ঢাকা, ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাবান ১৪৪৪ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক

ব্যাংকিং খাতে অদৃশ্য সুড়ঙ্গ এবং...

মহিউদ্দিন আহমেদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শনিবারmzamin

সম্প্রতি তুমুল জনপ্রিয় রহস্যময় থ্রিলার ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’ এ দেখা যায় ছবির মূল রহস্য ছিল একটি সুড়ঙ্গ, যেখান দিয়ে একজন রহস্যময় মানুষ এসে পড়ে এবং মিশন শেষে সেই পথেই নিরাপদে চলে যেতে সক্ষম হয়। এই ছবিটা দেখার সময় মনে হচ্ছিল ব্যাংকিং খাতেও এক অদৃশ্য ‘সুড়ঙ্গ’ আছে, যেখান দিয়ে পিকে হালদার এসেছিলেন, ১০,০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিরাপদে চলে গেছেন। এই সুড়ঙ্গ দিয়ে এর আগে আরও অনেকেই এসেছিলেন, কয়েকজন আটকা পড়েছেন, অধিকাংশরাই চলে গেছেন। ব্যাংকিং-এ শৃঙ্খলা আনতে এই সুড়ঙ্গ পথ খুঁজে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বোর্ডকে সব ক্ষমতা ন্যস্ত করে ভারমুক্ত হয়েছেন।

‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ বা ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না’ এই ধরনের প্রবাদ ব্যাংকিং খাতের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ দেয়াই ব্যাংকের প্রধান কাজ। ব্যাংকিংয়ে আয়ের প্রধান উৎস ঋণের বিপরীতে সুদ, যেখান থেকে আমানতকারীদের আমানত সুদ দিতে হয়, পরিচালন ব্যয় মেটাতে হয়, সব ব্যয় মিটিয়ে যা মুনাফা থাকে, তার থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিতে হয় এবং সরকারকে কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। অতএব গোয়াল খালি রাখার কোনো উপায় নেই, বরং দুষ্টু গরু/খারাপ লোনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যা ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জও বটে। 
ঋণ দেয়ার পরবর্তী কাজ ঋণ আদায়-এটা যতখানি সত্য, এটা খুব সহজ কাজ নয় সেটাও সত্য। দেশের ব্যাংক খাতের প্রায় ২১ শতাংশ ঋণ খেলাপী হয়ে গেছে, মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমেও এগুলো আদায় হচ্ছে না। ঋণ আদায় করতে গিয়ে ব্যাংকাররা বিভিন্ন বিরূপ অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন। 
‘দুই ব্যাংক কর্মকর্তা গেলেন এক খেলাপী ঋণ গ্রহীতার বাসায় টাকা আদায়ের জন্য।

বিজ্ঞাপন
ঋণ গ্রহীতা স্থানীয় লোকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে চাঁদাবাজির ধুঁয়া তুলে গণপিটুনির আয়োজন করেছিলেন।’

‘বড় অংকের ঋণ খেলাপী একজনের কাছে যাওয়া হলো ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দেয়ার জন্য, পরিবার থেকে জানানো হলো ‘উনি অসুস্থ, ডিমেনশিয়া সন্দেহ করা হচ্ছে’। ব্যাংকারের গা শিউড়ে উঠলো, তার মানে কোন ব্যাংক থেকে কতো টাকা নিয়েছেন তা কিছুই মনে করতে পারবেন না!’
‘খেলাপী ঋণ গ্রাহকের কাছ সাড়া না পেয়ে ব্যাংক থেকে প্রথম জামিনদার ঋণ গ্রহীতার স্ত্রীকে ফোন দেয়া হলো। স্ত্রী ‘আজ আমার মন ভালো নাই’ টাইপ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে!’ ব্যাংকার চিন্তা করছেন, ‘লোনের টাকা না দিয়ে কেনো তারা সংসার ভাঙতে গেল?’
ঋণ বিভিন্ন কারণে খেলাপী হয়েছে, যেমন- করোনা, রাশিয়া: ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি- এগুলো অনিয়ন্ত্রাণাধীন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সময়-অসময়ে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে থেকেছে, যদিও প্রণোদনার লোনগুলোও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনাদায়ী থাকাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রচলিত ব্যাংক সুদে দীর্ঘ মেয়াদি কিস্তি লোনে রূপান্তর করতে হয়েছে। করোনার পর বিদেশে জনবলের চাহিদা বাড়ায় এক শ্রেণির উইলফুল ডিফল্টার (স্বেচ্ছায় খেলাপী) বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উচ্চ পদস্থ কর্পোরেট থেকে শুরু করে অসাধু ব্যাংকারও আছেন। এই টাকাগুলো আদায় যত কষ্টসাধ্যই হোক না কেন তা ফেরত আনার উপায় বের করতে হবে, কারণ এগুলো জনগণের টাকা।   

