নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পশ্চিমাদের অবস্থান
তারিক চয়ন
২০ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার
সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের একেবারে শুরুতে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ‘সবকিছু ঠিক’ শব্দদ্বয় যোগ করার কারণ- নির্বাচন একেবারে দুয়ারে কড়া নাড়লেও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে দেশের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এখনো কোনো মতৈক্যে পৌঁছুতে পারে নি। এই মুহূর্তে বিএনপি’র সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আন্দোলনের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগেই তাদের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু, সংসদে না থাকলেও বাস্তবে দেশের প্রধান বিরোধী দল মূলত বিএনপি’ই। সুতরাং, বৃহত্তর স্বার্থে দেশের ‘সবকিছু ঠিক’ রাখতে চাইলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে মতৈক্যে পৌঁছুতে হবে এই বিএনপি’র সঙ্গেই। সেক্ষেত্রে, দেখতে হবে বিএনপি কি চায়? তাদের মূল দাবি কি? বলাবাহুল্য, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র মূল দাবি একটাই। আর সেটা হলো, নির্বাচনকালে যেন বর্তমান সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকে এবং একটি নির্দলীয়, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অতীতে বাংলাদেশে যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে ডাকা হতো এবং যে ধরনের সরকারের অধীনে দেশে অনেকগুলো তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু এবং সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারের তরফে কখনোই বিএনপি’র এমন দাবি মেনে নেয়ার পক্ষে নমনীয় সুর লক্ষ্য করা যায় নি।

একথা সবাই জানেন যে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই পূর্ব-পশ্চিমের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকদের গতিবিধি বেড়ে যায়। এটা প্রকাশ্যে-গোপনে সবসময়ই ছিল। নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা আর বৈঠক করে থাকেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন স্তরের কূটনীতিকরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পর্দার আড়ালে অনুষ্ঠিত সেসব বৈঠকে কি কি আলোচনা হয় তার কিছু খবর আমরা জানতে পারি, অনেক কিছুই আবার পারি না। তবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের এত আগে থেকে এবং এত নিয়মিতভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের নির্বাচন নিয়ে এত বেশি কথা বলতে অতীতে কখনোই শোনা যায় নি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য বলে পরিচিত ইউরোপের কিছু দেশ থেকে শুরু করে বাদ যায় নি এশিয়ায় পশ্চিমাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ‘নিরীহ-ভদ্র’ দেশ জাপানও। লক্ষণীয় যে, অতীতে তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাগিদ দিলেও এবার সেসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ কথাটি। শুধু, অংশগ্রহণমূলকই নয় এখন তারা ‘সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছেন। এর মধ্যদিয়ে তারা যে সংসদের বাইরে থাকা রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার বার্তাই দিচ্ছেন, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। তবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা এটিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে তারা কখনোই কেউ কিছু প্রকাশ্যে বলেন নি। তাদের বক্তব্য, এই বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা মিলেই ঠিক করুক। আর সে কারণেই, যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না- পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সামপ্রতিক এমন বক্তব্য শুনে সবাই বেশ অবাক হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিনকেনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক শেষে দেশে ফিরেই গত ১৪ই এপ্রিল তিনি বলেছেন, ‘তারা চায় (যুক্তরাষ্ট্র), আমাদের যে নির্বাচন হবে, সেটা যেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার (সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ) হয়। তারা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। তারা আমাদের যে নিয়ম আছে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী ইলেকশন চায়। