নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, সরকারের নীরবতা, অ্যাকশনে অন্যরাও?
তারিক চয়ন
২৭ মে ২০২৩, শনিবার
‘ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা একটি মূল চ্যালেঞ্জ হবে’- স্বীকার করে নিয়ে জন লিখেছেন, ওদের নামকরণে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়ে অ্যান্টনি ব্লিনকেন যে বিবৃতি দিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে- গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ‘বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।’ অর্থাৎ, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হবে।
বুধবার সারাদিনের কাজ শেষে রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। অভ্যাসবশত শেষবারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে চোখ বুলাতেই দেখি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনের টুইট। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র স্বতন্ত্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তার টুইটের বার্তা মূলতঃ বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে দায়ীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বন্ধ। খুব সম্ভবত মানবজমিন অনলাইনেই সংবাদটি সর্বপ্রথম প্রচারিত হয়। এর কাছাকাছি সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ব্লিনকেনের বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়, যেখানে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। সব মিলিয়ে খবরটি সব জায়গায় মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এরই মাঝে শোনা যায় চ্যানেল আইতে জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সরাসরি হাজির হবেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার কথা শুনতে সবাই নড়েচড়ে বসেন। কারণ, সচেতন মহলের এটা অজানা নয় যে- পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যেই তার ক্ষমতচ্যুতির প্লট তৈরির জন্য ডোনাল্ড লু’কে দায়ী করেছিলেন। যাই হোক, এক প্রশ্নের জবাবে লু জানান, নতুন নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেইসব ব্যক্তিদের ভিসা সুবিধায় বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে, যারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে, ডোনাল্ড লু এটাও খোলাসা করেন যে গত ৩রা মে অর্থাৎ ঠিক তিন সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ সরকারকে নতুন এই নীতির বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল। অথচ, বাংলাদেশ সরকার বা সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে যাচ্ছেন বা পড়েছেন বলে বাজারে জোর গুজব থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি! বরং, এ নিয়ে রকমারি আর চটকদার সব কথা শোনা গেছে। দুদিন আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ‘বাংলাদেশের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসবে কিনা, তা জানেন না’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। নতুন ভিসা নীতির পর সরকারের দায়িত্বশীল এবং সরকারদলীয় অনেক নেতাকর্মী অবশ্য বলছেন, এটাতো নিষেধাজ্ঞা নয়। তবে, নিষেধাজ্ঞাই হোক কিংবা বিশেষ ভিসা নীতিই হোক তা জানার পরও কেন দেশের মালিক সাধারণ জনগণকে জানানো হলো না বা লুকোছাপা করা হলো- সে প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব তারা দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই’ বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিবিসি বাংলা’র সংবাদে বলা হয়েছে ‘এতে প্রতীয়মান হয় যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সাক্ষাৎকারটি দেবার কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের সরকার এই মার্কিন সিদ্ধান্তের কথা জেনেছিল।’ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দেয়া সরকারের নানা মহলের বক্তব্য, অতি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ সবকিছুকে এখন অনেকেই এক পাল্লায় মাপছেন।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি সম্পর্কে জেনেও তা জনগণকে সরকার না জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বিষয়টি প্রকাশ করার পর সরকারি মহল প্রকারান্তরে বিষয়টিকে এখন স্বাগতই জানাচ্ছে! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটা কথা, এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের অবশ্যই প্রতিহত করবো।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, “আমেরিকার এই ভিসার রেস্ট্রিকশন শুধু সরকারি দলের ওপর না, অপজিশনের লোকজনেরও ওপর বর্তাবে। এতে করে আমরা আশা করি, এবার তারা (বিএনপি) ইনশাআল্লাহ একটু সচেতন হবে।” এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রায় একই সুরে বলেছেন, ‘এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এতে সরকার বিচলিত নয়, যেহেতু আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এটা বিএনপির জন্যই দুশ্চিন্তার দাবি করে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে দুশ্চিন্তা করা উচিত, কেননা নির্বাচনের আগে বা পরে সংঘাতে রয়েছে ভিসা বিধিনিষেধের আরেকটি মানদণ্ড হিসাবে।’