বর্তমানে ব্যাংক এর অর্থ মামলা কম-বেশি ২ লাখ ৭৭ হাজার, যাদের সবাই ইচ্ছাকৃত খেলাপী নয়, অনেক সময় তারা পরিস্থিতির শিকারও হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক  ড. আর এম দেবনাথ যথার্থই বলেছেন, ‘যেই অংকে লোন শ্রেণিবিন্যাস/ প্রভিশনিং হয়, সেই অংকে ব্যবসা চলে না।’ মাননীয় অর্থমন্ত্রী হয়তো এই ব্যাপারটাকেই মাথায় রেখে ২০১৮ সালে খেলাপী ঋণের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছেন, তবে ‘পাঠার গায়ে হরিণের রঙ’ করে দেয়াতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছেন না বলে উষ্মা প্রকাশ করছেন। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর পরই সেই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তে খেলাপী ঋণের অংকটাকে এক নিমিষেই ছোট হয়ে গিয়েছিল, ব্যাংকগুলোর ঝলসে যাওয়া শরীরে প্রশান্তি এসেছিল, প্রশান্তি এসেছিল বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপীদেরও। ২০১৯ সালে ২% ডাউন পেমেন্টে ১ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে খেলাপী ঋণ রেগুলার করার সুযোগ দেয়া হয়, এর ফলে ঋণ গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করতে ভুলে যাচ্ছেন, তাদের আড়মোড়া ভাঙাতে ব্যাংকগুলোকে বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সর্বশেষ বিআরপিডি সার্কুলার ১৬, ২০২২ এর কল্যাণে মাত্র ২-৪% ডাউন পেমেন্টে রিশিডিউল সুবিধা ও ২০২২ সালে প্রদেয় কিস্তির অর্ধেক পরিশোধে রেগুলার হওয়ার পলিসির আওতায় প্রায় ১৪০০০ কোটি খেলাপী ঋণ কাগুজে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রাক্কালে খেলাপী ঋণ নিয়ে অনেক তথ্য জনসমক্ষে এসেছে, দাতাগোষ্ঠীর অনেক সংস্কার পরামর্শ এসেছে, সরকারের পক্ষ থেকেও অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আগামী ২০২৬ পর্যন্ত দাতাগোষ্ঠীর নজর থাকবে এই অবস্থায় উন্নয়নে সরকার কী ধরনের সংস্কার পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার দিকে। খেলাপী ঋণ আদায়ে তাই সরকারের স্বদিচ্ছা থাকবে-এটা সহজেই অনুমেয়, যার বাস্তবায়নে নিম্নোক্ত কিছু সহায়ক নীতিমালা সরকার বিবেচনায় নিতে পারেন। 

১। ঝুঁকিপূর্ণ এবং লার্জ লোনগুলোকে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজের আওতায় আনা যেন ব্যবসার যেকোনো দৈব পরিস্থিতিতে কিংবা মালিকের মারা যাওয়ার কারণে লোন পরিশোধ নিয়ে পরিবার বা ব্যাংক বিপাকে না পড়ে। ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ নিতে উৎসাহিত করতে ঋণের সুদ কম নেয়া যেতে পারে, ঋণের ঝুঁকি কমে আসায় রিস্ক প্রিমিয়াম কম আসে তাই সুদের হারও কমানো যায়। 

