শেষের পাতা
ধর্ষণের পর শিশু জুঁই’র মুখ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়
অমর ডি কস্তা, বড়াইগ্রাম (নাটোর) থেকে
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
নাটোরের বড়াইগ্রামে ৭ বছরের শিশুকন্যা জুঁইকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা ও মুখমণ্ডল এসিড দিয়ে পুড়িয়ে বীভৎস করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার নিখোঁজের পর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে মাত্র ৩০০ গজ অদূরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পেছনের কারণ খুঁজতে পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিক মহল ও স্থানীয়রা বেশ তৎপর রয়েছে।
এদিকে, ঘটনার তিনদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। এতে ধর্ষণ বা হত্যার রহস্য এখন পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সরজমিন ওই এলাকায় খোঁজ নেয়া হয়। অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে জানান, সোমবার বেলা ৩টার দিকে জুঁইর বৃদ্ধ দাদা সাইদুল ইসলাম ও দাদি জহুরা খাতুন তাদের মেয়ের (জুঁইর ফুফু) বাড়িতে বেড়াতে যায়। জুঁইয়েরা ৩ বোনের মধ্যে ১২ বছর বয়সী বড়বোন অন্যত্র আবাসিক মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। ওইদিন সে মাদ্রাসাতেই ছিল। ছোট ভাইয়ের বয়স প্রায় ৪ বছর। জুঁইয়ের বাবা জাহিরুল ইসলাম মালয়েশিয়া প্রবাসী। বাড়িতে কেউ না থাকার পরও জুঁই কেন দাদির বাড়ির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো, তা স্পষ্ট নয়। এমন তথ্যটি রহস্যজনক।
পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে মাত্র ৩০০ গজ অদূরে ভুট্টা ক্ষেতে লাশ টান টান করে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। পরনের প্যান্ট ছিল গলায় প্যাঁচানো। ভুট্টা ক্ষেতের চিত্র দেখে কোনোভাবেই বলা যাবে না সেখানে তাকে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, তাকে বিকালে নয়, রাতেই অন্য কোথাও ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এরপর লাশ যাতে চেনা না যায় এজন্য মুখমণ্ডলে এসিড ঢেলে দেয়া হয়েছে। পরে দুর্বৃত্তরা লাশটি ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে রেখে গেছে।
ইউপি সদস্য ফজিলা খাতুন বলেন, যারা জুঁইকে ধর্ষণ বা হত্যা করেছে তাদের তো কোনো প্রয়োজন ছিল না মুখমণ্ডল এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার। মূলত: জুুঁইকে যেন কেউ চিনতে না পারে তার জন্য ঘাতকরা চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা পেরে ওঠেনি। মুখমণ্ডল এসিড দিয়ে ঝলসানোর কারণ সবার আগে খুঁজে বের করতে পারলে প্রকৃত দোষী ধরা পড়বে। কম্বাইন্ড হিউম্যান রাইটস নাটোর জেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ওসমান গণি সোহাগ বলেন, জুঁইর বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায়। বাড়ির অদূরে লাশ পাওয়া গেলেও স্থানটি পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা সীমানায়। প্রথম থেকেই ২ থানার মধ্যে মামলা গ্রহণ নিয়ে বেশ রেষারেষি হয়। পরবর্তীতে চাটমোহর থানায় মামলা রেকর্ড হয়। থানা ভিন্ন হওয়ায় এ মামলার অগ্রগতি আদৌ কতটুকু এগুবে- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে শিশুকন্যা জুঁইকে ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী জেলা জুড়ে প্রতিবাদ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্লাস বাদ দিয়ে সড়ক ও মাঠে অবস্থান করে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি করে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া লন্ডন থেকে এ ঘটনার খোঁজ নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জুঁইর পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। বুধবার বিকালে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দসহ উপজেলার নেতাকর্মীরা জুঁইর নিজ গ্রামে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং স্থানীয়দের নিয়ে বিশাল মানববন্ধন করে এই নৃশংস ঘটনার দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে ৭ বছর বয়সী জুঁই এর মুখাবয়ব এসিডে ঝলসানো ও বিবস্ত্র মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন সোমবার বিকাল থেকে সে নিখোঁজ হয়। জুঁই ওই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জাহিরুল ইসলামের মেয়ে ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ১ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান, চাটমোহর থানাতে খবর নিয়েছি। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা আটক করা যায়নি। তবে দুই থানা পুলিশ দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।
পাঠকের মতামত
নওগা-নাটোর যেন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। দুই থানায় রশি টানাটানির চেয়ে সিআইডি এর নিকট মামলাটি দ্রুত হস্তান্তর করা উচিত।