ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

শেষ হাসি যেই হাসুক জয় ফুটবলেরই

তালহা বিন নজরুল
১৮ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার
mzamin

দীর্ঘ উড্ডয়নের পর এবার যেন সফল অবতরণের পালা। সিট বেল্ট বেঁধে যেন প্রস্তুত সবাই। বাকি আর মাত্র ক’টি ঘণ্টা। তারপরেই সাঙ্গ হবে মরুর বুকের এক বিশাল কর্মযজ্ঞের। ’দ্য অ্যান্ড’ লেখা ভেসে উঠবে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের। প্রায় এক মাসব্যাপী ফুটবল বিশ্বকাপ এখন অন্তিমলগ্নে। ৬৪ খেলার মধ্যে ৬৩টিই শেষ। এখন চূড়ান্ত লড়াইয়ের অপেক্ষা। আজই রাতে ৯টায় মাঠে গড়াবে শেষ্ঠত্বের লড়াই। শেষ হবে বড়াইয়ের।

বিজ্ঞাপন
জয়ের মালা যাদের গলায় উঠবে আগামী চার বছর তারাই হবে বিশ্বফুটবলের মুকুটবিহীন সম্রাট। আনন্দ-বেদনা আর হাসি-কান্নায় ভরপুর একটি আসর বিশ্বের সব দেশের ফুটবলপ্রেমী উপভোগ করেছে মন ভরেই। মাঠে ছিল ৩২ দল। আর দর্শক আসনে ছিলেন বিশ্বের সব দেশের মানুষ-কী স্বাধীন, আর কী পরাধীন, কেউ বাদ যায়নি। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে টেলিভিশন দর্শকসংখ্যা যে সবচেয়ে বেশি হবে তা সহজেই অনুমেয় ছিল। হয়েছেও তাই। টেলিভিশনের চেয়ে বোধ হয় মুঠোফোনের দর্শক ছিল আরো বেশি। হাটে-ঘাটে-মাঠে হোক আর বাসে-লঞ্চে, জলে কিংবা স্থলে চাইলেই দেখা গেছে বিশ্বকাপের প্রাণবন্ত খেলা। নানা ফোনে নানা অ্যাপস ঘিরে ছিল আকর্ষক সব অফার। কেবল তরুণ নয়, ফুটবলপ্রেমী অনেক বয়সী লোককেও দেখা গেছে বাসে-ট্রেনে বা লঞ্চ-ট্রলারে বসেও ফুটবল খেলা উপভোগ করতে।

  ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ কথাটি ধরে যদি বসে থাকতেন তবে কি আর্জেন্টিনাকে আজ ফাইনালে দেখা যেত? মোটেও না। প্রথম খেলায় সৌদি আরবের কাছে হারের পর কী খোঁচাই না সইতে হয়েছে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। কিন্তু খেলোয়াড়দের কি ওসব গায়ে মাখলে চলে। তারা পেশাদার। হার জিত থাকবেই। নিজের সেরাটা খেলে যেতে পারলে জয় আসবেই। আসল কথা তো শেষ ভালো যার শেষ ভালো তার। সেই মন্ত্রেই যেন দীক্ষিত হয়ে ল্যাটিন আমেরিকার দল, কিংবদন্তি মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসুরিরা এগিয়ে গেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ জিতে। কোনো বাধাই আর পথ রুদ্ধ করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা দলটি যখন সেরা চারের বাধা টপকালো তখন আর শিরোপা স্বপ্ন দেখতে অসুবিধা কোথায়? সেমিফাইনালে কাদের হারালো তারা ৩-০ গোলে, ক্রোয়েশিয়াকে। গতবারের রানার্সআপ এই দলটি ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে আবারো সেই ২০১৮ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্ন দেখছিল। ব্রাজিল সমর্থকরাও যেন ছিলেন তাদের পাশে। কিন্তু সেমিফাইনালের সেই লড়াইয়ে মেসিজাদুতে পরাস্ত হলো ক্রোয়াটদের সেই স্বপ্ন। অপরদিকে আরবের বুকে আরেক আরব্যরজনীর স্বপ্নদ্রষ্টা মরক্কোর স্বপ্ন গুঁড়িয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালের মঞ্চে আসীন হলো ফ্রান্স। এই ফরাসিরা কেন যেন শুরুতে খুব একটা ফেভারিট হিসেবে নিজেদের চেনাতে পারেনি। কিন্তু মিশেল প্লাটিনি যা পারেননি তার উত্তরসূরি হিসেবে প্রথমে জিনেদিন জিদান শিরোপা জিতে রোল অব অনার্স বোর্ডে ফ্রান্সের নাম ওঠান। সেটি ১৯৯৮ সালের কথা। ২০০৬-এ ফ্রান্স ফাইনালে উঠেছিল জিদানের নেতৃত্বে।

 

 

