নির্বাচিত কলাম
খোলা চিঠি
ভ্লাদিমির পুতিনকে বলছি
গাজী আসাদুজ্জামান
২৯ মার্চ ২০২৩, বুধবার
এক্সেলেন্সি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আপনি কেমন আছেন? নিশ্চয়ই ভালো আছেন। কিন্তু আমরা ভালো নেই। আপনার দেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশে আটা, ময়দা ও সুজির দাম বেড়ে গেছে অত্যধিক। সেই সঙ্গে এলপি গ্যাসের দামও হাজার থেকে ১৫০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সিন্ডিকেট আপনার দেশ এবং ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এদেশে পণ্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য পণ্যমূল্যও আকাশচুম্বী হচ্ছে। শুধু কী পণ্যমূল্য। আমাদের একটি পণ্যবাহী জাহাজ আপনাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। জাহাজের এক নাবিকও নিহত হয়েছেন।

প্রিয় কমরেড, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন কমরেড লেনিন জার শাসক এবং তৎকালীন পরাশক্তি নাৎসি হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিরাট সোভিয়েত ইউনিয়ন গড়ে তুলেছিলেন। দেশ স্বাধীন করে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। একসময় পঙ্গুত্ববরণ করেন। তখন লেনিনকে ‘খোঁড়া ঘোড়া’ আখ্যা দিয়ে স্তালিন পলিট ব্যুরোর সদস্যদের হাত করে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন। এরপর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পলিট ব্যুরো সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানান এবং বিরাট ভূরিভোজের আয়োজন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দুর্ভিক্ষাবস্থায় স্তালিনের এই মহাভোজের আয়োজনে মহা ক্ষুব্ধ হন স্তালিনের স্ত্রী। তিনিও পলিট ব্যুরোর সদস্য ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দুর্ভিক্ষের সময় স্তালিনের এই মহাভোজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। স্তালিনকে বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এক টুকরো রুটির জন্য যখন মানুষ কাড়াকাড়ি করছে আর আপনি পলিট ব্যুরোর সদস্যদের নিয়ে বল্গা হরিণের মাংস আর ভতকার বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। খাদ্যের অপচয় করছেন। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে ভর্ৎসনা করেন তিনি স্তালিনকে। পলিট ব্যুরোর সদস্যদের সামনে স্ত্রীর এই তীব্র অপমান সহ্য না করতে পেরে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে স্তালিন তার মুখের জ্বলন্ত চুরুট স্ত্রীর জামার ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। জ্বলন্ত চুরুটের আগুনে দগ্ধ হয়ে ছটফট করে তার স্ত্রী ভূরিভোজের অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান এবং রাগ আর অভিমানে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। স্তালিনের এই একগুঁয়েমির কারণেই তিনি এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালোর জন্যই এই ভূরিভোজের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
আপনি হয়তো অবগত আছেন একগুঁয়েমি আর নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবা কোনোটাই উচিত নয়। হিটলারও তার এই একগুঁয়েমি আর নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। প্রিয় কমরেড, আমরা জানি- তিনটি দেশ বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে ক্ষমতাধর। এই তিনটি দেশ হলো আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন। আপনি ক্ষমতাধর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আপনি হচ্ছেন আপনার প্রতিবেশী ইউক্রেনের বড় ভাই। আপনার শক্তির কাছে ইউক্রেন নস্যি। তার ওপর আপনার অযাচিত যুদ্ধ ইউক্রেনের ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ সমতুল্য। বড় ভাই হিসেবে তার পাশে থাকা, তার প্রতি লক্ষ্য রাখা এটা আপনার কর্তব্য। ইউক্রেনের ওপর জুলুম না করে তাকে আলোচনার টেবিলে বসান। দু’দেশের বৈরী সম্পর্ক ত্যাগ করে আলোচনার মাধ্যমে ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের সমস্যার সমাধান করুন। মনে রাখবেন- বড়দের কর্তব্য হচ্ছে ছোটদের স্নেহ ও ভালোবাসা দেয়া। ভালোবাসাই পারে শত্রুকে আপন করতে। দুুটি দেশকে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করতে।
প্রিয় কমরেড, এখানে একটি গল্পের অবতারণা করতে হয়। এক ঝোলা গুড় বিক্রেতা দুই ভার (বাঁক) গুড় নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক ঝলকায় তার গুড়ের ভার থেকে কিছু গুড় পড়ে যায়। বেচারা শুধু তাকিয়ে দেখলেন। করার কিছুই রইলো না। এরপর হাঁটা দিলেন বাজারমুখী। ঠিক ওই সময় এক দুষ্ট লোক সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঝোলা গুড় রাস্তায় পড়ে আছে দেখে লোকটি উপর থেকে কিছু গুড় চেটেপুটে খেয়ে হাতে লেগে থাকা গুড় পাশের একটি সুন্দর দেয়ালে মুছে রওনা দিলো তার গন্তব্যে। দেয়ালে ঝোলা গুড়ের গন্ধে ছুটে এলো মাছি। এরপর এলো মৌমাছি। মৌমাছিকে দেখে ছুটে এলো টিকটিকি। টিকটিকিকে দেখে ছুটে এলো বিড়াল। বিড়ালকে দেখে ছুটে এলো কুকুর। এরপর ঘটে গেল ওদের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড। মুহূর্তের মধ্যেই সুন্দর দেয়ালটি অসুন্দর হয়ে গেল। দেয়ালটি আর দেয়াল রইলো না। ইউক্রেনের পরিস্থিতি যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ঘটনাটি ঠিক সেই দিকেই যাচ্ছে। যুদ্ধের কারণে অন্য রাষ্ট্রগুলোও ইউক্রেনের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে। আল্লাহ না করুক যদি এই যুদ্ধ পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয় তাহলে শুধু ইউক্রেন আর রাশিয়া নয় বিশ্ববাসীকেও এর মূল্য দিতে হবে। ভুগতে হবে আমাদেরকে। প্রিয় কমরেড, আপনার প্রতিবেশীর সুন্দর দেশটি যুদ্ধের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হোক- এটা নিশ্চয় আপনি চাইবেন না। আপনার দেশেরও ক্ষতি হোক- এটাও চাইবেন না। তাই আপনার প্রতিবেশীর দিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে তাকান। তাকে আলোচনার টেবিলে বসান। প্রয়োজন হলে অন্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা নিন। জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বসুন। শি জিনপিংকে দায়িত্ব দিন। আলাপ আলোচনাই পারে এই যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে দুটি রাষ্ট্রকে মেলবন্ধনে আবদ্ধ করতে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা দরকার। এই শ্রদ্ধাবোধ যদি থাকে তাহলে এমনিতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমরা বৃহৎ শক্তি হিসেবে আপনার কাছে অনুরোধ করবো এই যুদ্ধ থেকে সরে আসুন। বিশ্বের মানুষের মঙ্গলের জন্য যুদ্ধের পথ পরিত্যাগ করুন। আলাচনার টেবিলে বসুন। আলাপ আলোচনাই পারে সব সমস্যার সমাধান করতে। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
পাঠকের মতামত
এইখানে পুতিনকে কেনো টানছেন, আমেরিকা ও তার দোসরদের বলবেন, আপনার মত কানা, বিকৃত মানুষেরাই কেবল পুতিনের দোস দেখে ।
পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের বলুন। যুদ্ধ তো তাদের কারনেই