শেষের পাতা
তিন মাসেও সন্ধান মেলেনি শিক্ষার্থী আহনাফের
মরিয়ম চম্পা
৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবাররাজধানীর দারুসসালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ রহমান। চলতি বছরের গত ৩১শে আগস্ট বিকালে বাসা থেকে চা খেতে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি। এ ঘটনায় নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মা দারুসসালাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর স্থানীয় থানা পুলিশ, গোয়েন্দা, র্যাব, সিটিটিসিসহ একাধিক বাহিনী ছায়া তদন্ত শুরু করে। কিন্তু নিখোঁজের প্রায় ৩ মাস ৬ দিন অতিবাহিত হলেও আহনাফের সন্ধান দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় পরিবার। আহনাফের বাবা-মা’র দাবি, ছেলেকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল হয়নি। ৩ মাসেরও বেশি সময় পার হলেও স্কুল শিক্ষার্থী আহনাফকে খুঁজে পায়নি র্যাব-পুলিশ-ডিবিসহ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দিনের আলোয় একজন শিক্ষার্থী এভাবে গায়েব হয়ে গেছে অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজে বের করতে পারছে না।
তিন মাসেও কোনো সন্ধান পায়নি তার।
সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটাও জানতে চাই। মরে গেলে তার মরদেহটা অন্তত পেতে চাই আমরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ৩১শে আগস্ট বিকালে দারুসসালাম থানাধীন গৈদারটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে চা খেতে যায় আহনাফ। সে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বিশ্রাম শেষে মাগরিবের আজানের আগে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘরে ফেরার কথা ছিল। এরপর আর সে ফিরে আসেনি। আহনাফ নিখোঁজের ঘটনায় দারুসসালাম থানায় একটি জিডি হলে সন্দেহভাজন হিসেবে তারই এক সহপাঠীকে আটক করে পুলিশ। এরপর থানায় নেয়া হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আহনাফের মা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, আমার ছেলে এভাবে হারিয়ে যাবে কখনো কল্পনাও করিনি। মাসের পর মাস চলে যায় তবু কেন আমার মানিক ফেরে না। তাকে ফেরত চাই। তিনি বলেন, ছেলে নিখোঁজের পর রাতেই থানায় যাই।
পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ছেলে কোনো মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে কিনা? জঙ্গি কানেকশন আছে কিনা এসব কথা বলে পাঠিয়ে দেয়। সেই রাতে কোনোভাবেই জিডি না নিয়ে ছেলেকে উদ্ধারে কালক্ষেপণ করে পুলিশ। পরের দিন থানায় গেলে অনেক অনুরোধের পর পুলিশ জিডি নেয়। জিডি’র তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আবু জাফর সময়ক্ষেপণ করেন। তার সহপাঠী একজনকে আটক করে এনে পরে তাকে ছেড়ে দেয়। শিক্ষার্থীর মা জানায়, এলাকায় তিনি মানবাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। মাদকের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। গ্রেপ্তারকৃত সহপাঠী সিগারেট খাওয়া, স্কুলের পোশাক পরে বখাটেপনা নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে বিচার দেয়া হয়। ওর বাবা শিক্ষার্থীকে মারধর করলে আহনাফকে সে হুমকি দেয়। সে বলে, ‘তোর মাকে এসব করতে নিষেধ কর।’
ছেলের কথা না শোনাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মায়ের। এ বিষয়ে ডিএমপি’র গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থী নিখোঁজের বিষয়ে আমরা স্থানীয় থানার পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারিনি। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীর বিষয়ে আমরা অন্ধকারে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। দারুসসালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আবু জাফর বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার পর আহনাফের সহপাঠী স্থানীয় আরেক শিক্ষার্থীকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এ ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আরও একাধিক সংস্থা কাজ করছে।