 কিন্তু তারই মাথা গরমকরা এক গুতোয় শিরোপা চলে যায় ইতালিয়ানদের কব্জায়। ২০১০ আর ২০১৪তে ম্লান ফরাসিরা আর সৌরভ ছড়িয়ে শিরোপা ঘরে তোলে ২০১৮ বিশ্বকাপে।  ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে এবার চার নম্বর দল ফ্রান্স। আলোচনার টেবিলে খুব বেশি স্থান না পেলেও দল হিসেবে মন্দ ছিল না। তবে সদ্য বিশ্বসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়া করিম বেনজেমার খেলতে না পারায় অনেকে দ্বিধান্বিত ছিলেন। খেলতে পারছেন না আরো দুই তারকা পর পগবা আর কন্তে। তারপরেও এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানদের পায়ের ছোঁয়ায় সাফল্য ধরা দিয়েছে ঠিকই। ২৪ বছরে ছয় আসরের মধ্যে চতুর্থবার ফাইনাল খেলছে ফরাসিরা। আর যদি শেষ হাসিটা তাদেরই হয় তবে ১৯৬২ সালের পর ফ্রান্স হবে টানা দু’বার বিশ্বকাপজয়ী দল। সেবার এই কৃতিত্ব গড়েছিল পেলের ব্রাজিল। ১৯৯৪-এ শিরোপা জেতা ব্রাজিল ১৯৯৮ ফাইনালে উঠে আবারো সেই কৃতিত্ব দেখানোর পথ তৈরি করেছিল। কিন্তু ফ্রান্সের মাটিতে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেননি জিদান। তবে ২০০২-এ টানা তৃতীয়বার ফাইনালে উঠে ফের চ্যাম্পিয়ন হয় রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোর ব্রাজিল। এরপর আর সাম্বা নাচ দেখতে পারছে না বিশ্বফুটবল। ২০১৪তে আয়োজক হয়েও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। উল্টো নেইমারের ইনজুরিতে হঠাৎ ভেঙেপড়া দলকে ৭ গোলের বন্যায় ভাসায় জার্মানরা।

 

 

 আজও ব্রাজিল সমর্থকদের সেভেন আপ’র খোঁচা সইতে হয় মুখ বুজে। দক্ষিণ আমেরিকার সেই আসরের ফাইনালে অবশ্য সময়ের সেরা তারকা লিওনেল মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল ২৪ বছর পর। সেই ১৯৯০-এ ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ফাইনাল খেলেছিল তারা। তবে শেষ হাসিটা তারা হাসতে পারেনি। ম্যারাডোনা হেরেছিলেন যাদের কাছে সেই জার্মানদের কাছেই পরাস্ত হয় মেসির দল। একযুগের ব্যবধানে এবার কিন্তু অন্য প্রতিপক্ষ। জার্মানদের প্রতিবেশী ফরাসিদের অবশ্য খাটো করে দেখার কোনো সুযোগই নেই। দুর্দান্তু গতিময় খেলা উপহার দিয়েই এ পর্যন্ত উঠে এসেছে তারা। প্রথম পর্বের শেষ খেলায় তিউনিসিয়ার কাছে হারলেও তা যে নেহাৎই কোচের কৌশল ছিল তার প্রমাণ মিলেছে পরের খেলাগুলোতে। কাতারের বিশ্বকাপে অনেক চমক আর ঝলক দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত সবই উবে গেছে। লড়াইটা এখন তিন নম্বর আর চার নম্বরের। সুতরাং এখানে হেলাফেলার কিছু নেই। এমবাপ্পের পায়ে ফের নতুনের কেতন উড়বে নাকি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের হাতে শোভা পাবে মুকুটের শেষ ও সবচেয়ে মূল্যবান পালকটি। মাঠের খেলায় আবেগের স্থান নেই। কিস্তু মাঠের বাইরের আবেগ তো রেফারির বাঁশি শুনে চলে না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যখন চোখের পানি মুছতে মুছতে মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন কিন্তু তার শত্রুর মনটাও গলেছে একটু হলেও। আর এ কারণেই মরক্কোর এক খেলোয়াড়ের ছোট সন্তানটিও এসে রোনালদোকে সান্ত্বনা দিয়ে যায়।

 

 

 মেসি যদি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হন তবে রোনালদোকে কী বলবেন? হয়তো তিনি তার দেশকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলতে পারেননি কিন্তু মেসির প্রায় সমানে সমান বিশ্বসেরা ফুটবলারের যে তকমা জিতেছেন তা কি ফিরিয়ে নিতে পারবেন? কখনোই পারবেন না। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। রোনালদো তো বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে খেলেছেন একাধিকবার, ইতিহাসে এমন বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে পাওয়া যাবে যারা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ছিলেন কিন্তু দেশ খেলতে না পারায় তারাও বিশ্বকাপের আসরে নাম লেখাতে পারেননি। এবারের কথাই ধরুন, ক্লাব ফুটবলে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে এক নাম মোহাম্মদ সালাহ। ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের অনেক সাফল্যের রূপকার এই মিসরীয় ফুটবলারকে পুরোটা সময় কাটাতে হয়েছে দর্শকসারিতে। অথচ তিনিও একজন আরব। এশিয়ার মাটিতে এটি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। ২০০২-এ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আসরে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল শিরোপা জিতেছিল ইউরোপের দেশ জার্মানিকে হারিয়ে। এবারো মুখোমুখি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা আর ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। কার হাতে শোভা পাবে কাপ তা জানার জন্য অপেক্ষা মাত্র আর কযেক ঘণ্টার। যে দলই জিতুক কাপে ছোঁয়া থাকবে প্যারিসের দলের। ২০১০-এ বিশ্বকাপ আায়োজনের অনুমোদন পাওয়ার পর ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে কাতার কিনে নেয় ২০১১ সালে। সেখানে তারা জড়ো করে বিশ্বসেরা তারকাদের।

