খেলা
মাশরাফির অনুপ্রেরণায় নিজেকে ফিরে পেতে চান রানা
ইশতিয়াক পারভেজ, সিলেট থেকে
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার৮ বছর বয়সেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন ব্যাট বল। কিন্তু পরিবারের চাওয়া ক্রিকেট নয় করতে হবে পড়ালেখা। কিন্তু ক্রিকেটের ভূত তাকে পড়ালেখায় মন বসতে দেয়নি। এমনকি মাঠের নেশায় মেহেদী হাসান রানা দূরে থেকেছেন পরিবার থেকেও। অনেক ত্যাগের পর ২০১৬-এর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দারুণ নজরকাড়া এই পেসার এগিয়ে যাচ্ছিলেন দারুণ স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু নিয়তি যেন পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন দুই বছরের জন্য। অবশ্য থেমে থাকেননি, ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন মাঠে নতুন উদ্যম নিয়ে। সবশেষ বিপিএলের আসরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে আবারো আলোতে আসেন। তবে গেল বছর গত ১১ই অক্টোবর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি দাবি করেন, বিপিএল এবং ঘরোয়া লীগে ধারাবাহিক পারফর্ম করার পরও তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে এলেন কীভাবে?
রানা: আমি খুব ছোটবেলায় ক্রিকেট শুরু করি। তখন আমার বয়স ৮ বছর। আমি তখন থেকেই ব্যাট-বল হাতে তুলে নেই। চাঁদপুরের মাঠ ও আর অলিগলিতেই বেশি খেলেছি। এরপর ঢাকায় খেলা শুরু করি ২০১১তে। ট্রায়াল দিতে এসেছিলাম।
প্রশ্ন: শুনেছি ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু ছেড়েছেন?
রানা: হ্যাঁ, আমি সত্যি ক্রিকেট খেলার জন্য অনেক কিছুই ত্যাগ করেছি। যেমন আমার পড়ালেখা এইচএসসি পাস করার পরই থেমে গেছে। এ ছাড়াও আমি এই ক্রিকেটের জন্য পরিবারকে সময় দিতে পারি না। কারণ খেলার জন্য মাঠেই আমাকে বেশি সময় দিতে হয়।
প্রশ্ন: ২০১৬ বিশ্বকাপের পর হঠাৎ করেই ছন্দপতন- সেই সময়টা কীভাবে কাটিয়েছেন?
রানা: আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর ইনজুরিতে পড়ি। এরপর ৮ মাসের মতো খেলার বাইরে ছিলাম। সব মিলিয়ে ২ বছর আমি খেলতে পারিনি। সেই সময়টা কঠিন কেটেছে ক্রিকেটের বাইরে থেকে। পরিবার ও বন্ধুদের সময় দিয়েছি। এরপর তো নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে ফিরেছি।
প্রশ্ন: পরিবারের সমর্থন কতোটা পান?
রানা: শুরুতে তো তারা চেয়েছিল আমি পড়ালেখা করে বড় কোনো চাকরি করি। কারণ আমার পরিবারের বেশির ভাগ মানুষ ভালো ভালো জায়গাতে জব করছে। কিন্তু আমি ক্রিকেটটাকেই বেশি ভালোবাসি। যে কারণে তাদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে খেলা শুরু করি। তবে এখন তারা বুঝতে পারছে যে, এখানেই আমি ভালো করছি। যে কারণে এখন সমর্থন পাই। বিশেষ করে আমার স্ত্রী ক্রিকেটটা দারুণ বোঝে। আমি সত্যি ভাগ্যবান যে, এমন একজন লাইফ পার্টনার পেয়েছি। যে সবসময় আমার ক্রিকেট খেলাকে সর্থন দেয়। খারাপ সময়ে পাশে থাকে।
প্রশ্ন: আপনার এখন লক্ষ্য কি?
রানা: আমার স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলা। জানি অনেক কঠিন পথ। তবে আমি আমার প্রসেসগুলো ঠিক রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে এখন অনেক পেসার, দারুণ প্রতিযোগিতা- সেখানে সুযোগ পাওয়া কতোটা চ্যালেঞ্জ মনে করেন?
রানা: হ্যাঁ, এটাও সত্যি বিসিবি এখন পেসারদের অনেক খেয়াল রাখে। তাদের উইকেট থেকে শুরু করে নিউট্রেশন ও অনুশীলন সুবিধা পর্যন্ত। যে কারণে এখন অনেক ভালো ভালো পেসার উঠে আসছে। জাতীয় দলে অনেক দারুণ দারুণ পেসার আছে। তাদের মধ্যে সুযোগ করে নেয়া কঠিন। তবে আমি সব সময় নিজেকে মেনটেইন করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার বোলিংয়ের শক্তি আর দুর্বলতা কি?
রানা: দেখেন প্রত্যেকটা পেসারের কিছু শক্তির জায়গা থাকে। আমি সব সময় চেষ্টা করি ব্যাটারকে রিড করার। এ ছাড়াও আমি নিজেকে ইনসুইং দিয়ে আলাদা করতে চাই।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে আপনার অনুপ্রেরণা কে?
রানা: পেস বোলারদের মধ্যে আমি মোহাম্মদ আমিরকে ফলো করি। আর দেশে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। এই বিপিএলের আগে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। তিনি আমাকে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। জানেন তো একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আমি নিষিদ্ধ হয়েছিলাম। সেখানেই তিনি বলেছেন- শুধু খেলাতে মন দিতে। সবচেয়ে বড় কথা তিনি ইনজুরির পর যেভাবে বার বার ফিরে এসেছেন তা আমাকে অনেক শক্তি দেয়।