ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

বুয়েট ছাত্র ফারদিনের মৃত্যুতে খুন হলেন ক'জন?

যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান

(১ বছর আগে) ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

mzamin

ডাঃ আলী জাহান

সভ্য দেশে জোড়া খুন 

১. লন্ডনের Dagenham এলাকায় গত শুক্রবার (১৬.১২.২২) দুপুরে  একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। Cornwall রোডে শুক্রবার দুপুর দুটোর দিকে মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে একটি ইমারজেন্সি কল আসে। ঘটনাস্থলে আসার পর পুলিশ দুই এবং পাঁচ বছর বয়সী দুটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। শিশু দুটি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাছে প্রতীয়মান হয়। কিছুক্ষণ পর এলাকা থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে একজন পুরুষ এবং মহিলাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ এবং মিডিয়ার পক্ষ থেকে এই দুই সন্দেহজনক আসামির নাম, ঠিকানা  অন্য কোনো পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। করার কথাও নয়। তাদের পরিচয় পাওয়ার জন্য আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হলো।

২. সন্দেহভাজন এ দুই ব্যক্তিকে পুলিশ কাস্টডিতে তাদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে জেরা করা হয়। বিভিন্ন তথ্য/উপাত্ত/প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত মহিলার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন
গ্রেফতারকৃত পুরুষকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ৪৪ বছর বয়সী Kara Alexander এর ছবি ও নাম প্রকাশ করা হয় ২০ ডিসেম্বর। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। ইংল্যান্ডের Crown Prosecution Service (CPS) এর পক্ষ থেকে এ মহিলার বিরুদ্ধে চার্জ অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ এবং মিডিয়া তার নাম, বয়স বা ছবি প্রকাশ করেনি। প্রকাশ করার আইন না থাকায় তা পুলিশ বা মিডিয়ার পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। খেয়াল করে দেখুন, এ মহিলা আসামির সাথে গ্রেফতারকৃত পুরুষের কোনো পরিচয় পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। কারণ, তার বিরুদ্ধে CPS charge অনুমোদন করেনি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে- এই ঘটনার সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

বাংলাদেশের ফারদিন (আত্ম)হত্যা 

৩. বুয়েট ছাত্র ফারদিন নিখোঁজ হয় ৪ নভেম্বর। নারায়ণগঞ্জের একটি নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার হয় ৭ নভেম্বর। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, 'ফারদিনের মাথায় ও বুকে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে' ( আজকালেরখবর.নেট)।

৪. ব্যাপক 'তদন্ত' শেষে  ডিবি পুলিশ এবং RAB বলছে, ফারদিন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের কথা সত্য হলে সর্বপ্রথম কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যে ব্যক্তির নাম সবার আগে চলে আসবে তিনি হচ্ছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ হোসেন। কারণ তার বক্তব্য পুলিশ এবং RAB এর বক্তব্যের সাথে মিলছে না। একসঙ্গে দুই পক্ষ ঠিক হতে পারেন না। কেউ একজন ভুল করছেন। আসলে কে ভুল করছেন? এই জটিল হিসাবে আমি যাচ্ছি না। এই হিসেব করতে গেলে এ লেখাটাই হয়তো আলোর মুখ দেখবে না।

তদন্তের নতুন অধ্যায় 

৫. তবে পুলিশের এই বক্তব্যকে ফারদিনের বাবা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুয়েট ছাত্ররা ফারদিনের মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। সেই কর্মসূচির মাঝেই ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে ডিবি অফিসে ডাকা হয়। সেখানে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। তথ্য প্রমাণ দেখে আন্দোলনরত ছাত্ররা পুলিশের সাথে একমত হয় যে, ফারদিন 'আত্মহত্যা' করেছে। নিহত ছাত্রের বাবা অবশ্য পুলিশের বক্তব্যের সাথে একমত নন।

