ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চিঠি

ওরা যাবে কোথায়?

গাজী আসাদুজ্জামান
১৮ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবারmzamin

যদি এভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় তবে তারা আর কিছুদিন পর রাস্তায় শুয়ে পড়বে। সরকারি এমপি, মন্ত্রীরা প্রায়ই তাদের ভাষণে দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্পের কথা বলেন। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বলেন। আর কিছুদিন গেলেই দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাবে একথা বলেন। কিন্তু এই উন্নয়ন কাজে আসবে না যদি না দেশের নিম্ন বেতনভুক মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে না পারেন। তারা দু’মুঠো অন্ন আর মোটা কাপড় না পরতে পারেন। একজন ছিন্নমূল মানুষ অল্প পয়সায় যদি একটি রুটি না পান। তাদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে মোটা ভাত আর মোটা কাপড় পরে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য। তাই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা নিম্ন বেতনভুক মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমূল্য এবং সেবামূল্যের এই হাইজাম্প আর লংজাম্প বন্ধ করুন। মানুষকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দিন। মনে রাখবেন নিম্ন বেতনভুক মানুষ যদি না ভালো থাকে তাহলে রাষ্ট্রও ভালো থাকবে না


বাজারে হু হু করে জিনিসপত্রের যে হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে মনে করেছিলাম তা নিয়ে লিখবো না, লেখার কোনো ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় না লিখে পারলাম না। রোজার কয়েকদিন আগে আমাদের এক মন্ত্রী বলেছিলেন চিনির আমদানির উপর থেকে শুল্কহার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ঈদের আগে চিনির দাম কমবে বৈ বাড়বে না। কিন্তু মন্ত্রীর কথার ঠিক উল্টোটিই ঘটেছে। চিনির দাম ঈদের সময় ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। বর্তমানে তা আরও বেড়ে প্রতিকেজি ১৪০ টাকা হয়েছে। চিনি আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি পণ্য। চিনি আমাদের খেতেই হবে। সেই চিনির দাম যদি আকাশচুম্বী হয় তাহলে নিম্ন বেতনভুক মানুষ সেই চিনি খাবে কী করে। গার্মেন্টে একজন শিক্ষানবিশ শ্রমিক সর্বনিম্ন বেতন পান ৮৫০০ টাকা। তার পক্ষে চিনির মূল্য এই ক’দিনে প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় চিনি খাওয়া বিলাসিতার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। ঈদুল ফিতরে পরিবার নিয়ে একটু যে পায়েশ খাবে- সেই ইচ্ছা থাকলেও তারা তা পারেনি। আধাকেজি ডিপ্লোমার মূল্য আগে ছিল ৩১০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪২০ টাকা। এই অবস্থায় নিম্ন বেতনভুক মানুষের পায়েশ খাওয়া লাটে উঠেছে। চিনি আর দুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন বেতনভুক মানুষের পায়েশ খাওয়া গরিবের ঘোড়া কেনার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ছোটবেলায় আমরা মাটির খেলনা হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে মিছামিছি চড়ইভাতি খেলতাম। কাঠের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে ভাত, মাংস এবং কাদামাটি গুলিয়ে পায়েশ বানাতাম। এরপর মহা আনন্দে মিছামিছি ভাত, মাংস আর পায়েশ খেতাম আর ঢেঁকুর তুলতাম। বর্তমান অবস্থায় চিনি আর দুধের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে নিম্ন বেতনভুক মানুষের মিছামিছি চড়ইভাতির মতো পায়েশ খাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা চললে একদিন শুনতে হবে নিম্ন বেতনভুক মানুষ আবার পায়েশ খায় নাকি!   

বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেখেশুনে মনে হচ্ছে দেশে দ্রব্যমূল্যের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যদি নিয়ন্ত্রণই থাকতো তাহলে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্যের এই হাইজাম্প আর লংজাম্প দেখতে হতো না। দ্রব্যমূল্য বাড়তেই পারে; তবে সেটা ১০, ১৫ অথবা ২০ টাকা- এর বাইরে গেলে সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া বলে। বাংলাদেশে বর্তমানে সেটাই হচ্ছে। কোথাও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই কিছুদিন আগে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। হঠাৎ তা বেড়ে হয়ে গেল ১৪০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ছিল ১২০/১৩০ টাকা, তা বেড়ে হয়ে গেল ২৪০ টাকা। চিনির দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা তা বেড়ে হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। গরুর মাংস ছিল ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, তা বেড়ে হয়ে গেল ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। বর্তমানে পিয়াজের মূল্য আবার লাফ দিয়েছে। কোথাও কোথাও পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আদার দাম ছিল ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। এখন তা বেড়ে কোথাও কোথাও ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরার দাম ছিল আগে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। গরম মসলার দাম নাই-ই বললাম। সেখানেও অগ্নিমূল্য। এই যে দ্রব্যমূল্যের হঠাৎ হাইজাম্প আর লংজাম্প এটাকে আমরা কী বলবো। কিছু লোকের পকেট ভারী করার এই যে পাঁয়তারা এটা যতদিন চলবে ততদিন আমাদের পকেট খালি হতেই থাকবে। আর এর কাফফারা দিতে হবে আমাদের এই নিম্ন বেতনভুক, নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের। আমাদের নিয়ে এই যে সিন্ডিকেটের দাম বাড়ানোর খেলা এটা যতদিন চলবে ততদিন আমাদের মুক্তি নেই। স্বস্তি নেই। 
বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। কিছু সিন্ডিকেট এই খেলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বিদেশে জিনিসপত্রের দাম কমলেও আমাদের দেশে তা বেড়েই চলেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তাল রাখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তড়তড় করে বৃদ্ধি পাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম। সেই সঙ্গে আছে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবৃদ্ধির খড়্গ। কিছুদিন আগে গ্যাসের দাম, পানির দাম, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শোনা যাচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নাকি আবারো বাড়ানো হবে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে নিম্ন বেতনভুক মানুষ যাবে কোথায়? তাদের তো আর দ্রব্যমূল্যের মতো বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সরকারি কর্মচারীদের কথা আলাদা। তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব আমার মতো অধমের নেয়া সম্ভব নয়। আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেয়ার মতো অবস্থা আমার হয়নি। আমি শুধু বলতে পারি, নিম্ন বেতনভুক মানুষের কথা। তারা এই মূল্যবৃদ্ধির যাতনায় নুয়ে পড়েছে। তারা শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। করোনার প্রভাব এখনো তাদের রয়ে গেছে। অনেক পরিবার করোনার সময় গ্রামে চলে গেছে। তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। করোনা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে তুলে দিয়ে গেছে। অনেক পরিবার করোনার সময় বসে বসে খেয়ে তাদের পুঁজিপাট্টা শেষ করে ফেলেছে। এর ওপর যদি এভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় তবে তারা আর কিছুদিন পর রাস্তায় শুয়ে পড়বে। 

সরকারি এমপি, মন্ত্রীরা প্রায়ই তাদের ভাষণে দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্পের কথা বলেন। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বলেন। আর কিছুদিন গেলেই দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাবে একথা বলেন। কিন্তু এই উন্নয়ন কাজে আসবে না যদি না দেশের নিম্ন বেতনভুক মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে না পারেন। তারা দু’মুঠো অন্ন আর মোটা কাপড় না পরতে পারেন। একজন ছিন্নমূল মানুষ অল্প পয়সায় যদি একটি রুটি না পান। 

তাদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে মোটা ভাত আর মোটা কাপড় পরে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য। তাই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা নিম্ন বেতনভুক মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমূল্য এবং সেবামূল্যের এই হাইজাম্প আর লংজাম্প বন্ধ করুন। মানুষকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দিন। মনে রাখবেন নিম্ন বেতনভুক মানুষ যদি না ভালো থাকে তাহলে রাষ্ট্রও ভালো থাকবে না।    

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক/ পিতা ও কন্যার পরিণতি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status