ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চোখে

মেট্রোরেল শেষ পর্যন্ত সরকারের ভাগ্যে অহংকারের পালক হবে কি?

রুমিন ফারহানা
২ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার
mzamin

মানুষের পাগলামি ছিল দেখার মতো। ভোরের আলো না ফুটতেই লাইনে দাঁড়িয়েছে মানুষ। সেই লাইনও এতই দীর্ঘ যে এক মাথা থেকে অন্য মাথা দেখা যায় না। দিনের বেলা হালকা ঠাণ্ডা থাকলেও কাকডাকা ভোরে শীত পড়ে ভালোই। সেই শীত উপেক্ষা করেই মানুষ দাঁড়িয়েছে লাইনে। যে করেই হোক, মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হতেই হবে। প্রথম হবার এই রোগ আমাদের শুরু হয়েছে পদ্মা সেতু থেকে। মেট্রোরেল তার ধারাবাহিকতা মাত্র। প্রথমদিন যাত্রী হতে যেয়ে ভিড়ের চাপ যেমন সহ্য করেছে মানুষ, তেমনি ঊর্ধ্বশ্বাসে নেমেছিল দৌড় প্রতিযোগিতায়। একটা পর্যায়ে টিকিটের মেশিন বিকল হয়ে পড়ে, কিন্তু তাতেও হাল ছাড়েনি মানুষ।

বিজ্ঞাপন
বরং দৈর্ঘ্যে কিলোমিটার ছাড়ানো লাইনে ঠায় দাঁড়িয়েছে তারা। মানুষের এই অতি উৎসাহের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে মিডিয়া। মুহূর্তে মুহূর্তে মেট্রোরেলের আপডেইটেড খবর মানুষের সামনে নিষ্ঠার সঙ্গে হাজির করেছে তারা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন থেকে শুরুর করে চালকের ইতিবৃত্ত পর্যন্ত কিছুই বাদ যায়নি খবর থেকে। 

শোনা যায় গণমাধ্যমের উপর নাকি সরকারের প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ চাপ ছিল প্রতি মুহূর্তের আপডেট দেবার জন্য। যে করেই হোক মানুষকে ব্যস্ত রাখতে হবে মেট্রোরেলের খবরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই রমরমা সময়ে বহু মানুষের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে মুহূর্তে। তেমনই একটা ভিডিওতে দেখলাম উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে মানুষ, কে কার আগে ট্রেনে উঠবে সেই প্রতিযোগিতা। আর একটা ভিডিওতে দেখলাম কলাপসিবল গেটের উপর দিয়ে বেয়ে উঠছে মানুষ, ভাবটা এমন যেন এই গেট আর খোলা হবে না কখনোই কিংবা খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলে ট্রেন মিস হবে আজীবনের জন্য। এই সবকিছুতেই ভূমিকা রেখেছে মানুষের হুজুগে। অন্তত দুটো দিনের জন্য যাদের কিছুটা সামাজিক পুঁজি আছে সেই শিক্ষিত সচেতন মধ্যবিত্তের দৃষ্টি সম্পূর্ণ সরিয়ে রাখা গেছে নিত্যদিনের নানা বঞ্চনা থেকে। এই দুটো দিন পত্রিকার কোনো কলাম টেলিভিশনের কোনো টক শো, গণমাধ্যমের কোনো খবরে নেই আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য, রিজার্ভ সংকট, ব্যাংকের তারল্য সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতার খবর। নেই প্রান্তিক মানুষের দুর্দশার কোনো চিত্র। সরকার একটা ইলিউশান তৈরি করতে চেয়েছিল এবং সেক্ষেত্রে তারা শতভাগ সফল।   

