শেষের পাতা
সিলেট বিএনপি’র কমিটি
আমীর খসরুর কাছে যে অভিযোগ ক্ষুব্ধ নেতাদের
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবারসিলেট সফর করা কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে গতকাল নালিশ দিয়েছেন জেলা বিএনপি’র বঞ্চিত নেতারা। নগরীর একটি হোটেলে জেলা বিএনপি’র অনুষ্ঠানের আগে বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যান। তারা পূর্ণাঙ্গ জেলা বিএনপি’র কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী সেখানে থাকলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি ক্ষোভ প্রকাশকারী নেতাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। দীর্ঘ এক বছরের মাথায় এসে রোববার রাতে পূর্ণাঙ্গ করা হয় সিলেট জেলা বিএনপি’র কমিটি। এবারের কমিটি নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাদের এই ক্ষোভের অন্যতম কারণ হচ্ছে- যথাযথ মূল্যায়িত না হওয়া। এর বাইরেও আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। এদিকে জেলা বিএনপি’র পূর্ব নির্ধারিত একটি সেমিনারে অংশ নিতে গতকাল দুপুরে সিলেটে আসেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি দুপুরে ফ্লাইটে সিলেটে এসে অনুষ্ঠানস্থল নগরীর দরগাহ গেটের স্টার প্যাসিফিক হোটেলে চলে যান। সেখানে অনুষ্ঠান শুরুর আগে বঞ্চিত নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে দেখা করেন।
এ দলে ছিলেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী, মহানগর বিএনপি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কামরুল হাসান চৌধুরী শাহীন, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল, জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পলিনা রহমানসহ ২০ থেকে ২৫ জন নেতা। তারা হলরুমে গিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে নানা অভিযোগ করেন। এ সময় বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু জানান- ‘কমিটিতে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের কোনো উল্লেখযোগ্য নেতা যোগ্যতম স্থানে আসেননি। কেবল মাত্র আমেরিকা প্রবাসী নেতা মামুনুর রশীদ মামুনকে (চাকসু) কমিটিতে আনা হয়েছে।’ পাপলু জেলা বিএনপি’র সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘বিএনপি’র এই কমিটি দিয়ে এজেন্সি করেছেন। যে নেষ্টি গ্রুপিং করা হয়েছে সেটি নজিরবিহীন। কমিটি অগোছালো হয়েছে। এতে সিলেটে বিএনপি আরও দুর্বল হয়েছে।’ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী জানান- ‘ইলিয়াস আলীর ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে আমি সদস্য ছিলাম।
আহ্বায়ক কমিটিতে আমি ছিলাম। এবারের কমিটিতে আমার নাম নেই। আমি তাদের পক্ষে না থাকার কারণে আমাকে নির্বাসনে দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন- ‘আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করি। এই আদর্শ নিয়েই আমি থাকবো।’ জেলা বারের দুই বারের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র বিএনপি নেতা এডভোকেট এটিএম ফয়েজ জানিয়েছেন- ‘যে জেলা বিএনপি’র এই কমিটি হযবরল অবস্থার মধ্যে হয়েছে। বিএনপি’র ইতিহাসে আমি জেলা বারের নির্বাচিত সভাপতি হই।’ জেলা বিএনপি’র নির্বাচনে আমি কমিশনের দায়িত্ব পালন করি। মহানগর বিএনপি’র সম্মেলনে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছি।’ তিনি বলেন- ‘যেখানে আমি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সহ-সভাপতি হতে চেয়েছিলাম। অথচ আমাকে উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার সিনিয়র অনেককে ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে।’ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল জানান- ‘আমি স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি থাকার কারণে তখন আমি সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করতে পারিনি।
আমাকে আটকে দেয়া হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন- ‘আমার কমিটির মেম্বার সেক্রেটারিকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। আমি সদস্য হয়েছি যুগ্ম সম্পাদক পদমর্যাদার। আমরা যারা ভবিষ্যতে নেতৃত্বে আসবো তাদের মেরুদ- ভেঙে দেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে ৭ জন কমিটিকে দেয়া হয়েছে। অথচ তারা আন্দোলন, সংগ্রাম কোথাও নেই।’ জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পলিনা রহমান জানান- ‘রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখলেও আমাকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ পরিবার কেন্দ্রিক অনেককেই জেলা বিএনপি’র কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে।’ মনোযোগ সহকারে ক্ষুব্ধ নেতাদের বক্তব্য শোনার পর কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান- ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন; সবই শুনলাম। আমি দলের উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে এসব অভিযোগ উত্থাপন করবো। তিনি নেতাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।’ তবে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী জানান- ‘গতকাল তেমন কিছু ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এসে দলের নেতারা আলোচনা করেছেন। কথাও বলেছেন। এর বেশিকিছু ঘটেনি।’ তিনি জানান- ‘বিএনপি একটি বড় দল। শতভাগ সঠিক কোনো কিছুই হয় না। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। দলের স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি, আগামীতেও থাকবো।’