 

 

 আর্জেন্টিনার মেসি আর ব্রাজিলের নেইমার খেলেন এই দলে। আগে থেকেই এ দলে ছিলেন সময়ের আরেক সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় ফ্রান্সের কিলিয়েন এমবাপ্পে। নেইমার বিদায় নিলেও আছেন মেসি-এমবাপ্পে। গেল্ডেন বুট আর গোল্ডেন বল জেতার লড়াইয়েও এগিয়ে তারা। তাই আজ যে দলই জিতুক পিএসজি’র সমর্থকেরা কিন্তু খুশি। খুশি কাতারবাসীও। শতভাগ সার্থক তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়। শেষ হাসিটা যেই হাসুক বাংলাদেশ তো দর্শক ছাড়া অন্য কিছু নয়। তারপরেও কেউ হাসবেন কেউ কাঁদবেন। বিশ্বর‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ যত পেছনেই থাকুক লাফালাফিতে আর অন্যের ঢোলের তালে তালে নাচানাচিতে অনেক এগিয়ে। কর্তাব্যক্তিদের ব্যর্থতার দায় সাধারণ ফুটবল সমর্থকরা কেন নেবেন? বাংলাদেশের মানুষ নাকি ফুটবল ভালোবাসে না এমন অভিযোগে সংগঠকরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারেন কিন্তু লজ্জা ঢাকতে পারবেন না। মাঠের খেলার মান ভালো করার ব্যবস্থা করতে হবে। ভালো ভালো দল এনে দর্শকদের মন ভরাতে হবে। অতীতেও যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করতো সেগুলো ফের আয়োজনে উদ্যোগী হতে হবে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের নামে যে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের মান নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ২০১তে যখন মেসির আর্জেন্টিনাকে আনা হলো তখন কি দর্শকের অভাব ছিল। 

কর্তারা এমন দলকে আমন্ত্রণ জানান যাদের হারিয়ে শিরোপা জেতা যায়। কারণ শিরোপা জিতলেই তো শাসকদের বাহবা পাওয়া যায়, গদি পাকা থাকে। দর্শকদের চাওয়া-পাওয়া সেখানে উপেক্ষিত থাকে। ক্রিকেট কি একদিনে বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করেছে। মোটেও না। হঠাৎ করে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সাফল্য নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজের ফসল। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে যে ক্রিকেটের নক আউট বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করা হয় তখন বাংলাদেশ দল মাঠের বাইরে থাকলেও দর্শকরা কিন্তু মাঠে ছিল ঠিকই। এতে উপকৃত হয়েছে ক্রিকেট। সে রকম ফুটবলেও বড় কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন দরকার। অবশ্যই যার লক্ষ্য থাকতে হবে পকেট ভারী করা নয়, দর্শকের পাল্লা ভারী করা। 

কাতারে বিশ্বকাপের পর্দা নামবে আজ। মরুর বুকে নেমে আসবে নীরবতা। কিন্তু আরব বিশ্বে ফুটবলের যে সূর্য উদিত হলো তা কিন্তু দ্যুতি ছড়াবে আরও অনেক দিন। কাতার দল কোনো পয়েন্ট ছাড়াই বিদায় নিলেও এ আসরে মরক্কো, তিউনিসিয়া আর সৌদি আরব নজর কেড়েছে বড় বড় জয়ে। মরক্কো অনেকবার বিশ্বকাপ আয়োজনের চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। মাঠের সাফল্যে এবার কিন্তু তারা ক্লাব কাপ আয়োজনের সুযোগ আদায় করে নিয়েছে। সত্যাসত্য যাচাই করা যায়নি, তবে ইংল্যান্ডের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা খবর দিয়েছে গতকাল যে, অচিরেই বিশ্বকাপ আয়োজনের চেষ্টা চালাবে সৌদি আরব। আয়তনে অনেক বড় সৌদিরা আঞ্চলিক রাজনীতিতে কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বী। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে এ খবর সত্য হতেও পারে। আমরা অপেক্ষায় রইলাম এশিয়ার বুকে আরও একটি বিশ্ব আসর দেখার।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status