ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

কিডনি রোগীদের আশার বাণী শোনালেন বিজ্ঞানীরা

মানবজমিন ডেস্ক
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার

কিডনি রোগীদের আশার বাণী শুনিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। তারা এ নিয়ে গবেষণা করছেন। বলছেন, এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্রথমে এই পরীক্ষা করা হয়েছে ইঁদুরের ওপর। তাতে সফলতা পাওয়া গেছে। এখন মানুষের ওপর কতটা নিরাপদ এই চিকিৎসা তার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এ বছরই। যদি তা ভালোয় ভালোয় হয়, তাহলে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হবে। যদি তাতে সফলতা পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্বের লাখ লাখ কিডনি রোগী বাঁচার নতুন স্বপ্ন দেখতে পারবেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য স্ট্রেইটস টাইমস। 
এই গবেষক দলের সদস্য প্রফেসর থমাস কফম্যান। তিনি একইসঙ্গে ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের একজন ডিনও।

বিজ্ঞাপন
বলেছেন, জটিল কিডনি রোগের চিকিৎসায় বাস্তবিক গেম-চেঞ্জার হতে পারে এই আবিষ্কার। কারণ, কিডনি রোগ সিঙ্গাপুর এবং বিশ্বজুড়ে এক স্বাস্থ্যগত বড় উদ্বেগ। ফলে এ সংক্রান্ত ওষুধ তৈরিতে এবং তার সুবিধা পাওয়ার খুব কাছাকাছি আমাদেরকে এগিয়ে এনেছে এই আবিষ্কার। 
ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল হার্ট সেন্টার সিঙ্গাপুর (এনএইচসিএস) এবং জার্মানির গবেষকরা আছেন এই টিমে। তারা এমন একটি প্রোটিনকে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছেন, যা দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রোটিনকে আটকে দেয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি পুনরুজ্জীবিত হয় এবং মূত্রাশয়ের কার্যক্রম পুনঃস্থাপিত হয়। গবেষকরা বলেছেন, এ ধরনের গবেষণা বিশ্বে এই প্রথম। এই গবেষণায় ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। তারা কমপক্ষে এক দশক ধরে এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু কিডনি নয়, একইসঙ্গে ফুসফুস এবং লিভারের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়েও তারা গবেষণা করছেন। 
ডিউক-এনইউএসের কার্ডিওভাসকুলার এবং মেটাবলিক ডিজঅর্ডারস প্রোগ্রামের মলিকিউলার বায়োলজিস্ট সহকারী প্রফেসর আনিসা উইজাজা বলেছেন, কিডনি ফেইল্যুর এক বিশ্ব মহামারি। এতে ভুগছেন প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ। কঠিন সংক্রমণ বা ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বা ড্যামেজ হতে পারে কিডনি। তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিস থেকে কিডনি ফেইল্যুরের দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম হলো সিঙ্গাপুর এবং কিডনি ফেইল্যুরের দিক দিয়ে চতুর্থ।  
গবেষকরা বলছেন, নিজের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সক্ষমতা আছে কিডনির। তারা প্রদাহ ও ক্ষতিগ্রস্ত কিডনিযুক্ত ইঁদুরের শরীরে ইন্টারলিউকিন-১১ (আইএল-১১) প্রোটিনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়করণ বিষয়ক এন্টিবডি প্রয়োগ করেন। আইএল-১১ কিডনির ক্ষতি করে বলে পরিচিতি আছে। শুধু তা-ই নয় কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং হার্টেরও একই রকম ক্ষতি করতে পারে এই প্রোটিন। এই পদ্ধতিতে কিডনির ভেতরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিউবের কোষকে টার্গেট করা হয়। ফলে সেখান থেকে শরীরে পুষ্টি ফেরত আসে। মূত্রকে আলাদা করে ফেলে। আইএল-১১ এর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় নিষ্ক্রিয়করণ এন্টিবডি ব্যবহারের সময়, টিউবের কোষগুলো প্রসারিত হতে সক্ষম হয় এবং কিডনিকে পুনরুজ্জীবিত করে। এরমধ্য দিয়ে কিডনির ক্ষতির উল্টো দিকে কাজ করে। এই গবেষণায় সব ইঁদুরের ক্ষেত্রে উন্নতি পাওয়া গেছে, তা তাদের কিডনি যতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন। 
ক্লিনিক পূর্ববর্তী গবেষণার ফল গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে ন্যাটার কমিউনিকেশনস জার্নালে। ডিউক-এনইউএস কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজঅর্ডার প্রোগ্রামের কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর স্টুয়ার্ট কুক বলেছেন, যেসব মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাদেরকে এই রোগ থেকে প্রতিরোধ করতে, যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কিডনির ক্ষতি রোধে এবং জটিলভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এই থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, সব রকম কিডনি রোগের বিরুদ্ধে কিডনিকে মেরামতে এবং সক্রিয় করতে কাজ করে এই পদ্ধতি। স্টুয়ার্ট কুক এনএইচসিএসের একজন ক্লিনিক্যাল সায়েন্টিস্টও। তিনি এই গবেষণার একজন প্রধান ইনভেস্টিগেটর ছিলেন। বলেন, আমরা দেখিয়েছি যেÑ কিডনি ফেইল্যুর চিকিৎসায় এন্টি-আইএল১১ থেরাপি ব্যবহার করা যায়। তাতে জটিল কিডনি রোগও ভালো হয়। ইঁদুরের কিডনিকে সারিয়ে তুলে তাকে আবার কার্যকর করেছে। 
সুস্থ মানুষের ওপর এই এন্টিবডির পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা এ বছরের শুরুর দিকেই। যদি তা সফলভাবে সম্পন্ন হয় তাহলে আগামী বছরের শুরুতে কিডনি রোগীদের ওপর এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। এই পরীক্ষা চালাবে বোয়েহরিঙ্গার ইঙ্গেলহেইম। তাদের গবেষণাও এর অন্তর্ভুক্ত। এই পরীক্ষা প্রথমে কাজ করতে পারে ফুসফুসের জটিলতায়, পরে কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status