নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
আন্দোলন-নির্বাচন কোন দিকে পাল্লা ভারী?
শামীমুল হক
৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার
আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর মনে নানা শঙ্কা। আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবেন কিনা এ প্রশ্নও তাদের মনে। নাকি গত দুটি নির্বাচনের মতো জটিল পরিস্থিতি হবে। বর্তমানে সরকার ও বিরোধীদলগুলোও নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে। এ অবস্থায় বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর আন্দোলন কতোটুকু ফলপ্রসূ হবে? নাকি তারা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আর সরকার ব্যস্ত থাকবে নির্বাচন নিয়ে। দেশের মাঠে-ময়দানে, হাটে-বাজারে, অফিস-আদালতে, চায়ের আড্ডায় সব জায়গায়ই একটি প্রশ্ন- কি হতে যাচ্ছে দেশে?
যেকোনো দিন এক দফা দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে বিএনপি। সমমনা দলগুলোও একই সঙ্গে এক দফার ঘোষণা দিতে প্রস্তুত। তবে এক মঞ্চ থেকে এ ঘোষণা আসছে না। এমনটাই বলা হচ্ছে।

বিভিন্ন পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভোট সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ পেলে এককভাবে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিএনপি’র পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ডিসিএম স্প্যানিয়ার বার্ন্ড ও রাজনৈতিক কর্মকর্তা সেবাস্তিয়ান। এর আগে সকালে চার্লস হোয়াইটলির গুলশানের বাসভবনে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। সঙ্গে ছিলেন তার বিশেষ দূত মাশরুর মওলা। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, কিছুদিন পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারই অ্যাডভান্স আলোচনার জন্যই মূলত ইইউ রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। সেখানে আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা কী ভাবছি, কী করছি সেসব বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। ইইউ চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন । বৈঠকে সে কথা বলেছে। আর এটা আরও এক্সপ্লোর করার জন্য তাদের একটি টিম আসবে। আসলেই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ আছে কিনা সেটা তারা দেখবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি- বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্যদিকে জিএম কাদেরের সঙ্গে বৈঠকেও মূলত আলোচনা হয়েছে নির্বাচন নিয়ে। জাতীয় পার্টি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা এককভাবে নির্বাচন করবে। ডেলিগেশন টিম আসার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ টিম দলগুলোর সঙ্গে বসবে, সরকারের সঙ্গে বসবে।

একদিকে নির্বাচন অন্যদিকে আন্দোলন। সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠ এখন গুমোট অবস্থায়। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর এক দফার আন্দোলন কোনদিকে মোড় নেয়, কিংবা কতোটুকু সফল হবে তার উপরও নির্ভর করে অনেক কিছু। সরকার চাইবে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন যেন গতি হারায়। সে চেষ্টাও তারা করবে। ভবিষ্যৎই বলে দেবে আন্দোলনের গতি কোনদিকে যাচ্ছে। সরকার বলছে, যথাসময়ে নির্বাচন হবে। তারা এ জন্য প্রস্তুত। নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তারা বসে থাকবে না বলেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনী অঙ্গনকে ক্রমশ সংঘাতময় করে তোলার চক্রান্ত করছে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো। তারা ব্যস্ত গুজব ও ষড়যন্ত্র নিয়ে। তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভায় এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, গুজবে, গুঞ্জনে, ষড়যন্ত্রে আজকে নির্বাচনী অঙ্গন ক্রমশ সংঘাতময় করে তোলার চক্রান্ত চলছে। তারা সংঘাতের উস্কানি দিচ্ছে, দিয়েছে। এই মুহূর্তে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ভোটারদের কাছে যাচ্ছে না, তারা যাচ্ছে বিদেশিদের কাছে কখন কোন প্রতিনিধি আসে, বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিবে, ভিসানীতি দিবে- এমন স্বপ্নে নালিশের মধ্য তারা নিমগ্ন। নালিশটা জনগণের কাছে নয়, বিদেশিদের কাছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিদেশিরা আমাদের বন্ধু। এখানে প্রভুত্বের কিছু নেই। বিএনপি’র বিদেশে অনেক প্রভু। তারা প্রভুদের কাছে নালিশ করে, বন্ধুদের কাছে নয়। সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কীভাবে হবে সংবিধান