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য আমরা কী কী তৈরি করেছি, ভোটার লিস্ট তৈরি করেছি, ফটো আইডি দিয়ে, ব্যালট বাক্স তৈরি করেছি স্বচ্ছ। আমরা স্ট্রং একটা ইলেকশন কমিশন করেছি-এগুলোতে তারা খুশি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তারা চায়, আমরা সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন করি। তবে স্বচ্ছ নির্বাচন শুধু চাইলেই হবে না। সে জন্য সব দলের সক্রিয় সহযোগিতা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন। সরকারি দল, বিরোধী দল, ভোটার যারা আছেন, বিভিন্ন প্রশাসনের লোক আছেন-প্রত্যেকেরই আন্তরিকতা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা সরকার একটি ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন করতে বদ্ধপরিকর। সাহায্য করা দরকার অন্যান্য সব দলের। তাদের আন্তরিকতা নিয়ে আসতে হবে।’ লক্ষণীয় যে, সম্ভবত এই প্রথম সরকারের কোনো শীর্ষ ব্যক্তি একথা বেশ স্পষ্টভাবে স্বীকার করলেন যে ‘স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সব দলের সক্রিয় সহযোগিতা-আন্তরিকতা প্রয়োজন’, আর সেটাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এসে। যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন দাবির পক্ষে বা বিপক্ষে দেশটি এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ঠিক কি বলেছেন সেটি পর্যালোচনা করলেই আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রত্যাশার কথা বুঝতে পারি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আগামী নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। অবশ্য আমরাও তাকিয়ে আছি, যাতে বাংলাদেশ এই অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শক্তিশালী উদাহরণ তৈরি করতে পারে।’
তাছাড়া, ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ব্লিনকেন নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেন, ‘আমরা যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে গভীর করতে চাইছি, তখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাটা গুরুত্বপূর্ণ।’ ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল মোমেন-ব্লিনকেনের বৈঠক প্রসঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারো আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবিক ও শ্রম অধিকার এবং অবাধ মত প্রকাশ অনুমোদন করা।’ এর আগে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক শুভেচ্ছা বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের প্রতি দুই দেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে লিখেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সময় মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের দুই দেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।’ সবমিলিয়ে বলা যায়, নির্বাচনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কেবল ‘একটি নির্দিষ্ট দিন অর্থাৎ ভোটদানের সময় অথবা নির্বাচনের দিন’ কথাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তারা তার সঙ্গে মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নাগরিক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা, গণতন্ত্র এসব শব্দগুলো নিয়ে আসছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে এটাই বোঝাতে চাচ্ছে যে, নির্বাচন কেবল একদিনের বিষয় নয়। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এক বছর আগেই (২০২২ সালের ২৪শে এপ্রিল) বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচনের দিন ভোটদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কার্যত ইতিমধ্যেই নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আবশ্যক হলো নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, সাংবাদিকদের ভয়ভীতি ছাড়া অনুসন্ধান এবং নাগরিক সমাজের ব্যাপক পরিসরে জনমত গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা।’ এরপর ৩১শে মে তিনি বলেছিলেন, ‘আনুষ্ঠানিক না হলেও বাংলাদেশে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তাই এখন থেকেই আমাদের দিক থেকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন হচ্ছে কিনা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখাটা জরুরি। তারপর ৮ই জুন রাষ্ট্রদূত হাস বলেছিলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, সরকার, রাজনৈতিক দল, এনজিও, গণমাধ্যম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনগণের ভূমিকা রয়েছে।’
