ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

বেহুদাপ্যাঁচাল

যে ফর্মুলায় আগামী নির্বাচন?

শামীমুল হক
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

এসব ফর্মুলা সাধারণ মানুষের ভাবনা। আর এ দেশে সাধারণ মানুষের ভাবনা কতোটুকু মূল্য আছে তা সবাই জানেন। তারপরও মাঝে মাঝে সাধারণ মানুষ আশায় থাকে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে সুন্দর একটি সমঝোতায় পৌঁছাবেন। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্যই তো রাজনীতিকরা কাজ করেন। এক্ষেত্রে সব দল বিশেষ করে দুটি বড় রাজনৈতিক দল যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছায় তাহলে দেশের জন্য মঙ্গলই হবে। আর যদি কেউই দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা না ভাবেন তাহলে যে ফর্মুলার কথা দলগুলো ভাবছে সে ফর্মুলাতেই হবে নির্বাচন। এক্ষেত্রে বিরোধীরা রাজপথে আন্দোলন করবে। সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। সে নির্বাচনে কেউ আসুক বা না আসুক। একসময় নির্বাচনও হবে।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু দেশে শান্তি আর আসবে না।

রাজনীতি চলছে আগের মতোই। দুই ভাগে বিভক্ত প্রধান দুটি দল। তাদের ঘিরে আছে অন্যদলগুলো। বিরোধীরা তাদের দাবি নিয়ে মাঠে লড়াই করছেন দীর্ঘদিন। এরমধ্যে দুটি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে সরকার। একটি নির্বাচন বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্জন করেছে। আরেকটি নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের ভাষায় সে নির্বাচন হয়েছে রাতে। সে নির্বাচনে তারা ৬টি আসনে জয় পায়। এসবই সবার জানা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আগামী নির্বাচনে কী হবে? কোন ধরনের হবে? এ বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে মাঠ গরম। বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগও। বিএনপি উচ্চকণ্ঠ নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া এ দেশে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। আর আওয়ামী লীগের কথা-সংবিধানেই ঠিক করা আছে কীভাবে নির্বাচন হবে। পৃথিবীর দেশে দেশে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয় বাংলাদেশে সেইভাবে হবে। সরকার শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক করে যাবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। সরকার কমিশনকে সহযোগিতা করবে। এই যখন দুই দলের অবস্থা তখন পশ্চিমা দেশগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে সরকারকে বারবার বার্তা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। সরকার, সুশীল সমাজসহ নানা জনের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। পাশের দেশ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবও সফর করে গেছেন। আবার ক্ষণিকের জন্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বাংলাদেশ সফর করেছেন। এসব সফরের ভেতরের কথা আদ্যোপান্ত জানা না গেলেও নির্বাচন প্রসঙ্গ যে আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে সেটা সবাই প্রকাশ্যেই বলেছেন। তাদের এ বলায় সরকারের অবস্থান কি বদলেছে? মোটেও না। বিরোধীদের অবস্থান? তাও না। তাহলে যেই কদু সেই লাউ। পরিস্থিতি বদলায়নি একটুও। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে একটা সমঝোতা হবে। সেই সমঝোতার আলোকে বিরোধীরা নির্বাচনে অংশ নেবে। হাওয়ায় বেড়ানো এ বক্তব্য অবশ্য ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা তাদের দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাবেন-এমনটা ঘোষণা দিয়েছেন। তবে একটি কথা বলতেই হয়, দুই দলের এত হম্বিতম্বির মধ্যেও সুর নরমই মনে হয়। আগামী নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হবে। আর সেই ফর্মুলা নিশ্চয় রাজনীতিকরাই বের করবেন। তারপরও কথা থেকে যায়, কেমন হবে সে ফর্মুলা? নিশ্চয় দুই দলের জন্যই মঙ্গলজনক সে ফর্মুলা হাজির হবে জাতির সামনে। তবে এ মুহূর্তে যেসব ফর্মুলা হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সেগুলোর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। ফর্মুলা নাম্বার এক- সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যে সরকারের অধীনে হবে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় নির্বাচন। এ সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ছয় মাস। ফর্মুলা নাম্বার দুই- সংসদ বাতিল এবং সরকার পদত্যাগ করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। এ সরকারের মেয়াদও হবে সর্বোচ্চ ছয় মাস। নির্বাচনকালীন এ সরকারের মূল দায়িত্বই হবে নির্বাচন পরিচালনা করা। অবশ্য সরকারি দলের কথা- অনির্বাচিত কারও কাছে ক্ষমতা দেয়া যাবে না।  


ফর্মুলা নাম্বার তিন- অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতা না দিলে সব দল মিলে সরকার প্রধান কে হবেন তা ঠিক করতে হবে। এরপর সংসদের যেকোনো একজন পদত্যাগ করে তাকে নির্বাচিত করে সংসদে আনতে হবে। পরে নির্ধারিত সময়ে সরকার পদত্যাগ করে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে। তিনি তার মন্ত্রিসভায় সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে সেই সরকার গঠন করবেন। আর এ সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ছুটিতে যাবেন। এ সময়ে সব দল মিলে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন ও সরকার গঠন করবেন। তারাই নির্বাচন পরিচালনা করবেন।