২। ইতিমধ্যে মিউটেশন, খাজনা ইত্যাদি অনলাইন হয়ে গেছে, এইটা সরকারের অনেক বড় সাফল্য। এইক্ষেত্রে ‘বন্ধকী ব্যাংকের তথ্য’ সন্নিবেশিত করা গেলে সহজেই সম্পত্তি কেনা/বেচা বা হস্তান্তরে আগ্রহী ক্রেতা বা বন্ধক নেয়ার আগে ব্যাংক জানতে পারবেন যে এই সম্পত্তি কেনা/বন্ধক নেয়া যাবে কিনা। আবার  খেলাপী ঋণের তথ্য ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস বা এসিল্যান্ড অফিস গ্রহণ করলে সরকারের স্বদিচ্ছায় খেলাপী ঋণ গ্রহীতাকে আটকে দেয়া যাবে এবং খেলাপী ঋণ রেগুলার করতে বাধ্য করা যাবে, যেমনটা করে জমি কেনা/বেচায় সরকার প্রথমে টিন থাকা এবং এখন রিটার্ণ জমা বাধ্যতমূলক করেছে।   

৩। খেলাপী ঋণের তথ্য জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান যেমনঃ ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাস ইত্যাদিতে থাকলে সরকার খেলাপী গ্রাহককে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদির মতো জরুরি সেবা পেতে লোন রেগুলার করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারেন। 

৪। একইভাবে খেলাপী ঋণের তথ্য ইমিগ্রেশনে থাকলে এবং ঋণ গ্রহীতার জন্য বিদেশ ভ্রমণে ব্যাংক ক্লিয়ারেন্স নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করলে ঋণ আদায় অটোমেটেড প্রক্রিয়ায় সম্ভব। নেপালে খেলাপীরা পাসপোর্টই পান না। 

৫। ভালো গ্রহীতাদের জন্য সুদ রিবেট সুবিধা আরও বিস্তৃতভাবে চালু করে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। ইজচউ সার্কুলার ০৬, তারিখ ১৯/০৩/২০১৫ তে ভালো গ্রহীতা (এঙঙউ ইঙজজঙডঊজ) দেরকে আদায়কৃত সুদের উপর ১০% রিবেট ঘোষণা করা হয়েছিল যা ব্যাংকগুলো স্বউদ্যেগে করবে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আমানত-সুদের হার ৬%- ৯% করার পর এই সুবিধা রহিত করা হয়। এক্ষণে সুদের হার বাড়ানোর কারণে ভালো প্রহীতাদেরকে মুল্যায়িত করার জন্য এই সুবিধা চালু করা উচিত। 

৬। ইতিমধ্যে অনেক নেতিবাচকতার মধ্যেই ভোক্তাঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লোনের মেয়াদগুলো বাড়ানো না হলে রিপেমেন্ট চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে এবং খেলাপী ঋণ বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকবে। বর্তমানে টাইম লোনগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১ বছর, স্বল্পমেয়াদী লোনগুলোর ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলোর মেয়াদ বাস্তবতার নিরিখে রিপেমেন্টের সুবিধার্থে বাড়ানো যেতে পারে, তবে ঢালাওভাবে করলে ব্যাংকগুলোর টাকা আটকে যাবে ঋণ গ্রহীতাদের কাছে, পুনঃঅর্থায়নের জন্য মুবিলাইজেশন ফান্ড কমে যাবে। 

