ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং নানা প্রসঙ্গ

তারিক চয়ন
৩ জুন ২০২২, শুক্রবার
mzamin

উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’কে  অনেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস বলে থাকেন। এই উপন্যাসের ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?’ উক্তিটি বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তি রূপে বহুল ব্যবহৃত এবং চর্চিত। উক্তিটির ভাব সমপ্রসারণ বাল্যকালে বাংলা ব্যাকরণে পড়েন নি এমন পাঠকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আমরা পড়েছি- উত্তমের আদর্শ অনুকরণীয়, অধমের আদর্শ পরিত্যজ্য। অধমের খারাপ আচরণের জবাব খারাপ আচরণের মাধ্যমে দেয়া সমীচীন নয়। অধমের অনুকরণ ও অনুসরণ করা মনুষ্যত্বের পরিপন্থি। উত্তম স্বভাবের মানুষ কখনোই অধম ও হীন স্বভাবের মানুষের মতো আচরণ করেন না। 

এসব নীতিবাক্য আমরা কেবল বাল্যকালেই পড়িনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে সব কর্মকর্তা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তাদের প্রায় সবাইকে ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন? উক্তিটি কার?’ এই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করতে হয়েছে। বলাবাহুল্য, ওই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একেবারে শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি হলেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উচ্চ শিক্ষিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. একে আব্দুল মোমেন উক্ত উক্তিটি নিজেও জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে পাঠ করেছেন, এমনটা ধরে নেয়াই স্বাভাবিক।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু, মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই লিখতে হচ্ছে, গণমাধ্যমের সামনে কথা বলার সময় তার হয়তো ওই নীতিবাক্যটি সবসময় মনে থাকে না। 

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন (ডিক্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগীরা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি (জাতীয়) নির্বাচন দেখতে চায়। বৈশ্বিক মানবাধিকার সমুন্নত রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। শুধু পিটার হাস-ই নন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রত্যেক রাষ্ট্রদূত এবং সর্বস্তরের দায়িত্বশীল মার্কিন কর্মকর্তারাও এ কথাটিই  বলে আসছেন। 
ইতিমধ্যেই সবাই জেনেছেন, রাষ্ট্রদূত হাসের এরকম বক্তব্যে (ইউরোপ সফররত) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রেরিত বার্তায় মন্ত্রী মোমেন রাষ্ট্রদূত হাসকে কী ধরনের প্রশ্ন সাংবাদিকরা করবেন তার একটি তালিকাও ধরিয়ে দিয়েছেন। মোমেনের বক্তব্য অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে সাংবাদিকরা সুযোগ পেলে রাষ্ট্রদূত হাসকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। 

মন্ত্রীর কথামতো বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকারের কী অবস্থা সে সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন: আপনারা বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। 

কেন আপনারা নিজ দেশে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পারেন না? প্রতিবছর প্রায় এক লাখ মার্কিন নাগরিক নিখোঁজ হন। এমনকি শিশুরা তাদের হিস্পানিক মা-বাবার সঙ্গে পুনর্মিলন থেকে বঞ্চিত হয়। এ বিষয়ে আপনারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? দোষীদের কি আইনের আওতায় এনেছেন? আপনারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর জবাবদিহিতা চান, তাহলে কেন প্রতিবছর এক হাজারেরও বেশি নাগরিককে (বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক) হত্যার দায়ে মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী বা পুলিশের কোনো শাস্তি হয় না? কেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় না? 

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মার্কিন দূতকে এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন: আপনারা বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়, তাহলে আরটি (রাশিয়ান টেলিভিশন) সমপ্রচারে বাধা দিয়েছে কেন? 