সুতরাং, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনের দিন এবং বিশেষ করে নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিতের কথা বলছেন যাতে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ, প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার লাভ করেন, কেউ কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন। এর পাশাপাশি গণমাধ্যম যেন সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করে এবং প্রচার করতে গিয়ে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন না হয়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যেন স্বাধীনভাবে এবং নির্ভয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বস্তরের লোকজন যেন সবার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ন্যায় আচরণ করেন- এসব আহ্বান তো থাকছেই। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া শীর্ষ কূটনীতিক ও মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিরাও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একই বার্তা দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও একটি গণতান্ত্রিক দেশে কেবল নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই নয় বরং সবসময় এসব বিষয় নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিন্তু সকলেই একমত হবেন যে, নির্বাচনের সময় এসব বিষয় নিশ্চিত করা খুব বেশি জরুরি। বিএনপি এবং দলটির সঙ্গে রাজপথে থাকা অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন মহলের অনেকেই মনে করেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনকালে এসব বিষয় নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, এমনকি এই সদিচ্ছাও সরকারের নেই। আর সেজন্যই যে নামেই হোক নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধরনের একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এই মুহূর্তে তাদের একমাত্র দাবি। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রায় সব দেশই আশা করছে নির্বাচনকালে সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। তবে, সেটি বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব বলে নিজেরা মনে করে কিনা তা নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছুই বলছে না। হয়তো এই কারণে যে সেটা করলে তা অনেকের কাছেই ‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো’ ধরনের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অনেকেই মনে করছেন, বিরোধী দলগুলোর ইস্পাতকঠিন ঐক্য এবং রাজপথের শক্ত অবস্থানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর এমন অবস্থানও যে পরিবর্তিত হবে না তা হলফ করে বলা যায় না।
সে যাই হোক, ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে ‘স্বচ্ছ নির্বাচন শুধু চাইলেই হবে না, সে জন্য সব দলের সক্রিয় সহযোগিতা-আন্তরিকতা প্রয়োজন’ এমন কথা শুনে আমরা আশাবাদী হতে চাই। তিনি তো ঠিকই বলেছেন, সব দলের সক্রিয় সহযোগিতা এবং আন্তরিকতা ছাড়া তো বাস্তবে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিশ্চয়ই এটি অজানা নয় যে, সব দলের মধ্যে তার নিজ দল অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রয়েছে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাছাড়া, তার এটিও নিশ্চয়ই জানা আছে যে, অন্য দলগুলোর সহযোগিতা এবং আন্তরিকতা অর্জন করতে হলে অন্যদের কথাও শুনতে হবে, অন্যদের দাবি-দাওয়াগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে, প্রয়োজনে অন্যদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড়ও দিতে হবে।
পাঠকের মতামত
আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গোপন শক্তি হল, আওয়ামী বিরোধীরা মনে করে আওয়ামী লীগের কোন ভোটই নাই।এটা আসলে আওয়ামী লীগ উপভোগ করে আর মনে মনে হাসে। আর বিএনপি এতোটাই বোকা যে তারা সেই ভুলের মধ্যে ডুবেই আছে। আওয়ামী লীগ মাঝে মাঝে সাকো টা শুধু নাড়িয়ে দেয়। আর বিএনপি তা নিয়ে হাউ, মাউ, কাউ করতেই থাকে।