৭। প্রতিটি ব্যাংকেই প্রজেক্ট কস্ট এসেস করার জন্য বা কাজের অগ্রগতি নিরূপণের জন্য  সিভিল ইঞ্জিনিয়ার থাকা জরুরি। কাজের অগ্রগতির উপর ভিত্তি করেই ধাপে ধাপে ঋণের টাকা ছাড় করা হয়। ওভার এসেসমেন্টের কারণে ফান্ড ডাইভার্ট হওয়ার সুযোগ থাকে, যা আদায় অসম্ভব হয়ে পড়বে পরে। পাশাপাশি জমির মূল্যায়নের জন্য ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারদেরকে আরও দায়িত্বশীলতা এবং জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। তবে অতিমাত্রায় সংরক্ষণশীল মনোভাব থেকে আন্ডার ফাইন্যান্সিং করলেও প্রজেক্ট ব্যর্থ হতে পারে। ইন্ডাস্ট্রি এনালাইসিস করে ন্যয়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  

৮। লোন বিতরণের পূর্বে ঋণ গ্রহীতা/গ্রহীতাদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সবার ব্যক্তিগত তথ্য নিতে হবে যেন যেকোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে খুঁজে পাওয়া যায়, যেমন স্পাউসের কন্টাক্ট নাম্বার, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, সন্তানের একাডেমিক তথ্য, নিকটাত্মীয়দের তথ্য, স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আত্মীয়দের তথ্য ইত্যাদি। খেলাপী ঋণ গ্রহীতাদেরকে অনেক সময়ই তার ঘোষিত ঠিকানায় পাওয়া যায় না, ঋণ আদায়ে এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। 

৯। লোন দেয়ার ক্ষেত্রে এসএমই গ্রাহকদের বিশেষভাবে পরিচর্যা করতে হবে, কারণ উনারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অশিক্ষিত হয়, নিজেদের ব্যবসার হিসাব রাখতে অক্ষম। সারা দেশে অঞ্চলভিত্তিক ক্যম্পেইন করে সেরা ব্যবসায়িক আইডিয়াগুলোতে স্টার্ট আপ ফাইন্যন্স করা যেতে পারে। ব্যাংকগুলো নিজেরা এইসব উদ্যেক্তাদেরকে  ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স, বিজনেস করস্পোন্ডেন্স, বিপণন কৌশল ইত্যাদির উপর ট্রেনিং দিয়ে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে পারেন। ব্যবসা ভালো করলে এবং মনিটরিংয়ে রাখলে ক্ষুদ্র গ্রাহকরা বড় গ্রাহক হলেও ঋণ শিষ্টাচারের প্রতি অনুগত থাকবেন, খেলাপী না হওয়ার চেষ্টা করবেন।  

১০। গ্রাহকরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন ব্যাংকারদের বিজনেস ও রিকভারি টার্গেট থাকে। তাই অনেক খেলাপী ঋণ গ্রহীতা অপেক্ষা করেন বছর শেষে ব্যাংক ক্লোজিং এর সময় কীভাবে সুদ মওকুফ আদায় করা যায়। লোন অনুমোদনের সময়ও অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে ব্যংকিং নীতিমালার সঙ্গে আপোষ করার কুইঙ্গিত দেন এই ধরনের গ্রাহকরা। ব্যাংক সেন্ট্রালাইজেশন প্রক্রিয়া এই ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দিলেও অনুমোদন প্রক্রিয়াকে বিভিন্ন সূচক নির্ধারণপূর্বক স্বয়ংক্রিয় পদ্বতিতে করা গেলে ব্যাংকে এক ধরনের নৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে, গ্রাহকরা নিজেরাও ব্যাংকিং শৃঙ্খলায় অভ্যস্ত হবেন। 

১১। কোনো ঋণ একদিনেই খারাপ হয় না, তাই কনকারেন্ট অডিট ব্যবস্থাকে আরও জোড়ালো করতে হবে, সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/বা মাসিকভিত্তিক করা যেতে পারে এবং হেড অফিসে রিপোর্ট করতে হবে। একদল দক্ষ, নম্র, ব্যাংকিং আইনের প্রতি অনুগত ব্যংকারদের মাধ্যমে লোন ডকুমেন্টেশন, লোনের জন্য আবশ্যিক কাগজ সংগ্রহ, ষ্টক ভেরিফিকেশন, সেলস মনিটরিং, ভাউচারিং ইত্যাদি নিরীক্ষা করবেন। 

