নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
জাতীয় নির্বাচন: তাহলে কি সুড়ঙ্গের ওপাশে আলোর দেখা মিলছে?
শামীমুল হক
৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বের দেশগুলো। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই সব মহল নড়েচড়ে বসেছেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ চায় সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। যে সংবিধান থেকে তারাই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছে। ওদিকে বিএনপি চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে সরকার পদত্যাগ করুক। এরপর তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন যে নামেই ডাকা হোক সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হউক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সবক’টি নির্বাচনে মানুষ দলবেঁধে ভোট দিয়েছে। নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে উল্লাস করেছে। নির্বাচনের দিন সেই দৃশ্যই দেখতে চান সবাই। আর এ সময়ে যখন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুর মুখে সংলাপের কথা শুনেন তখন দেশবাসী আশার আলো দেখতে পান।
আবার যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মুখে শুনেন- আলোচনার বিকল্প কিছু নেই-তখনো তারা উদ্বেলিত হন। হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, চলা-ফেরায়, বাসে-ট্রেনে, চায়ের আড্ডা থেকে বিয়েবাড়ি সর্বত্র এখন একটাই চাওয়া দেশের স্থিতিশীলতাবিজ্ঞাপন
সুড়ঙ্গের ওপাশে কি আলো দেখা যাচ্ছে? ক’দিন ধরে রাজনীতির মাঠের বেশ কিছু আলামত এ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর সংলাপের তাগিদ আসছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। সংলাপই পারে একমাত্র বর্তমান সংকটকে উতরে দিতে। ইতিমধ্যে নানা মাধ্যমে বিভিন্ন কথা হাওয়ায় ভাসছে। গুঞ্জন, গুজব তো বাংলাদেশে অহরহই বইছে। এক্ষেত্রেও কম যায়নি। তবে ভিসা নীতি ঘোষণার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ডাকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা ছুটে যান। তারা এক টেবিলে বসেন। এটাকে যদি আলোচনার সূচনা ধরি তাহলে বলতে হয়, শিগগিরই সুড়ঙ্গের ওপাশে আলোর দেখা মিলবে। যদিও দেশে আলোচনায় রাজনৈতিক কোনো বিষয়ের সমাধান হয়েছে এমন নজির নেই। তারপরও অতীতে হয়নি বলে ভবিষ্যতে হবে না- এমন তো কথা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের কথাবার্তায় কিছুটা হলেও আশা জন্মায় মনে। তার উপর মঙ্গলবার রাজনীতির টালমাটাল এ সময়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুর এক মন্তব্যে নড়েচড়ে বসেন সবাই। আমির হোসেন আমু কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনার দুয়ার খোলা। প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনা হতে পারে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১৪ দল আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে আশ্রয় করে বিএনপি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এটা কারও পক্ষে-বিপক্ষে কিনা তা প্রমাণিত হবে আগামী দিনে বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে। আমরা বলতে চাই, প্রয়োজনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক। আমরা বিএনপি’র সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার বাধা কোথায়? কীভাবে সেটা নিরসন করা যায় এটা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা যেতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সংলাপের বিকল্প কিছু নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। অবশ্য আমির হোসেন আমু ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঠিক উল্টো কথা বললেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে- এরকম কোনো সংকট বাংলাদেশে হয়নি। এ ছাড়া আপাতত বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেয়নি
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সংলাপের বিকল্প কিছু নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

অবশ্য আমির হোসেন আমু ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঠিক উল্টো কথা বললেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে- এরকম কোনো সংকট বাংলাদেশে হয়নি। এ ছাড়া আপাতত বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেয়নি। বুধবার সকালে ৬ দফা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। তবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করবো। এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করবো। সময় বলে দেবে কখন কী হবে। আপাতত আলাপ-আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বক্তব্য দলীয় বক্তব্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের বক্তব্য দিলাম। এখানে আমু ভাইয়ের সঙ্গে আমার কন্ট্রাডিকশন নেই। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় তিনি প্রকাশ্যে আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। বলেছেন, সিদ্ধান্ত হয়নি। এখানেও প্রশ্ন সিদ্ধান্ত হতে কতোক্ষণ। ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, এমন কিছু হয়নি যে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসতে হবে। তিনি নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন। এ কথায়ই বোঝা যায় সংলাপ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। তবে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি যদিও আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো জানায়নি। তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এলে বিএনপি এতে সায় দিবে বলেই মনে হয়। কারণ তাদেরও দাবি তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যাই হোক নির্বাচনের এখনো ছয় সাত মাস দেরি আছে। এ সময়ে নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকান ভিসা নীতি প্রণয়ন দেশের জন্য কতোটুকু সম্মানের? রাজনৈতিক দলগুলো এই ভিসা নীতিকে তাদের প্রতিপক্ষের উপর আরোপ করেছে বলে নিজেরা ঢেঁকুর তুলছেন। আদতে যে এই ভিসা নীতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয় সেটা তারা ঠিকই বুঝেছেন। যে জন্য প্রধান তিনটি দলই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ডাকে সাড়া দেন। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনকে অবাধ এবং সুষ্ঠু করার টার্গেটে স্বতন্ত্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকে ঢাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সরকার, বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে চলেছেন তিনি। এসব বৈঠকে রাষ্ট্রদূত জানার চেষ্টা করছেন মানুষের ভোটাধিকার কীভাবে নিশ্চিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও কথা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানো সম্ভব কিনা? সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার যে নামেই হোক তা সরকার এবং বিরোধী-সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে এমন কথাও আসছে। তাছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে তা বহুবার খোলাসা করেছেন হোয়াইট হাউস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থানে অবিচল রয়েছে বলে সোমবারও জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।
২৪শে মে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকে এই ক’দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে। মধ্যাহ্নে বসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রচারণা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন বলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এক টুইট বার্তায় নিশ্চিত করা হয়েছে। এর দু’দিন আগে পিটার ডি হাস ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে বৈঠক হয়। জিএম কাদের রোববার পিটার ডি হাসের সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের বাসায় যান। ওই বৈঠকের মুখ্য আলোচ্য বিষয় ছিল নির্বাচন।
আর বাংলাদেশের এই নির্বাচনের দিকেই দৃষ্টি গোটা বিশ্বের। নির্বাচনে যেন ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বের দেশগুলো। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই সব মহল নড়েচড়ে বসেছেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ চায় সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। যে সংবিধান থেকে তারাই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছে। ওদিকে বিএনপি চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে সরকার পদত্যাগ করুক। এরপর তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন যে নামেই ডাকা হোক সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হউক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সবক’টি নির্বাচনে মানুষ দলবেঁধে ভোট দিয়েছে। নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে উল্লাস করেছে। নির্বাচনের দিন সেই দৃশ্যই দেখতে চান সবাই। আর এ সময়ে যখন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুর মুখে সংলাপের কথা শুনেন তখন দেশবাসী আশার আলো দেখতে পান। আবার যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মুখে শুনেন- আলোচনার বিকল্প কিছু নেই-তখনো তারা উদ্বেলিত হন। হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, চলা-ফেরায়, বাসে- ট্রেনে, চায়ের আড্ডা থেকে বিয়েবাড়ি সর্বত্র এখন একটাই চাওয়া দেশের স্থিতিশীলতা। নিজের ভোটটি নিজে দেয়ার ক্ষমতাটুকু চান তারা। এ কারণে সুড়ঙ্গের ওপাশে তাদের দৃষ্টি। সেখানে একটু আলো দেখতে চায় তারা। অন্ধকার ভেদ করে যে আলো ছড়াতে পারে ভালোবাসা। যে আলো হতে পারে স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার।
