ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সময় অসময়

তবু কেন সমাবেশ মঞ্চে এত মুখ দেখানোর চেষ্টা?

রেজানুর রহমান
১৮ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎসব পার্বণ উপলক্ষে দ্রব্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে প্রকাশ্যে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। এবার এটা করা যাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। যে  বা যারা এই নির্দেশ অমান্য করবেন তারা বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকের লেখায় এটাই বোধকরি শুভ সংবাদ


আমাদের অনেক সৌভাগ্য যে, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি সেদিন। তবে যেভাবে মঞ্চ ভেঙে পড়েছিল তাতে অনেক কিছুই হতে পারতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বানানো মঞ্চ ভেঙে পড়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দুর্ঘটনার ভিডিও চিত্র।

বিজ্ঞাপন
কী ভয়াবহ চিত্র! দেখলেই গা শিউরে ওঠে। ঝুপ করে ভেঙে পড়লো সমাবেশের মঞ্চ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ওবায়দুল কাদেরসহ মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ছাত্রনেতা নিমিষের মধ্যে নিচে পড়ে গেলেন। ১০ জন সামান্য আহত হয়েছেন। তবে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তাতে আরও ভয়ঙ্কর কিছু হতে পারতো। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আশঙ্কাজনক কিছু ঘটেনি। আশা করেছিলাম অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ঘটনার পর সভা-সমাবেশের মঞ্চে বক্তা ছাড়া অন্যদের উপস্থিতির ব্যাপারে হয়তো একটা নিয়মনীতি, নিষেধাজ্ঞা চালু হবে। না, সে রকম কোনো সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায়নি; বরং মঞ্চ ভেঙে পড়ার ঘটনাকে বোধকরি নিছক দুর্ঘটনা হিসেবেই ভাবা হচ্ছে। কিন্তু এটা কি সত্যিকার অর্থে নিছক দুর্ঘটনা? সভা-সমাবেশের মঞ্চ বানানো হয় অতিথিদেরকে সম্মান জানানোর জন্য। অতিথি কারা? যারা বক্তব্য দেবেন তারা। 

তাদের জন্য মঞ্চে চেয়ার রাখা হয়। প্রধান অতিথিসহ সকল সম্মানিত বক্তা চেয়ারে বসে থাকেন। তারা একের পর এক বক্তব্য দেন। মঞ্চের অর্থাৎ সভা অথবা সমাবেশের একজন ঘোষক থাকেন। তার বাইরে অন্যদের ভিড় করে মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকার যৌক্তিকতা কি? কেন তারা দাঁড়িয়ে থাকেন? এর সহজ উত্তর মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে নেতা, পাতিনেতা, প্রভাবশালী কর্মী নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে চান। বিশেষ করে সভা-সমাবেশের প্রধান অতিথি যখন বক্তৃতা দেন তখন তার পেছনে অন্যদেরকে কনুইয়ের গুতো দিয়ে সরিয়ে দাঁড়াতে পারলেই কেল্লাফতে। নেতার সঙ্গে মুখ দেখা যাবে বিভিন্ন টেলিভিশনের পর্দায়। পত্র-পত্রিকায় নেতার সঙ্গে ছবি ছাপা হবে। টেলিভিশনে নেতার পেছনে দাঁড়ানো ভিডিও আর পত্রিকায় ছাপানো স্থিরচিত্র ভবিষ্যতের নেতা হওয়ার দলিল হিসেবে কাজ করে। আর তাই নেতা-পাতিনেতা সবাই প্রধান অতিথির পেছনে দাঁড়ানোর জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। অনেক সময় এই অশোভন দৃশ্য সভা-সমাবেশের সৌন্দর্য, গুরুত্ব নষ্ট করে। তবুও চলছে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর ধারণা করা হয়েছিল সভা-সমাবেশের মঞ্চে বক্তারা ছাড়া অন্যদের ভিড় করার ক্ষেত্রে হয়তো একটা নিয়ম চালু হবে। না, সে রকম কোনো নিয়ম-নীতির কথা এখনো শোনা যায়নি; বরং সভা-সমাবেশ মঞ্চে নির্ধারিত বক্তার বাইরে অন্যদের ভিড় করার প্রবণতা আরও বেড়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বয়ং এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

