খেলা
উদ্ভট সব সিদ্ধান্ত, হাস্যকর অ্যাপ্রোচ আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা!
সৌরভ কুমার দাস
(৯ ঘন্টা আগে) ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

ইনিংসের ১৮তম ওভারের খেলা চলে, স্কোরবোর্ডে নেই যথেষ্ট রান! তখনও মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম শেখকে দেখা গেলো সিঙ্গেল-ডাবলে মনোযোগী হতে! গ্যাপে ফেলেই দুই রান নেওয়ার তাড়না! অদ্ভুত নয় এটা? শুধু এটা নয় একাদশ বাছাই, ব্যাটিং অর্ডার থেকে শুরু করে ব্যাটারদের অ্যাপ্রোচ সবকিছুই উদ্ভট লেগেছে! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উদ্ভট সব সিদ্ধান্ত, হাস্যকর অ্যাপ্রোচ, আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা! সবমিলিয়ে এ যেন অদ্ভুতুড়ে এক দল! বলছি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কথা।
শুরুটা করা যাক একাদশ দিয়েই। জাকের আলী ও শেখ মেহেদী, দুজনকেই বাইরে রাখা হয়েছে এদিন। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দুজনেই বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার। একাদশে ব্যাটার নেওয়া হয়েছে ৯ জন! বাকি যে তাসকিন আর রিশাদ, তারাও ব্যাট হাতে মাঝেমধ্যে কার্যকর হয়ে ওঠেন! এই যে অতিরিক্ত ব্যাটার নিয়ে খেলার প্রবণতা, এতে বাংলাদেশ দল কি কখনো উপকৃত হয়েছে। উত্তরটা হচ্ছে হয়নি! তবু এটা চলতেই আছে।
যে দলের পরিকল্পনাই ঠিক নেই সেই দলের পারফর্মেন্স ভালো হবে কিভাবে। একাদশে নেওয়া হয়েছে ৪ ওপেনার! ঘরোয়া ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বিপিএল, এনসিএল আর ডিপিএলে পারফর্ম করে জাতীয় দলে ফিরেছেন নাঈম শেখ। আর এই টুর্নামেন্টগুলোতে সব ম্যাচেই ওপেনিং করেছেন তিনি। অথচ সেই নাঈমকেই কিনা এদিন নামানো হলো ৪ নম্বরে। এদিন ওপেনিং করেছেন পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজীদ হোসেন তামিম। তামিম না পারলেও ইমনের ব্যাটে বেশ ভালো শুরুই পায় বাংলাদেশ। ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫৪ রান।
তবে এরপর শুরু হয় পথ হারানো। ৩ নম্বরে নামা অধিনায়ক লিটন কুমার দাস তো এখন ব্যাটিং করতেই ভুলে গেছেন বলে মনে হচ্ছে। এদিনও শুরুর টেম্পোটা তিনিই নষ্ট করে দিয়ে গেছেন। ১১টা বল নষ্ট করে করেছেন মাত্র ৬ রান। যেখানে তার উচিত ছিল ইমনের শুরুটা টেনে নেওয়া কিন্তু। তার আউটের পর বাংলাদেশ ব্যাকফুটেই চলে যায়। পরক্ষণেই আউট হন এদিনের একমাত্র ভালো খেলা ব্যাটার ইমন।
সবসময় ওপেন করা নাঈম শেখ সম্ভবত ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছেন। ৪ নম্বরে তাউহীদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটিটা জমেনি। অফসাইডের বলে খোঁচা মেরে আউট হয়েছেন হৃদয়। হবেনই তো, অফসাইডে তার খেলার সামর্থ্য আছে কিনা সেটাও তো দেখার। অথচ অফসাইডের এই চীরকালীন দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন শুনলে তিনি বড্ড অসন্তষ্ট হন। তিনি মনে করেন সাংবাদিকরা বোধহয় শুধু তার দুর্বলতাই নিয়ে পড়ে আছে! কিন্তু অফসাইডে খেলা শেখা বা দুর্বলতা কাটানোর কোনো লক্ষ্মণ দেখা যায় না তার মধ্যে। তিনি বরং ইদানিং রান করার চেয়ে মাঠে অ্যাটিটিউড দেখানোতে বেশি মন দিয়েছেন হয়তো।
টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো ভুল করেছে ওপেনারকে ৪ নম্বরে নামিয়ে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি কিভাবে খেলতে হয় সেটা তো আর ভুলিয়ে দেয়নি। তবে নাঈম শেখকে দেখে এরকম মনে হতেও পারে। দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন, শুরুতে কিছুটা শেকি ভাব থাকতে পারে। তবে এতটাও থাকার কথা না যেখানে ২৯ বলে ৩২ রান করবেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজ আর তার জুটিটা ৪৬ রানের। এই রান করতে দুজনে মিলে প্রায় ১০ ওভার হজম করে ফেলেছেন। যেখানে ৬ ওভারে ৫৪ রান হলো সেখানেই এই দুজনের কল্যানে বাকি ১৪ ওভারে হলো মাত্র ১০০ রান। অথচ এটা ১৮০ রানের উইকেট। ৮ম ওভারে উইকেটে গিয়ে ২০ ওভার শেষে ২৯ বলে ৩২ রানে অপরাজিত নাঈম! কি উদ্ভট এক ইনিংস।
সবচেয়ে বেশি জঘন্য লেগেছে নাঈম ও মিরাজের অ্যাপ্রোচ। পৃথিবীর কোনো দলেই হাতে ৬ উইকেট নিয়ে এত ডিফেন্সিভ ক্রিকেট খেলে না। দুজন ব্যাটার কেউই ঝুঁকি নিবেন না, কেউই আক্রমণাত্মক হবেন না এটা কি ধরনের ক্রিকেট? এর পিছনে কোনো ব্যাখ্যাই যুক্তিযুক্ত হওয়ার কথা নয়। টিম ম্যানেজমেন্ট এতগুলো ব্যাটার নিয়েছে, কিন্তু ব্যাটারদের কি বলে দেওয়া হয়নি অ্যাপ্রোচের বিষয়ে। ব্যাটাররা যদি আক্রমণাত্মক নাই হবেন তাহলে বাড়তি ব্যাটার কেনো নেওয়া হলো! টি-টোয়েন্টি দলে মিরাজের জায়গায় যেখানে নিশ্চিত নয়, সেখানে তাকে নামিয়ে দেওয়া হলো শামীম পাটোয়ারির আগে। ওয়ানডেতেই তার ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত সেখানে কিভাবে তিনি শামিমের আগে নামেন, এই প্রশ্নের হয়তো উত্তর কোনোভাবে দিবেন অধিনায়ক তবে সেটা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হবে না এটুকু নিশ্চিত। আর নাঈম শেখ, জাতীয় দলে ফিরেও যদি আগের অ্যাপ্রোচই থাকে তাহলে বাদ পড়ে আবার ফেরার কোনো মানেই হয় না!
অবশ্য নাঈমকে খেলালে ওপেন করাতে হবে, মিডল অর্ডার নয়। এই ঘটনা আগেও ঘটেছে, ওপেনিংয়ে জায়গা না থাকায় ওপেনারকে মিডল বা লোয়ার মিডল অর্ডারেও নামানো হয়েছে। কেনো? তাকে যদি খেলাতেই হয় ওপেনার একজনকে ড্রপ দেন। না হলে খেলায়েন না! কিন্তু এই অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড কেনো? এর কোনো উত্তর টিম ম্যানেজমেন্ট আর অধিনায়কের কাছে নেই নিশ্চিত। এই যে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে দলে ফেরানো হলো ১৩ মাস পর, এর কারণ কি! এমন কি পারফর্মেন্স সে করেছে যে তাকে দলে ফেরানো হলো। এরকম অজস্র প্রশ্ন আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নেই কোনো উত্তর।
বিশ্বকাপের বাকি কয়েক মাস, শ্রীলঙ্কায় আরও দুই ম্যাচ খেলার পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজ। অধিনায়ক লিটন নিজেই রান খরায়। তিনি দলের দিকে তাকাবেন নাকি নিজের দিকে? সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অবস্থা যেন এমন, ‘সর্বাঙ্গে ব্যাথা, ঔষধ দিবো কোথা।’