তবে, লক্ষণীয় যে মন্ত্রীদের কথামতো বিএনপির নেতাকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের নয়া পদক্ষেপে বিচলিততো ননই, বরং তাদের মাঝে তীব্র উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘাটলে সেটি বুঝতে কারওই অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এটাকে ‘নিষেধাজ্ঞা’ বলতে নারাজ হলেও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী একে ‘বড় নিষেধাজ্ঞা’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনকে যারা নষ্ট করেছে, এটা তাদের জন্য বড় নিষেধাজ্ঞা। দেশের বাইরে-ভেতরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বহির্বিশ্ব থেকে সরকারকে সতর্ক করেছে। কিন্তু সরকারতো কারও কথা শুনছে না। তারা তাদের দৌরাত্ম্য ও লম্ফঝম্প অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং যে জিনিসটা এসেছে, সেটা তাদের শেষ পরিণতির পূর্বমুহূর্ত বা লক্ষণ।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে মার্কিন ভিসা সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মার্কিন এই পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তারই প্রতিফলন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। ভোট চুরি এখন থেকেই চলছে। তাই এত আগেই পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এই বিষয়ে ৩রা মে জানানো হলেও কেন এতবড় ঘটনা দেশের জনগণকে জানানো হলো না তা সরকারকেই জবাব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার ১২ ঘণ্টা না যেতেই দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে মূলত স্বাগতই জানান। অর্থাৎ দেশের তিনটি প্রধান বড় দলের পক্ষ থেকেই (মনে যাই থাকুক) মুখে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দলও।
‘যুক্তরাষ্ট্রের এ ভূমিকাকে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখি’ মন্তব্য করে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশের সকল বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনতার পাশে থাকার অনুরোধ জানাই। একইসঙ্গে গণতন্ত্র বিরোধী, ভোট ডাকাত, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে এরকম কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।’ ভিপি নুরের ন্যায় এমন আহ্বান এসেছে মার্কিন মুলুক থেকেও।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংগঠন রাইট টু ফ্রিডম এক বিবৃতিতে বলেছেঃ যুক্তরাষ্ট্র এবং সমমনা অংশীদারদের জন্য এটি প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ হবে যে তারা বাংলাদেশে বিগত দুটি গভীর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন চক্রের পুনরাবৃত্তি এড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন জন এফ ড্যানিলোভিজও টুইটারে আশা প্রকাশ করেছেন যে, অন্যান্য সমমনা দেশগুলোও একই ধরনের পন্থা অনুসরণ করে অনুরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করবে।
পাশাপাশি জন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন যেটি নিয়ে কেউই কথা বলছেন না। ‘ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা একটি মূল চ্যালেঞ্জ হবে’ স্বীকার করে নিয়ে জন লিখেছেন, ওদের নামকরণে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়ে অ্যান্টনি ব্লিনকেন যে বিবৃতি দিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে- গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ‘বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।’ অর্থাৎ, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হবে।
ওদিকে, বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘আমরা অবাধ নির্বাচনের পক্ষে আছি, আমরা অ্যাকশন নিতে প্রস্তুত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিনি, তবে আমরা যদি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কোনো কিছু দেখতে পাই তাহলে আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবো।’ বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যারা এই পথে বাধা হবে তাদেরকে দায়বদ্ধ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এটি সব সংস্থার জন্যও একটি সংকেত যে আমরা কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখছি।’ সমমনা বা বন্ধুপ্রতিম অন্য দেশগুলোও এখন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিনা সেটিই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
