ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি সিপিডি’র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৩ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারের যে লক্ষ্যমাত্রা তা রাজনৈতিক ও উচ্চাভিলাষী। একইসঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য যে মহাপরিকল্পনা আসতে যাচ্ছে সেটিও বাস্তবসম্মত নয়। এ ছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর বিপক্ষে সিপিডি।
গতকাল ধানমণ্ডিতে সিপিডি’র কার্যালয়ে ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি): পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি এ দাবি জানায়। এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও অন্য গবেষকরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইইপিএমপি কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেয় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উপেক্ষা করে। এটি জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) পরিকল্পনায় কার্বন নির্গমন কমাতে সরকারের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন-২০১০ (বিশেষ বিধান) দ্রুত বৃদ্ধি বাতিল করার সুপারিশ করে সিপিডি বলেছে, সরকারের উচিত ব্যয়বহুল ভাড়া এবং দ্রুত ভাড়া প্রকল্পগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা। এমনকি ব্যয়বহুল ভাড়া ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ চুক্তিতে যেতে হবে। এতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারি ব্যয়ের বোঝা কমবে এবং ভর্তুকির চাপ কমবে।

বিজ্ঞাপন
২০২৫ সালের মধ্যে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। পাশাপাশি, ডিজেল থেকে প্রতি লিটারে ২৯ টাকা মুনাফা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলে উল্লেখ করেছে সিপিডি। তা সত্ত্বেও বিপিসি সম্প্রতি ১৯,০০০ টাকা ভর্তুকি চাইছে, যা সিপিডি সন্দেহজনক বলে মনে করেছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দাবি করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫৩ হাজার টাকা ভর্তুকি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কেন খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় তা আমরা বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে ভর্তুকির জন্য মোট প্রস্তাবিত অর্থের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) জন্য ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পেট্রোলিয়াম আমদানির জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য ১৯ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা এবং এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত নই, বরং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমাতে সরকারের উচিত ব্যয়বহুল ভাড়া ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

প্রতিবেদনে সিপিডি জানায়, খসড়ায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই। বরং উচ্চমূল্যের বিদ্যুতের ব্যয়ের চাপ বাড়বে ভোক্তার ওপরে। এ ছাড়া তিনি বলেন, খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব উপেক্ষিত হয়নি, তবে অবহেলিত হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির জন্য অন্যান্য নতুন প্রযুক্তি নিউক্লিয়ার, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেনের ওপর নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে যে গুরুত্ব দরকার সেটা চোখে পড়েনি মহাপরিকল্পনায়। এই মহাপরিকল্পনা এখন পর্যন্ত যে আকারে আছে তাতে এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল সরকারের। সেখানে এখন পর্যন্ত অর্জন ৪ শতাংশের নিচে। এমন বাস্তবতায় আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার লক্ষ্য রেখে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যকে বাস্তবসম্মত মনে করছে না বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি।

সুশাসনের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও গ্রিডে দিতে পারছি না জানিয়ে সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মানুষের কাছে সুলভমূল্যে পৌঁছে দিতে পারছি না। অন্যদিকে ক্রমান্বয়ে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছি। যাদের ভর্তুকির দরকার নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমন একটা ক্রিটিক্যাল সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, যখন মূল্য যৌক্তিকীকরণের কথা বলি, তখন সেটা সাধারণ মানুষের ওপর এসে পৌঁছায়। যেখানে সুশাসন দিয়ে বড় রকমের সাশ্রয় করতে পারি, আধুনিক টেকসই জ্বালানি খাত তৈরি করতে পারি, সেটার দিকে নজর দেয়া উচিত।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, লক্ষ্যমাত্রাটা একটা স্লোগানের মতো। কপ-২৬ এর আগে বিভিন্ন দেশ ঘোষণা করেছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা, সেই তালেই কি আমরা বলেছি, নাকি বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলেছি? আমাদের এখন পর্যন্ত যে অর্জন, ২০৪০ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রায় আমরা যেতে পারবো কি? তবে একটি কথা আছে এখানে, প্রযুক্তি ও অর্থায়নের প্রয়োজন আছে। সেটা থাকলে আমরা ত্বরান্বিত করতে পারবো। আগে যে হারে যাচ্ছি সে হারে না, এটাকে আরও উল্লম্ফন দিয়ে যেতে হবে। এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেয়ার প্রয়োজন পড়বে। তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছি। সেখানে যে ধরনের প্রযুক্তির কথা বলা হচ্ছে, অনেক দেশ এগুলো বাদ দিয়ে যাচ্ছে। কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ, অনেকে এটা এখন আর ব্যবহার করছে না। এটা বর্জন করছে। এটা ব্যবহারে প্রচুর অর্থের ও জায়গার প্রয়োজন পড়ে। সেখানে যে বিনিয়োগ হয় সেটা কস্ট ইফেকটিভ হয় না। আমরা যেটা উৎপাদন করবো সেটা কস্ট ইফেকটিভ না হলে আমরা সেটা করবো না। যেটা বর্জন হয়ে আছে উন্নত দেশে, সেগুলো আমরা করবো না।
আইইপিএমপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এমন একটা খাত, এখানে অনেকেরই স্বার্থ রয়েছে। এই স্বার্থ দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরেও। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত উপাদান, বাইরের স্বার্থকে পেছনে ফেলের দেশের স্বার্থটা কী হবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। আইইপিএমপি প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ নেয়া হলেও তা কতোটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক/ হামাস-ইসরাইল তীব্র লড়াই

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক/ যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নেয়ার পরামর্শ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status