যুক্তরাষ্ট্রে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা দেশটির রাষ্ট্রদূতকে এভাবে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে পারেন: আপনারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেন। যদি আপনাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু থাকে তাহলে কেন তরুণ আমেরিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না? কেন তরুণ আমেরিকানদের মধ্যে ভোট দেয়ার হার কম? প্রতিটি নির্বাচনে কেন আপনাদের ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট দেয়? এটা কি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়া? 
বাংলাদেশ শাসন এবং এর উন্নয়নের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া হয়নি মন্তব্য করে মন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে, বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী মজা করে কিছু প্রশ্নের তালিকাও শেয়ার করেছেন যেগুলো তারা অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন দূতের কাছে জানতে চাইবেন। যেমন: আমেরিকায় পরিবারতন্ত্র নেই কেন? সেখানে নির্বাচন দিনে হয় কেন? ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীনে পুলিশ হেফাজতে লেখক মরেনি কেন? কার্টুনিস্টকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কান ফাটিয়ে দেয়া হয় না কেন? এত বাকস্বাধীনতা কেন? গণমাধ্যম স্বাধীন কেন? ইত্যাদি। 

যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাতব্বরি’ নিয়ে মন্ত্রী মোমেনের অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। গেল বছরের ১০ই ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঠিক পরদিনই (১১ই ডিসেম্বর) তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমেরিকায় প্রতিবছর ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয়। বছরে ১৭ হাজার লোক রাস্তায় পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। এর জন্য তো তাদের দেশের সব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তাদের ওপর কোনো শাস্তি আরোপ করতে আমি শুনিনি। আমেরিকার নিজেদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর হাজারখানেক লোককে পুলিশ মেরে ফেলে। বিচারবহির্ভূত হত্যা। আর আমাদের কালেভদ্রে একজন-দুজন মারা যায়।’ 

মন্ত্রী মোমেন নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছেন, পড়ালেখা করেছেন। তিনি দেশটিতে  নিখোঁজ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, সেটি কোন উৎস থেকে প্রাপ্ত তা বলেন নি। তবে লক্ষণীয় যে, দেশটিতে প্রতি বছর নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বুধবার তিনি যে পরিসংখ্যান (প্রতিবছর ১ লাখ) দিয়েছেন এবং ১১ই ডিসেম্বর যে পরিসংখ্যান (প্রতিবছর ৬ লাখ) দিয়েছিলেন এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্যটি আকাশ-পাতাল। ছয় মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে পার্থক্যটি তো এত বড় হওয়ার কথা নয়! যাকগে। এ বিষয়টি বরং গবেষকদের কাছেই ছেড়ে দেয়া যাক। 

লক্ষণীয় যে, সুষ্ঠু নির্বাচন, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সুরক্ষা- মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে উঠে আসা এ তিনটি ইস্যু নিয়েই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মন্ত্রী মোমেন। তাহলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন মনে উঠে যে, তিনি নিজেও কি মার্কিন দূতের মতো বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা চান না? আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই যদি এই তিনটি বিষয়ের মারাত্মক অবনতি ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কি বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে এ তিনটি বিষয়ের উন্নয়নের আশা করতে পারে না? আমরা নিজেরাও কি তা চাই না? 

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবেই এসব পরামর্শ দিয়ে থাকে বা আহ্বান জানিয়ে থাকে সেটাতো পিটার হাসের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘গত ৫০ বছরে, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে, বাংলাদেশের ভালো বন্ধু আর কেউ ছিল না। আগামী ৫০ বছরেও এর চেয়ে আর কোনো ভালো বন্ধু হবে না।’  তাছাড়া, রাষ্ট্রদূত নিজ বক্তব্যে পরামর্শ দেয়া ব্যতীত বাংলাদেশের তেমন কোনো সমালোচনা তো করেনই নি, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রশংসাই করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শিগগিরই বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটবে এবং দেশটি ক্রমাগত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অর্জনগুলো বাস্তব এবং সত্যিই অসাধারণ।’ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সেদিনও পিটার হাস বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল দিনগুলো পেরিয়ে স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণে অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ কখনোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না! কিন্তু না, সেই অবস্থার বদল তো বটেই সফলতার গল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।’ 

