বাংলারজমিন
গাইবান্ধায় ১৪ মাসে ১০৪ তালাক
উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি
১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবার
দিন দিন বাড়ছে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে সাংসারিক অশান্তি। সঙ্গে যোগ হয়েছে নারী-পুরুষের পরকীয়া প্রেম। ৩ কারণে তালাকের প্রবণতা বাড়ছে। গাইবান্ধায় বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ ও তালাকের হার। গত ১৪ মাসে নানা কারণে ১০৪ জন নারী তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে। আর ৬৮ জন স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। তালাকের ক্ষেত্রে নারীরাই এগিয়ে। এ অবস্থায় স্বামীকে তালাক দেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। এ তথ্য জানা গেছে গাইবান্ধা পৌরসভার কাগজপত্রে।
তাছাড়া যৌতুকের টাকার দিকে তার লোভ অনেক বেশি। এজন্য তাকে স্বামীর হাতে অনেক মারপিটের শিকার হতে হয়েছে। একপর্যায়ে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন তিনি। গাইবান্ধা শহরের ডেভিট কোং পাড়ার আলাউদ্দিন মৃধার মেয়ে রাশেদা সুলতানা ও কালীবাড়ী পাড়ার ফৌজিয়া আকতার। দু’জনের স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণে তাদের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক জীবনে অশান্তি চলে আসছে। তাদের ঘরে সন্তান আছে কিন্তু নিজেরা আর কতো ধৈর্য্য ধরতে পারে। সে কারণে স্বামীকে তালাক দেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। একইভাবে স্বামীর নির্যাতন, মাদকাসক্ত হওয়া, শারীরিক অক্ষমতার কারণে গত দুই মাসে গাইবান্ধায় ২৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে যৌতুক, স্বামীর পরকীয়া প্রেম ও পারিবারিক অশান্তির কারণে ২২ জন নারী তাদের স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন। অন্যদিকে, এই দুই মাসে ৬ জন পুরুষ তাদের স্ত্রীদের দেনা পাওনা মিটিয়ে দিয়ে তালাক দিয়েছেন। গাইবান্ধা পৌর মেয়র মতলুবর রহমান জানান, প্রায় প্রতিদিনেই তালাকের কাগজ আসে পৌরসভায়। পারিবারিক অভাব অনটন, পরকীয়া প্রেম, মাদকাসক্ত, যৌতুকের কারণে গাইবান্ধায় অনেকের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। আদালতে মামলা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে।
প্রতিদিন পৌরসভায় সালিশ বসিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। কিন্তু বিচ্ছেদ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীরা অনেক এগিয়ে। নারীদের প্রতি অবহেলা, স্বামীর মাদকাসক্তের প্রবণতা, স্বামীর অসচ্ছল জীবন পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে। তাছাড়া মাদকাসক্তের কারণে শারীরিক অশান্তি দেখা দেয়। স্ত্রীরা তাদের আবেদনে এসব কথা লিখে নালিশ জানান পৌর মেয়রের কাছে। কিছু সমাধান হয় আবার বেশির ভাগই তালাক হয়ে যায়। কারণ কারও চাহিদা পূরণ করা বা মাদকাশক্তি থেকে ফেরানো যায় না অনেক স্বামীকে। ফলে তালাক ঠেকানো মুশকিল হয়ে যায়। এভাবে ২০২২ সাল এক বছরে ও চলতি বছরের ২ মাসে গাইবান্ধায় অনেক অসচ্ছল, সচ্ছল, কর্মজীবী ১০৪ জন নারী তাদের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। তারা স্বামীদের হাতে নির্যাতিত হয়ে সংসার থেকে দূরে থাকার সিন্ধান্ত নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী বলেছেন। অনিমা নামের এক নারী জানান, স্বামীর আয় রোজগার বলতে কিছু নেই। তারপরও সে নেশায় আসক্ত। সংসার ও সন্তানের দিকে তার কোনো টান নেই। এভাবে আর কতোদিন থাকা যায়। তাই সন্তান নিয়ে চলে এসেছেন বাপের বাড়িতে। স্বামীকে তালাক দিয়েছেন আইনগতভাবেই। এতে তার অনেক কষ্ট হলেও স্বামী নামের অকর্মাকে নিয়ে আর কতোদিন কাটানো যায়। এদিকে ওই ১ বছরে মাত্র ৬৮ জন পুরুষ নানা কারণ দেখিয়ে স্ত্রীকে তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা কর্মকর্তা নার্গিস জাহান বলেন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতন না হলে তালাকের ঘটনা বাড়তেই থাকবে।