ঠিক করে দিয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও গণতান্ত্রিক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটার বড় প্রমাণ আইন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, গুজব ছড়ান, ষড়যন্ত্র করেন তাদের এ বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নজরে রাখা দরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেভাবে হয়েছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও অবাধ। আগামী জাতীয় নির্বাচনও এভাবে সম্পন্ন হবে। এখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। শেখ হাসিনার সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। এখানেই স্পষ্ট দুটি ভাগ। আওয়ামী লীগ চায় না দেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা কথা বলুক। আর বিদেশিরা চাইছে আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক। সরকার বলছে, বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তা গোটা পৃথিবীতে একইভাবে হচ্ছে। তারা সম্প্রতি হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনছে।
অবশ্য সরকার ও বিরোধীরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই একই কথা বলে আসছে। আগামী নির্বাচন নিয়েও তারা আগের অবস্থানেই। কিন্তু বাস্তবতা কি? বিগত দুটি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে দেশবাসী তা জানে। তাই আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর মনে নানা শঙ্কা। আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবেন কিনা এ প্রশ্নও তাদের মনে। নাকি গত দুটি নির্বাচনের মতো জটিল পরিস্থিতি হবে। বর্তমানে সরকার ও বিরোধী দলগুলোও নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে। এ অবস্থায় বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর আন্দোলন কতোটুকু ফলপ্রসূ হবে? নাকি তারা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আর সরকার ব্যস্ত থাকবে নির্বাচন নিয়ে। দেশের মাঠে-ময়দানে, হাটে-বাজারে, অফিস-আদালতে, চায়ের আড্ডায় সব জায়গায়ই একটি প্রশ্ন- কী হতে যাচ্ছে দেশে? বিএনপি আন্দোলন কতোটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে? সরকার কি নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবে? কেউ বলছেন, এবার এত সহজে পার পাবে না সরকার। আবার কেউ বলছেন, বিরোধী দলগুলো আন্দোলনে ‘তা’ দেয়ার আগেই নির্বাচন হয়ে যাবে। এসবই আন্দাজের কথা। বাস্তবে কি হবে? তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে। এটাই সত্য। এটাই বাস্তব।
পাঠকের মতামত
কেউ চেয়ে আছে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে ভারতের গ্রীন সিগনালের অপেক্ষায়। আবার কেউ চেয়ে আছে আমেরিকা ও পশ্চিমারা তাদের জন্য কি, কতটুকু করে সে অপেক্ষায়।মিথ্যাচার চাপাবাজীর প্রতিযোগিতায় গত১৫ বছরে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীসহ সর্বস্তর থেকে দেশপ্রেম নামক শব্দ টিকে অর্থের লোভ লালসা, দূর্নীতি, লুটপাট আর ক্ষমতার মোহের মায়া জালে বন্দী করে ফেলা হয়েছে।৩০ লাখ শহীদের রক্তে কেনা রাষ্ট্র তুমি এখন কার?আমরা জনগণ সবাই নির্বিকার। এরচেয়ে বেশী বলার নাই দরকার।
বর্তমান সরকার দেশটা কে একমুখী করে পেলেছে,,ওয়ার্ড থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পুরো দেশ কে আওয়ামী করণ করবার কারণে মানুষ যেমন সু শাসন থেকে বঞ্চিত তেমনি বিভিন্ন সেন্টিকেট তৈরি করে এক পক্ষ দেশের অর্থ লোপাটে ব্যাস্ত। ভোট হীন অগণতান্ত্রিক সরকারের কারণে এদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। প্রকাশ্য প্রশাসনের লোকজন বলে আমরা তোমাদের ক্ষমতায় রেখেছি অতএব আমাদের কথা মত চলতেই হবে। এতে করে সরকারি ভাবে অপরাধ প্রভনতা বাড়ছে। এই জন্য সকলে অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন আজ জুরুরি হয়ে গেছে। আজ সকল দল একজোট হয়ে রাজপথে আন্দোলন করে আগে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাবস্থা করতে হবে।তা না হলে এর দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে পুরো বাংলাদেশ কে।
দেশে যারা বাস করেন, এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তারা ভাল বলতে পারবেন। কিন্ত আন্দোলন করার সাথে সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি দরকার আছে । বিরোধীদল যদি মনে করে সরাসরি ক্ষমতা পাওয়ার তা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। আন্দোলন করে শক্তি সঞ্চয় ও একতাবদ্ধ হদে আওয়ামীলীগ কারচুপি করতে অবশ্যই ভয় পাবে । ক্ষমতায় না গেলেও শক্তিশালি বিরোধীদল হতে তো পারবে ।