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তত্ত্বাবধায়ক কোন বিকল্প সৃষ্টি হয় নাই। প্রশ্ন হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় কে? ১. জাতীয়পার্টি কখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পছন্দ করে নাই। ২. বি এন পি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় পর থেকে সবসময় বলেছে পাগল ছাড়া কোন নিরপেক্ষ ব্যাক্তি না। ১৯৯৬, ২০০৭ সালে যুদ্ধ বিপ্লব করেই তত্ত্বাবধায়ক দাবী আদায় করতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভাবনায় এসে যায় তত্ত্বাবধায়ক আন্ডারে নির্বাচন করবে কোন কোন দল। বি এন পি, জাতীয় পার্টি- যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না, তখন তাদের বাদ দিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বি এন পি, জাতীয় পার্ট' ছাড়া অন্যদল গুলো(জাসদ,বাসদ,খেলাফত, ওয়ার্কার্স) কতটা জনসম্পৃক্ত! কাজেই বি এন পি, জাতীয় পার্টি কে বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে, অবশ্যই নতুন দলগুলোকে নির্বাচন করার সুযোগ দিতে হবে। নতুবা নির্বাচন ফলপ্রসু হবে না। আওয়ামীলীগ এর অপশাসন এ জনগন চরম ক্ষুদ্ধ। হিরো আলমের ভোট প্রাপ্তি দেখে এটা বোঝা যায়। এখন আওয়ামীলীগ এর বিরুদ্ধে দাড়াবার মত নতুন দল দরকার। আর সেজন্য নতুন দলগুলোর নিবন্ধন সহজ করা দরকার। এছাড়া বি এন পি, জাতীয় পার্টি- কে নিয়ে যদি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হয়, তা হবে জনগনের সাথে চরম প্রহসন। ১৯৯১ সালে আমান উল্লাহ আমান সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা জনগনকে নিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় করেছিল। কিন্তু বি এন পি ক্ষমতায় আসার পর জনগনের সাথে প্রতারনা করল। ১৯৯৬, ২০০৭ সালে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবী প্রত্যাখ্যান করল। আবার লগি বৈঠা আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে হল। কাজেই আমরা আওয়ামীলীগ এর অপশাসন লুটপাটের হাত থেকে মুক্তি চাই। বি এন পি কে বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। তাই নতুন দলগুলোর নিবন্ধন সহজ করার আবেদন জানাই। নতুবা এই প্রতিশ্রুতি চাই যে, এন পি ক্ষমতায় এলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা বাতিল করবে না, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মত নৃশংস ঘটনা ঘটাবে না। ইচ্ছে মত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বয়স সীমা বাড়াবে কমাবে না। বিচারপতি ফরায়েজি র মত জাল সনদ ধারী কে বিচারপতি নিয়োগ করবে না।
যারা ভাবছেন সংলাপে সমাধান , তারপর ক্ষমতাসীন দের নীরবে প্রস্থান , তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন ।আপনারা বড় কলামিস্ট আপনারা আলো দেখতে পাচ্ছেন কিন্ত সাধারণ জনতা অন্ধকার দেখছে ।
গ্রামিন প্রবাদ আছে " বখিলের বাড়ির খাওয়া , খাইয়া হাত ধুইলে বিশ্বাস"। গত দু টার্ম ভোটের দাওয়াত ছিল কিন্তু প্রথমটায় তারিখের আগেই তারা নির্বাচিত হয়ে গেলেন দ্বিতীয় বারে আগের রাতে কাম শ্যেষ। গিয়ে জানলাম 'কষ্ট করার কাম নাই বাড়ি যান'। এবার মার্কিন মূল্লকের কঠিন চাপ।ভোটের দাওয়াত দিলেই চলবো না, ভোটারগন ও সকল প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর অবাদ অংশগ্রহন নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে একটা নিরপেক্ষ পরিবেশ ও রেফারী চাই। কারন বিগত দু'টি জাতিয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন একচেটিয়াভাবে ক্ষমতশীন দলের এজেন্ট হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিল। শত শত কেন্দ্র সরকার পক্ষীয় প্রার্থীর অনুকুলে শতভাগের বেশী ভোট কাষ্ট হলেও কমিশন তা অনৈতিক বা কারচুপি বিবেচনা করেনি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রাজ্ঞ নিবন্ধকারসহ অনেকে আশার আলো দেখছেন । বিবাদমান দু'পক্ষের দেহের ভাষা বুঝা গেলেও বিশেষ করে ক্ষমতশীনদের মনের ভাষা বুঝা দূস্কর। কেবল একজন দূতের ব্যতিব্যস্ততায় সরকার অবোধ শিশু বা পরিনতী বুঝতে পেরে নির্বাচনকালিন নিরপেক্ষ সরকারে রাজি হয়ে অতি গনতান্ত্রিক হয়ে উঠবেন এমন আশা করা যতটা সম্ভাবনার তার চেয়ে বেশী কালক্ষেপন করে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে তৎপর হবে। দূঃভাগ্যটা এখানেই
আলোচনার টেবিলে বহু বড়ো বড়ো সমস্যার সমাধান হওয়ার নজির আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টোটাই দেখা যায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নানের মধ্যে সংলাপ হয়েছে ব্যর্থ। পরিণামে এক এগারো। কারণ আমাদের রাজনীতিবিদরা বিচার মানেন, তাল গাছের দাবিও করেন। আওয়ামী লীগ চায় তাঁদের অধীনে নির্বাচন। তার অর্থ আবারো ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের পুনরাবৃত্তি। অথবা নতুন কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং। আমেরিকার নতুন ভিসা নীতির ফলে জোর করে ভোট করা কষ্টকর। তাই বিএনপিকে আলোচনায় এনে আপোষে ভোটের মাঠ দখল করে, ভোটের বাক্স যেকোনো প্রকারেই হোক ভর্তি করতে পারলেই ক্ষমতার তালগাছ আবারো তাঁদের দখলে রাখার কৌশল। ভিসা নীতির আওতায় পড়তে হবেনা। যাঁরা বিএনপিকে পদে পদে নিপীড়ন করেছে, অপদস্ত ও হেয় প্রতিপন্ন করার কোনো রাস্তাই বাদ রাখেনি হঠাৎ তাঁদের মুখে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা সন্দেহের উদ্রেক হওয়াই স্বাভাবিক। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একবার যথার্থই বলেছিলেন, সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে তারপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আলোচনা ব্যর্থ হবে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আলোচনার কথা সময় ক্ষেপণ করে দেখা যাবে হঠাৎ একদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে। সরকার বলবে নির্বাচন - নির্বাচন কমিশনের ব্যপার। এখানে সরকারের হাত নেই। কমিশন স্বাধীন। কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। সরকার সহযোগিতা করবে- ইত্যাদি ইত্যাদি। আলোচনা একটা টোপ। বিএনপিকে গণ-অভ্যুত্থানের দিকে এগোতে হবে। নাহয় কুলে এসে তরী ডুবে যাবে।