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কেমন বন্ধু তা কেবল কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ করেছে দেশটি। করোনাকালে সেটা আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে। ওই সময় আমরা যখন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন উৎস থেকে নানান কারণে এমনকি চুক্তি করেও ক্রয় করা টিকা পাচ্ছিলাম না, তখন যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে কার্যকরভাবে এগিয়ে এসেছিল। শুধু কি তাই! সারা বিশ্বের সব দেশের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানকৃত করোনার টিকার সর্ববৃহৎ গ্রহীতা বাংলাদেশ! ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দেয়া তথ্যমতে, দেশটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে মোট ৬ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। কোভিড সংক্রান্ত উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারেরও বেশি অনুদান প্রদান করেছে। দেশটি গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। সুতরাং, এমন একটি বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সুপরামর্শ দেয়ার অধিকার রাখে কিনা সেটা পাঠকই বিবেচনায় নেবেন। 
আরেকটি বিষয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে যদি উপরোক্ত ‘অপকর্ম’গুলো সংগঠিত হয়েও থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা কি তাদের সেসব অপকর্ম অনুকরণ বা অনুসরণ করবো? নিজেদের কোনো ভুল বা দোষ কেউ ধরিয়ে দিলে বা কেউ কোনো সদুপদেশ দিলে আমরা কি সেসব আমলে না নিয়ে উল্টো তাকে আক্রমণ করবো? 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন সেগুলো সম্পর্কে খোঁজ করলে নিশ্চয়ই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। কোনো দেশই তো ভুল-ত্রুটির বাইরে নয়। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ক’দিন আগেও ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত হাস ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে’-এ বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২-তে (যা কিনা আগের বছরের তুলনায় দশ ধাপ নিচে) রয়েছে- এমন তথ্য স্মরণ করিয়ে দেয়ার আগেই নিজ দেশের সমালোচনা করেছেন। ওই ইনডেক্সে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ৪২ (সেরা ২৫% এর মধ্যে) হলেও তিনি বলেছেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম থাকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি নিখুঁত। শীর্ষ অবস্থান থেকে অনেক দূরে। সত্যি বলতে, যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ভালো করতে হবে।’ 
যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকারের অবস্থা কেমন সামপ্রতিক সময়ে সেটা বোঝা গিয়েছিল গত বছরের ৬ই জানুয়ারি। সেদিন ইতিমধ্যেই নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের হাজার হাজার সমর্থক দেশটির ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়ে কী তাণ্ডব চালিয়েছিল সেটা সবাই জানেন। সে তাণ্ডব মোকাবিলায় হয়তো ফেডারেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ছিল। কিন্তু, সারা দুনিয়ার মানুষই তো আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘পাগলা’ সমর্থকরা হাঙ্গামা বাঁধিয়ে ছাড়বে। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক কর্তৃক হাঙ্গামা বাঁধানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে- এমনটা জেনেও তাদেরকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে দেয়ার এমন সুযোগ প্রদানের নজির কি বাংলাদেশে দেখা যায়? শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের ক’টি দেশে এমন উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়? 

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন সেটাতো অনেকটাই বোঝা যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের নিয়ে পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশনে নানান বিদ্রূপ আর আক্রমণ করা দেখে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটির চৌদ্দগোষ্ঠীকে ধুয়ে ফেললেও সেখানে মামলা হয় না। অথচ আমাদের দেশে এমনকি কোনো পাতি নেতার নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু লিখলেও তার পক্ষে তার সাগরেদরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নামে মামলা করে বসেন! নির্বাচন নিয়ে আলাপ করতে গেলে বলতে হয়- আমাদের দেশে যেখানে খোদ নির্বাচন কমিশনারদের বারবার আশ্বস্ত করতে হয় ‘দিনের ভোট রাতে হবে না’, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন সেটা তো পাঠক বেশ ভালোভাবেই অবগত। 

এতসবের পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কথা অনুযায়ী ধরেই নিলাম- সুষ্ঠু নির্বাচন, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকারের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অধম। তাই বলে কি, আমরা এই অধমকেই অনুকরণ ও অনুসরণ করবো?

 

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status