ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

উল্টো রথ এবং...

তারিক চয়ন
১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
mzamin

বর্তমানে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের ১৫ পদের ১৪টিতেই দায়িত্ব পালন করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীপন্থি নীল দলের শিক্ষকরা। পূর্ব নির্ধারিত কোনো ধরনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া নজিরবিহীনভাবে একজন বিদেশি কূটনীতিক অন্যকোনো অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠার সময় তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি দেয়ার  চেষ্টা, ইসলামপন্থি দলগুলোর দূতাবাস  ঘেরাওয়ের চেষ্টা  থেকেও আগ্রাসী ধরনের কিনা সে প্রসঙ্গে কিন্তু তারা কিছু বলেন নি! ‘রাজনৈতিক বিষয়ে কূটনীতিকদের বক্তব্য দৃষ্টিকটু ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন’ বললেও রাষ্ট্রদূতকে এভাবে ঘিরে ধরা কোন্ ধরনের শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে তা নিয়েও কিছু বলেন নি! পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দূতাবাস  ঘেরাও আর রাস্তায়  পেয়ে রাষ্ট্রদূতকে  ঘেরাওয়ের মধ্যে  কোনো তফাৎ রয়েছে কিনা সে প্রশ্নের উত্তরও বাতলে দেন নি! তাদের বিবৃতি পড়ে মনে হচ্ছে, রাষ্ট্রদূত কর্তৃক মায়ের কান্নার কথা না  শোনার নিন্দা জানানোর চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে কথা বলতে সাবধান করে দেয়াই ওই বিবৃতির উদ্দেশ্য।


২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বিতর্কিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’-এর  ট্রেইলার প্রকাশিত হয়েছিল। নিজেকে স্যাম বাসিল নামে পরিচয় প্রদানকারী চলচ্চিত্রটির পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নানা কথা বলেন। হলিউডের একটি থিয়েটারে প্রথম চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। চলচ্চিত্রটির আরবি ভাষায় ডাবিং করা সংস্করণ মুক্তি  পেলে এবং মিশরের একটি টেলিভিশনে  সেটির ভিডিও ফুটেজ প্রচারিত হলে ওই  দেশজুড়ে মুসলমানরা বিক্ষোভ শুরু করেন। স্ফূলিঙ্গের মতো সে বিক্ষোভ আরব  দেশগুলোর পাশাপাশি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্যান্য দেশে এবং পশ্চিমা দুনিয়ার মুসলিম কমিউনিটিগুলোর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে সংঘর্ষে বহু মুসলিম হতাহত হন। বিভিন্ন  দেশের মার্কিন দূতাবাস বা কনস্যুলেটে হামলা বা হামলার চেষ্টা করা হয়। লিবিয়ার  বেনগাজী শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে হামলায় দেশটির রাষ্ট্রদূত জন ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা নিহত হন।

ওইরকম প্রতিবাদ হওয়াটা অবশ্য খুব অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ, চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন
প্রথমে অনেকে সেকথা স্বীকার না করলেও ধীরে ধীরে সবাই সেটি স্বীকার করে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন হিলারি ক্লিনটন। চলচ্চিত্রটি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও  দেশটির সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষিত থাকায় চলচ্চিত্রের নির্মাতা বা কলাকুশলীদের বিরুদ্ধে  কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। দেশটির বিচার বিভাগও জানিয়ে দেয়, এ বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা  নেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু, মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়, এ ধরনের কাজকে  কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।

বাংলাদেশেও প্রতিবাদের মুখে চলচ্চিত্রটি ইসলাম ধর্ম ও নবী মুহাম্মদ (সাঃ)কে কলঙ্কিত করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছিল, ‘বাংলাদেশ খুবই উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নাম করে কোনো কোনো মহল এই ভিডিওচিত্রটির পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করছে। ঘৃণা বাড়ানোর প্ররোচনা দেয়া কখনোই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হতে পারে না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতির প্রতি এভাবে অসম্মান করা  কোনোভাবেই সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না এবং এ ধরনের কাজকে অবশ্যই ক্ষমা করা যায় না।’

ওই বছরের (২০১২) ১৩ই সেপ্টেম্বর  খেলাফত আন্দোলনের হাজার হাজার  নেতাকর্মী ঢাকার রাস্তায় নেমে এসে মিছিল শুরু করে। তারা মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে রওয়ানা দিলে এক পর্যায়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছিল, ‘প্রায় ১,০০০ বাংলাদেশি ইসলামপন্থি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের দিকে মিছিল করার  চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের মিশনে  পৌঁছাতে বাধা দেয়। দূতাবাসের চারপাশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