একটা সরকারকে লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে পোষা হয় জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য। এই কারণেই বাজেটের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করা হয় সরকার পরিচালনার ব্যয় হিসাবে। সেক্ষেত্রে সরকারে যেই থাকুক না কেন এ ধরনের প্রকল্প নেয়া তার কাজের অংশ এবং যেহেতু জনগণের করের টাকায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তাই তার প্রতিটা পয়সার হিসাবের ক্ষেত্রে সরকারের স্পষ্ট জবাবদিহিতা থাকা বাধ্যতামূলক হবার কথা। কিন্তু সরকার এই ব্যাপারে ন্যূনতম আগ্রহী নয়। তাই কেবল দৈনন্দিন নানা সংকট থেকেই নয়, সরকার দৃষ্টি সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে এই গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকেও। মেট্রোরেল উদ্বোধনের সময় আলোচনায় আসার কথা ছিল  যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর প্রভাব, অর্থনৈতিক প্রভাব, যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের ভূমিকা কি হতে পারে, দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগের বিনিময়ে কতোটা সুবিধা পাবে সাধারণ মানুষ ইত্যাদি। কথা ছিল প্রকল্পের আকাশচুম্বী ব্যয়, সরকারের চরম অদক্ষতা প্রকাশকারী প্রকল্পের অবিশ্বাস্য ধীরগতি আলোচনায় আসবে।

 কিন্তু কিছু মানুষের উচ্ছ্বাস নিয়ে উপর্যুপরি সংবাদ প্রচার গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়কে আলোচনায় আসতে দেয়নি। অনুমান করি এই আলোচনায় আসতে না দেয়াটা ইচ্ছাকৃত। কার্পেটের নিচে সরকারের আর সব অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, দুঃশাসন লুকাবার চেষ্টার মতোই এটিও একটি চেষ্টা। প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ করার। পরবর্তীতে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এটিকে কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাবার। এতে দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার বেড়ে দাঁড়ায় ২২ কিলোমিটারের মতো। এটি প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হবে বলে বলা হচ্ছে। এ প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। ঢাকার এই মেট্রোরেলের যে নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রতিবেশি দেশ ভারতের দিল্লি কিংবা মুম্বইয়ের মেট্রোরেলের তুলনায় দুইগুনেরও বেশি। সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সম্প্রতি দুই দেশের মেট্রোরেলের ব্যয়ের একটি তুলনামূলক গবেষণা করেছে। 

ওই গবেষণাতেই উঠে আসে যে, বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যয় ভারতের থেকে বেশি। গড়ে প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে ভারতে ব্যয় হয় ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে এই ব্যয় হচ্ছে ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই হিসাব হচ্ছে প্রাথমিক বাজেটের পর। এরপর প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে মেট্রোরেলের খরচ ধরা হয়েছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, এরপর ১১৪৮৭ কোটি টাকা বেড়ে এখন মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৩৪৭২ কোটি টাকা। সুতরাং প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ভারতের শহর ব্যাঙ্গালোরে ২০১৪ সালে ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণ শুরু হয়। এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ৬৫.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১৩.৭৯ কিলোমিটারের আন্ডারগ্রাউন্ড রাস্তা। মোট ৬১ স্টেশনের মধ্যে এক ডজন স্টেশন নির্মাণ করতে হবে মাটির নিচে। আমাদের মেট্রোরেলে আন্ডারগ্রাউন্ডের কোনো বিষয় যেহেতু নেই তাই খরচ অনেক কম হবার কথা। 

 

 