এসব ফর্মুলা সাধারণ মানুষের ভাবনা। আর এ দেশে সাধারণ মানুষের ভাবনা কতোটুকু মূল্য আছে তা সবাই জানেন। তারপরও মাঝে মাঝে সাধারণ মানুষ আশায় থাকে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে সুন্দর একটি সমঝোতায় পৌঁছাবেন। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্যই তো রাজনীতিকরা কাজ করেন। এক্ষেত্রে সব দল বিশেষ করে দুটি বড় রাজনৈতিক দল যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছায় তাহলে দেশের জন্য মঙ্গলই হবে। আর যদি কেউই দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা না ভাবেন তাহলে যে ফর্মুলার কথা দলগুলো ভাবছে সে ফর্মুলাতেই হবে নির্বাচন। এক্ষেত্রে বিরোধীরা রাজপথে আন্দোলন করবে। সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। সে নির্বাচনে কেউ আসুক বা না আসুক। একসময় নির্বাচনও হবে। কিন্তু দেশে শান্তি আর আসবে না। 

এমনিতেই দেশে অশান্তির আগুন জ্বলছে। মানুষ আছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে। নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের ত্রাহি অবস্থা। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তারা। বাজারের ফর্দ কমিয়ে এনেছে। কাটছাঁট করতে করতে তারা আর কুলোতে পারছেন না। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো কোনো নিত্যপণ্যের দাম। দফায় দফায় বাড়ছে বিদ্যুৎ, পানির দাম। গ্যাসের দামও বাড়ানোর কথা চলছে। জ্বালানি তেলের দাম তো এক লাফে বেড়েছে। ঘরে ঘরে দীর্ঘশ্বাস। তারপরও চলছে সবাই। চালিয়ে নিচ্ছে সবাই। বন্যা, খরাসহ নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের কৃষক এখনো ফসল ফলিয়ে যাচ্ছে। তাদের শ্রম, ঘামের বিনিময়ে উৎপাদিত পণ্য গ্রাম থেকে শহরে পৌঁছে যাচ্ছে। শহরের মানুষ হাতের নাগালে পাচ্ছে তাজা সবজি, মাছ। কিন্তু সিন্ডিকেটের কবলে রয়েছে এখনো বাজার। এ সিন্ডিকেটে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারাও। এই সিন্ডিকেটকে ভেঙে চুরমার করার সময় এখন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সিন্ডিকেটের বাইরেও রয়েছে আরেকটি গ্রুপ। সেটি হলো- মধ্যস্বত্বভোগী গ্রুপ। এরা কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য দেয় না। কখনো কখনো কৃষক লোকসান দিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করে। আর এই মধ্যস্বত্বভোগীরা উচ্চ লাভে তা বাজারে ছাড়ে। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের একটি বক্তব্যের কথা মনে পড়ছে। এক উদ্যোক্তা সমাবেশে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি তার জীবনের গল্প শোনান। তারও একসময় স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই তিনি বেছে নেন পোল্ট্রি ফার্মকে। ছোট ছোট বাচ্চা এনে ক’দিন পর তা বিক্রি করে দিতেন। কিন্তু বিক্রি করতে হতো মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। ব্যারিস্টার সুমন বক্তব্যে বলেন, আমি প্রতি মোরগের বাচ্চা তিন টাকা লাভে বিক্রি করতাম। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতি মোরগে ১০ টাকা লাভে বিক্রি করতো। যেদিন আমি এটা শুনলাম সেদিন মনে মনে বললাম, এদেশে উদ্যোক্তার চেয়ে দালালের দাম বেশি। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সেখানেই চাপা পড়ে। 

এখানে আবার রাজনীতিকে টেনে আনতে হয়। রাজনীতিও মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা দালালদের খপ্পরে পড়েছে বলেই মনে হয়। আসল রাজনীতিকরা দিন দিন এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। নানা ঘটনায় এর প্রমাণও মেলে। কিন্তু রাজনীতিকরা সেসব বুঝেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদি বুঝতেনই তাহলে রাজনীতিকদের ওপর ভর করে মধ্যস্বত্বভোগীরা কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন না। দেশবাসীও বেগমপাড়া কিংবা সেকেন্ড হোম নামে অন্যকোনো দেশে সম্পদ গড়ে তুলতে পারতেন না। 

শেষ কথা: এখনো দেশবাসী বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের আগে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি সুন্দর সমাধান হবে। আগামী নির্বাচনে সব দল সেই সমঝোতার আলোকে অংশ নেবে। দেশের মানুষ আর ভোটকেন্দ্রবিমুখ হয়ে থাকবে না। সবাই লাইন ধরে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করবে। বিরোধী দল থাকবে ছায়া সরকার হয়ে। দেশ এগিয়ে যাবে হাসি আর খুশিতে। সব কিছুতেই ফিরে আসবে স্থিতিশীলতা। এমন দিনের অপেক্ষায় দেশবাসী। সত্যিই কি এমন দিন দেখতে পাবে বাংলাদেশ? এমনটা হলে এ প্রশ্নও উবে যাবে সবার মন থেকে। তাই বলছি, রাজনীতিকদের দায়িত্ব এমন এক ফর্মুলা বের করা যার মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে আর কোনোদিন কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। স্বাধীনতার একান্ন বছরে যা হয়নি বর্তমান রাজনীতিকদের হাত দিয়ে সে কাজটি হলে রচনা হবে এক ইতিহাসের। এর সঙ্গে ইতি ঘটবে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সকল সন্দেহের। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় আর দুলবে না কেউ। পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হবে। সে নির্বাচন হবে উৎসবমুখর।

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status