বাংলারজমিন
নোয়াখালীতে ডিজিটাল ভূমি জরিপে কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের ভিডিও ভাইরাল
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
৭ জুন ২০২৩, বুধবার
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরহাজারী ইউনিয়নে ডিজিটাল ভূমি জরিপে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন নোয়াখালীর টক অব দ্য টাউন। জানা গেছে, উপজেলার ৩ নম্বর চরহাজারী ইউনিয়নে ভূমি জরিপের তসদিকের (এটাস্টেশন) কাজ চলছে। এর দায়িত্বে রয়েছেন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার রাখাল চন্দ্র দাস, সামছুল হক, আতিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। এরইমধ্যে ওই ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজারের অধিক খতিয়ান খুলেছেন তারা। ফাঁস হওয়া ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক এক লাখ টাকার একটি বান্ডিল গুনে নিচ্ছেন। ওই টাকা দিচ্ছেন চরহাজারী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নুরুল আলম চাষী। একাধিক সূত্র জানায়, ফেনীর সোনাগাজী এলাকার নাফিজ নামের এক শিক্ষকের মালিকানাধীন জমি নিজের নামে রেকর্ড করতেই নুরুল আলম চাষী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হককে ওই টাকা দিয়েছেন। স্থানীয় বেলাল আমিন নামের ভূমি জরিপের এক দালাল ওই ঘুষ বাণিজ্যের মধ্যস্থতা করেন এবং গোপনে তা ভিডিও করে রাখেন। পরে সামছুল হকের সঙ্গে তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় তিনি তা ফাঁস করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে চরহাজারী ইউনিয়নের বেলাল আমিনকে জিজ্ঞেস করা হলে তার সামনে টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। সোনাগাজী এলাকার ভুক্তভোগী শিক্ষক নাফিজ বলেন, ‘আমার পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ারা রেকর্ড, খাজনার রসিদসহ সব কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও টাকার বিনিময়ে নুরুল আলম চাষী অবৈধভাবে রেকর্ড করে নিতে ওই টাকা লেনদেন করেছেন। আমি বিষয়টি নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’ তবে জরিপ কর্মকর্তা সামছুল হককে এক লাখ ৭ হাজার টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নুরুল আলম চাষী। তিনি দাবি করেন, ওই টাকা ঘুষের নয়। কুমিল্লার এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তার পরিবারের জন্য টাকাগুলো পাঠিয়েছেন।
যা সামছুল হকের বাড়ির পাশে হওয়ায় তার মাধ্যমে দেয়া হয়। তবে কুমিল্লার টাকা নোয়াখালীতে কেন এলো, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি নুরুল আলম। এদিকে অভিযুক্ত উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক টাকা গুনে নেয়ার ভিডিওটি তার বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনিও দাবি করেন, তার বাড়ির পাশের এক প্রবাসীর পরিবারকে পৌঁছে দিতে ওই টাকা তাকে দেন নুরুল আলম চাষী। তাৎক্ষণিকভাবে কথিত ওই প্রবাসীর নাম জিজ্ঞাসা করলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরে জানাবেন বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। স্থানীয় চরহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগ ভূমি জরিপে ঘুষ লেনদেনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার কাছেও বহু অভিযোগ এসেছে। তারা আমার ইউনিয়ন পরিষদে বসে আমার এলাকার জনগণের পকেট কাটছেন, যা মেনে নেয়া যায় না। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবা উল আলম ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, ভূমি জরিপে নানান কথা শুনে আসছি। যেসব অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তা সমাধানও করে দিয়েছি। এখনো কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আবদুল হাই গাজী বলেন, চরহাজারী ইউনিয়নের ৫৫-৬০ শতাংশ এটাস্টেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে আরও ৩-৪ মাস সময় লাগবে। সেখানকার কাজের দায়িত্ব ওই কর্মকর্তাদের। অনেক সময় তারা আমাদের কথাও শোনেন না। ভিডিওর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।