পাঠকের মতামত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশী কুটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলের জন্য, যে ভিসা নিতি চালু করেছে, তা বর্তমান সরকারের জন্য এক বিশেষ ধরনের হুমকি। তবে বাংলাদেশের জনগণ ও এমনটাই চাই। জনগণ চাই তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হক, বাংলাদেশের পার্লামেন্টে একদলীয় সরকারের অধীনে, পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচন আশাবাদী বাংলাদেশের জনগণ,
আওয়ামী লীগের লোকজন গত ১৫ বছর যাবত লুটপাট করে পাচার করেছে দেশের টাকা। এরাই হল রাস্ট্রোদ্রোহী। এখন সবচেয়ে ভয়ে আছে আওয়ামী লীগের লোকজন। জেল,জরিমানা, লুটের বিচার করা হবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে।আবার আমেরিকায় যেতে পারবে নাএবং পাচারের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে এবং জেল খাটা লাগবে।এক কথায় নিজে গরীব হবে এবং সাথে পরিবার।যতই বলুক বিরোধী দলের উপর নিষেধাজ্ঞা কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ প্রশাসন এর সবাই নিষিদ্ধ হবে।
আমেরিকার তৃতীয় বিশ্বের ভিসা পলিসি এবং শুরু সোনার বাংলা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটা কার্যকর প্রশংসার দাবিদার । নিরীহ জনগনের উপর ভিসা পলিসি শিথিল করে চোর, গুন্ডা রাজনীতিবিদ, মাস্তান, ব্যাংক ডাকাত, জোর করে ভোটের ব্যালট বক্স ভরা ব্যাক্তিদের সাময়িক সাজা অত্যন্ত গুরুতবপূর্ণ এবং শুধু আমেরিকা নয় সমস্ত ইউরোপসহ অন্যন্য দেশগুলোর একই পদ অনুসরণ করা উচিত। জনগ চায় যে দলই ক্ষমতায় আসুক জনগনের মাধ্যমে ম্যান্ডেট হয়েই আসতে হবে । এর বেতিক্রম হলে শক্তিশালী দেশ গুলোকে তাদের ইনফ্লুন্স ব্যাবহার করা উচিত।
আমেরিকার বর্তমান অবস্থা হলো; গায়ে মানে না আপনি মোড়ল।
ব্যাপার টা খুবই হাস্যকর মনে হচ্ছে আমার কাছে। বাংলায় একটা কথা আছে, - বক্তায় কয় কি, বলদায় বুঝে কি। আমেরিকা চেস্টা করছে বাংলাদেশ যাতে চীন রাশিয়া ব্লকে না যায়। আজ যদি বাংলাদেশে চীন রাশিয়ার উচ্চ কোন প্রতিনিধি দল আসে তাহলে নিশ্চিত ভাবে দেখবেন আমেরিকা আবার নুতন কোন নিসেধাজ্ঞ্যা দিবে। এটা আমেরিকার একটা কৌশল। যারা ন্যুনতম পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে ধারণা আছে তারাই ব্যাপার টা বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশ কে চাপে রেখে তাদের কাজ হাসিল করছে আমেরিকা। আগামী বছর আমেরিকার নির্বাচন এ সরকার পরিবর্তন হলে কোথাকার পানি কোথায় চলে যাবে ঠিক নাই। আসলে আমাদের তো কাজ কাম কম, আলোচনা সমালোচনা করার খোরাক আমরা পেয়েছি। চলতে থাকবে কয়েক দিন।
বিদেশিদের বলতে হবে যে, স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতা বদল হয় না। তাই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারলেও তাদের কোন ক্ষতি নাই বরং লাভ। তারা বলবে তাদের অধীনে নির্বাচন ভাল হয়। বিদেশিদের বলতে হবে যে, গত কিছু স্থানীয় নির্বাচনে সারাদেশে বি,এন,পি, জিতলেও কাজ করতে পারে নাই। কৌশল একটাই তাদের অধীনে নির্বাচন ভাল হয় দেখানো। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন করে বিশ্বকে বলেছিল যে এটা সংবিধান রক্ষা করার নির্বাচন। কয়েক মাস পরে আবার নির্বাচন দিবে। কিন্ত কথা রাখে নাই। ২০১৮ তে তারা ফেয়ার নির্বাচনের কথার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগের রাতে ভোট করে ক্ষমতায় এসেছিল। ভবিষ্যতেও তাই করবে । একবার ক্ষমতায় আসলে আর নিষেদাজ্ঞা দিয়ে লাভ হবে না। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে হার, তা তাদের কৌশল বা পাতানো নির্বাচন হতে পারে। এতে তারা দেখাতে চাইবে যে, তাদের দ্বারা ভাল ভোট হয়। তাই তাদের অতীত কাজে তাদের বিশ্বাস করার কোন কারন নাই। সারাদেশে তাদের দ্বারা হামলা মামলা বিদেশিদের বলতে হবে। তাদের মধুর কথার মধ্যে বিষ মেশানো আছে। তাই তাদের এই চরিত্র বিদেশীদের বলতে হবে ।
These kind of sanctions sometimes become as blessings for the people, for the country sanctioned for. I think for Bangladesh that's what going to happen regardless of any political parties; government or the oppositions. It's the warning signal for the government high officials, Businessman and others who try to take away foreign currency from the country. I am not sure if US government meant to help democracy in Bangladesh, however, it's going to help our country, our people to prevent draining our foreign currency.
বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি ও ------------------------------------------------ রাজনীতিকদের বোধদয় ------------------------------------------------ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ভিসা নীতির মূল উদ্দেশ্য গনতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ ভিসা নীতির সুবিধা নিজেদের পক্ষে দাবি করে বিএনপিকে এবং বিএনপি ভিসা নীতিকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করছে। এখন দেখা যাক, বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন ভিসা রেস্ট্রিকশন কোন কোন অপরাধের জন্য প্রয়োগ করা হবে এবং সেই অপরাধের সঙ্গেই বা জড়িত কারা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে: ১. ভোট কারচুপি ২. ভোটারদের বাধা প্রদান ৩. সহিংসতার মাধ্যমে জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘন এবং ৪. রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের মতপ্রকাশের অধিকার হরণের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ওপর এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। এবিষয় গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়: প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণের গনতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মক ভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ আছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। একজন নির্বাচন কমিশনার- মাহবুব তালুকদার স্বয়ং বলেছেন, "নির্বাচন এখন আইসিইউতে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তাঁর মতে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে রক্তাক্ত বললে অত্যুক্তি হবে না। আজ রোববার নির্বাচন কমিশনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাহবুব তালুকদার।" (প্রথম আলো ১৪ নভেম্বর ২০২১) নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, "চ্যালেঞ্জ সেটা হচ্ছে যে ডাকাত, সন্ত্রাসী গোপন কক্ষে একজন করে দাঁড়িয়ে থাকে, “আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান।” দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ।’" (প্রথম আলো ৩০ মে ২০২২) এভাবে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কয়েকশত নেতাকর্মীকে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার বা গুম করার এবং লাখ লাখ গায়েবি মামলা মাথায় নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ফেরারি জীবন যাপন করছে বাধ্য হয়ে এবং বিএনপির শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশে লাগাতার হামলা করার অভিযোগ রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করারও অভিযোগ আছে। এতেই অনুমান করা যায় জনগণের ভোটের অধিকার, গনতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দুয়ার কতোটুকু খোলা আছে। মার্কিন ভিসা রেস্ট্রিকশন যাদের জন্য প্রযোজ্য হবে: ১. বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশী কর্মকর্তা ; ২. রাজনৈতিক দলের সদস্য (সরকারি ও বিরোধী দলের) ; ৩. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ; ৪. বিচার বিভাগে কর্মরতগণ ; এবং ৫. নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যবৃন্দ। বিশ্লেষকদের মতে এদের মধ্যে যাদের দ্বারা পূর্বে উল্লেখিত অপরাধগুলোর এক বা একাধিক সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের জন্য ভিসা রেস্ট্রিকশন প্রয়োগ করা হবে। বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে যেসব ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে: বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশী কর্মকর্তা ব্যপকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে নির্দেশ করে। সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য বলতে সরকারি দল এবং তাদের মিত্র যারা বিরোধী দল সেজে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করেছে- তারাও হতে পারে এবং মিথ্যা গায়েবি মামলায় গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারীদের যারা শায়েস্তা করেছে তারা হতে পারে। ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়ায়- "পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, দেশের নির্বাচনে কেউ অনিয়ম করলে বা বাধা দিলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। নির্বাচন কমিশনে এই বিধান আছে। নির্বাচন কমিশন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি দেয়ার কে, সুতরাং এখানে ভয়ের কিছু নেই।" (মানবজমিন ২৬ মে ২০২৩) তিনি সত্য কথাই বলেছেন, নির্বাচনে কেউ অনিয়ম করলে বা বাধা দিলে কমিশনে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। কিন্তু, এমন অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের লোকজন অনিয়ম করলে কমিশন তাদের কাছে অসহায়বোধ করেছে। কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে