নির্বাচিত কলাম
আন্তর্জাতিক
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করে দিতে পারে
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার
পারমাণবিক অস্ত্র আতঙ্কে বিশ্ব। শক্তিধর অনেক দেশের হাতে এখন এই অস্ত্র। কোনো কারণে একটি অস্ত্র ব্যবহার হলে, তাতে শুরু হয়ে যেতে পারে ভয়াবহ এক পরিণতি। শুরু হতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধ। তা-ই যদি হয়, তাহলে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। শুধু মানবজাতি এমনকি জীবজন্তুর বেঁচে থাকা হয়ে পড়বে কঠিন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে, তা দিয়ে পুরো বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করে দেয়া যাবে। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া এবং সর্বশেষ রাশিয়াকে নিয়ে এই আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও তা যে সহজে ব্যবহার হবে না, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে এখন আশঙ্কা নতুন করে দেখা দিয়েছে রাশিয়াকে নিয়ে।
কৌশলগতভাবে মোতায়েন করা হয়েছে ১৫৮৮টি। বুলেটিন অব দ্য এটমিক সায়েন্টিস্টসের তথ্য মতে, স্থলভিত্তিক ৮১২টি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। সাবমেরিনচালিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে ৫৭৬টি। আর আছে প্রায় ২০০ ভারী বোমার ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের আছে ১৬৪৪টি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র। এগুলো মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে চীনের হাতে আছে ৩৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র। ফ্রান্সের আছে ২৯০টি। বৃটেনের আছে ২২৫টি। এর অর্থ হলো মস্কো এবং ওয়াশিংটন মিলেই এই বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করে দিতে পারে।

শীতলযুদ্ধের সময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্জন করে প্রায় ৪০ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র। এটা ছিল তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক এমন অস্ত্র। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এমন অস্ত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ হাজার। এখন রাশিয়ার হাতে প্রায় ৪০০ পারমাণবিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আছে। বুলেটিন অব দ্য এটমিক সায়েন্টিস্টসের অনুমান, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ১১৮৫টি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। পারমাণবিক অস্ত্রসংবলিত ১০টি সাবমেরিন পরিচালনা করে রাশিয়া। একই সঙ্গে তা বহন করতে পারে ৮০০ পারমাণবিক অস্ত্র। তাদের আছে ৬০ থেকে ৭০টি পারমাণবিক বোমারু।
২০২২ সালের নিউক্লিয়ার পোশ্চার রিভিউয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নিজেদের পারমাণবিক শক্তির বিস্তার এবং আধুনিকায়ন করছে রাশিয়া ও চীন। আর ওয়াশিংটন ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ওপর ভিত্তি করে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার কাছে অনেক তথ্য আছে। তথ্য আছে যে, নতুন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ১৯৯১ সালে ভেঙে যায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারপর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে সর্বশেষ এ অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন এবং ফ্রান্স পরীক্ষা চালিয়েছে ১৯৯৬ সালে। ভারত ও পাকিস্তান পরীক্ষা চালিয়েছে ১৯৯৮ সালে। ২০১৭ সালে পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
রাশিয়ার পারমাণবিক ইস্যুতে যখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় আসে তখনই এ সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক একজনই। তিনি ভ্লাদিমির পুতিন। কৌশলগত হোক অথবা এর বাইরে হোক- সব রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক একমাত্র পুতিনের। তথাকথিত পারমাণবিক ব্রিফকেস বা ‘চিগেট; সব সময়ই থাকে প্রেসিডেন্টের কাছে। ধারণা করা হয় একই রকম ব্রিফকেস এখন থাকতে পারে রাশিয়ার বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গিরাসিমভের কাছে। অত্যাবশ্যকীয়ভাবে এই ব্রিফকেস হলো একটি যোগাযোগের হাতিয়ার। এর মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট তার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তারপর অত্যন্ত গোপন ‘কাজবেক’ ইলেকট্রনিক কমান্ড কন্ট্রোল নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন হয়। কাজবেক আরেকটি সিস্টেমকে সাপোর্ট করে। তা হলো ‘কাভকাজ’।