৬. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ, হত্যা বা আত্মহত্যার  শিকার হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অস্থিরতা এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে আবরারের মতো ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটার পর থেকে এই ভয় অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাদের অনুভূতির সাথে আমি একমত। তবে ফারদিন হত্যায় যে মামলা হয়েছে সেই মামলায় বুয়েটের কোনো ছাত্র-ছাত্রী বাদী নন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আইনের কোন ধারায় ডিবি পুলিশ বুয়েটের একদল ছাত্রছাত্রীদের সাথে ডিবি অফিসে মামলার অতি গোপনীয় বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে বৈঠক করতে পারেন। 

৭. অনেকেই যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন এই বলে যে, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ড/আত্মহত্যা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। তাই পুলিশ কর্তৃপক্ষ বুয়েটের একদল ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে মিটিং করেছেন। তাতে তো দোষের কিছু নেই।

৮. গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যা, আত্মহত্যা, নিখোঁজ বা গুমের  শিকার হয়েছেন এমন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কয়েকশ হবে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কি হারিয়ে যাওয়া  বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব  ছাত্র-ছাত্রীদের সহপাঠীদের বা শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করে তদন্তের আপডেট দিয়েছেন বা দেবেন? কেন দেবেন না? আইনের দৃষ্টিতে বুয়েটের হতভাগা ছাত্র ফারদিন আর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩ সালে হারিয়ে যাওয়া দুই ছাত্র অলিউল্লাহ এবং আল মুকাদ্দাসের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকার কথা নয়। অলিউল্লাহ এবং আল মুকাদ্দাসের সন্ধান চেয়ে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করেছে। আইন সবার জন্য সমান হলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কি পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো বৈঠক করবেন বা করেছেন?

ফারদিনের মৃত্যুতে খুন হলো ক'জন?

৯. শারীরিকভাবে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের। বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে মাদক বস্তি হিসেবে পরিচিত চনপাড়া বস্তির শাহীন র‍্যাবের সাথে গোলাগুলিতে ১০ নভেম্বর মারা যান। ক্রসফায়ারের এই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি। তদন্ত হলেও তা মিডিয়ায় আসেনি। কিন্তু সে যে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে তা পত্র-পত্রিকায় এসেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ফারদিনের মৃত্যুর সাথে এ হতভাগা শাহীনের কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক না থাকলেও পরিস্থিতির কারণে সে মারা পড়েছে।

১০. সামাজিক/পারিবারিক/ আত্মিক মৃত্যু হলো কত জনের? প্রথম মৃত্যুটি হয়েছে ফারদিনের মা-বাবা এবং পরিবারের। পুলিশের পক্ষ থেকে  বিভিন্ন তথ্য এবং আপডেট যেভাবে মিডিয়ায় সরবরাহ করা হয়েছে তাতে প্রথমেই মেয়েঘটিত ব্যাপারে সন্দেহ করা হয়েছে। পরের দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি মাদক সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত চনপাড়া বস্তিতে  মধ্যরাতে ফারদিন ঘোরাঘুরি করছে। এই দুই বর্ণনার কোনটাই ফারদিনের মা বাবা বা আত্মীয়-স্বজনের জন্য স্বস্তিকর নয়। ছেলেটাকে একটি মেয়ে বন্ধু নিয়ে ঘোরাঘুরি করা একটি চরিত্রহীন মাদক সেবী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এখন অবশ্য বলা হচ্ছে সে বিষন্নতা থেকে আত্মহত্যা করেছে। এই বিষন্নতার ডায়াগনোসিস অবশ্য কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে আসেনি।