 

 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের  এক সভায় মঞ্চে দাঁড়ানো নেতাকর্মীদের মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিয়ে বলেছেন, এখন থেকে সভা-সমাবেশে নির্ধারিত বক্তা ও অতিথিদের বাইরে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না। সবাইকে মঞ্চের সামনে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে।  আবারো আশঙ্কার কথাটা বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চে ভাঙার ঘটনায় সেদিন অনেক বড় কিছু ঘটে যেতে পারতো। প্রকৃতিও মানুষকে অনেক সময় সচেতন করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর আমাদের বোধকরি সচেতন হওয়া জরুরি। সভা-সমাবেশের একটি ঐতিহ্যগত রীতি-নীতি আছে। সৌন্দর্য আছে। সবাই যদি মঞ্চে দাঁড়াতে চাই তাহলে দর্শক সারিতে থাকবে কে? ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সভা সমাবেশের মঞ্চে নির্ধারিত বক্তা এবং সম্মানিত অতিথি ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না। এই নিয়ম মানতে সমস্যাটা কোথায়? আশাকরি সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।  রাজনীতির কথা যখন উঠলোই তখন একটু বলি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক উত্তাপ উত্তেজনা একটু বাড়বেই। তবে সেটা যেন সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ না হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। হরতাল, অবরোধ এই শব্দগুলোর সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই পরিচিত নয়। আমাদের চেষ্টা থাকা উচিত আতঙ্কজনক এই শব্দগুলোর সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে আর পরিচিত না করা।  একই দিনে সরকারি দল ও বিরোধী দলের কর্মসূচি থাকলে শহরটা আতঙ্কে ভরে যায়। রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন আতঙ্ক ছড়াবে? অথচ আমাদের এই দেশ, প্রিয় মাতৃভূমি রাজনৈতিক আন্দোলনেরই ফসল। কথাটা যেন আমরা ভুলে না যাই।  প্রিয় পাঠক নিশ্চয়ই একটা বিষয়ে একমত হবেন যে, সংস্কৃতির উন্নয়নের ওপরও একটি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্ব নির্ভর করে।

 চলচ্চিত্র একটি দেশের সংস্কৃতির গুরুত্বপর্ণ অংশ। ভালো সিনেমার কথা উঠলেই ইরানের কথাও উঠে আসে অতি সহজেই। সেই তুলনায় ভালো বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরই নাম তো উঠে আসার কথা। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে আছে কি সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা? গতবছর ভালো সিনেমা নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়েছে তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে নায়ক-নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবন। তারকাদের অভিনয় জীবন আলোচনায় গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের কদর্য আলোচনা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর ও বিশিষ্ট চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। প্রচার মাধ্যমে এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখলাম। ডলি জহুরের ব্যাপারে একজন চিত্রনায়িকার বক্তব্য মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, আজীবন সম্মাননার ব্যাপারটা অতীতের মতো একজনের বেলায় থাকা উচিত। ডলি জহুরের সঙ্গে আমি মা ও ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছি। অথচ আমাদের দু’জনকেই কিনা একসঙ্গে লাইফ টাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেয়া হলো।

 ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। জাতীয় চরচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে এ ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে গুরুত্ব দেবেন বলে আশাকরি।  ক্রিকেট শুধুমাত্র একটি খেলা নয়। ঐতিহ্য ও অহংকারেরও বিষয় বটে। বিপিএল’র নতুন আসর শুরু হয়েছে। তরুণ কিছু খেলোয়াড়ের প্রশংসা শুনতে পাচ্ছি। এটা শুভ লক্ষণ। তবে সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মোর্তজা দেশের ক্রিকেট নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া। কারণ ক্রিকেট হাসলে গোটা বাংলাদেশ হাসে। কাজেই ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা জরুরি।  লেখাটি শেষ করি একটি প্রত্যাশার কথা দিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎসব পার্বণ উপলক্ষে দ্রব্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে প্রকাশ্যে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। এবার এটা করা যাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। যে  বা যারা এই নির্দেশ অমান্য করবেন তারা বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকের লেখায় এটাই বোধকরি শুভ সংবাদ। সবার জন্য রইলো শুভকামনা। 

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো।  

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status