শেখ হাসিনার আশ্বাসে বিশ্বাস করে বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে এসেছিল কিন্তু ধোঁকাবাজির নির্বাচন করে শেখ হাসিনা সে বিশ্বাসকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে না , এটা নিশ্চিত। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগও সংবিধান সংশোধন করবে না । সে ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগেরই কোন সিনিয়র গ্রহনযোগ্য নেতা যেমন তোফায়েল আহমেদ,আমীর হোসেন আমু বা মতিয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন যার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব।
অনেকেই হাসের পিঠে চড়িয়া নির্বাচনী বৈতরণী পারি দেওয়ার আনন্দে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিরক্তি, পদত্যাগ, স্লিপ অব টাং, সংলাপ, সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বর্তমান সময়ে আওয়ামীলীগের ভেল্কিবাজি বা গেম ছেঙ্গার । গত দুই টার্মে আমরা দেখেছি খেলা অতঃপর গোলপোস্ট নিরুদ্দেশ। এবার খেলার মোটিভ চেঞ্জ। জনগণ পথে নেমে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে না তোলা পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে, হাতে সময় কম। খেলায় প্রতিপক্ষকে দূর্বল ভাবার কারণ নেই।
আঃলীগের সাথে সংলাপের অতিতের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা এতে এজেন্ডা ভিত্তিক সংলাপ না হলে কোন ফল আসবে না এবং আঃলীগ সভানেত্রী কে রেখেও সুষ্ঠ নির্বাচন অসম্ভব। তাই এই দুইটি বিসয়ে সু স্পষ্ট ঘোষণা না আসা পযর্ন্ত আমি কোন আশার আলো দেখছি না।বিএনপির উচিত হবে নিরপেক্ষ সরকার, আঃলীগ সভানেত্রীর পদত্যাগ এবং বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা না আসা পযর্ন্ত আন্দোলন যেন অভ্যহত রাখে।কারো মুলা ঝুলানো কথায় যেন আন্দোলনে বিগ্ন না ঘটে।
বাংলাদেশের জন্য পরীক্ষিত ও শতভাগ প্রমাণিত কেয়ার টেকার সরকার পদ্ধতির সিস্টেমে ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। যে যত কথাই বলুক একমাত্র কেয়ার টেকার সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকারের অধীনে এ যাবৎ ফেয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ মানুষ ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনগুলোতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পেরেছিল। এই সরকারের আমলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারাবার ভয়ে কোনোদিনও কেয়ার টেকার সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হোক এটা চাইবে না। কারণ তারা এই ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের উপর কি স্টীমরোলার চালিয়েছে এবং বিডিআর হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে, গুম, খুন, ফাঁসি এমন কোনো কাজ অবশিষ্ট রাখেনি যা তারা করেনি। তাই তাদের কাছে বেশি কিছু আশা করা ঠিক হবে না।
জনগন লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিতে চায়, এটাই মানুষের প্রত্যাশা।
আমরা আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, সাথে - সাথে ভোট চোরদের বিচার চাই।
আমাদের চার সন্তানের প্রথম তিনজন ভোটার। তাদের আক্ষেপ এখন পর্যন্ত তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেল না। কবে সুযোগ পাবে, তাও অনিশ্চিত।
আওয়ামীলীগের নেতারা এক একজন এক এক কথা বলছেন। ক্ষমতাসীন দলের সুষ্ঠু নির্বাচনের সদিচ্ছার চেয়ে যে কোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার ইচ্ছাটাই প্রকটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের ইচ্ছার সাথে জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। জনগণ একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চাচ্ছে। একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে পরিবেশ দরকার তা আদৌ এখনো দৃশ্যমান নয়। ক্ষমতায় থেকে কেউ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেনি। বিগত ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আওয়ামীলীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাদেরকে আগে পদত্যাগ করতে হবে এবং দল নিরপেক্ষ ব্যাক্তিদের হাতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।
মন্তব্য করুন
নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন
নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত
বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ বাংলাদেশের অর্থ পাচার, ভারতের আনন্দবাজার, ইউরোপের কালো তালিকা
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ নির্বাচন ঘিরে একই প্রশ্ন, আমেরিকা কি ম্যানেজ হয়ে যাবে?
আন্তর্জাতিক/ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পশ্চিমাদের অবস্থান
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, সরকারের নীরবতা, অ্যাকশনে অন্যরাও?

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]