বিবিসি’র খবরে বলা হয়, ‘ইসলামী আন্দোলন মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করার লক্ষ্যে মিছিল বের করেছিল। তবে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে কিছুটা দূরত্বে শান্তিনগর  মোড়ের কাছে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের কাঁটাতারের প্রতিবন্ধকতার মুখে দলটির নেতা সৈয়দ ফজলুল করিম বক্তব্য দিয়ে তাদের কর্মসূচি  শেষ করেন। বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের এসব বিক্ষোভের সময় ঢাকায় সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলোতে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছিল।’

মুসলমানদের কাছে তাদের প্রিয় নবীর মর্যাদা ও সম্মান যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা  বোঝা যায় পশ্চিমাদেরই বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট থেকে, ‘মুসলমানদের কাছে নবীর যেকোনো চিত্রাঙ্কনই নিন্দাজনক। অতীতেও নবীকে নিয়ে করা ব্যঙ্গচিত্র বা অন্যান্য কিছু মুসলিম বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদকে উস্কে দিয়েছিল। ইউটিউবে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ সহ  বেশ কয়েকটি শিরোনামে মুভিটির ক্লিপ পোস্ট করা হয়েছে যেগুলোতে নবীকে অশোভন এবং আপত্তিকর আচরণে লিপ্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে।’

উপরোক্ত ঘটনাপ্রবাহ  থেকে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, সারা দুনিয়ায় সর্বকালে মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি নবী  মোহাম্মদ (সাঃ)কে অবমাননা করায় মুসলিমরা ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে  যেতে চাইলেও নিরাপত্তা বাহিনী তথা পুলিশ তাদের শুরুতেই থামিয়ে দিয়েছিল।  যেমন: ইসলামী আন্দোলন মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করার লক্ষ্যে বায়তুল  মোকাররম মসজিদ  থেকে মিছিল বের করলে একটু সামনে  গেলেই (শান্তিনগর  মোড়ের কাছে) পুলিশ বাধা দেয়।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিক্ষুব্ধ মানুষ বিক্ষোভ করবেন এটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিদেশি দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রদান করবে এটাও স্বাভাবিক। ২০১৭ সালের ১৩ই ডিসেম্বর ফের যেমনটি ঘটেছিল৷ সেসময়  জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী  ঘোষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির প্রতিবাদে ওইদিন পূর্বঘোষিত (৮ই ডিসেম্বর) কর্মসূচি অনুযায়ী হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের উত্তর  গেইটে জমায়েত হতে থাকেন। বাংলানিউজের খবরে বলা হয়েছিল, ‘পরে  সেখান থেকে বেলা ১২টায় দূতাবাস  ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে রওনা দেন তারা। পুলিশের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মিছিলসহ দলের  নেতাকর্মীরা পল্টন  মোড়, কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর এলাকায় এলে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এরপর পুলিশের সহায়তায়  হেফাজতের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি দেয়ার জন্য মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।’

উল্লেখ্য, (৮ই ডিসেম্বরের) পূর্ব  ঘোষণা অনুযায়ী মিছিল নিয়ে পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়,  মৌচাক, রামপুরা হয়ে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে পায়ে হেঁটে যাত্রার পরিকল্পনা ছিল  হেফাজতের। ঘেরাও  শেষে দূতাবাসে  হেফাজতের পক্ষ  থেকে স্মারকলিপি  দেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু, (১৩ই ডিসেম্বর) দূতাবাস অভিমুখী বিক্ষুব্ধ জনতাকে পুলিশ বহু আগেই আটকে দিয়ে তাদের প্রতিনিধিদলকে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য দূতাবাসে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে উভয়কূল রক্ষা করে ঘটনার সুন্দর নিষ্পত্তি করেছিল।

পরের ঘটনাটি মাত্র মাস ছয়েক আগের। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র দুই  নেতা নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দাল অবমাননাকর মন্তব্য করলে সারা দুনিয়ায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বাংলাদেশেও তাই। প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের (১০ই জুন) কর্মসূচি  দেয়। কয়েকদিন পর প্রথম আলো’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কর্মসূচি পালনের জন্য গত ১৬ জুন দুপুরে রাজধানীর বায়তুল  মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সামনে জড়ো হন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। সেখান  থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মিছিলটি শান্তিনগর মোড়ে এলে পুলিশ বাধা দিয়ে থামিয়ে দেয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা সেখানেই বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি শেষ করেন। মিছিল শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।’

