। 

ইমরান খান চেয়েছিলেন উপমহাদেশে হওয়া প্রথম বিশ্বকাপটি হাতে নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন। তা অবশ্য হয়নি। লাহোরে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। সেমিফাইনাল শেষে দর্শকদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়ে তিনি বেরিয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। তবে তা মাত্র মাস চারেকের জন্যই। ১৯৮৮ সালের মার্চে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হকের অনুরোধেই অবসর ভেঙে ফিরে আসতে রাজি হন ইমরান। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে যে ইডেনে ফাইনাল খেলা হয়নি বলে দুঃখ ছিল, ১৯৮৯ সালে সেই ইডেনেই ভিভ রিচার্ডসের বলে ওয়াসিম আকরামের ছক্কায় শেষ হওয়া ফাইনাল জিতে নেহ্রু কাপ হাতে তুলে নেন ইমরান। সে সময়কার ৮টি টেস্ট দলের ৬টিই ওই টুর্নামেন্টে খেলেছিল বলে অনায়াসেই সেটিকে মিনি বিশ্বকাপ বলা যায়। এর তিন বছর পর তো জিতলেন আসল বিশ্বকাপই। সেটিও ‘কামব্যাক’-এর এক অবিশ্বাস্য গল্প লিখে। তামিমকেও অবিশ্বাস্যভাবে ক্রিকেটে ফিরিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

শুক্রবার দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সবিস্তার আলোচনার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত বদলে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নজাল বুনেন তামিম। তামিমই টস করবেন বিশ্বকাপে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা শেষে তামিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী এত সময় দেবেন। উনি আমার আর আমার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো কথা বলেছেন। উনার পরিবারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় সামলে কীভাবে এতদূর এসেছেন, সেই আবেগঘন বর্ণনা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। উনি আমাকে যে সাহস জুগিয়েছেন, তা বলে বোঝাতে পারবো না। বলতে পারেন, আমার ছোট্ট এই জীবনে আজকের দিনটি ভীষণ স্পেশাল।’ 

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় আবেগের কথাও স্মরণ করিয়েছেন জানিয়ে তামিম বলেন, ‘তুমি অবসর নিয়েছো শুনে লোকজন রাস্তায় কান্নাকাটি করছে। এটা দেখেও কি তুমি বুঝতে পারো না? চলার পথে অনেক সমস্যা আসবে। তবে সেসব জয় করে এই মানুষগুলোর জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে, এটা মনে রাখবে।’ এমন আরও অনেক কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যা তামিম ইকবালের ওপর গত মাস ছয়েকে ভর করা প্রবল চাপ সরিয়ে নিয়েছে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। ভয়ঙ্কর চাপ থেকে মুক্তি মিলেছে। দেড় মাসের ছুটিও মিলেছে। যা কাটাতে প্রথমে সপরিবারে দুবাই যাবেন তামিম। এরপর ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা কোমরের নিচের অংশের যে চোট নিয়ে এত ‘কা-’ তা সারিয়ে তুলতে। এরপর লাল-সবুজের জার্সিতে ফিরবেন। যে ফেরায় তৃতীয় চ্যালেঞ্জ থাকবে প্রধানমন্ত্রী তার ওপর যে আস্থা রেখেছেন, তার প্রতিদান দেয়া। তবে এখানে তামিমকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন ইমরান খানও। যিনি সরকার প্রধানের অনুরোধে ক্রিকেটে ফিরে দেশকে উপহার দিয়েছেন একটি বিশ্বকাপ। তামিম কি পারবেন তেমন কিছু করে দেখাতে?

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status