বাংলারজমিন
পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল চরমে, মামলা, গ্রেপ্তার ১০
ফেনী প্রতিনিধি
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবারফেনীর পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। বিগত ৭ দিনে একে অপরকে হত্যার হুমকি, পাল্টাপাল্টি জিডি, মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার, জামিনে মুক্তির পর ফুল দিয়ে বরণ কী হয়নি এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জেলা আওয়ামী লীগ ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এ কে শহীদ খন্দকার।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১ বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলের বিরোধ চলে আসছে। এর আগে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক ও কর্মকাণ্ডে সেটি প্রকাশ পেলেও গত ৩১শে জানুয়ারি মঙ্গলবার একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে দু’জনের বাকবিতণ্ডায় সেটি প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন একে অপরের বিরুদ্ধে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ২রা ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দু’জন। দলের সিনিয়র দুই নেতার এমন কাণ্ডে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধ। দু’জনের বিরোধে এখন দলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মসূচি বদলে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় তারা। অভ্যন্তরীণ বিরোধ এরই মধ্যে গড়িয়েছে সংঘাতেও।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে গত ২রা ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনাদি রঞ্জন সাহা (৬৫) কে।
পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহত অনাদি রঞ্জন সাহা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বলেন, মুঠোফোনে মেয়র দলীয় কার্যালয়ে আমাকে ডেকেছেন। কার্যালয়ের সামনে যেতেই আনোয়ার নামের একজনের নেতৃত্বে আমার উপর হামলা করা হয়। হামলাকারীরা সবাই মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এদিকে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে নিজের উপর হামলা হয়েছে- মর্মে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল। মামলায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইয়াছিন শরীফ মজুমদারকে (উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদারের জামাতা) প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম এবং আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
ওই মামলায় সোমবার সকালে আদালতে জামিন আবেদন করেন মামলার প্রধান আসামিসহ ১২ জন। শুনানি শেষে আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান ১১ জনের জামিন মঞ্জুর করলেও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইয়াছিন শরীফ মজুমদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আসামির আইনজীবী জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট এম শাহজাহান সাজু।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার সরকারি জায়গা দখল করে দোকান ও গুদাম নির্মাণ করেছেন। পৌরসভার ড্রেন করার সময় তার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনে তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘তাকে নানাভাবে বিভিন্ন সময় হেনস্তার চেষ্টা করেছেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তার উপর হামলা হলে, তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে এর জন্য নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দায়ী থাকবেন।’