১১. তদন্তের খুব প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার করে। শুধু গ্রেফতার করে পুলিশ থেমে থাকেনি। বুশরার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক বিস্তারিত পরিচয় পুলিশ এবং মিডিয়া প্রকাশ করেছে। ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি বুশরা কোন  বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ক্লাসে কী পড়াশোনা করছে সেই তথ্য দেয়া হয়েছে। এই ছবি এবং তথ্যগুলোকে পুলিশ প্রকাশ করেছে না  পুলিশের অনুমতি ছাড়া মিডিয়া প্রকাশ করেছে? বুশরার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করার জন্য পুলিশ রিমান্ডের আয়োজন আবেদন করলে আদালত তাকে  পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়ে দেন। রিমান্ডে তার সাথে কী ব্যবহার করা হয়েছে তা জানা দরকার। তার বিরুদ্ধে তো এখন চার্জশিট হবার সম্ভাবনা নেই। একজন সন্দেহভাজন আসামির পরিচয় প্রকাশ করে গুরুতর অপরাধ করেছে কে? এর বিচার করবে কে? মেয়েটিকে যেদিন গ্রেফতার করা হয়, সেদিনকার পত্রপত্রিকার কমেন্ট বক্সে সাধারণ মানুষের যে কমেন্ট এসেছে তা সবটুকুই তার বিরুদ্ধে চলে গেছে। মেয়েটির চরিত্র নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করা লোকের সংখ্যা প্রচুর। ধরে নিতে পারি যে, বুশরার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিচয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর জন্য কেউই দায়ী নন? এই খুনগুলো করল কারা?

 

ছেলেটি মরে গিয়েও বাঁচতে পারেনি 

১২.  ফারদিন কি আত্মহত্যা করেছে না তাকে মেরে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে অপারগ। কিন্তু মৃত্যুর পরেও যে তাকে কয়েকবার হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। মৃত্যুর আগের কয়েক ঘন্টায় ফারদিনের মোবাইল ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে এক সময় বস্তিতে চলে যায়। সে বস্তি আবার মাদকের জন্য বিখ্যাত। প্রেম প্রীতির কাহিনী ধরে খুন হয়েছে এমন গল্পের  সমাপ্তি হবার আগে ফারদিন হয়ে ওঠে একজন মাদক সেবী। মাদক সেবী না হলে রাত ১ টার সময় মাদক বস্তিতে তার মোবাইল যাবে কেন?  হতভাগা ফারদিনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার কাজী নুর উদ্দিন কি বুঝতে পারছেন তার ছেলে মোট কতবার খুন হয়েছে?

 ১৩. তথ্য,প্রমাণ, যুক্তি, পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করা হবে আদালতে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তখন সিদ্ধান্ত নেবেন আসলেই ফারদিন হত্যা না আত্মহত্যার স্বীকার হয়েছে। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আদালতের আগেই রায় দেওয়া হয়ে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে?

১৪. হত্যা না আত্মহত্যা? জটিল প্রশ্ন। ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের বক্তব্য পুলিশের বক্তব্যের সাথে মিলছে না। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে আদালতে হাজির করা হোক। ফরেনসিক স্পেশালিস্টদের ডাকা হোক। পুলিশের তদন্তের উপর শুনানি হোক। তারপর নির্ধারিত হোক ফারদিন আত্মহত্যা করেছে না তাকে হত্যা করা হয়েছে।

১৫. আদালতের বিচারকের কাছ থেকে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত ফারদিনের চরিত্রকে একটু বিশ্রাম দিন। সন্তানহারা মা-বাবার আকুতিকে একটু শোনার চেষ্টা করুন। মাদক পল্লীতে নিহত শাহীনের পরিবারের একটু খবর নিন। বুশরাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। সন্দেহভাজন আসামির চার্জশিট না দেয়া পর্যন্ত পরিচয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। আর হ্যাঁ, বুয়েট ছাত্র ফারদিনের হত্যা/আত্মহত্যা নিয়ে ডিবি পুলিশ ও RAB যে তৎপরতা চালিয়েছেন, সেই একই তৎপরতা যেন অবশিষ্ট নিখোঁজ, হত্যা বা আত্মহত্যার ঘটনায়  কার্যকর থাকে। কারণ, আইনের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান। রাষ্ট্রের কাছে সকলেরই নিরাপত্তা চাওয়ার এবং পাওয়ার অধিকার রয়েছে।


ডা: আলী জাহান

কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য

সাবেক পুলিশ সার্জন/ Forensic Medical Examiner, যুক্তরাজ্য পুলিশ।

[email protected]

 

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবদলই সরকার সমর্থিত / ভোটের মাঠে নেই সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধীদল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status