নির্বাচিত কলাম
বেহুদা প্যাঁচাল
খোশমেজাজে সাত্তার, নির্বাচনী পুলসিরাত এত সহজ!
শামীমুল হক
২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবারঅবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিএনপি’র ভোট মাইনাস হলেও প্লাস হবে আওয়ামী লীগের ভোট। সবদিক বিবেচনায় উকিল সাত্তারই এখন নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে। নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না এটা যেমন বলা যায় তেমনি একতরফা হবে বলেই মনে হয়। প্রার্থিতার বিচারে এমনটাই বলবেন যে কেউ। ধানের শীষ ত্যাগ করে কলার ছড়ি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামা উকিল আবদুস সাত্তার এ অবস্থায় ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা। তিনি আছেনও বেশ খোশমেজাজেই। বড় কোনো অঘটন না হলে তিনিই হচ্ছেন আবারো এমপি। যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সেই সংসদেই ফের যাবেন উপনির্বাচনে লড়ে। তার শেষ ইচ্ছা অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা
কলার ছড়ি নিয়ে উকিল আবদুস সাত্তার নির্বাচনী ফুলসিরাত পার হবেন তো? ধানের শীষ ত্যাগ করার পর এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন আর জনমনে এ প্রশ্ন নেই।
সে সময় জামাই শ্বশুরের নির্বাচনী ক্যাচাল দেশজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত সে নির্বাচনে মৃধা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন। আর জামাতা রেজাউল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টি থেকে। নির্বাচনে দু’জনই হেরে যান। এখনো জামাই-শ্বশুরের লড়াই অব্যাহত আছে। উপনির্বাচনেও জিয়াউল হক জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাননি। সেই জামাতাই মনোনয়ন পান। কিন্তু পরে জামাতাকে বাদ দিয়ে জাপা নেতা আব্দুল হামিদ ভাসানীকে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দেয়। আব্দুল হামিদ উপনির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তবে তিনি নতুন মুখ হিসাবে এলাকায় ততটা পরিচিত নন। আর উকিল আবদুস সাত্তারের কাছে তিনি এ মুহূর্তে রাজনীতিতে শিশুই বলা চলে। এ ছাড়া নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। তিনিও নির্বাচনে কিছু করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন না এলাকাবাসী। এ ছাড়া আরেকজন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থীরা যখন সরে দাঁড়িয়েছেন তখন উকিল সাত্তারের পথ এখন পরিষ্কার। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যেমনই হোক। আর ভোটার উপস্থিতির প্রসঙ্গ আনতে হয়, কারণ ইতিমধ্যে বিএনপি’র পক্ষ থেকে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেউ যেন ভোট দিতে না যান। এমনকি কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করলেও দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপি তাদের তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছে। যতটুকু বোঝা যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন দু’টি ভাগে বিভক্ত। উকিল আবদুস সাত্তার দীর্ঘদিন এ আসনের এমপি থাকায় এবং দলের জেলা সভাপতি থাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার একটা সখ্য আছে। কিছু নেতাকর্মী আছেন যারা উকিল সাত্তারকে এ মুহূর্তে ছেড়ে যেতে পারবেন না। তারা দলের হুমকি সত্ত্বেও উকিল আব্দুস সাত্তারের পাশে থাকবেন। ওদিকে উকিল সাত্তারের নিজ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন সাত্তারের পক্ষে থাকার। তারা সাত্তারের নির্বাচনী মঞ্চে উঠে সাত্তারকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাত্তারকে নিয়ে মিছিলও হয়েছে। ওই একদিনই উকিল আবদুস সাত্তার তার নিজ এলাকার সভায় হাজির হলেও এখন তিনি প্রচারণায় মাঠে নেই। তার পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছেন তার পুত্র তুষার। আর মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপি’র একাংশও কাজ করছেন মাঠে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো গতকাল এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে শনিবার আবদুস সাত্তারের পক্ষে এক সভায় অংশ নেন সরাইলের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা। প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উকিল আবদুস সাত্তারকে বিজয়ী করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার প্রথম কাজ ছিল আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকারের নেতৃত্বে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী তা প্রত্যাহার করেছেন। আল মামুন সরকার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এই আসনে দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এ ছাড়া সাত্তারের পথ পরিষ্কার করতে জাতীয় পার্টির দুইবারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধাকে নির্বাচন থেকে সরানো হয়েছে। আশুগঞ্জে সভা করে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি’র সংরক্ষিত আসনের পদত্যাগী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন বলেছেন, উকিল আবদুস সাত্তার অন্য দলের হলেও সৎ, প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ। আমরা তার নির্বাচন করতেই পারি।
অপরদিকে এলাকায় আবদুস সাত্তারকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সরাইল উপজেলা বিএনপি নির্বাচনী এলাকার কোথাও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরাইল উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব নুরুজ্জামান লস্কর তপু অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা ভোট বর্জনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে তাকে প্রতিহত করবো। বিএনপি’র কেউ কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিএনপি’র ভোট মাইনাস হলেও প্লাস হবে আওয়ামী লীগের ভোট। সবদিক বিবেচনায় উকিল সাত্তারই এখন নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে। নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না এটা যেমন বলা যায় তেমনি একতরফা হবে বলেই মনে হয়। প্রার্থিতার বিচারে এমনটাই বলবেন যে কেউ। ধানের শীষ ত্যাগ করে কলার ছড়ি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামা উকিল আবদুস সাত্তার এ অবস্থায় ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা। তিনি আছেনও বেশ খোশমেজাজেই। বড় কোনো অঘটন না হলে তিনিই হচ্ছেন আবারো এমপি। যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সেই সংসদেই ফের যাবেন উপনির্বাচনে লড়ে। তার শেষ ইচ্ছা অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা। এমনটাই বলেছেন, নির্বাচনী জনসভায়। আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচন আরেকটি ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। ইতিমধ্যে এর আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।