ধন্যবাদ জনাব তারিক চয়ন সাহেব কে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানবজমিন এর মাধ্যমে বাংলাদেশ জনগণের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ইস্যু হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকার এর অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমাদের দাবি একটা নিরপেক্ষ সরকার এর অধীনে অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আমাদের বন্ধু দেশ যারা আছে তাদের প্রতি আমার আবেদন বাংলাদেশে আগামী নিবার্চন নিরপেক্ষ সরকার এর অধীনে অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সহযোগিতা করার জন্য।
যে ভাবে নিবা্চন হোক আওয়ামীলীগ আবার আসবে
কথাটা হলো "নির্দলীয় সরকার"। তত্ত্বাবধায়ক দলীয় হতে পারে। বলা যায় "নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার"। আর নিরপেক্ষতা মানে হলো কর্তব্য সম্পাদনে নিরপেক্ষতা। দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু তিনি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করবেন না, ভোটারদের বাঁধাগ্রস্থ বা প্রভাবিত করবেন না, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবার সাথে আচরণে ভারসাম্য রাখবেন, কাউকে নিয়ম বহির্ভূত অনৈতিক সুবিধা দিবেন না, কাউকে বঞ্চিত করবেন না। ফলাফল প্রকাশে জালিয়াতি করবেন না। আসলে নিরপেক্ষতার মানে বুঝা কঠিন কিছু নয়। দলীয় লোকজনই এটা বুঝতে কূটতর্ক করে। সে জন্যই "নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার"।
দেশে আবার যদি অবৈধ পথে, অসৎ পথে ক্ষমতা ভোগের কেউ বন্দোবস্ত করে তাহলে ধরে নিতে হবে আওয়ামীলী গ BD তে এসেছে শুধু ক্ষমতা ভোগের জন্য। অন্য কোনো উদ্দেশে নয়। কারণ দলটি শুধু ৯৬ এর নির্বাচন ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে জনগণের মতামত নিয়ে আসতে পারেনি আর BNP যদি ৯১ এর পর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেত তাহলেই আওয়ামীলীগ কিয়ামত পর্যন্ত BD এর ক্ষমতায় আসতে পারতো না। আর এর পর ০৯, ১৪, ১৮ সবাই জানি বুঝি ও মানি। তবে শেষ কথা হলো আবারও অবৈধ ক্ষমতাতে গেলে BD কে চরম মূল্য দিতে হবে পাড়াভাবে, গ্রাম ভাবে, অঞ্চল ভাবে, জাতীয় ভাবে ও আন্তর্জাতিক ভাবে আজ কাল বা পরশু প্রবাদ নীতিতে। কি কি ক্ষতি ভোগ করতে হবে টা শত পর্যন্ত লেখা যাবে। আমার উপরের লেখা পক্ষপাতী দের জন্য নয়, শুধু জ্ঞানী ও সৎ রা আমার কথার সাথে এক মত হবেন
আওয়ামী লীগ মনে হয় চাচ্ছে এই ভাবে দিচ্ছি দিবো বলে টাইম কিল করে নির্বাচনের দারপ্রান্তে চলে যাওয়া অতপর সাংবিধানিক সংকটে ফেলে দেশ রক্ষার নামে একটা নির্বাচন করা যে নির্বাচন চাইলেও কেহ প্রতিরোধ করতে পারবে না। আর পরবর্তী চাপ সহ্য করার ক্ষমতা তাদের আছে ।
সাপ মরবে লাঠিও ভাঙবেনা। এ ধরণের যেকোনো কপট নীতি অবলম্বন করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা হবে। আওয়ামীলীগ কে জিততে হলে - জাল ভোট, রাতের ভোট, বেলট বাক্স ছিন্তাই, কেন্দ্র দখল, বয়স গোপন ভোটার, সাংবাদিক হেনস্তা, ভোট গণনায় জালিয়াতি, কেন্দ্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি, হত্যা, গুম, ভীতি প্রদর্শন, অত্যাচার ও ত্রাশ সৃষ্টি, পেশীশক্তি প্রয়োগ, লোভ দেখানো, গাইয়েবী মামলার মাধ্যমে দেশ ছাড়া করা - ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো নুতন পথ আবিষ্কার করতে হবে। এদিক থেকে সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো বি এন পি-র প্রার্থী খরিদ করা। এতে বিদেশিদের কিছুই বলার থাকবে না। অন্য দিকে নীতির চেয়ে অর্থ মূল্যবান ভেবে যারা মাথা বেচে দিতে চান তাদের নিকট একটা বিরাট এচিভমেন্ট। অবশ্য আপনাদের মাথা গুলো পরে নিলামে উঠানো হবে এবং রিপ্লেস করে আগের ব্রেন্ড নিয়ে আসা হবে। লেটস সি...
যথার্থ লিখেছেন আপনি
মন্তব্য করুন
নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন
নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত
বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ বাংলাদেশের অর্থ পাচার, ভারতের আনন্দবাজার, ইউরোপের কালো তালিকা
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ নির্বাচন ঘিরে একই প্রশ্ন, আমেরিকা কি ম্যানেজ হয়ে যাবে?
আন্তর্জাতিক/ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পশ্চিমাদের অবস্থান
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, সরকারের নীরবতা, অ্যাকশনে অন্যরাও?

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]