শেষের পাতা
নিবন্ধনের সময় বাড়াতে ইসিতে আবেদন এনসিপি’র
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবারনতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা কমপক্ষে ৯০ দিন (তিন মাস) বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল দুপুরে ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিবকে দেয়া এক লিখিত আবেদনে এই অনুরোধ জানিয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন দল এনসিপি। ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন শিরোনামে এই আবেদন করেছে দলটি। আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন-সংক্রান্ত বর্তমান প্রচলিত আইনের মধ্য থেকেই বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ভোটবিহীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, জাল ভোট, রাতের ভোটসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছে। একইভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কমিশন সারা দেশে দলীয় প্রতীকে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও আয়োজন করেছিল। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যেই ইসি’র মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এনসিপি বলেছে, ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিলেও এখন পর্যন্ত মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান ইসি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ই মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগেই ত্বরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।
২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তগুলোকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়ে এনসিপি’র আবেদনে বলা হয়েছে, আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি এই বিধিগুলো রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রণীত। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেই জেলা পর্যায়ে ১০ শতাংশ ও উপজেলা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কার্যালয় স্থাপনের শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি প্রতি পাঁচ বছরে নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন নবায়নের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাছাড়া ইসির বর্তমান কাঠামো ও ব্যক্তিদের নিয়োগ ২০২২ সালের বিতর্কিত আইন অনুসারে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধন করে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। এছাড়া মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক। এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন কমিশন-সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা অন্যূন ৯০ দিনের বাড়ানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
একই দাবি আ-আম জনতার: এদিকে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরপরই দল নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি-বিএজেপি। গতকাল দুপুরের দিকে ইসি সচিব বরাবর দেয়া এক চিঠিতে এ দাবি জানান দলের সদস্য সচিব ফাতিমা তাসনিম। আবেদনে বলা হয়েছে, আত্মপ্রকাশের পর বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সকল কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রেখেছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বাংলাদেশের মানুষের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ ও তৎপরবর্তী লম্বা সরকারি ছুটির আমেজে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষ এবং বিএজেপি’র নেতাকর্মীবৃন্দ প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে নিবন্ধনের আবেদনের জন্য তিন মাস সময় চেয়েছে বিএজেপি। এদিকে গতকালই ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি। রফিকুল অর্থ পাচার ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন নিয়ে দুদকের দুই মামলায় দীর্ঘ সময় কারাভোগ করে গত ১৫ই জানুয়ারি কারামুক্ত হন।