১২। অর্থ মামলা নিষ্পত্তিতে এবং দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন এবং পাশাপাশি মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বেঁধে দেয়া দরকার। অনেক ঋণ খেলাপী ব্যাংকে মহামান্য উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ এনে পুনরায় লোন নেয়ার প্রচেষ্টা চালান, নিম্ন আদালতে মামলা ট্রায়ালে যেতেই কয়েক বছর লেগে যায় অনেক ক্ষেত্রে, খেলাপী রা বার বার সময় প্রার্থনা করে বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেন। 

১৩। মামলা এড়িয়ে ব্যবসায়িক সংগঠন, বণিক সমিতি, মহল্লা উন্নয়ন কমিটি, পঞ্চায়েত বা ফ্ল্যাট মালিক সমিতি যেখানে যেটা প্রযোজ্য তাদের সহযোগিতা নিয়ে সামাজিকভাবে খেলাপী ঋণ আদায় ভালো ফল বয়ে আনতে পারে।  

১৪। লিজহোল্ড সম্পত্তি বন্ধক রেখে লোন পেতে ঋণ গ্রাহককে বন্ধক অনুমতি জোগাড় করতে হয়। এই ক্ষেত্রে অথরিটি যেমনঃ রাজউক, গণপূর্ত, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি যতটা দ্রুত বন্ধক অনুমতি দেন, অজানা কারণে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রিতে ততটাই ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়, বছরের পর বছর পার হলেও ফাইল নড়ে না এবং এই ধরনের সম্পত্তি বিক্রিতে অথরিটি ক্লিয়ারেন্স পেতে লাখ লাখ টাকার ডিমান্ড থাকে বলে জানা যায়। 

সম্প্রতি তুমুল জনপ্রিয় রহস্যময় থ্রিলার ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’ এ দেখা যায় ছবির মুল রহস্য ছিল একটি সুড়ঙ্গ, যেখান দিয়ে একজন রহস্যময় মানুষ এসে পড়ে এবং মিশন শেষে সেই পথেই নিরাপদে চলে যেতে সক্ষম হয়। এই ছবিটা দেখার সময় মনে হচ্ছিল ব্যাংকিং খাতেও এক অদৃশ্য ‘সুড়ঙ্গ’ আছে, যেখান দিয়ে পিকে হালদার এসেছিলেন, ১০,০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিরাপদে চলে গেছেন। এই সুড়ঙ্গ দিয়ে এর আগে আরও অনেকেই এসেছিলেন, কয়েকজন আটকা পড়েছেন, অধিকাংশরাই চলে গেছেন। ব্যাংকিং-এ শৃঙ্খলা আনতে এই সুড়ঙ্গ পথ খুঁজে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বোর্ডকে সব ক্ষমতা ন্যস্ত করে ভারমুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আরও অনেকখানি পথ হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হতো। গত কয়েক বছরে মানুষ করোনা, যুদ্ধ, বন্যা, মহামারি সবই দেখেছে যা নিকট অতীতে দেখা যায় নাই। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণ শ্রমিকের মাসিক বেতন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পৌঁছানোসহ ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব অনেক প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছেন এবং ঋণ পরিশোধ অবকাশ সুবিধা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অভিভাবকের আসনে বসে যেই সাহসিকতা, মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতা দেখিয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো করে হয়তো এতখানি দায়িত্ব নিতে এখনই প্রস্তুত নয় বলে অনেকে মনে করেন, কারণ কিছু সিদ্ধান্ত অভিভাবকদেরই নিতে হয়। 

[email protected]

পাঠকের মতামত

There is no use writing all these. All the defaulters are very powerful. They get loans due to their power and influence , not paying back due to the same reasons. It is now well circulated that the President elect belongs to S Alam group. The same group is alleged to have looted Islami Bank recently. Instead of punishment people are being rewarded for their wrong doings.

Andalib
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১০:২৯ অপরাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status