বাংলাদেশে গত এক যুগে যত প্রকল্প হয়েছে তার সবই হয়েছে আশপাশের দেশের তুলনার কয়েকগুন বেশি খরচে। এ বিষয়ে সরকারকে কোনো প্রশ্ন করা হলে সরকারের তরফে বারবারই অনেক উচ্চমূল্যে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি কারণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। কিন্তু মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে স্টেশন নির্মাণের অল্প কিছু জায়গা বাদে ভূমি অধিগ্রহণের কোনো বিষয় ছিল না। তাই এক্ষেত্রে এই খরচকে সরকার কী করে ন্যায্যতা দেবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।  ব্যাংক বা বিদ্যুৎ খাতের মতোই এই লুটের দায়ও বহন করতে হবে সাধারণ মানুষকেই। যে কারণে দেখা যাচ্ছে মেট্রোরেলের ভাড়া আমাদের পাশের দেশগুলোর তুলনায় কয়েকগুন বেশি। কলকাতায় সর্বনিম্ন ভাড়া ৬ টাকা, যা দিয়ে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যায় আর সর্বোচ্চ ভাড়া ৩১ টাকা যেখানে দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের বেশি। নয়াদিল্লিতে সর্বনিম্ন ভাড়া ১২ টাকা আর সর্বোচ্চ ৭৬ টাকা। মুম্বই শহরে সর্বনিম্ন ভাড়া ১২ টাকা আর সর্বোচ্চ ৬৩ টাকা। এত গেল ভারতের খবর। পাকিস্তানে এই খরচ আরও কম। সেখানে সর্বনিম্ন ভাড়া ৯ টাকা আর সর্বোচ্চ ১৮ টাকা।  এবার আসি বাংলাদেশের কথায়। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কতৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যের কমিটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মেট্রোরেলের ভাড়া প্রস্তাব করেছিল কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা। 

কমিটি জানায় কোনো মুনাফা না ধরে শুধু পরিচালন ব্যয় হিসেবে এই ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বছর মার্চেও কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা হারে মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা, সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা সুপারিশ করা হয়। মজার বিষয় হলো এর মাত্র ৬ মাস পর সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ জানা গেল কিলোমিটার প্রতি ৫ টাকা ধরে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা আর সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা ধরা হয়েছে।  অথচ মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর শুরুতেই বলা হয়েছে মেট্রোরেলের উদ্দেশ্য হলো ‘জনসাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত গণপরিবহনের সেবা প্রদান। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের জন্য এই পরিবহন এবং এর খরচও থাকতে বলে সাধারণের নাগালের মধ্যেই। একই আইনের ১৮(২) ধারা বলছে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিচালন ব্যয় এবং জনসাধারণের আর্থিক সামর্থের বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়াও মেট্রোরেল বিধিমালা ২০১৬ এর ২২(ঘ) বলছে অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে। মেট্রোরেলের সঙ্গে তুলনীয় অন্য গণপরিবহনের কথা বললে প্রথমেই আসে বাস সার্ভিসের কথা। বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৪৫ পয়সা। অর্থাৎ মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে বাসের দ্বিগুণ। 

সাধারণ মানুষের জন্য এটি কতোটা সাশ্রয়ী হবে বলাই বাহুল্য। উত্তরা থেকে মতিঝিল একজন অফিস যাত্রীর দিনে দুইশ’ টাকা মেট্রো ভাড়া ধরে মাসে ২৫ দিনের খরচ আসে ৫,০০০ টাকা। পরিবারে দুইজন সদস্য চাকরিজীবী হলে এই খরচ ১০,০০০ এ গিয়ে দাঁড়ায়। চার সদস্যের পরিবারের জন্য এই খরচ ২০,০০০ টাকা।  এখন প্রশ্ন আসে হাঁটার গতিতে গাড়ি চলার এই শহরে মেট্রোরেল কতোটা উপযোগী হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৩৫ সালের মধ্যে পাঁচটি মেট্রো লাইনের কাজ শেষ হলেও যানজট কমবে না যদি বাস সার্ভিসের উন্নতি না হয়। সমীক্ষা বলছে ১৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাঁচটি এমআরটি চালু করার পরও সেগুলো পুরো পরিবহনের মাত্র ১৭ শতাংশের চাপ নিতে পারবে না। তখনো ৪০ শতাংশ চাপ নেবে গণপরিবহন কারণ সেটি অনেক জায়গায় যেতে পারে, মেট্রো তার নির্দিষ্ট লাইনের বাইরে যেতে পারে না। মালিকনির্ভর পাল্টাপাল্টির বাস সার্ভিসগুলোকে একটি বা একাধিক কোম্পানির অধীনে এনে ভালো মানের সেবাদানের প্রক্রিয়াটা খরচবিহীন। কারণ, এখানে কোনো অবকাঠামো লাগবে না। গণপরিবহনকে এমন শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসাটা শুধু সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখানে কোটি কোটি টাকার খরচ নেই, সময়ও লাগে না। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামশুল হক যিনি ঢাকার মেট্রোরেল, হাতিরঝিল প্রকল্পসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন তার মতে সরকার আছে উন্নয়নের জোয়ারে, বিলাসী প্রকল্প না হলে তার পোষায় না।

