খেলা
হঠাৎ নারী ফুটবলে অস্থিরতা
চার ফুটবলারের পর দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা ছোটনের
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৭ মে ২০২৩, শনিবারহঠাৎ নারী ফুটবলে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। এরইমধ্যে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া ক্যাম্প ছেড়েছেন ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না। এর আগে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে অবসর নিয়েছেন সাফ জয়ী দলের দুই সদস্য সাজেদা খাতুন ও আনুচিং মগিনি। এই ঝড়ের মাঝেই নারী ফুটবলের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।
নারী ফুটবলের অস্থিরতার শুরু সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পরই। সাফে শিরোপা জেতার পরেই মেয়েদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিলেন বাফুফে বস। বছর ঘুরলেও ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হয়নি মেয়েদের। এমনকি নানা জায়গায় পাওয়া সংবর্ধনার অর্থও ঠিক মতো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি সাবিনা-কৃষ্ণাদের। এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমেও কথা বলতে মানা মেয়েদের। এমনকি বেতন বাড়ানোর দাবিতে অনুশীলন বর্জন করায় অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাদের। যদিও বাফুফে দাবি করেছে অর্থের অভাবে অলিম্পিক বাছাইয়ে দল পাঠাতে পারেননি তারা। কাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে অবসর নিলেন সিরাত জাহান স্বপ্না। মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও। ছোটনের কথায় স্পষ্ট, ফুটবল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দেশের নারী ফুটবলে। খেলা না থাকায় হতাশা বিরাজ করছে মেয়েদের মাঝে। তিনি নারী ফুটবল নিয়ে শঙ্কাও দেখছেন।
২০০৮ সাল থেকে দেশের মেয়ে ফুটবলের সঙ্গে জড়িত কোচ ছোটন। তার অধীনে এসেছে মেয়েদের সব সাফল্য। জাতীয় দল এবং বয়সভিত্তিক মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাতটি শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। মেয়ে ফুটবলে সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। সেটাও এসেছে এই ছোটনের হাত ধরে। কিন্তু সেই ছোটনই কিনা এই মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সাফল্যের পরও কেন এই সিদ্ধান্ত, এই প্রশ্নের জবাবে ছোটন বলেন, ‘মানসিক অশান্তি নিয়ে কাজ করা যায় না। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেও নানান কথা শুনতে হয়। এভাবে কাজ করা যায় না। আগামী ৩১শে মে’র পর থেকে আমি আর দায়িত্বে থাকছি না। প্রতিদিনই কাজের চাপ বাড়ছে। এরপরেও শুনতে হয় এটা হয় না, ওটা হয় না। এই মানসিক যন্ত্রণা নিতে পারছি না।’
তবে কে বা কারা এসব বলে এইটা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বাফুফের ভেতরে গুঞ্জন আছে মহিলা কমিটির প্রশ্রয়ে পল স্মলির অযাচিত হস্তক্ষেপই চাকরি ছাড়তে বাধ্য করছে তাকে! ছোটন হেড কোচ হলেও চাবিকাঠি মূলত পল স্মলির হাতে। ছোটন দিনরাত পরিশ্রম করেও বেতন পান মাত্র এক লাখ টাকা। সেখানে ছোটনের ওপর খবরদারি করা পল স্মলির বেতন ১৫ হাজার ডলার (প্রায় ১৬ লাখ টাকা)। সেই পল চাকরি ছাড়ার হুমকি দিয়ে আরো পাঁচ হাজার ডলার বেতন বাড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সফলতম কোচ ছোটনদের দিকে নজর নেই বাফুফের। গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের নারী দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব ছিল ছোটনের। জাতীয় দলের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও বাফুফে কর্তাদের আশ্বাসে তিনি সেখানে যোগ দেননি। বাফুফের কর্তারা সেই আশ^াসের বাস্তবায়ন ঘটাননি। এসব থেকেই কারণেই হয়তো চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছোটন। সংবাদ মাধ্যমকে জানালেও বাফুফেতে এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেননি তিনি।
বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণও ছোটনের চাকরি ছাড়ার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি জানা নেই বলে জানান বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার।
বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় দল- সব পর্যায়েই এক হাতে সামলেছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। এই ছোটনের কারণেই ফুটবলে স্বপ্ন দেখেছে মেয়েরা। সেই ছোটন চাকরি ছাড়লে এসব মেয়েদের কী হবে?