লক্ষণীয় যে এক্ষেত্রেও ১৩ই ডিসেম্বরের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস অভিমুখী বিক্ষুব্ধ জনতার মতোই পুলিশ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের ভারতীয় দূতাবাসে যাওয়ার বহু আগেই আটকে দিয়ে তাদের প্রতিনিধিদলকে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য দূতাবাসে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে উভয়কূল রক্ষা করে ঘটনার সুন্দর নিষ্পত্তি করেছিল। কিন্তু, বিপত্তি বেঁধেছে গত বুধবারের ঘটনায়। ওইদিন সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে একযুগ ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কদের ঢাকার বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ওই সময় তার সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশ বিভাগের দায়িত্বশীল লিকা জনস্টনও উপস্থিত ছিলেন। সে সময় ‘মায়ের কান্না’ নামক সংগঠনের তরফে পূর্ব নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলা এবং স্মারকলিপি  দেয়ার চেষ্টা হয়। এতে নিরাপত্তা উদ্বেগ  তৈরি হলে রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে দূতাবাসের প্রটোকল টিম দ্রুত এবং নিরাপদে স্থান ত্যাগ করে। বলাবাহুল্য, নিরাপত্তা উদ্বেগ এতটাই ছিল  যে, পিটার হাস সেখান  থেকে সোজা গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।  সেদিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের জিজ্ঞাসার জবাবে রাষ্ট্রদূতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি ওখানে গেছেন এই খবর কে প্রচার করলো? আমরা তো জানি না। আমি বা আমার মন্ত্রণালয়ের  কেউই জানেন না। আপনারা জানাননি। মন্ত্রী বলেন, আপনি ওখানে যাবেন এই তথ্য লিক করলো কে? উনি উত্তর দিতে পারেননি। মোমেন বলেন, আমরা এটা বলেছি যে, আপনার নিরাপত্তা আমরা দেবো আর আপনি বের হয়ে ওখানে যাচ্ছেন এটা  কেমন করে লোকের কাছে প্রচার হলো? মন্ত্রী বলেন, আমি তাকে বলেছি- আপনার লোকই এটা লিক করতে পারে।’

মন্ত্রী মোমেন এমন কথা বললেও, গুমের শিকার সুমনের বোন এবং ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত আসবেন জেনে  তেজগাঁও থানার ওসির  নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দু’দিন আমাদের বাসায় আসেন। রাষ্ট্রদূত বাসায় প্রবেশের প্রায় ৪০ মিনিট আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও মায়ের কান্না সংগঠনের  লোকজন রাস্তার ওপরে অবস্থান নেন। বাসা থেকে বেরিয়ে যখন পিটার হাস গাড়িতে উঠছিলেন, তখন তারা কথা বলার  চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয়। পরে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা থানা-পুলিশের সদস্যদের সহায়তায় তিনি গাড়িতে উঠে চলে যান।’
ওদিকে, সুমনের বাসায় যাওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গত ১৪ই ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস যেভাবে মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থসিদ্ধির সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা উদ্বেগজনক।’ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে কয়েকটি  দেশের কূটনীতিকগণ  যেভাবে বক্তব্য রাখছেন ও অংশগ্রহণ করছেন তা দৃষ্টিকটু ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের ১৫ পদের ১৪টিতেই দায়িত্ব পালন করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীপন্থি নীল দলের শিক্ষকরা। পূর্ব নির্ধারিত কোনো ধরনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া নজিরবিহীনভাবে একজন বিদেশি কূটনীতিক অন্যকোনো অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠার সময় তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি দেয়ার  চেষ্টা, ইসলামপন্থি দলগুলোর দূতাবাস  ঘেরাওয়ের চেষ্টা  থেকেও আগ্রাসী ধরনের কিনা সে প্রসঙ্গে কিন্তু তারা কিছু বলেন নি! ‘রাজনৈতিক বিষয়ে কূটনীতিকদের বক্তব্য দৃষ্টিকটু ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন’ বললেও রাষ্ট্রদূতকে এভাবে ঘিরে ধরা কোন্ ধরনের শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে তা নিয়েও কিছু বলেন নি! পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দূতাবাস  ঘেরাও আর রাস্তায়  পেয়ে রাষ্ট্রদূতকে  ঘেরাওয়ের মধ্যে  কোনো তফাৎ রয়েছে কিনা সে প্রশ্নের উত্তরও বাতলে দেন নি! তাদের বিবৃতি পড়ে মনে হচ্ছে, রাষ্ট্রদূত কর্তৃক মায়ের কান্নার কথা না  শোনার নিন্দা জানানোর চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে কথা বলতে সাবধান করে দেয়াই ওই বিবৃতির উদ্দেশ্য।  ‘দেশের ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক’ যেমন আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘তার (পিটার হাস) এ ধরনের আচরণ কূটনৈতিক দায়িত্বের পর্যায়ে ফেলা যায় কিনা, নাকি এর মধ্যদিয়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়লেন এবং বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষভুক্ত হলেন কিনা- এ নিয়ে দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন  দেখা দিয়েছে।’

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status