 যে কারণে সুপারিশ গুচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফুটপাথ, গণপরিবহন, বিআরটি, এমআরটি-এভাবে ধাপে ধাপে একটি বিন্যাস করে দেয়া হলো, সেগুলো না মেনে একেবারে শীর্ষে চলে যাওয়া হলো। শুরুতেই যে গণপরিবহন যানজটের বেশি চাপ নিরসন করবে, সেদিকে নজর দেয়া হলো না। কারণ, সরকার ফিতা কাটার উন্নয়ন, বড় বিনিয়োগ ও বড় প্রকল্পে বিশ্বাস করে। অথচ গুণগত প্রকল্পের জন্য বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। শুধু দরদ লাগে। পৃথিবীতে ১৭৫টি শহরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) সিস্টেম আছে। এ ধরনের প্রকল্প করতে  যেখানে নয় মাস থেকে দেড় বছর লাগে সেখানে আমরা ১০ বছরেও কূলকিনারা করতে পারিনি। সম্প্রতি পাকিস্তান এক থেকে আড়াই বছরের মধ্যে পরপর তিনটি বিআরটি প্রকল্প করে ফেলেছে। 

আমাদের সঙ্গে একই সময় জাইকার অর্থায়নে জাকার্তা মেট্রোরেলের কাজ শুরু করে, যার পাঁচ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ লাইন ছিল, ফলে সেটি আরও বেশি খরচ ও সময়সাপেক্ষ ছিল, এরপরেও তারা গত বছর সেটি চালু করে দিতে পেরেছে। জাকার্তা তো উন্নত বিশ্বের শহর না। এই পুরো বিষয়ের জন্য দায়ী আমাদের উন্নয়ন দর্শন, সক্ষমতার ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব, প্রকল্পের নামে লুটপাট ভাবনা আর যেকোনো মূল্যে প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পের আসক্তি।  এক দশক আগে ঢাকার যানবাহনের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার, সেখান থেকে নামতে নামতে সেটি এখন ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার, প্রায় হাঁটার গতির সমান। সেদিকে সরকারের তেমন মনোযোগ আছে বলে মনে হয়না। একটি পরিকল্পিত নগরীর ২৫ শতাংশজুড়ে রাস্তা থাকে, আমাদের আছে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ। সেই রাস্তা কি করে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। 

যেখানে গণপরিবহন চাপ নেয় টোটাল ৭০ শতাংশ আর প্রাইভেট কার চাপ নেয় ৫ থেকে ৬ শতাংশ। সেখানে প্রাইভেট কার রাস্তা দখলে রাখে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। অথচ প্রাইভেট কার নিরুৎসাহিত করে গণপরিবহনের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য সরকারের তরফে কোনো উদ্যোগ নেই। যে মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হলো সেটি নির্মাণে সময় এবং খরচ দুটোই লেগেছে অন্যান্য দেশের তুলনায় কয়েক গুণ। তাও তাড়াহুড়ো করে উদ্বোধন করতে গিয়ে নির্ধারিত দূরত্বের অর্ধেক মাত্র শেষ করতে পেরেছি আমরা। বাকিটা শেষ হতে আর কতো সময় লাগবে সেটা কেউই সঠিক বলতে পারি না। তাই অতিরিক্ত অর্থ এবং সময় ব্যয়ে এই মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সরকারের ভাগ্যে অহংকারের পালক হবে নাকি কলঙ্কের তিলক সেটা সময়ই বলে দিবে।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status