প্রভাববিস্তারকারী একজন সরকার দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা না নিতে পারার অভিযোগ ছিলো। এনিয়ে ব্যপক সমালোচনাও হয়েছে। নিজেরা নিজেদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পেয়েছে। তারা দাতা। তাই তাদের সে অধিকার এমনিতেই বর্তায়। মার্কিন ভিসা নীতিতে কে কতোটা বেকায়দায় পড়েছে বা কে কতোটা বিচলিত তা পুরোপুরি পরিষ্কার হতে আরো কিছুদিন হয়তো লাগতে পারে। এখন একে অন্যকে দোষারোপের প্রতিযোগিতা চলছে। ভিসা নীতি বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র’- মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বার্তার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটা কথা, এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের অবশ্যই প্রতিহত করব।" (মানবজমিন ২৫ মে ২০২৩) নিন্দুকেরা বলছে, 'প্রতিহত' শব্দের মধ্য দিয়ে বাধা প্রদানের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ আজ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে যারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে ওয়াশিংটন এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য একটি আগাম সতর্কতা জারি করেছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণার প্রতি ঢাকার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নতুন মার্কিন নীতি বরং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি বলেন, নীতিটি ভালো, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।" (বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৫ মে ২০২৩) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। যা মার্কিন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিএনপির আস্থা যে নেই, বিএনপির নেতাদের কথায় তা বোঝা যায়। "প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনের তদারকি করার জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে বলে এই ঘোষণাটি এসেছে এবং তারা বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি।" (বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৫ মে ২০২৩) আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মার্কিন ভিসা নীতি বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করেছেন। "বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমেরিকার ভিসানীতিতে দেশের ওপর বজ্রপাত পড়েছে। এরপর থেকে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ৩ মে আমেরিকা ভিসানীতি পাঠিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু তা প্রকাশ হয়েছে ২৫ মে। সরকার তা এতদিন পকেটে লুকিয়ে রেখেছিল। আমেরিকা মনে করেছিল সরকার বিষয়টি দেশের নাগরিকদের জানিয়ে দেবে। ২৪ দিন অপেক্ষা করেও যখন দেখল ভিসানীতি প্রকাশ করা হয়নি। তখন আমেরিকা বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।" (কালের কণ্ঠ ২৬ মে ২০২৩) মার্কিন ভিসা নীতি গোপন রাখা সরকারের দুর্বলতা মনে করেন বিএনপির নেতারা। এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি বহু আগেই। এবং বর্তমান সরকারের অধীনে সবকটা নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে আসছে। চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের এক নেতা বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তকে মার্কিন ভিসা নীতির বিরোধী প্রমাণ করার জন্য ওঠেপড়ে লেগে পড়েছেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি লিখেছেন। "বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনবিরোধী বক্তব্য সংযুক্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাত। সেই চিঠিতে বিএনপি নেতাদের ওপর মার্কিন নতুন ভিসানীতি প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।" (যুগান্তর ২৬ মে ২০২৩) রাজনীতিকদের দৈন্যতা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত দুটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াকিবহাল বিধায় আগামীতে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাপ তৈরি করছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করনেনা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ গ্রহণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং, বিএনপিকে নির্বাচন বিরোধী চিহ্নিত করার চেষ্টা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লেখার মধ্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আছে কিনা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তা খোলাসা করে বাধিত করবেন। বস্তুত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের কোন দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলো বা করলোনা তা নিয়ে মাথা ঘামায়না। তাদের আগ্রহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে। "মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, "তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিরোধী দলকেও আহ্বান জানাবে? জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতর কোন রাজনৈতিক দলের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সে বিষয়ে আমি কথা বলতে যাচ্ছি না। আমি বলব, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে। এর সমর্থনেই আমরা নতুন নীতি ঘোষণা করেছি।’ মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে বাংলাদেশ সরকার স্বাগত জানিয়েছে।" (কালের কণ্ঠ ২৭ মে ২০২৩) মার্কিন নয়া ভিসা নীতি তাদের ওপর বর্তাবে যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। যেমন- ভোট কারচুপি করা। ভোটারদের ভয় দেখানো। কেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের এজেন্ট বের করে দেয়া। প্রকাশ্যে বা গোপনে অন্যের নিজে দেয়া ইত্যাদি। জনগণের সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতায় বাধা প্রদান করা। শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে সহিংসতার মাধ্যমে দমন করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ৩ মে সরকারকে জানানো হয়েছে। সরকার তা যেকোনো কারণেই হোক প্রকাশ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা সমালোচনা করা হয়েছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এখন দেখা যাক সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে কি ধরনের নির্বাচন বুঝায়। স্মর্তব্য যে, বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন কারচুপিতে ভরা ছিলো এমন অভিযোগ সর্বজন বিদীত। তার বিপরীতে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন ; এই চারটি নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সর্ব মহলে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সকলের নিকট গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন হয়েছে। উপসংহারে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ওইসব লোকের ওপর প্রয়োগ করা হবে যারা গনতান্ত্রিক নির্বাচনের সঙ্গে জনগণের শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশে বাধাদান করবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনার সাথে জড়িত হবে। এরমধ্যেই লঙ্কাকাণ্ডে ঘটে গেছে। "খাগড়াছড়িতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়ি।" (মানবজমিন ২৬ মে ২০২৩) আবার বিএনপির চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করার সময় ঢাকার কেরানিগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। "ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশাক বলেন, জিনজিরা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিলাম। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান ও ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে নিপুন রায়সহ আমাদের অন্তত ৩০-৩৫ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। মামলা–হামলা দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে জনগণ এর জবাব দেবে।" (মানবজমিন ২৬ মে ২০২৩) মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটা উৎকট উপসর্গ মানুষ গুম করা। বিরোধী দল বিএনপির বাঘা বাঘা কয়েকজন সহ অনেক মানুষ গুম হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অনেকেরই খোঁজ পাওয়া যায়নি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা তাদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করে আসছে অনেক দিন থেকে। "‘গুম এখনই বন্ধ করুন এবং গুম হওয়াদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিন। তা নাহলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। আর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) আসতে থাকবে। এতে করে দেশের সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে গতকাল খুলনায় আয়োজিত আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও র্যালিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।" (মানবজমিন ২৭ মে ২০২৩) এখন অপেক্ষার পালা, ভিসা নীতি কোন দলের জন্য কি বার্তা দেয় এবং কোন দল নিজেদের কিভাবে নতুন ভিসা নীতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়।
মন্তব্য করুন
নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন
নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত
বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ বাংলাদেশের অর্থ পাচার, ভারতের আনন্দবাজার, ইউরোপের কালো তালিকা
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ নির্বাচন ঘিরে একই প্রশ্ন, আমেরিকা কি ম্যানেজ হয়ে যাবে?
আন্তর্জাতিক/ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পশ্চিমাদের অবস্থান
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, সরকারের নীরবতা, অ্যাকশনে অন্যরাও?

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]