নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
শেষ পর্যন্ত সাত্তার কি সেই পথেই হাঁটবেন?
শামীমুল হক
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
গতকাল নির্বাচনী কেন্দ্রে যাওয়ার পর এজেন্টদের এক হাজার টাকার পরিবর্তে দেয়া হয় সাতশ’ টাকা। দুপুরের খাবারও দেয়া হয়নি। এ নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় ক্ষোভ দেখা দেয়। এ অবস্থায় ওই কেন্দ্রে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। তাকে এজেন্টরা সব খুলে বলেন। এই এজেন্টরাও সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। জেলা নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন নেতাকে ডেকে গালমন্দ করেন। বলেন, এখানেও আপনাকে ব্যবসা করতে হয়। নির্বাচনী মাঠের চিত্র তো দেশবাসী সারা দিনই দেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যে সাত্তারের জন্য আওয়ামী লীগ এত কিছু করছে সেই সাত্তার কি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে? নাকি ডা. আলাউদ্দিনের মতো বিশাল ধাক্কা দেবেন? আওয়ামী লীগের বুকে পেরেক ঠুকে দেবেন নাতো?
রাজনীতিতে নয়া ইতিহাস তৈরি করলেন উকিল আবদুস সাত্তার।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রহমতউল্লাহ ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। তিনিও ৯৬ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ওই সালের নির্বাচনের নৌকা প্রতীকে লড়াই করে এমপি নির্বাচিত হন। মৌলভীবাজারের এবাদুর রহমান চৌধুরী জাপার এমপি ছিলেন। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি হন। বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন ভোলা থেকে জাপার এমপি ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে জয়ী হন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন। মন্ত্রীও হন। দল বদলের এসব ঘটনার তালিকা দীর্ঘ। রাজনীতিতে দলবদল ইতিহাসের জন্ম দিলেও এ ঘটনা স্বাভাবিক বলেই মনে করেন রাজনীতিকরা।
কিন্তু অস্বাভাবিক যা তা হলো উকিল আবদুস সাত্তারের এ ঘটনা। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপি তাকে মূল্যায়ন করেনি। তার কথার কোনো মূল্য ছিল না দলে। তার এ অভিযোগ সত্য না মিথ্যা এটা তিনি এবং বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন। কিন্তু সাদা চোখে যা দেখা গেছে তা হলো- তিনি দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন চারবার। ২০০১ সালে জোটের কারণে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কিন্তু নির্বাচনে চারদলীয় জোট জয়ী হলে বিএনপি উকিল সাত্তারের সেক্রিফাইসকে মূল্যায়ন করে তাকে মন্ত্রী বানিয়ে। ওই সময় প্রথমে ভূমি তারপর আইন ও সবশেষ মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুরো পাঁচ বছর তিনি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। ফ্ল্যাগ উড়িয়ে এলাকায় গেছেন। দাপটের সঙ্গে দলও চালিয়েছেন। সাদা চোখের এ দেখায় তাকে দল অবমূল্যায়ন করেছে বলে মনে হয় কি? সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপি তাকে মূল্যায়ন করেছে তার হাতে ধানের শীষ তুলে দিয়ে। সে যাক গে, এটি উকিল সাত্তার ও বিএনপি’র বিষয়। সে বিষয়ে তারাই ভালো জানেন। এখন প্রশ্ন হলো- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আলাউদ্দিন বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষের এমপি হলেও তার মন পড়েছিল আওয়ামী লীগেই। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে ওই সংসদেই। তিনি ফ্লোর ক্রসিং করেন। আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সংসদ সদস্য পদ হারান। সেই সংসদেই আবার ফিরে আসেন নৌকার প্রার্থী হয়ে। মন্ত্রীও হন। উকিল সাত্তারের গতকালের উপনির্বাচন ঘিরে ক’দিন ধরেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেন ক’দিন আগে সরাইল গিয়ে বলে এসেছেন পহেলা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে উকিল সাত্তারই জয়ী হবেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা এমনকি জেলার নেতারাও আটঘাট বেঁধে নামেন উকিল সাত্তারের পক্ষে। তারাই সাত্তারের কলার ছড়ি মার্কার প্রচারণা চালান। কেন্দ্রের দায়িত্ব, ভোটার উপিস্থিতির দায়িত্বও তাদের দেয়া হয়। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা সব ভাগ করে নেন। নির্বাচনী মাঠেও তার প্রমাণ মিলেছে। এজেন্টদের টাকা দেওয়া ও খাওয়ার ভার ছিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিদের হাতে। উকিল সাত্তার সেই টাকা আগেই পৌঁছে দেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের হাতে। গতকাল নির্বাচনী কেন্দ্রে যাওয়ার পর এজেন্টদের এক হাজার টাকার পরিবর্তে দেয়া হয় সাতশ’ টাকা। দুপুরের খাবারও দেয়া হয়নি। এ নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় ক্ষোভ দেখা দেয়। এ অবস্থায় ওই কেন্দ্রে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। তাকে এজেন্টরা সব খুলে বলেন। এই এজেন্টরাও সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। জেলা নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন নেতাকে ডেকে গালমন্দ করেন। বলেন, এখানেও আপনাকে ব্যবসা করতে হয়। নির্বাচনী মাঠের চিত্র তো দেশবাসী সারা দিনই দেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যে সাত্তারের জন্য আওয়ামী লীগ এত কিছু করছে সেই সাত্তার কি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে? নাকি ডা. আলাউদ্দিনের মতো বিশাল ধাক্কা দেবেন? আওয়ামী লীগের বুকে পেরেক ঠুকে দেবেন নাতো?
পাঠকের মতামত
হাসিবুর রহমান স্বপন প্রথমে জাসদ তার পর জাতীয় পার্টি নেতা ছিলেন এবং তার সংসদ সদস্য পদ যাওয়ার পর নৌকার টিকেট পান কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতা ড মাজহারুল ইসলামের ছেলে চয়নের কাছে পরাজিত হন।
আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন না পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনজুর আলম বিএনপি থেকে মেয়র নমিনেশন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অথচ বিএনপির ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতা ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে মেয়র পদে নমিনেশন দেয়া হয়নি। এর চেয়ে দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে? এভাবে ত্যাগী নেতাগুলোকে বাদ দিয়ে অতিথি পাখিদেরকে নমিনেশন দিয়ে বিএনপির কি লাভ হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এইরকম হাজার হাজার প্রমাণ দেয়া যাবে।