২০২৯ সালে রাশিয়ার জেজদা টেলিভিশন চ্যানেল যে ফুটেজ প্রচার করে তাতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তার কাছে ওই ব্রিফকেস আছে। তাতে এক সারিতে কমান্ড নির্দেশিত বোতাম আছে। একটি সেকশন আছে, এর নাম ‘কমান্ড’। আরও দুটি বোতাম আছে। একটি হলো সাদা ‘লঞ্চ’ বোতাম। অন্যটি লাল রঙের ‘ক্যান্সেল’ বোতাম। যদি রাশিয়া দেখে তারা পারমাণবিক হামলার মুখোমুখি, তাহলে এই ব্রিফকেসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সিগন্যাল দেবেন। তাতে জেনারেল স্টাফ কমান্ড এবং রিজার্ভ কমান্ড ইউনিটকে হামলা শুরুর নির্দেশ দেবেন।
সর্বশেষ পাশের দেশ বেলারুশে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, বেলারুশে অস্ত্র জমা করলেও এর নিয়ন্ত্রণ মিনস্কের হাতে তুলে দেবে না রাশিয়া। এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বলেছে, তারা বিশ্বাস করে না ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রের কৌশল ‘এডজাস্ট’ করার কোনো কারণ দেখছি না। ন্যাটো জোটের সমন্বিত প্রতিরক্ষা বিষয়ক কৌশলের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বেলারুশে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার রাশিয়ার মিত্র এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের সমর্থক। শনিবার পুতিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বলেছেন, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে তার দেশে পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের বিষয়ে কথা বলছেন। এক্ষেত্রে অন্য কোনো অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে না। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক এই কাজটিই করে আসছে। তারা মিত্র দেশগুলোতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে। পুতিন বলেন, আগামী ১লা জুলাইয়ের মধ্যে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রাখার একটি অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করছে রাশিয়া। এরই মধ্যে বেলারুশে ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার অল্প পরিমাণ হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। তবে বেলারুশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র কবে নাগাদ বা কোন ধরনের অস্ত্র তুলে দেয়া হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি পুতিন। ১৯৯০’র দশকের মধ্যভাগের পর থেকে প্রথমবারের মতো এবারই মস্কো তার পারমাণবিক অস্ত্রের ঘাঁটি দেশের বাইরে স্থাপন করছে। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। এর অর্থ হলো চারটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তা হলো রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাকিস্তান। তারা ১৯৯৬ সালের মধ্যে সব অস্ত্র রাশিয়াকে বুঝিয়ে দেয়।
পারমাণবিক হামলার ফলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয়তা। সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড তাপ। এক্ষেত্রে রাশিয়ার চেরনোবিল পারমাণবিক বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে ছিল চারটি পারমাণবিক চুল্লি বা রিঅ্যাকটর। রাত একটা ২৩ মিনিটে এর চতুর্থ চুল্লিটি থেকে ঘটে দুর্ঘটনা। এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণ হারান ৩১ জন। আক্রান্ত হন ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। বর্তমানে এই চেরনোবিল অবস্থিত ইউক্রেনের ভেতর। কিন্তু এর অভিশাপ আজও মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে। এখনো এ কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এর তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। শিশুখাদ্যে তা সংক্রমিত হয় বলে বন্ধ করে দেয়া হয় গুঁড়োদুধ সহ বিভিন্ন পণ্য।
পাঠকের মতামত
”১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। এর অর্থ হলো চারটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তা হলো রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাকিস্তান।” - অবাক হই, এরা কেমন লেখক! লেখার সময় কি বিন্দুমাত্র পাঠকের প্রতি দায়িত্ববোধ কাজ করে না? সোভিয়েট ইওনিয়ন পতনের পর ৪টি নয় সর্বমোট ১৫ দেশ গঠিত হয় - Russia, Armenia, Azerbaijan, Belorussia (now Belarus), Estonia, Georgia, Kazakhstan, Kirgiziya (now Kyrgyzstan), Latvia, Lithuania, Moldavia (now Moldova), Tajikistan, Turkmenistan, Ukraine, and Uzbekistan.